আমার স্কুলের (আমেনা-বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল) সাবেক অনেক শিক্ষার্থীরই বিষয়টি হয়তো মনে আছে, একবার আমাদের স্কুল পরিদর্শন করতে আসেন দেশের বিশিষ্ট নাট্যকার ও স্বনামধন্য কবি ‘মমতাজ উদ্দীন’। আর সেই সময়ে দেশের গ্রাম-বাংলার অন্যতম বড় ক্রেজ ছিল শিল্পী ‘মমতাজ!’ আমরা সবাই অধীর আগ্রহে সকাল থেকে বসে ছিলাম মমতাজকে একঝলক দেখার জন্য। কতজনের কত ফন্দি। কত আশা কত প্রত্যাশা তা ভাবলেই যেন হাসি পায়।
বাহারি রঙ্গ আর শত শত ফুলে স্টেজ সাজানো হয়েছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবে হবে প্রায়। মমতাজকে একবার দেখার জন্য স্কুলে বহিরাগতসহ স্কুলের কেন্দ্রীয় মাঠ প্রাঙ্গনে প্রায় হাজার খানেক দর্শকের ভীড়। দাড়িয়ে থাকাই যেন দায় হয়ে দাড়িয়েছিল তখন। প্রচন্ড গরমে জামা-কাপড় শরীরের সাথে লেপ্টে গিয়েছে। একজনের পায়ের উপর আরেকজনের পা। একজনের ঘাড়ের উপর আরেকজনের নিশ্বাস। সবাই যেন একাকার হয়ে গেছে। কিন্তু সেদিকে কারোও ভ্রুক্ষেপ নেই। সবার মাথায় বাসা বেঁধেছে ‘মমতাজ দর্শন’
হাজারো প্রাণের উচ্ছাস প্রমাণ করে দিচ্ছিল সবাই শিল্পী মমতাজকে দেখার জন্য একেবারে আকুল হয়ে আছে। হঠাৎ স্টেজ থেকে অপরিচিত এক গলার আওয়াজ, ‘হ্যালো হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং, আপনাদের সবার অবগতি জন্য জানাতো যাইতেছে যে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন মমতাজ উদ্দীন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন।’ নাম বলা শেষও হয়নাই সবার মধ্যে উত্তেজনার পারদ উপচে পড়তে পড়তে শব্দের রোল মাঠকে পেড়িয়ে গ্রাম শুদ্ধু ছাড়িয়ে গেছে। হামিগুড়ি দিয়ে সবারই চোখ এখন স্টেজের দিকে। ‘এবার স্টেজে এসে সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করবেন মমতাজ’ বলতেই আবারো শোড়গোল। স্টেজে একজন বৃদ্ধ প্রায় লোকের আগমণ কিন্তু হাজারো মানুষের চোখ অন্যদিকে। যখন তিনি মাইকপিসটি হাতে নিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন তখন সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো। মানুষের মনে জমানো কোটি প্রত্যাশা আর আকাঙ্খা বালির বাঁধের মতো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। হাজারো হৃদয় তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। মমতাজের কথা শুনেই হাজারো লোকের সমাগম নিমিষেই খালি হয়ে গেলো। তখন আসলেই মরুভূমি মনে হচ্ছিল মাঠটাকে। কেমন একা একা। সেই যে মতিভ্রম হয়েছে তারপর আর ভুলি নাই ‘মমতাজকে’!