নারী তুমি এমন কেন ?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
“ভালবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন, তবে কেন মিছে ভালবাসা”।
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ বইয়ের উৎসর্গপত্রে হুমায়ন আহমেদ গুলতেকিনকে লিখেছিলেন এসব কথা। বাদল দিনের সে কদম ফুল এক সময় বাসি হয়ে যায়। সময়ের স্রোতে ভালবাসার মানুষ একসময় পর হয়ে যায়।স্বার্থ পূরন হলে ভালবাসায় চিড় ধরে, ক্লান্তি আসে। যে জীবন জীবনের জন্য, মানবতার জন্য কাজ করে; সেই জীবন হারিয়ে যাওয়ার মতো দুর্ভাগ্যজনক ও বেদনাদায়ক বড় ঘটনা বোধকরি আর নাই। আপন-পর, আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিতের গন্ডি এক্ষেত্রে থাকে না। শোক সাগরে সকল মানুষকেই ভাসায়।
এখন আমি ক্লান্ত , অবসন্ন। নিঃসঙ্গতা আশীর্বাদের বদলে অভিশাপ হয়ে উঠেছে। একটা নীরব আত্মবিশ্বস্ত নৈকট্য ছিল আমাদের দুজনের মধ্যে সেটা কেন যেন আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। হয়তো এটা আমার ব্যর্থতা, না হয় অবহেলা। কিন্তু তার কর্তব্য সে পালন করে যাচ্ছে কোন কিছু দাবী না করে। জানিনা কেন ? হয়তো এটা তার দায়বদ্ধতা।
কে যাবে ব্যাখ্যা করতে নিজের ভেতরের অবস্থানটিকে ? আমার অবস্থান আমার ভিতরই থাক। কেন অন্যের কাছে নিজের টোটাল সত্তার স্বরূপকে নগ্নভাবে উৎঘাটন করতে যাব ? কী দায়ে ? কিসের প্রয়োজনে ? সব দায় আর প্রযোজন তো আজ প্রায় শেষ। তবে কেন নিজকে বড় করে জাহির করা ? নিজের রুচি ও চরিত্রের বাইরে জীবনে কখনো কিছু করিনি। করার চেষ্টাও করিনি, করতে গিয়েও করতে পারিনি। সব সময় নিজের কথা না ভেবে পরিবারের শক্ত অবস্থান দাড় করাতে নিজকে নিজের স্ত্রী সন্তানকে অধিকার বঞ্চিত করেছি। রাজনীতিতে নিজের অবস্থান তৈরী করেছি কিন্তু সেটা নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারিনি। রাজনৈতিক সুফল আমি ভোগ করতে পারিনি। যারা আমার খ্যাতি যশ ব্যবহার করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত তারা আমাকে আজ কেউ চিনতে চায় না।
অবিশ্বাস্য খ্যাতি ও ব্যস্ততা আমাকে আমার স্ত্রী সন্তানদের কাছ থেকে ক্রমাগত দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। আমার স্বভাবগত উদ্যোগহীনতাও একটা কারণ বটে। আমি নিজকে আমার পরিবারের মধ্যে কখনোই সীমাবদ্ধ রাখিনি। তাই বার বার পরিবার থেকে কষ্ট পেয়েছি।শত কষ্টের মাঝে একজন আমাকে আগলে রেখেছে তার প্রেমময়ী স্পর্শ আমার মৃত্যুমুহূর্তকে পুষ্পময় করে রেখেছে। খুব কম মানুষের জীবনে এ দুর্লভ সৌভাগ্য জোটে। এ নারী আমাকে দুই হাত ভরে দিয়েছে তার সমস্ত কিছু উজার করে। চিরকাঙ্ক্ষিত অনুভূতি কখনো ব্যক্ত করেনি, আমিও বুঝার চেষ্টা করিনি। এত অঢেল পাওয়া ক’জন এর নসিবে জোটে ?
