somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‪স্পেশাল মেসির‬ ‪‎জন্মদিনে‬ ‎মেগা‬ ‎পোস্ট‬

২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। এক মোহনীয় জাদুকরের নাম, এক বিস্ময়ের নাম, একটি দলের নাম, একটি অনুপ্রেরণার নাম, একটি গর্বের নাম। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারের আজ জন্মদিন। ফুটবল জগতের এই অনন্য মানুষটির জন্ম আর্জেন্টিনায়, ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন। বিশ্বসেরার স্বীকৃতিস্বরূপ চারবার ফিফা ব্যালেন ডি’অররের পাশাপাশি হাজারো অর্জন মেসি পায়ে লুটোপুটি খেলে।
/
তখন আমি বেশ ছোট। জন্মদিনের এক উপহার পেয়ে আমি চমকে যাই। সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। আমার এক আত্মীয় আমার হাতে ভিন্ন এক জীবন উপহার দেয়—এক নতুন ফুটবল। তিন কিংবা চার বছর বয়সে পাওয়া সেই উপহারের জন্য আজ আমি এখানে। সেই উপহার আমার মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে বড়দিন কিংবা জন্মদিন সব সময়ই উপহার হিসেবে আমার চাওয়া ছিল ফুটবল।
/
খুব সাধারণ এক ফুটবলপাগল পরিবারে ছিল আমার বেড়ে ওঠা। আমার বাবা-চাচাদেরও ছিল ফুটবল নিয়ে ভীষণ মাতামাতি। বাবা তো এক ফুটবল ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করতেন। প্রতিদিন নিয়ম করে স্কুলে যেতাম। সেখান থেকে ফিরেই মুখে কিছু একটা পুরে রাস্তায় ফুটবল খেলতে ছুটতাম। আমি সৌভাগ্যবান আমার সাধারণ পরিবারের জন্য। বাবার দিনভর পরিশ্রমই ছিল আমাদের একমাত্র রুজি। তিন ভাইয়ের জন্য ছিল বাবা-মায়ের সব আদর।
/
ছোটবেলায় আমি বেশির ভাগ সময়ই রাস্তায় ফুটবল খেলতাম। বাড়ির বাইরে যেখানেই সুযোগ পেতাম, সেখানেই খেলতাম। সত্যি বলতে কি, পাঁচ বছর বয়স থেকে ফুটবল আমার বন্ধু। পাড়ার বড় ভাইয়েরা রাস্তার ফুটবল ম্যাচে আমাকে নিতে চাইত না। আমার কাছ থেকে যখন বল নিতে পারত না, তখন তারা আমাকে দুষ্টুমি করে মারধর করতে চাইত। রাস্তার ওপর আমার ফুটবল খেলা নিয়ে আমার ভাই ভীষণ দুশ্চিন্তা করতেন।
/
রোজিওতে আমার জন্ম। সেই এলাকার ছোট ফুটবল ক্লাব গ্র্যান্ডোলিতে আমাদের পুরো পরিবারের সবাই বয়স অনুসারে সেই ক্লাবে খেলতাম। মা–ই থাকত শুধু খেলার বাইরে। আমরা প্রতি রোববার সারা দিন ক্লাবের মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতাম। মা-দাদিও ছিলেন সেই ক্লাবের পাড় সমর্থক। বাবা তখন ক্লাবে কোচিং করাতেন, তিনিই আমার প্রথম কোচ। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা মাঠে ফুটবল প্র্যাকটিস করতাম।
/
সেই রাস্তা, সেই স্মৃতি, সেই সময়—সব আমার বদলে যায় খুব ছোট থাকতেই। স্পেনের বার্সেলোনায় আসার পরেই আমার সব পাল্টে যায়। ফুটবল খেলার বন্ধু, স্কুলের শিক্ষক-সহপাঠী, পরিবার এবং নিজের দেশ ছেড়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সে এক মহাসাগর দূরে চলে আসি। এটা ছিল আমার জন্য ভিন্নমাত্রার অভিজ্ঞতা। একদিকে বার্সেলোনা থাকার নতুন অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে ছিল বাড়ি থেকে দূরে থাকার কষ্ট। প্রথম প্রথম অনেক মন খারাপ হতো। একা একা লাগত। কান্নাকাটি করতাম অনেক সময়। নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দিতাম। ধীরে ধীরে আমি নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করি। আমার স্বপ্ন ছিল বার্সেলোনার মূল দলে ফুটবল খেলা। আমার জীবনের সবকিছু শিখেছি আমি বার্সেলোনাতে এসে। এখানেই আমি বড় হই, লেখাপড়াও এখানকার স্কুলে।
/
কিশোর বয়স থেকেই ফুটবল আমার ধ্যান-জ্ঞান। আমি ছোটবেলায় যেভাবে খেলতাম, এখনো সেভাবে খেলি। আমার খেলার ঢং একই রকম। আমি নিজের মতো খেলে যাই। বার্সেলোনাতে খেলে আমি ফুটবল নিয়ে অনেক কৌশল শিখতে পেরেছি।
/
কিশোর বয়সে প্রথমদিকে খেলার সময় ফুটবল কোচ ফ্যাবিও কাপেলো আমাকে ‘ছোট শয়তান’ তকমা দিয়েছিলেন। আমার জন্য সেটা ছিল খুবই আনন্দের। তিনি ফুটবল কোচ, তাঁর কাছ থেকে এত ছোট বয়সে প্রশংসা পাওয়া নিশ্চয়ই দারুণ ব্যাপার।
/
আমি ব্যক্তিগত সম্মাননা কিংবা নিজে বেশি গোল করতে আগ্রহী নই। আমি আমার দলের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কারটাই আনতে চাই। আমি পৃথিবীর সেরা ফুটবলার হওয়ার চেয়ে একজন ভালো মানুষ হতেই বেশি আগ্রহী। কারণ, সবশেষে আমি যখন অবসরে যাব, তখন প্রত্যাশা থাকবে সবাই যেন আমাকে বিনয়ী হিসেবেই চেনে। আমি গোল করতে পছন্দ করি কিন্তু বন্ধুত্ব করতেও আগ্রহী বেশি। দলের ফুটবলাররা আমার বন্ধু। তাঁদের ছাড়া আমি তো আসলে শূন্য।
/
আমি হারতে ভীষণ অপছন্দ করি। সেটা বাস্তব জীবনেও। দরিদ্রতা আমাকে রাগায়। আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি, যেখানে দারিদ্র্যই বাস্তবতা। সেখানে অনেক শিশু আছে, যাদের বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে হয়। অন্য কিছু করার উপায় নাই বলে অনেক কম বয়সে কাজে করতে হয়। আমি বার্সেলোনাতে একটু ভালো পরিবেশে থাকার সুযোগ পেয়েছি। বাবার সঙ্গে থাকার সুযোগ পাই। কিন্তু বাস্তবতা আসলেই ভিন্ন। অনেক বাবা হাড়ভাঙা খাটুনি দিয়ে তাঁদের সন্তানকে বড় করতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।

আজ সে অনেক পরিণত অনেক বেশি উদ্যমী, অনেক বেশি সাহসী ও সৃজনশীল। শুধু একটি অধরাই তাকে কুড়ে কুড়ে খায় আর তা আরোধ্য বিশ্বকাপ। আশা করি সে তার লক্ষ্য অর্জন করেই অবসর নিবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:২২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×