আমার অনেক নেশার মধ্যে অন্যতম একটা হচ্ছে নকিয়ার নতুন মডেলের মোবাইল সেট দেখলে যদি পছন্দ হয়ে যায় সেটা যেভাবেই হোক কেনা। যখনই কিনি তখন সেটা এতই প্রিয় হয়ে যায় যে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলি একে আমার কাছ থেকে কোনদিন দূরে সরাবনা কিন্তু.....।
মাস ছয়েক আগে আমার অতি প্রিয় (!!) একটি সেট নিলাম, হাতে নিয়েই মনে হল একেই তো এতদিন খুঁজছিলাম, আমার কাছ থেকে কেউ লুকিয়ে রাখতে পারলনা
প্রতিদিনের মতই সকালে আমার ছেলেকে বাথরুমে বসিয়ে মোবাইলে মেইল চেক করছি। ওয়াফি মোবাইল নেবার জন্য কান্নাকাটি করছে দেখে ওর হাতে দিতে বাধ্য হলাম, কারন কান্না শুরু করলে তাকে আর বাথরুমে বসিয়ে রাখা যাবেনা। ওটা নিয়ে সে কানে দিয়ে ভাব করছে যেন কারো সাথে কথা বলছে। এর মাঝেই আমি মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য মোবাইলের উপর থেকে চোখ সরালাম আর তখনি মনে হল টুপ করে একটা আওয়াজ। সাথে সাথে ওয়াফির হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি মোবাইল নেই, যা বুঝার বুঝে ওকে কমোড থেকে নামিয়ে তাকিয়ে দেখি আমার সাধের মোবাইল কমোডের ভিতর। কমোডের ভিতর পানি ছাড়াও আর কিছু আছে কিনা এসব কোন কিছু চিন্তা না করে হাত বাড়িয়ে তুলে এনেই ঝাকাঝাকি করে পানি ঝাড়লাম, ফু দিয়ে পানি শুকানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু হায়, মোবাইল আমার কোমায় চলে গেল। বার বার ওন করার চেষ্টা করেও লাভ হলনা। প্রথম দিকে একটু বাতি জ্বলে উঠলেও পরে আর তাও হলনা। নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা হল চিন্তা করে যে এত জায়গা থাকতে বাথরুমেই কেন ছেলের হাতে মোবাইল দিলাম।
যাই হোক, মোবাইল কে পাঠালাম নোকিয় সার্ভিস সেন্টার হসপিটালে। একদিন পর জানতে পাড়লাম, ভিতরের সার্কিটে সমস্যা হয়েছে, কিছুদিন সময় লাগবে। এক সপ্তাহ পরও একি খবর। কবে মোবইল ছাড়া পেয়ে বাসায় ফিরবে সেই দিন গুনে যাচ্ছি। এর মাঝে দেশের বাইরে যাবার কথা ঠিক হল, মোবাইল কে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করিয়ে এনে রওনা করলাম বিদেশে। মোবাইল আমার তখনও কোমায়। ওখানে ঘোরাঘুরিতে এত ব্যাস্ত ছিলাম যে কোন সার্ভিস সেন্টারে যাওয়া হলনা। শেষ পর্যন্ত ওই অবস্থায় দেশে ফিরে আবার আগের হাসপাতালে ভর্তি করালাম। এবার আরো কিছু টেস্ট করানোর পর জানতে পারলাম, কান্ট্রি লক হয়ে গেছে। ওখান থেকেই ইস্টার্ন প্লাজার এক ডাক্তারের এড্রেস দিল। ওখানে নিয়ে গেলে জানতে পারি, কোন কিছুই হয়নি, একটা অপশন অফ হয়ে গেছে। ওটা ওন করার সাথে সাথেই মোবাইলের হার্টবিট ফিরে আসল, আবার হাসি মুখে চলাচল করা শুরু হল। ফোন আসলেই তার মধুর আওয়াজে আমাকে জানায়, মেসেজ আসলে তার নরম কন্ঠে সুমধুর সুর তোলে।
মোবাইল আবার সুস্থ হয়ে আমার হাতে হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি আর আমার মোবাইল দুজনেই আজ দুজনকে পেয়ে খুশি

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