ভালবাসার অপূর্ব অনুভূতি কখনো বুঝতে পারিনি। রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় পাড় করতে গিয়ে নারীর চিরন্তন ভালবাসা কখনো বুঝা হয়নি, তবে কাউকে যে ভাল লাগেনি তা নয়, ভাল লাগলেও রাজনীতির ক্যারিয়ার নষ্ট হবে বিধায় সেভাবে কাউকে জীবনে জড়াতে পারিনি। এ নারীকে না পেলে বোধহয় জীবনের খানিকটা অপূর্ণতা রয়েই যেত। আমার স্ত্রী কর্মাসের ছাত্রী তাই অঙ্কে ভাল ছিল কিন্তু মাঝ বয়সে এসে তার জীবনের জটিল অঙ্ক মেলাতে পারছে না। জন্ম মুহূর্ত থেকে একটা মেয়ে অবচেতন মনে বুঝতে শুরু করে সে মেয়ে মানুষ। সে অপরের অধীন। পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে বাঁচার অধিকার তার নেই। জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে হয়তো বাবা-ভাই, স্বামী নয়তো ছেলে। এ পরাধীনতার অন্তরালে থাকতে থাকতে একসময় নিজের বিবেকের স্বাধীনতাটুকুও সে হারিয়ে ফেলে। জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। কিন্তু নারী সংসারে, সমাজে যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।কখনো নিজের ইচ্ছায়, কখনো পরিবারের চাপে, কখনো সমাজের নিষ্পেষণে। এটা প্রত্যেক নারীর একটা অপ্রাপ্তি।
সবচেয়ে কাছের মানুষ যারা আমাকে সাহায্য করার কথা ছিল, দুঃসময়ে আমার পাশে থাকার কথা ছিল, আমার বাচ্চাদের মাথায় ভরসা আর নির্ভরতার হাত রাখার কথা ছিল, স্বার্থের টানাপড়েনে তারা নিজেদের রং বদলিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে।
তারপরও আমি নিজেকে ভাগ্যবঞ্চিত মনে করি না। আমি এখনও সুস্থ আছি, এখনো বেঁচে আছি। এ জীবনে আমার পাওয়া অনেক। এই যে এত মানুষের ভালোবাসা, কষ্টের সময় পাশে থাকা, কজনের ভাগ্যে জোটে। তাই পৃথিবীর কাছে আমার কোনো অনুযোগ নেই, আক্ষেপ নেই। প্রকৃতির নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে। এ নিয়মের আবর্তেই হয়তো কাছের মানুষ দূরে চলে যায় আর দূরের মানুষ কাছে। আমি একা একা বসে আছি। কিছুক্ষন আগে ইফতার করেছি, নামাজ পড়ার পর শরীরটা ক্লান্ত লাগায় অফিসে যাওয়া হলো না।ভাবনার কক্ষ পথে কেবল এ নারীর মুখ ভেসে উঠতে লাগল।
এক জীবনে মানুষ অনেক কিছুই পারে না। কিন্তু এ নারী তা পারছে এবং করছেও তিনি স্নেহময়ী বধূ, মমতাময়ী মা, দায়িত্বশীর শিক্ষাগুরু, স্বামীর প্রতি দায়িত্বপালনকারী সফল স্ত্রী। সে আমার প্রেমময়ী, প্রেরণাদায়িনী, শক্তিদায়িনী। এ নারী আমার কতটা প্রভাব ও কর্মকৌশলতার সাথী তা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা আমার পক্ষে সত্যিই দুরহ। এ নারী আমার জীবনে এসে আমার পরিবার, সংসার এবং আমার গৃহাভ্যন্তরে এমন একটি পরিবেশ তৈরী করে রাখছে যার উপর নির্ভর করে দুর্গমগিরি, দুস্তর পারাবার পাড়ি দিতে পারা যায়।
একজন মানুষের ভিতরগত রূপটি দেখার জন্য তার কাছাকাছি অবস্থান করা, তাকে প্রতিক্ষেত্রে পর্যবেক্ষন করা অতি জরুরী হয়ে পড়ে।নিখুঁত পর্যবেক্ষন শক্তিই একজন অতি কাছের মানুষকেও চিনতে সহয়তা করে।আজ আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা আমার মনোজগতকে সাময়িকভাবে নাড়া দিয়েছে। একজন মানুষ কিভাবে এতকিছু করতে পারে ? এত ধৈর্য, এত ইচ্ছা শক্তি কিভাবে সে ধারন করে ?
