somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"লোভ-লালসা" (পর্ব-০৩)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ প্রায় ৪ মাস পর সুনয়না বাড়িতে আসছে । অমল বাবু এবং অরিত্রী দেবী অনেক খুশি এই ভেবে যে, অনেকদিন পর তাঁদের কলিজার টুকরো মেয়ে আসছে বাড়িতে । অরিত্রী দেবী সকাল সকাল অমল বাবুকে বাজারে পাঠালেন । মেয়ের পছন্দের খাবার রান্না করবেন তাই । সুনয়না বাসায় ফিরার আগেই রান্নাবান্না শেষ করলেন এবং অমল বাবুও আর দোকানে যাননি দুপুরের পর । মেয়েকে নিয়ে আসতে দুজনেই গেলেন বাসস্ট্যান্ডে মেয়ের আসার অপেক্ষা করতে ।
অপেক্ষা করতে করতে সুনয়না কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসলো । কাঁধেচাপা কলেজ ব্যাগ তাতে বই আছে এবং হাতে কিছু কাপড়চোপড় । অমল বাবু ওর কলেজ ব্যাগ কাঁধে নিলেন এবং অরিত্রী দেবী ওর কাপড়ের ব্যাগ ।
-
অমল বাবু ও অরিত্রী দেবী লক্ষ্য করছেন, মোবাইল পাওয়ার পর তাঁদের মেয়ে আগের তুলনায় অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে । আগে বাড়ি ফিরেই আগে জড়িয়ে ধরতো কিন্তু এবার তা ভিন্ন হলো, জড়িয়ে ধরলো না । কেমন জানি চুপট মেরে থাকছে । সারাদিন দরজা বন্ধ করে দিয়ে মোবাইল টিপছে । আগে বাড়ি ফিরলে অরুন্ধতীকে সাথে নিয়ে আসতো নয়তো অরুন্ধতী আগে বাড়ি চলে আসলে ও আসার পর ফোন করে বাসায় ডেকে নিতো । কিন্তু এবার ব্যতিক্রম সবকিছুই । উনারা ভাবতে পারছেন না আসলে কি করবেন । মোবাইল দিয়ে খাল কেটে কুমির আনলেন । মোবাইল পাওয়ার পর মেয়ে আর আগের মতো স্বাভাবিক মনমানসিকতায় নেই ।
-
মেয়ে প্রায় ১ সপ্তাহ থাকলো । মেয়ে যা যা খেতে পছন্দ করে তা সব অরিত্রী দেবী নিজ হাতে রেঁধে খাওয়ালেন । আজ মেয়ে চলে যাবে ঢাকায় । অমল বাবু এবং অরিত্রী দেবী হাসিমুখে মেয়েকে গাড়িতে দিয়ে আসলেন এবং যথাসময়ে সুনয়না ঢাকা পৌঁছে গিয়ে মা-বাবাকে ফোনকলে জানিয়ে দিলো । বাবা-মা 'ভালোমতো গিয়েছো কি না' জিজ্ঞেস করলে সে উত্তরে 'ভালোভাবেই এসেছি' বলে রেখে দিলো । খুব কষ্ট পেলেন মেয়ের এমন ব্যবহারে ।
-
সুনয়না ঢাকা পৌঁছানোর পর আর নিজ থেকে ফোন দেয়নি বাড়িতে । ওর বাবা-মা ফোন দিলেই শুধু 'হ্যাঁ, হুঁ' করেই শেষ । অমল বাবু ও অরিত্রী দেবী ভাবতে লাগলেন, মেয়ের হাতে মোবাইল যাওয়ার পর থেকে আমাদের সাথে কথা বলার সময় হচ্ছেনা ওর ।
-
আজ সুনয়না বাড়িতে ফোন করলো,-
_ "বাবা,
কেমন আছো? আর মা কেমন আছেন?"
... মেয়ে নিজ থেকে ফোন দেওয়ায় অনেক খুশি হয়েছেন তাঁরা দুজনেই ।
_ "হ্যাঁ মা,
আমরা দুজনেই ভালো আছি । তোমার শরীর ভালো আছে তো মা?"
_ "হ্যাঁ বাবা,
ভালো আছি আমি । বাবা এখন টিউশনি পাচ্ছি না । আগেরগুলোরও পরীক্ষা শেষ । এখন টাকার প্রয়োজন । কালকে প্রাইভেটের টাকা দিতে হবে । সবাই টাকা দিয়ে দিয়েছে শুধু আমিই দিবার বাকি । কাল সকালে প্রাইভেট আছে তখন দিয়ে দিতে হবে । ১০ টার আগে টাকা পাঠাতে পারবে বাব?"
