(এই পোস্ট লিখবার আগে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই বন্ধুবর অধীতি ও অনুজা দেয়ালিকা বিপাশাকে । যখন এই লিখাটা লিখছিলাম এদের সাথে এই নিয়ে অনেক আলাপ হয়েছে !)
পুরুষের মনোজগত নিয়ে খুব কম আলোচনা আছে জ্ঞান জগতে । পুরুষকে চিত্রিত করবার ব্যাপারটাও খুব বেশি বৈচিত্র্যময় নয় , নারীকে চিত্রিত করবার ব্যাপারে যেখানে প্রকৃতি থেকে শুরু করে সব কিছুতে নারীকে চিত্রিত করবার যে বাহুল্যতা তা পুরুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় না । প্রেম-বিরহ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই নারীকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে । একদিকে নারীকে করা হয়েছে অবরুদ্ধ আরেকদিকে নারীকে দেয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য । সাহিত্যে নারীর অবস্থান এত বেশি হয়েছে যে মানুষ হিসেবে পুরুষের ভূমিকা ও প্রকাশ ততটা পায়নি । তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের আবেগ , তার নারীর কাছে শরীর কেন্দ্রিক যে আশ্রয় এবং কখন এই বাসনা তার জাগছে তা নিয়ে পুরো মানব জগতে একটাই রব , কাম ! কিন্তু এই কামের কাছে তার নিজেকে সঁপে দেয়ার পেছনে কারণ কী কেবল এই যে পুরুষ কামুক ?
আজ একটি গান নিয়ে আলোচনা করছি । গানটি হলো “কাবেরী” !
এই গানটি তিন বছর আগে ইউটিউবে প্রকাশ পায় । গানটির গীতিকার হলেন নাজমুস সাকিব । সুরকার হলেন অর্ঘ্য দেব আর ব্যান্ড হলো আধপাগলা !!
এই গানটি প্রেম কেন্দ্রিক গান বটে তবে প্রেম বাদেও এখানে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা নিয়ে আমরা আলোচনা করতেই পারি । পৃথিবীর সব গান আসলে পুরুষের প্রেমাভাব নিয়ে রচনা করা হয়েছে ! কিন্তু এই গানে প্রতিভাত হয়েছে পুরুষের মনোজগতের ও তার প্রকৃতির কিছু দিক । যা আসলে আমরা এড়িয়ে যাই কিংবা প্রাধান্য দিলেও নিকৃষ্ট জ্ঞান করতে আমরা একে পরিচয় করাই পুরুষের কামুকতা বলে !
গানটির কথাতে আমরা নজর দিই :
কাবেরী এই শীতে ফেটে যাওয়া ঠোঁট নিয়ে তোমার কাছে এসেছি
যদি বলো আমি নিঃস্পৃহ, তবে তাই
ঘুরে তোমার কাছে এসেছি।
কাবু হয়ে ঘরে ফেরার দিন শেষ
যুদ্ধের অবশিষ্ট আগুনে পুড়ে গেছে আমাদের বয়েস।
কাফের দিলো নাজরানা, নদী ভরা উত্তাল যৌবন
কাবেরী তোমার ছবি আমি আজও বুক পকেটে নিয়ে ঘুরি।
সংশয়ে বিমান আর মরুঝড়ে আটকে পড়া বেদুঈন
আমরা বহন করছি কিছু অন্তঃসার শুন্য গান
পৃথিবীর একপক্ষ করে খেয়ে ফেলা রাজনীতি
মগজে ধোঁয়া লাগিয়ে বলে আমার শিল্প বলিয়ান।
কাবেরী চলো এরচেয়ে শুয়ে পড়ি নিভিয়ে ঘরের বাতি
কাবেরী চলো এবার শুয়ে পড়ি নিভিয়ে ঘরের বাতি।
কার্তুজ ভর্তি পকেট আমার
নিজস্ব পিস্তল হাতে নিয়ে যুদ্ধের এই ময়দান
যেখানে হৃদয়ের খুব কাছে বারুদ আর গোলাপের সুবাস
কাবেরী তোমার দেয়া চাদরেই আমার বসবাস।
গানটির এবার পটভূমি নিয়ে আলোচনা করছি । পড়েই বোঝা যাচ্ছে , রণক্লান্ত এক পুরুষের তার প্রেমিকার কাছে ফিরে আসবার আকুতি নিয়েই এই গান । যে যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছে তার প্রেমিকার কাছে আশ্রয় চাইছে , যদিও সে পূর্বের সেই প্রেমিক নেই । তবুও প্রেমিকার কাছে সে এসেছে মমতার জন্য আর এক অসংজ্ঞায়িত ঠাঁইয়ের জন্য যার দেখা মিলবে প্রেমিকার উষ্ঞতার মধ্য দিয়ে ।
যুদ্ধ তাকে করে দিয়েছে একদম জড়জড়ে । ভেতরে থাকা সেই দুরন্ত ভাবুক আর আবেগি মানুষ থেকে সে হয়ে গেছে এক অসহায় মানুষ । যে আর কোথাও শান্তি পাচ্ছে না , মেলাতে পারছে না কোন হিসেব । কী ? কেন ? কীভাবে ? এর গোলকধাঁধাঁয় ঘুরপাক খেতে খেতে নিজের খেই হারিয়ে ফেলেছে সে । এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই তার মধ্যে যে সে খুঁজবে কিছু । তাই এতটুকু শান্তির জন্য ফিরে আসা তার প্রেমিকার কাছে । প্রেমিকার কাছে তার মিনতি যেন তাকে সেই ঠাঁইটুকু এনে দেয়া হয় যার মধ্য দিয়ে সে আসলে আবার শ্বাস নেবার জন্য নিজের বুক পেতে দিতে পারবে !
