somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"লোভ-লালসা" (পর্ব-০৪)

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমদিকে সুনয়না অবসর সময়ে টিউশনি করাতো কিন্তু এখন আর সেটা করতে তার ইচ্ছে করেনা । বাবাকে আজও ফোন দিলো,-
... অমল বাবু দোকানে বসেছিলেন । মেয়ের ফোন পেয়ে ফোন কেটে দিয়ে তিনি দোকান থেকে একটু দূরে গেলেন কথা বলার জন্য । দোকানে বসে কথা বললে মেয়ে শুনতে পাবে নানারকম আওয়াজ সেজন্য মেয়ের যেন কোনো সমস্যা না হয় তাই দূরে গেলেন ।
_ "হ্যালো বাবা,
কেমন আছো তুমি? কোথায় আছো?"
_ "হ্যাঁ মা,
ভালো আছি । তুমি কেমন আছো সোনামণি?
মা আমি দোকানে আছি । তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে মা?"
_ "হ্যাঁ বাবা,
ভালোই চলছে । আর কিছুদিন পরই পরীক্ষা তাই আমার কিছু টাকার প্রয়োজন বাবা ।"
_ "আচ্ছা মা ।
কত টাকা প্রয়োজন?"
_ "এত এত.."
_ "আচ্ছা মা আমি তোমায় কাল টাকাটা দিলে তুমি রাগ করবে না তো?"
_ "না বাবা,
ঠিক আছে । কালই দিও । রাখছি বাবা, ভালো থেকো ও শরীরের খেয়াল রেখো । আর মাকে আমার প্রণাম জানিয়ো ।"
... পরেরদিন সকালেই মেয়ের নাম্বারে এতগুলো টাকা পাঠালেন । টাকা পেয়ে সুনয়না খুশি । একবারো বাবার কাছে জানতে চায়নি কোথা থেকে টাকা এনে দিলেন ।
-
সুনয়না এখন ইচ্ছে করেই টিউশনি করছে না । আগে কলেজের কোনো ছুটি থাকলে মা-বাবার সাথে ১ টা দিন হলেও কাটাতে চলে আসতো বাড়িতে কিন্তু এখন আর সেটি হচ্ছেনা । আগে আসতে বলতে হতো না, এখন অমল বাবু ও অরিত্রী দেবী বলেও তাঁদের মেয়েকে বাড়িতে আনাতে পারছেন না ।
-
সুনয়না এখন দিনদিন আরো বড় হচ্ছে । নতুন নতুন মানুষদের সাথে তার পরিচিতি বাড়ছে । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব গড়ে উঠছে । সবার সাথে ফেসবুকে কথা বলতে বলতে ধীরে ধীরে সে ফোনালাপও শুরু করে । সারাদিনের কাজ শেষে অমল বাবু বাসায় এসে হাত-মুখ না ধুয়ে প্রথমেই মেয়েকে ফোন করেন, মেয়ে হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসলো কি না । আর সেই মেয়েকেই কি না ফোন করে ওয়েটিং এ পান ।
সুনয়না আগে কারো সাথে ফোনে কথা বলতো না কিন্তু যদিওবা ওয়েটিং এ পাওয়া যেত তখন সুনয়না ওর কল কেটে দিয়ে আগে বাবা কে কল দিতো কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না ।
অমল বাবু হাত-পা ধুয়ে এসে যখন আবার মেয়েকে কল দেন, তখনও দেখা যাচ্ছে যে মেয়ের ফোন ওয়েটিং এ আছে । বাবা মন খারাপ নিয়েই খেতে বসলেন । অরিত্রী দেবী হাতপাখার বাতাস করছেন আর গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবছেন । অমল বাবু ভাত খেয়ে হাত ধুয়ে আবার মেয়েকে ফোন করলেন । কিন্তু মেয়ের ফোন তখনও ওয়েটিং এ । মেয়ের এখন দেখতেও ইচ্ছে করছে না কে ফোন করলো । সে তার মতো করে কথা বলে যাচ্ছে । এদিকে সুনয়নার বাবা-মা দুজনেই মেয়ের এরুপ ব্যবহারে মন বিষণ্ণ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন । কিন্তু তাঁরা দুজনের কেউই ঘুমাতে পারছিলেন না । তাঁদের মেয়ে এমন হয়ে যাবে বা হয়েছে সেটা উনারা ভাবতেও পারছেন না । একসময় ঘুমিয়ে পড়লেন ।
-
