এই লিখাটা লিখছি এমন একটা ঘটনা নিয়ে, যা মনে হয় অন্যদের একটু হলেও কাজে আসতে পারে।
আমার বিয়ের এক বছর পরে আমি জানতে পারি যে আমার মাইনর থ্যালাসেমিয়া। অবাক হয়নি, কারন এটা আমার বাবার আছে। এর মাঝে 'শ' এর নাকের একটা অপারেশনের জন্য সিঙ্গাপুর যাই, অপারেশনের জন্য রক্ত পরীক্ষা করলে ধরা পরে যে 'শ' ও আমার মত মাইনর থ্যালাসেমিক। এটা জানার পর আমি খুবি আপসেট হয়ে পরেছিলাম। কারন আমি জানতাম, হাসব্যান্ড ওয়াইফ দুজনি মাইনর থ্যালাসেমিক হলে তাদের বাচ্চা অবশ্যই মেজর থ্যালাসেমিক হবে আর এই রুগিরা ১৫/১৬ বছরের বেশি সাধারনত বাঁচেনা। বোন মেরু ট্রান্সপ্লান্ট করালে হয়ত ২০/২১ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। চোখের সামনে বাচ্চার এত কষ্ট দেখার চেয়ে না নেয়াই ভাল অপশন মনে হল।
যখন আমার আপসেট অবস্থা, তখন একজন সাজেস্ট করল হেমাটোলজিস্টের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করতে। আমরা দুজন গেলাম, ডাক্তারের সাথে কথা বলে যেন আশার আলো দেখতে পেলাম। জানলাম, হাসব্যান্ড ওয়াইফ দুজনেই মাইনর থ্যালাসেমিক হলে ২৫% সম্ভাবনা থাকে বাচ্চার মেজর থ্যালাসেমিক হবার আর ৭৫% সম্ভাবনা থাকে মাইনর বা সম্পূর্ন সুস্থ হবার। আর এটা জানা যাবে একটা টেস্টের মাধ্যমে যার নাম "গ্লোবাল চেইন এনালাইসিস"। এই টেস্ট করতে হবে ভ্রুনের ১২ সপ্তাহ হবার আগে। এর একটা কারন হল, এই টেস্টের জন্য ভ্রুনের একটা নির্দিষ্ট সাইজ হতে হয় আর যদি ধরা পরে যে এটা মেজর থ্যালাসেমিক তাহলে যাতে ১২ সপ্তাহ আগে এবোর্ট করা যায়। (এই টেস্ট এখন বাংলাদেশেও হচ্ছে)।
এই টেস্টের মধ্য দিয়ে আমি গেছি। টেস্ট করতে কষ্ট হয় ঠিকি কিন্তু সুস্থ বাচ্চার কথা চিন্তা করলে এর কাছে কষ্টটা খুবি সামান্য। যেদিন টেস্টের রেজাল্ট আমাকে ফোন করে জানাল আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি খুশিতে। কারন, আমার ছেলে (ওরা একবারে ডিএনএ টেস্ট করে জানিয়ে দিয়েছিল ভ্রুনটা ছেলের) মেজর থ্যালাসেমিক না। এখন ছোট সোনা দেড় বছরের। সারাদিন দুষ্টামিতে ব্যাস্ত থাকে, একটা দুটা শব্দ বলে, অনেক ভাষায় কথা বলে
হেমাটোলজিস্টের কাছে আরও জানতে পারলাম, মাইনর থ্যালাসেমিক লোকের সংখ্যা এশিয়াতে খুব বেশি। তাই তারা সাজেস্ট করে বিয়ের আগে বা পরে হাসব্যান্ড ওয়াইফ দুজনি যেন রক্ত পরীক্ষা করে নেয় যাতে আগেই মেন্টালি প্রিপেয়ার থাকে সব অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাবার। ডাক্তার আরো একটা জিনিস সম্বন্ধে জানতে বলেছিলেন, তা হল রক্তের গ্রুপ। একজনের পজিটিভ আরেকজনের নেগেটিভ হলে কিছু প্রিকোশনারি ব্যবস্থা নিলে সুস্থ বাচ্চা হবে। এই সমস্যার জন্য আমার এক চাচার ৪ ছেলে মেয়ে মারা গেছে।
তাই আমার পরিচিত সবাইকে অন্তত এটা বলি, বাচ্চা নেবার আগে যেন দুজনি রক্ত পরীক্ষা করে জেনে নেয় তাদের অবস্থা, তাহলে আর আমার মত ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবেনা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