_ "আচ্ছা ঠিক আছে মা,
আমি কাল দোকানে যাওয়ার পথে টাকাটা দিয়ে দিবো তোমাকে নাম্বারে বিকাশ করে ।"
-
সকাল হতে না হতেই অমল বাবু মেয়েকে টাকা দেওয়ার জন্য বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন । বাজারে পৌঁছে দেখেন যে দোকানদার এখনো তার দোকান খুলেনি । ওদিকে ১০ টা বাজতে চললো । অমল বাবু চিন্তায় পড়ে গেলেন । পায়ে হেঁটে গেলেন প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে মেয়েকে টাকা পাঠাতে । গিয়ে দেখলেন একটা বিকাশের দোকান খোলা আছে । দোকানে অনেক ভিড় । অন্যদিন ভিড় থাকলেও তিনি দাঁড়িয়ে থেকে টাকা পাঠান কিন্তু আজ ভিড় থাকা সত্বেও তিনি এজেন্টকে বললেন, মেয়ের টাকার খুব প্রয়োজন । আমাকে একটু সুযোগ দিন টাকাটা আগে দেওয়ার । দোকানদার উনার কথা শুনে টাকাটা দিয়ে দিলেন । মেয়েকে সাথে সাথে ফোন করলেন,-
_ "মামনি,
টাকা পেয়েছো?"
_ "হ্যাঁ বাবা,
টাকা পেয়েছি ।"
_ "আচ্ছা মামনি,
আমি বাসায় যাচ্ছি বাসায় গিয়ে তোমায় ফোন করবো ।"
_ "আচ্ছা ঠিক আছে বাবা ।"
... অমল বাবু বাড়িতে গিয়ে সুনয়নার সাথে কথা বলে দোকানে চলে গেলেন । সারাদিন ব্যস্ততায় কাটলো তাই মেয়েকে আর ফোন দিতে পারেননি । রাতে বাসায় ফিরে হাতমুখ ধুয়ে সুনয়নাকে ফোন করলেন,-
_ "শুভ সন্ধ্যা মা,
কি করছো তুমি?
পড়তে বসছো? সারাদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম মামনি তাই তোমাকে ফোন করতে পারিনি । রাগ করোনা কেমন?"
... যখন বাবা ফোন দিলেন তখন সুনয়না শপিংমলে আছে । ফোন ধরলো কিন্তু কি বলবে বাবাকে সে বুঝে উঠতে পারছিলো না । বললো,-
_ "বাবা আমি একটু পরে কথা বলছি ।"
... এই বলে সুনয়না ফোন কেটে দিলো । যে বাবা সারাদিনের ব্যস্ততা শেষ করে মেয়ের সাথে একটু কথা বলার জন্য ফোন দিলেন আর সেই মেয়েরই নাকি সময় হচ্ছে না একটু কথা বলার? অমল বাবু নিজেকেই প্রশ্ন করলেন । অরিত্রী দেবী জিজ্ঞেস করলেন,- "কি গো, মেয়ে কি বললো? ওর শরীর ভালো আছে তো? ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া এবং পড়ছে তো?"
অমল বাবু বিষণ্ণতা নিয়ে বললেন,- "সুনয়না একটু ব্যস্ত আছে তাই পরে কথা বলবে বলছে ।"
দুজনেরই মন খারাপ হলো । অরিত্রী দেবী ভাত বেড়ে অমল বাবুকে খেতে দিলেন । মেঝেতে বসে খাচ্ছেন আর অরিত্রী দেবী হাটুগেড়ে বসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন আর ভাবছেন ।
-
সুনয়না সেদিন কথা বলতে পারেনি কারণ সে শপিংমলে ছিলো । বাবার কাছে সে প্রাইভটের কথা মিথ্যে বলে টাকাটা চেয়েছিলো । যে বাবা সকাল হতে না হতেই ৩ কিলোমিটারেরও বেশিদূরের বাজারে পায়ে হেঁটে টাকাটা দিলেন মেয়ের প্রাইভেটের বেতন দেওয়ার জন্য । সুনয়না সেই টাকা দিয়ে শপিংমলে গিয়েছে নিজের সাদইচ্ছে পূরণ করার জন্য । একবারো ওর মনে বাঁধা দেয়নি ।
-
রাত ৯ টা বাজলো । মেয়ের একটা ফোনের আশায় মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছেন অমল বাবু । আর অরিত্রী দেবীরও চোখে ঘুম আসছে না । তাঁদের মেয়ে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে । সেদিন রাতে সুনয়না ফোন দিতে ভুলে গিয়েছিলো । অমল বাবু এবং অরিত্রী দেবী নিজেরাই ফোন করলেন । সুনয়না ফোন ধরলো এবং ১ মিনিটেরও কম কথা বলে ফোন রেখে দিলো ঘুমাবে সেজন্য ।
-
আজ সুনয়নার সময় হচ্ছেনা ওর মা-বাবার কাছে । মোবাইল হাতে পাওয়ার পর এবং কিছু অসাধু বান্ধবীদের পাল্লায় পড়ে নিজেকে খারাপভাবে পরিবর্তন করে নিয়েছে সে । অমল বাবু ও অরিত্রী দেবী সুনয়নাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে লাগলেন । তাঁদের মেয়ে কি থেকে কি হয়ে গেলো । এত কষ্ট করে লেখাপড়া করাচ্ছি, পড়াশোনার জন্য দূরে থাকতে দিয়ে নিজেরা একা থাকছি । কতটা কষ্টে আমরা একেকটা দিন পার করছি সেটা আমরা ও আমাদের ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ জানেন না । শুধুই ভাবতে লাগলেন...
-
চলবে...
06 January, 2019

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×