সম্ভাবনাময় কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকে নিয়ে এমন গড়িমশির মানে টা কি? মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে আসার সময় একধরনের ভাষ্য দেয়া হয়েছিল এবার তদন্ত কমিটির ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দেখাচ্ছে অন্য হিসেব।
প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সম্পর্কে আজ ময়নাতদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামদা প্রসাদ সাহা সাংবাদিকদের বলেন, তনুকে ধর্ষণের কোনো #আলামত পাওয়া যায়নি। কোনো রাসায়নিক ক্রিয়ায়ও তনুর মৃত্যু হয়নি।
কিন্তু ৩১ শে মার্চ সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেছিলেন, “তনু যে হত্যার শিকার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে।” কেনই বা ধর্ষণ কিংবা হত্যাকারীদের বাচাতে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছে। এসব বিচারহীনতার রাজনীতি থেকে রাষ্ট্র কবে বেরোবে?
আজ প্রায় প্রতিদিন বাংলার নারী ধর্ষিত ও খুন হচ্ছে। সব ধর্ষণ ও খুনের বিচার হয় এবং অপরাধী শাস্তি পায়—এমন কথা আমরা বলতে পারব না। অনেক ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত পর্যন্ত হয় না। বিচার তো পরের কথা। দু-একটি ঘটনা গণমাধ্যমের কারণে ঝড় তোলে। যেমন দিনাজপুরের হতভাগিনী ইয়াসমিনের ঘটনাটি। দুঃখিনী ইয়াসমিন পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা দিনাজপুরের দশমাইল নামক জায়গায় ধর্ষিত ও খুন হয়েছিল। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু গণমাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি ব্যাপক প্রচার পায়। আমরাও নিন্দা করে উপসম্পাদকীয় লিখি। সাধারণ মানুষ, রাজনীতির লোক, বিভিন্ন পেশাজীবী প্রভৃতি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন। বিস্ময়কর প্রতিবাদ ছিল আমাদের নারী সংগঠনের নেত্রীদের। তাঁরা তাঁদের প্রতিবাদ দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। দেশ-বিদেশে তাঁদের আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। পুলিশ সদস্যদের অপরাধের দায় তাঁরা চাপিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে। তাঁদের বক্তব্য ছিল: এ কেমন নারী সরকারপ্রধান যে দেশে নারী ধর্ষিত ও খুন হয়!
ওই সময় বেইজিংয়ে বিশ্ব নারী সম্মেলন হয়। অপ্রত্যাশিতভাবে চীন সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের এক প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে আমি চীন যাই নারী সম্মেলন শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরে। বেইজিং বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সেরে বাইরে বেরোতেই ‘বাংলাদেশ’ নাম লেখা প্ল্যাকার্ড দেখেই বুক ভরে যায়। বঙ্গ ভদ্রমহিলাদেরও উপস্থিতি দেখি। কেউ চেনা, অনেকে অচেনা। প্ল্যাকার্ডগুলোতে শুধু বাংলাদেশ নয়, লেখা ‘ইয়াসমিন’ শব্দটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীনেত্রীদের জানানো হয়েছিল বাংলাদেশে ইয়াসমিন নামে এক নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে।
#তনুর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এমন ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরির মানেটা কি? দেশের মানুষকি এতই বোকা? নাকি কর্তব্যরতরাই দেশের একমাত্র চালাক?