রাত তখন বারোটা। মধ্যরাতে হিসেব মতে রুমে এসে হালকা ফ্রেশ হয়ে শ্রান্ত শরীর গদিতে এলিয়ে দিয়ে ভার্চয়াল জীবনে একটু উঁকি ঝুঁকি দেয়ার কথা। কিন্তু তখন যে আমি শাহবাগ থানায়। না, কারাগারে নাহ! আমার সম্পাদক ভাইয়ের মোবাইল ছিনতাই হওয়ায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করতেই সেখানে টিউশনি ফেরত এই যুবকের গমন।
কিন্তু আপনারা ভাবছেন এখানে শুভঙ্করের ফাঁকিটা কোথায় তাই না? তাহলে শুনেন। গিয়েছিলাম আসলে মামলা করতে। সন্ধ্যা পনে ৮টার দিকে এক অজ্ঞাত ছোকরা সম্পাদক ভাইয়ের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে এক দৌড়ে চোখের পলকে পগাড়পড়। ছিনতাইকারী বলে কথা! একটা ইজ্জত আছে না!? উসাইন্ট বোল্ট তাদের কাছে যে নস্যি। আমার সম্পাদক ভাই গাড়ির মধ্যে ততক্ষণে সিট বেল্ট খুলছেন। আর পোলায় কি যোগাযোগ (রিলে) দৌড় দিতাছে যে অপেক্ষা করবো? নিমিষেই হাওয়া! আজব বিষয় হলো ভাইয়ের গাড়ীর এক পাশে র্যাবের (র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন) গাড়ী দণ্ডায়মান অন্যপাশে পুলিশের! দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ দুই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেয়ে চেয়ে ছিনতাইয়ের রোমান্টিক দৃশ্যায়ন অবলোকন করে খিল খিল করে কেলাচ্ছিলেন। আবার বোকার মতন জিগ্বেসও করেন, ‘ভাই পারছেন ধরতে?’ কন, কই যাবেন? কি করতে মুন চাবে বলেন? ‘স্যামসাঙ্গের এস ৩’ সেট কয়েক সেকেণ্ডের ব্যবধানে জীবন থেকে উধাও। ১৫০০ কন্ট্যাক্ট নম্বর, হাজারো ছবি, সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সব ভার্চুয়াল জগতের অটো সাইন ইন। কার মাথা ঠিক থাকে বলেন?
তারপরও ভাইয়ে শান্তভাবে থানায় গেছেন। পেশায় মনোঃ বিশেষজ্ঞ হলেও তিনি একটি পত্রিকার সম্পাদক। পুলিশকে গিয়ে জানান তার দূর্ধর্ষ রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণী। শুনে থানার কর্তব্যরত পুলিশ তাঁকে জিডি করতে বলেন ও সাথে হারিয়ে গেছে বলে চালিয়ে দিতে বলেন। ভাই বললেন, হারায় নি তো, ছিনতাই হয়েছে। পুলিশ বলে- ‘ঐ একই ব্যাপার’। ভাইও রাজি না হয়ে পারলেন না। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু না শুভঙ্করের ফাঁকিটা যে এখনও উত্তেজনায় কাতড়ে কাতড়ে অপেক্ষা করছে। পুলিশ সাহেব তাদের দায়িত্ব কাজ শেষ করলে ভাইয়ের সাথে আসা এনটিভির এক বড় ভাই তাকে জিগ্বাসুলো, আচ্ছা ছিনতাই দিলে সমস্যা কোথায় ছিলো? পুলিশ বাবু বলিলেন, তদন্তের স্বার্থে সরকারের অযাচিত বেশি অর্থ ব্যয় হইবে। কি দরকার বলেন সরকারের চাপ বাড়ানোর?
তখন সাংবাদিক ভাই পুলিশ গালে অদৃশ্য এক চপাটাঘাত সেঁটে দিলেন। বললেন, কাহিনী আসলে সরকার নয় বুঝলেন? কাহিনী হলো- প্রত্যেকদিন প্রত্যেক থানাকে পুলিশের হেডকোয়ার্টারসে দৈনন্দিন সকল অপরাধের বা জিডির তথ্য-উপাত্ত পেশ করতে হয়। কোনভাবেই যাতে ছিনতাইজাতীয় বিষয়গুলো না দিতে হয় সেটাই যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল দায়িত্ব। এবং দেখাতে হবে ঐ থানার নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতন্ত্র পহরীর ন্যায় কার্য সম্পাদন করে চলছে। মানুষতো দূরের কথা কোন পাখি, পোকা-মাকড়ও পুলিশে অনুমতি ছাড়া কিছুই করতে পারে না। কোন ভাবে দেখানো যাবে না যে অত্র এলাকায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি মানে বাহিনীর বেহাল দশা ও দায়িত্ব জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
এখন আপনারাই বলেন, আমরা কি আসলেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে বসবাস করছি? আমরা কি আদৌ নিরাপদে আছি? আপনাদের উপরই না হয় ছেড়ে দিলেম……