গানের একদম শেষাংশে আমরা এও দেখতে পাই আসলে পুরুষের যে বন্যতা তার পাশাপাশি কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকে পোষ মানবার এক গভীর আকুতি । সে নিজের বন্যতা প্রকাশ করলে ঘুরে ফিরে নিজের বাসনার উষ্ঞতায় বাঁচার আকুতি সে রাখে । আর যেহেতু পুরো পৃথিবী এমনকি প্রেমিকাও তার বন্যতাকেই দেখতে পায় কিন্তু বুঝতে পায় না বন্যতার ভেতরেও লুকিয়ে থাকা এক মমতালোভী অন্যপুরুষকে ! তাই গানে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে !!
আসলে পুরুষের এই যে বাসনা তাকে আমরা স্বীকার করে নিই কাম বলে। এটাকে যদি কাম বলি তবে বলতেই হয় এখানে কাকুতি কেন ? কেন তাকে এই কাকুতির পথ ধরতে হয় ? সে তো তার বন্যতা দিয়েই সব পেতে পারে ! বন্যতাই যদি তার প্রকৃতি হয় তো বন্যতাই তার বাসনা পূরণের মাধ্যম হবে । তবে আবার কেন তাকে এত বিরহ নিয়ে লিখতে হয় , বলতে হয় , একটি শান্তি তার প্রয়োজন । সেটাকে যদি শরীরি আবেশ বলেই মেনে নিই । তবে তা কেন একজন নির্দিষ্ট নারীর প্রতিই হবে ? কেন ঘুরেফিরে একজনের প্রতিই হবে ? এর উত্তর আমরা পাবো না যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেই প্রাগৈতিহাসিক চিত্রায়নে পুরুষকে দেখব ততক্ষণ । এর থেকে বেরিয়ে এলেই আমরা দেখতে পাবো পুরুষকে সে আসলে ভিন্ন কিছু নয় । এক মানুষ যে বন্যতার পোশাকে সজ্জিত তবে সেই মমতার খোঁজ করছে প্রতিটি ক্ষণে প্রতিটি স্থানে !!
সে তার বন্যতা এবং তার প্রকৃতির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে বটে পৃথিবীর সকল যাবতীয় সমস্যায় কিন্তু একসময় ক্লান্ত হয়ে যায় । ধীর ও শান্ত হয়ে পড়ে সে তখন আবার শিশুর মত মমতা খোঁজে সে । সত্য হলো পুরুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই মমতা পায় না । ফলে আবার বন্য হয়ে যায় সে আবার কখনও হয়ে পড়ে বিধ্বংসি । একসময় সে নিজেই নিজেকে অস্বীকার করে বসে তখন সেটা সম্ভবত কেয়ামতের সামিল ।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো নারীকে রহস্য হিসেবে যদি ধরেও নেয়া হয় তবে পুরুষ এক অন্তর্নিহিত রহস্য ! যার পরিচয় না সে পায় না পায় তার প্রেয়সী । এর খবর কেবল স্রষ্টাই জানেন !!
আমি এই রহস্যকে খুব বেশি ভালোভাবে বুঝতে পারি । এবং আমি এও জেনে গেছি , নারী এই ব্যাপারটা ধরতে মোটেও পারঙ্গম নয় । কারণ আমরা আসলে বসবাস করছি না আমরা কর্তা আর কর্তাধীন হয়ে বাঁচছি তাই !!
রচনাকারী: নিবর্হণ নির্ঘোষ ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:০৮