রাত ১ টা বাজে । হঠাৎ অমল বাবু ঘুম ভাঙ্গলো মেয়ের কথা ভেবে । উঠে পানি খেলেন আগে । অরিত্রী দেবীকে জাগালেন । তিনিও উঠলেন । বিছানার পাশের ছোট্ট টেবিল থেকে ফোনটি হাতে নিয়ে মেয়ের নাম্বারে কল দিলেন । এবারও মেয়ের ফোন ওয়েটিং এ । এবার আর সহ্য হলো না । মোবাইল আছাড় মারলেন মেঝেতে । ঘুমিয়ে পড়লেন, এদিকে অরিত্রী দেবী জানলার পাশে গিয়ে গালে হাত দিয়ে আকাশের পাণে চেয়ে রইলেন । আর গাল বেয়ে চোখের জল পড়ছে ।
-
সকাল হলো । অমল বাবু ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে সোজা উনার দোকানে চলে গেলেন । অরিত্রী দেবী ভাবতে লাগলেন, যে বাবা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পরই মেয়েকে আগে ফোন দিয়ে জানতেন কি করছে না করছে, পড়তে বসছে কি না । আর আজ সেই বাবা-ই মেয়ের এমন ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে ফোন ভেঙ্গে সোজা দোকানে চলে গেলেন ।
... ওদিকে সুনয়না ফোনে কথা বলে বলে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছে বুঝতেই পারেনি । সকালে উঠে দেখে বাবার অনেকগুলো কল । সে একবারও দেখার চেষ্টা করেনি যে, ও ফোনে কথা বলার সময় কে ফোন দিয়েছিলো । বাবার একেক সময়ে একেকটা কল দেখে সে খুবই কষ্ট পেলো । ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই সে বাবাকে কল দিলো কিন্তু ফোনে কল ডুকলো না । সেদিন আর সুনয়না ক্লাসে যায়নি । বাবাকে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে । ৫ মিনিট অন্তর কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু নাহ! ডুকছে না কল । চিন্তায় পড়ে গেলো সুনয়না । বাবা কি রাগ করলেন আমার উপর? আমি কাল খুব বড় ভুল করেছি! এসব-ওসব ভাবতে লাগলো আর কাঁদতে লাগলো ।
বাবার মোবাইল তো কখনো বন্ধ থাকেনা । ২৪ ঘন্টাই চালু থাকে । বাবা আমাকে সবসময়েই বলতেন যে, যত সমস্যাই থাকুক না কেন কখনো মোবাইল বন্ধ রাখবা না । আর আজ সেই বাবাই কি না আমার উপর রাগ করে বন্ধ রাখলেন ।
সুনয়না বুঝে উঠতে পারছে না কীভাবে বাবার সাথে যোগাযোগ করবে । মার কাছেও ফোন থাকে না । বাবা কখনো মাকে মোবাইল কিনে দেন নি ।
-
অরুন্ধতীকে ফোন করলো এই ভেবে যে, যদি ও বাড়িতে থাকে তাহলে বাসায় পাঠাবে কিন্তু অরুন্ধতী তো ঢাকায় । সারাটা দিন ওর মন খারাপে কাটলো । কিন্তু একবারও সে ভাবেনি, বাড়ি যাবে । গিয়ে বাবাকে বকবে 'কেন তিনি মোবাইল বন্ধ রেখেছেন ।' কিন্তু এই হিতাহিতবোধটুকও ওর হয়নি । কেনই বা আসবে, ওর মন ভালো করে দেওয়ার জন্য অনেকেই আছে ।
সারা বিকেলে গড়িয়ে সন্ধ্যে হলো । অমল বাবু একটু তাড়াতাড়িই দোকান বন্ধ করে দিয়ে বাসায় যাবেন ঠিক করলেন । মন ভালো নেই । "রাগ করে মেয়েকে সারাদিন একটাও কল দেননি । মেয়েটা হয়তো কষ্ট পাচ্ছেন । নাহ এতটা কঠিন হওয়া ঠিক হয়নি ।" এসব বলতে লাগলেন নিজেকেই ।
বাসায় যাওয়ার আগেই শহরে গিয়ে একটা মোবাইল কিনে নিয়ে আসলেন । নিয়ে বাসায় গিয়ে মেয়েকে ফোন দিলেন । ওদিকে সুনয়না বাবার ফোন দেওয়ার সময় হয়ে গেছে ভেবে আর কিছুক্ষণ এর ভিতরে কারো সাথে ফোনে কথা বলেনি । ঠিকসময়েই ফোন আসলো এবং কথা বললেন ।
সুনয়না কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চাইলো বাবার কাছে । মা-বাবার মন, তাই মেয়ে ভুল বুঝতে পেরেছে ভেবে ক্ষমা করে দিলেন আর কাঁদতে মানা করলেন । সেদিন অনেক্ষণ কথা হলো মা-বাবার সাথে । অনেক খুশি অমল বাবু ও অরিত্রী দেবী ।
-
চলবে...
16 January, 2019
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:২৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×