এ নারী প্রায়ই বলে প্রচুর অর্থ সম্পদ আর টাকা থাকলেই মানুষের মন বড় হয় না বা মানুষ সুখী হয় না দুঃখকে অতিক্রম করেই সুখকে স্পর্শ করতে হয়। আবার মাঝে মাঝে যে সুখ আসে তাও দুঃখমিশ্রিত। অবিমিশ্র সুখ বলে কিছু নেই। তারপরও কোনো কোনো দুঃখ, বিরহ লক্ষ্য করা যায়। তবে এসব কোনো বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। সেটা জীবনেরই অংশ। জীবন যে সব মিলিয়ে সামনে চলার। তাই সব রকম চিত্রই কম বেশি সব সময় দেখা যায়। জীবনের মধ্যেই তা ধরা দেয়। বড় মনের পরিচয় প্রকাশ পায় তার ব্যবহার আর আচার আচরনের মাধ্যমে। যে মানুষ অন্য মানুষের প্রাপ্ত অধিকারকে পাশ কাটিয়ে নিজের বুঝটা পুরোপুরি বুঝে তাকে কি মানুষ হিসাবে গন্য করা যায় ? নিজের সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে অন্যের যে সামান্যতম উপকারে আসে সেই তো প্রকৃত মানুষ।
মাঝে মাঝে আমি নিজেই নিজকে চিনতে চেষ্টা করি। মনে করি এটা আমার জীবনের পরীক্ষা ক্ষেত্র। কিন্তু সবগুলো জিনিস কেমন যেন চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে আমাকে । হতবুদ্ধি হয়ে কঠিন সময়কে আমি কেবল আলিঙ্গন করে চলেছি। কোথায় চলছি তা জানিনা।এমন কিছু মানুষ থাকে পৃথিবীতে যারা কাছে এলে অন্য সব ভুলে যেতে চায় মন।জীবনের এই শেষ বেলায়, যখন আকাশে অস্তরাগ আর ছায়া দ্রুত নেমে আসছে আবাদভূমিতে, যখন গাছের ডালে পাখিরা শেষ বেলার কথাগুলি বলে নিচ্ছে, তখনও এ নারীর সন্দর্শনে মন পাগল হয়ে যায়। আর এভাবেই জীবন চলে যাবে নদীতে ভেসে ভেসে যাওয়া ডিঙ্গি নৌকার মতো। তারপরও তাকে পরিপূর্ণ ভাবে দেবার বাসনা শেষ হবে না।
কান্না নাকি মানুষের মানবিক অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ কোন কোন বেদনা ও অপমান একে অন্যের সাথে ভাগ করে নেয়। এ কেবল তাদেরই উপলদ্বির বিষয়। সেইসব বেদনায় এক নারীর অশ্রু অন্য নারীর চোখকে আর্দ্র করে। এ এক অনিবার্য ভাগাভাগি, অন্যরূপ সহমর্মিতা। কিন্তু এ নারীর বেলায় নয় কেন ? এ নারী কি শুধু দিয়েই যাবে ? কিছু কি পাবে না অন্যের কাছ থেকে ? এ কেমন বিচার ? কিছুই কি চাইবার নাই তার ?
তার যুক্তি দুঃখ মানুষের ছায়ার মতো। অন্ধকারে মিশিয়ে থাকে কেবল। আলো পেলেই ফুটে বেরোয়। ভাবনায় তুমি জগৎ সংসার ত্যাগ করতে পারো, কিন্ত জগৎ সংসার তোমাকে ছাড়বে না। আমৃত্যু তুমি সকল দুঃখ-কষ্টে, রোগে-শোকে জড়িয়ে থাকবে। নানান ভুল-ত্রুটি, মর্যাদা-অমর্যাদা তোমাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এর পরও তোমাকে সকলকে নিয়ে সামনে এগুতে হবে।
এত কিছুর পরও এ নারীকে আমি কিছুই দিতে পারিনি, শুধুই নিয়েছি।তারপরও আমার ভালবাসার কোন কমতি নেই তার জন্য আমিও মনপ্রান উজার করে ভালবাসি। আরো ভালবাসতে চাই। তাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে আমার প্রিয় শিল্পী মানবেন্দ্র এর বিখ্যাত গান দিয়ে আমার ভালবাসার, শ্রদ্ধার বর্হিপ্রকাশ করতে চাই………….
“আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি
তবু এ যেন গো কিছু নয়,
কেন আরো ভালবেসে যেতে পারে না হৃদয়” ?
****************
২২/০৮/২০১২
আল-খোবার, সৌদি আরব।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!
দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক
১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন
সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(
আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি
অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।
স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন