somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"লোভ-লালসা" (পর্ব-০২)

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুনয়না আজ বাহিরে থেকে পড়াশোনা করছে এটা ভেবে অমল বাবু এবং অরিত্রী দেবীর গর্বের শেষ নেই । এ বাড়ি, ও বাড়ি গেলে মেয়ের কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে তাঁরা তাঁদের মেয়ের কথা খুব গর্বের সহিত উত্তর দেন যে,- "মেয়ে কষ্ট করে পড়াশোনা করছে ওর স্বপ্ন এবং আমাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর করার জন্যে ।"
-
সুনয়না কখনো বাবা-মাকে ছাড়া একা থাকেনি । যদিওবা কখনো মাসীর বাড়ি যেত তো গিয়ে বেশিদিন থাকতে পারতো না । বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করতো, আর বাড়ি আসার জন্য পাগল হয়ে যেত । আর আজ সেই সুনয়নাই পড়াশোনার জন্য এতদূরে থাকতে পারছে । এদিকে অমল বাবু এবং অরিত্রী দেবীর একেকটা দিন কীভাবে পার হয় সেটা তাঁরা দুজনে ছাড়া তৃতীয় সুনয়না ছাড়া আর কেউ জানেন না ।
মেয়ে দিনদিন বড় হচ্ছে তাই একা থাকা শিখতে হবে । বিয়ে দিলে তো শশুড় বাড়িতেও থাকতে হবে । এগুলো ভেবে মনকে শক্ত রেখে থাকছেন । তাঁদের অনেক ইচ্ছে, মেয়ে বড় হবে, ভালো একটা ছেলে দেখে বড় একটা পরিবারে মেয়েকে বিয়ে দিবেন । মেয়ে সুখে থাকবে । মেয়ের সুখেই তাঁদের সুখ । মেয়েকে একটা ভালো পরিবারে বিয়ে দিয়ে তাঁরা মারা যাবার পরেও শান্তি পাবেন ।
-
সুনয়না মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে । কোনো খারাপ নেশায় ওর মন নেই । ভালো পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল তুলছে এবং ফলাফল প্রকাশিত হবার পরে বাবা-মাকে ফোনকলে জানাচ্ছে । বাবা-মা শুনেও তা অনেক খুশি হচ্ছেন । অমল বাবুর কষ্টের টাকা সঠিক পথেই যাচ্ছে । তিনি তাঁর দোকানে বসে চা-পান বিক্রি করেন এবং গায়ের মোড়ল এবং মুরুব্বিদের সাথে মেয়ের কথা বলেন এবং তাঁরা সকলে 'তোর কষ্টের টাকা কথা বলবে একদিন' বলেন ।
-
দিনদিন সময় আগাচ্ছে এবং সুনয়নাও বড় হচ্ছে । সুনয়না এখন অনেক বড় হয়ে গেছে । সে এখন অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী । এই কয়েকবছরে অনেকের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়েছে । সব বান্ধবীদের স্মার্টফোন আছে কিন্তু সুনয়না এখনো সেই বাটনওয়ালা ফোনই চালিয়ে যাচ্ছে । বাবাকে ফোন দিয়ে স্মার্টফোনের কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করলো ।
-
আজ সুনয়নার জন্মদিন । এদিনেই সে তাঁদের ঘর আলোকিত করেছিলো, খুশির বন্যা বইয়েছিলো । মেয়ের জন্মদিনের উপহার হিসেবে দুটো চুমু দেওয়ার সাথে বাবা তাঁর মেয়ের আবদার পূরণ করার জন্যে একটা স্মার্টফোন কিনে দিলেন । দামের তোয়াক্কা করলেন না । মেয়ে অনেকদিন আগেই চেয়েছিলো একটা স্মার্টফোন । সেদিন থেকেই মেয়ের নাম করে একটা ব্যাংকে টাকা জমা রাখতেন । আজ সকালেই সেটা ভেঙ্গে মেয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো আর দামী ফোনটা তিনি নিয়ে আসলেন ।
-
সুনয়না ওর রুমে গিয়েই উপহারটা তাড়াতাড়ি করে খুললো । দরজার আড়াল থেকে অমল বাবু ও অরিত্রী দেবী মেয়ের এই আহ্লাদিপনা দেখছেন আর দুজন-দুজনের দিকে তাঁকিয়ে হাসছেন । সুনয়না উপহারের বাক্সটা খুলেই দেখলো স্মার্টফোন । ওর আর খুশি ধরে না । সুনয়নার খুশি দেখে বাবা-মা দুজনের চোখেই জল চলে আসলো । সুনয়না ফোনটি পেয়ে সত্যিই অনেক খুশি হয়েছে । ওর অনেকদিনের ইচ্ছে স্মার্টফোন চালানোর আর সেটাও আজ পূরণ হয়েছে । মোবাইল হাতে নিলো তো কিন্তু ও তো এর আগে স্মার্টফোন চালায়নি তাই জানেও না কীভাবে এটা চালাবে । ভোর হতে না হতেই মোবাইল হাতে নিয়ে সিম তুলে কোনোরকমে ডায়াল প্যাড খুঁজে অরুন্ধতীকে ফোন করলো ওর প্রথম স্মার্টফোন দিয়ে ।
-
অরুন্ধতী তাদের বাসায় আসলো । এরপর সুনয়না ওর থেকে ফেসবুক আইডি খোলে নিলো । এই প্রথম সুনয়না ফেসবুক চালাবে তার জীবনের প্রথম স্মার্টফোনে । অরুন্ধতী মেয়ে হলেও খুবই চালাক মেয়ে । আইটি নিয়ে তার অনেক ধারণা আছে । অরুন্ধতী মেয়েও হয়ে যে এত এত কিছু জানে তাতে সে প্রায়সময়ই অবাকই হয় । আর ও নাকি কিছুই জানে না । মনে মনে হাসেও ।
ফেসবুকে আইডি খুললো । প্রথম প্রথম আইডি খোলায় সে জানেনা আইডি দিয়ে কি করতে হয় । তবে জানতো যে, ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের সাথে যোগাযোগস্থাপন রাখা যায় । প্রথমেই ফেসবুকে সএ বন্ধু বানানোতে মগ্ন হলো । বেশ কয়েকজনকে সে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো । কীভাবে ফ্রেন্ড বানাতে হয়, এরপর কীভাবে তাদের সাথে কথা বলতে হয় সব শিখিয়ে দিলো অরুন্ধতী ।
সুনয়না অনেকজনকে বন্ধু বানালো । বেশ কয়েকজনের সাথে তার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো ।
-
আজ সে বাড়ি থেকে ইউনিভার্সিটিতে যাবে, সাথে অরুন্ধতীও গেলো । সুনয়নার বাবা-মা দুজনেই মেয়েকে এগিয়ে দিতে এসছেন । বাসের জন্য সবাই মিলে অপেক্ষা করছেন । তাঁদের মেয়ে ও অরুন্ধতীকে বাসে তুলে দিয়ে বাড়ি ফিরলেন । বাসে বসে দুজনেই গল্প করছে আর সুনয়না মাঝেমধ্যে ফেসবুকে গিয়ে ফেসবুকে বানানো বন্ধুদের সাথে কথা বলছে । ঢাকা পৌঁছতে তাদের পায় রাত হয়ে গেলো ৮ টা । অরুন্ধতী সুনয়নাকে ওর হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে সে নিজেও চলে গেলো হোস্টেলে ।
-
সুনয়না আজ ভার্সিটিতে গেলো । গিয়ে ওর কাছের বন্ধুদের থেকে ওদের ফেসবুক আইডির নাম নিয়ে সে নিজেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো । তাদের সাথে প্রত্যেকদিন কথা হয় । ধীরে ধীরে সে ইন্টারনেট জগতে একটু বেশিই সময় দিতে শুরু করে । প্রতিদিন নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে সে পরিচিত হচ্ছে ।
ভার্সিটিতে বান্ধবীদের সাথে পরিচিতির পাশাপাশি বড় ভাইদের সাথেও তার পরিচয় হয় । তাদের অনেকেই সুনয়নার চেয়ে বড় । আপনি করেই সম্বোধন করে, আর সে তুমি করে সম্বোধন করে ।
সুনয়নার প্রত্যেকটা বান্ধবীর আচার আচরণ খুবই ভালো, নম্র ও ভদ্র । সবাই সুনয়নাকে খুব ভালোবাসে ।
-
দিন আগাচ্ছে, প্রযুক্তিও আগাচ্ছে, সময়ের তালে তাল মিলাতে গিয়ে সুনয়নাকেও পরিবর্তন হতে হচ্ছে । চাহিদা বাড়ছে, ইচ্ছা বাড়ছে । বাবা-মা'কে ফোন করে এই চাচ্ছে, সেই চাচ্ছে ।
ওর সব বান্ধবী অনেক ভালো কিন্তু সুনয়না কিছু অসাধু মেয়ের পাল্লায় পড়ে । এ জগতের কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ভালো দেখতে পারেনা । সেই মেয়েগুলোকে দেখে সুনয়নার আফসোস হয় । ওরা কত্ত ধনী, কত্ত সুন্দর, ভালো ও দামী পোষাক-আষাক পড়ছে । সুনয়না ভাবলো, আজ সে বাবাকে ফোন করে বলবেই,-
_ "বাবা,
তুমি কেমন আছো? আর মা কেমন আছেন বাবা?"
_ "মা,
আমি ভালো আছি আর তোমার মাও অনেক ভালো আছেন । তুমি কেমন আছো সোনামণি?"
_ "বাবা,
আমিও ভালো আছি ।"
_ "তোমার পড়াশোনার অবস্থা কেমন মা.. কেমন চলছে তোমার পড়াশোনা । তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো মা?"
_ "না বাবা,
পড়াশোনা ভালো চলছে । আর কোনো সমস্যাও নেই ।"
... সুনয়না বলতে চেয়েও বলতে পারেনি, বলার সাহস সে পায়নি । তাদের পরিবারে সবসময়ই অভাব-অনটন থাকে । এমতাবস্থায় সে কীভাবে ওর ইচ্ছাগুলো পূরণ করবে? টিউশনি করে যা টাকা পাচ্ছে তা দিয়ে ওর নিজের পড়ার খরচই চলছে কোনোমতে আর বাবাও তো টাকা দিচ্ছেন ।
-
সুনয়না কি করবে ভেবে পাচ্ছে না । কেমন জানি সুনয়নার আর দিন ভালো যাচ্ছেনা । ওর বান্ধবীরা কত্ত সুন্দর জীবন-যাপন করছে আর ও কি না সেই নিচেই পড়ে রইলো ।
..
চলবে...
6 January, 2019
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×