somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নিবর্হণ নির্ঘোষ
আমি এক প্রব্রজ্যা , আয়ু ভ্রমণ শেষে আমাকে পরম সত্যের কাছে ভ্রমণবৃত্তান্ত পেশ করতেই হবে । তাই এই দুর্দশায় পর্যদুস্ত পৃথিবীতে আমি ভ্রমণ করি আমার অহম দিয়ে । পরম সত্যের সৃষ্টি আমি , আমি তাই পরম সত্যের সৃষ্ট সত্য !!

মার্ক্স নিজেই এখন বুর্জোয়াদের শো-পিচ !!

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চট্টগ্রামের নুপূর মার্কেটে পুরাতন বইয়ের একটি ছোটখাটো বাজার আছে । সেখানে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি সাহিত্যের ও গল্প উপন্যাস নয় এমন সাহিত্যের বইও পাওয়া যায় । সেখানে প্রায় প্রতিটি দোকানে পুরাতন বইয়ের পাশাপাশি নতুন বইও রাখে তারা । একদিন পকেট ফাঁকা থাকলেও সেইদিকে গিয়ে একটা সাঁড়াশি অভিযান চালালাম । বুকশেলফগুলোর অধিকাংশ জায়গা একাডেমিক বই ও হুমায়ূন আহমেদ, রবীন্দ্রনাথ, সুনীল , শীর্ষেন্দু , সমরেশ এবং বাংলার দুই আজাদ ( হুমায়ন আজাদ ও আরিফ আজাদ ) দখল করে থাকলেও মাঝে মাঝে সাঁড়াশি অভিযান করে আমি অনেক চটকদার বই (এই যেমন- দস্যু বনহুর) উদ্ধার করতে পারি । কখনো সখনো হয়তো আমার দাদার থেকে প্রাপ্ত আলমারিতে সেসব আশ্রয় পায় কখনও আবার পায় না , কারণটা অবশ্য আমার আর্থিক রিক্ততা !


সে যাকগে , সেদিন আমি আমার সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছিলাম । একটা শেলফের এক কোণায় দেখতে পেলাম কার্ল মার্ক্সের পুঁজি বইয়ের দুটি খণ্ড । বেশ ঝাঁ ব চকচকে এর মলাট , দেখে মনে হচ্ছে না এগুলো পুরাতন বই । দেখে লোভ লাগল বলে দোকানিকে বললাম বইদুটো দিতে । বইদুটো দোকানি শেলফ থেকে নামিয়ে আমার সামনে রাখল । মলাট উল্টে পাল্টে দেখলাম , প্রকাশকাল ২০১৬ কিংবা ২০১৭ হবে হয়তো । অনুবাদকের নাম আমার মনে নেই , প্রকাশনির নামটাও হজম করে ফেলেছি মাথায় রাখিনি । বইয়ের ভেতরে প্রথম কয়েকপাতা উল্টে দাম দেখলাম । দামটা কম নয় , ঐ টাকা দিয়ে আমার সেই সময়ের অনার্সের একাডেমিক সব বই কেনা যাবে । রেখে দিলাম বইগুলো , ছাড় দিলেও বইদুটোর দাম কমপক্ষে ১৬০০ টাকা হবে ।মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে বলে বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত না বাড়ানোর সাবধান বাণী সেই ছোট থেকেই মাথায় রেখে এসেছি । সেই সাবধান বাণীকে মাথায় রেখে বইদুটো দোকানির হাতে দিয়ে কিছু না বলে আমি বেরিয়ে এলাম ।


বইয়ের বাজার থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামবার পর কিছু চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। আমি নিজেও সমাজতান্ত্রিকতার প্রতি অনুরাগী ছিলাম সেই কিশোর বয়স থেকে । সমাজতান্ত্রিকতার সম্পর্কে জানবার জন্য সব সময় আমি চেষ্টা চালিয়ে গেছি । সেই কবে থেকেই শুনে এসেছি সমাজতান্ত্রিক মানুষরা পুঁজিবাদদের মত কেবল মুনাফা নিয়ে চিন্তা করেন না , সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য এরা চিন্তা করে থাকে । যে শ্রমিককে শোষণ করে পুঁজিরা ফুলেফেঁপেঁ উঠে সেই শ্রমিকদের স্বার্থের জন্য তারা ভাবে ও লড়াই করে । পুঁজিবাদদের সে আর্থিক অত্যাচার ও মুনাফার প্রতি পৈশাচিক যে উন্মাদনা সেই সবের বিরুদ্ধে বিপ্লব করাটাই তো সমাজতান্ত্রিকতার নামান্তর । কিন্তু সেই সমাজতান্ত্রিকতার চেহারায় যদি পুঁজিবাদের জেল্লা পাওয়া যায় সেই দৃশ্যানুভূতি কেমন হওয়া উচিত আসলে ?



মার্ক্সের পুঁজি বইটির ১৯৮৮ সালের একটি এডিশন পেয়েছিলাম এর আগে একবার , তার গায়ে দাম লিখাছিল ১০০০ টাকা । প্রকাশনি কিন্তু মস্কোপন্থি । মস্কোপন্থি প্রকাশনি বইয়ের দাম এত বেশি রাখল কেন ? এত মুনাফা দিয়ে সে কী করবে ? একটা বই ছাপাতে সে সময় ঐ টাকার ১০ ভাগের এক ভাগও খরচ হত বলে আমার মনে হয় না । যদি ধরিও যে সেই মাপের খরচ হয়েছে তবে তো এই বইয়ের ওপর মুনাফা হয়েছে ৯০০ টাকার মত শতাংশে কত হতে পারে সে নাহয় আপনারাই বুঝে নিন । তো এমন মুনাফা অর্জন তো পুঁজিবাদীদের বৈশিষ্ট্য সমাজতান্ত্রিকরা কেন এমন বৈশিষ্ট্য ধারণ করল ?



আচমকা আমার মানসপটে একটা সিদ্ধান্তের উদয় হলো , আসলে সমাজতান্ত্রিকরা পুঁজিবাদদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে তাদের সাথেই মোলাকাত করেছে কিংবা বলা যায় তাদের পোশাকই তারা পরিগ্রহণ করেছে । তাহলে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদ তো এক হয়ে গেল এইদিক থেকে । একজন হয়তো সোনার থালায় খাচ্ছে আরেকজন পেতলের থালা বলে সোনার থালাতেই খাচ্ছে । পার্থক্য করা যায় কীভাবে ?



মনটা আমার বিস্বাদে ভরে গেল । এটা কী মেনে নেয়া যায় ! যে মার্ক্স একসময় পুঁজির বিরুদ্ধে লিখেগিয়েছিলেন সেই মার্ক্স এখন নিজেই পুঁজিপতি ও সমাজতান্ত্রিকদের মুনাফার পুঁজি ! আমরা যারা মধ্যবিত্ত কিংবা আমরা যারা নিম্নবিত্ত তারা তো মার্ক্সের কোন লিখাই পড়তে পারছি না । নতুন বই হোক কিংবা পুরাতন মার্ক্সের বই মানেই বিশাল অংকের মূল্য । প্রলেতারিয়েতরাই পড়তে পারছে না মার্ক্সের রচনা , কিন্তু মার্ক্স যে বুর্জোয়া সমাজের বিরোধীতা করেছিলেন সেই সমাজের পণ্য এখন তিনি নিজেই । মার্ক্স এসব দেখলে কী ব্যাখ্যা দিতেন কে জানে !!




সেদিন আমার এক নতুন বোধধয় হয়েছিল , মার্ক্স এখন আর কোন বিপ্লব নয় বরং একটি পুঁজির নাম , বুর্জোয়াদের পুঁজি । আর আমাদের ঘিরে আছে যে অনিয়মের অন্ধকার সেই অন্ধকারে যেকোন আলো জ্বলে উঠুক না কেন একসময় অন্ধকার সেই আলোকে শুষে নেবে আর বাড়িয়ে নেবে নিজের আঁধারের ঘনত্ব । শেষমেশ সবকিছুর আঁধারেতেই অবসান হবে আর আলো হলো এই আঁধারে মিথ্যে আশা নিয়ে বেঁচে থাকবার নামান্তর !!



হে মার্ক্স এসে দেখে যাও তুমি তোমার কথা এখন কাদের পুঁজি , মাজদাকের আত্মা বহন করে যে রচনা তুমি রচেছিলে সেটা এখন একেবারেই ভেস্তে গেছে কারণ তুমি এখন বুর্জোয়াদের শো-পিচ !!



রচনাকারী: নিবর্হণ নির্ঘোষ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৩
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×