somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবদুস সামাদ - একজন বীর প্রতীক (!)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্র্যাক প্ল্যাটুনের নাম আমরা প্রায় সবাই জানি। রুমী, জুয়েল, বকর, আজাদ এর মত আবদুস সামাদ নামের একজন এই ক্র্যাক প্ল্যাটুনের গেরিলা সহযোদ্ধা ছিল। ১১ই আগস্ট ’৭১ এর “হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক্সপ্লোসিভ বিস্ফোরণ” এর মূল নায়কও ছিল এই আবদুস সামাদ যে কিনা নিয়ন সাইনের মালিক- সামাদ নামেই বেশি পরিচিত। এছাড়াও আগস্টের ১ম সপ্তাহে “ফার্মগেট অপারেশন”, লাট ভবন (বর্তমানে বঙ্গভবন) সংলগ্ন দাউদ পেট্রোলিয়াম লিঃ এর পেট্রোল পাম্প অপারেশন ও নর্থ সাউথ রোড টু মোহাম্মদপুর এলাকায় একরাতে ৬টি মাইন বিস্ফোরণে যে অপারেশন গুলো গেরিলাদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছিলো, সেগুলোতেও আবদুস সামাদের অংশগ্রহণ ছিল। এই অপরেশনগুলোতে মূলত সে নিজ গাড়ীতে নিজেই ড্রাইভ করে সহযোদ্ধাদের সাথে অপারেশনে অংশ নিত। ২৯ আগস্টের আগ পর্যন্ত আবদুস সামাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও অবদান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন কারণ বা সুযোগ নেই।
তবে ২৯ আগস্ট, বেলা ১১টার দিকে ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল জালাল উদ্দিনের বাসা থেকে গ্রেফতার হয় বদি। প্রিন্সিপাল সাহেবের ছেলে ফরিদ ছিলো বদির বন্ধু, বদির সাথে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। টর্চারসেলে বদির মুখ থেকে কোন কিছুই উদ্ধার করতে না পেরে পাক আর্মিরা ফরিদের উপর অমানুষিক টর্চার চালোনো শুরু করে । প্রচন্ড টর্চারের মুখে ফরিদ তখন সামাদ এবং চুল্লুর নাম বলে দেয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ধরা পড়ে সামাদ । টর্চার সেলে পাক আর্মির নির্যাতনের মুখে ফরিদের মতো সামাদও মুখ খুলে, পাকসেনারা সামাদকে আশ্বস্ত করে যে- সে যদি সহযোদ্ধাদের নাম বলে দেয়, তবে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে । আবদুস সামাদ এক এক করে সহযোদ্ধাদের নাম, বাসার ঠিকানা, অপারেশন সম্পর্কে পাকসেনাদের অবগত করে এবং তাকে সঙ্গে নিয়েই সেই রাত থেকে পাকসেনারা হানা দেয় রুমি, আজাদ, বকর, জুয়েল, হাফিজ ও আলতাফ মাহমুদ’দের বাসায়। ৩০ আগস্ট ভোর রাতে যখন পাক আর্মিরা আলতাফ মাহমুদকে গ্রেফতার করতে আসে, শিমূল ইউসূফ তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি সেদিনের ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। এ প্রসঙ্গে “একজন সাহসী মানুষের মুখ” শিরোনামে শিমূল ইউসূফ তাঁর একটি লেখায় সেই ভোরের কথা তুলে ধরেছিলেন -
“সহসা পাক আর্মির সঙ্গে সামাদ সাহেবকে দেখে চমকে উঠলাম, সামাদ ভাই কেন এসেছেন? আর আর্মিরা সামাদ ভাইকেই জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনিই আলতাফ মাহমুদ কিনা ।”
এছাড়াও অন্যান্য সকলের (রুমি, আজাদ, বকর) বাড়িতে যখন পাক আর্মিরা সেই রাতে গ্রেফতার অভিযান চালায়, সামাদের মুখ সহযোদ্ধাদের কাছে যেন উন্মোচিত না হয়, সে জন্য নেকাব দিয়ে আবদ্ধ ছিলো, গ্রেফতার অভিযানের সময় তাকে বাড়ির বাইরে আর্মির গাড়িতে বসিয়ে রাখা হয় । কিন্তু ভোর রাতে আলতাফ মাহমুদকে যখন সর্বশেষ গ্রেফতার করা হয়, তখন সামাদকে নেকাবহীন অবস্থায় সামনে আনে পাক আর্মিরা । তার কারণ ছিলো, তারপর আর কোন গ্রেফতার অভিযান ছিলো না, আলতাফ মাহমুদ নিজের পরিচয় স্বীকার করার পরও আর্মিরা সামাদ কর্তৃক তা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলো এবং দুদিন আগে অস্ত্র ভর্তি যে ট্রাঙ্কটি সামাদই আলতাফ মাহমুদের কাছে রেখে গিয়েছিলো, যেটি বাড়ির উঠানে মাটিতে পুতে রাখা হয়েছিলো, অস্ত্রভর্তি ট্রাঙ্কটি কোথায় মাটি চাপা দেয়া হয়েছিলো, তা সনাক্ত করতেও সামাদকে সামনে আনা প্রয়োজন বোধ করে পাক আর্মিরা।
১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে, আবদুস সামাদ মুক্তিযোদ্ধাদের কর্তৃক রাজবন্দী হিসেবে বন্দীদশা থেকে মুক্তি পায় এবং পরবর্তীতে বীর প্রতীক খেতাব মেলে।
যুদ্ধে শত্রুপক্ষের অমানুষিক টর্চার সবাই সইতে পারবে, এমনটা আশা করা যায় না । পাকসেনা কর্তৃক যে অমানুষিক নির্যাতন রুমি, বকর, আলতাফ মাহমুদ. জুয়েল, আজাদ, বদি, হাফিজরা দাঁত মুখ কামড়ে, অসহনীয় ব্যাথা আর যন্ত্রনা সহ্য করে চিরতরে হারিয়ে গেছে, ততটুক সহ্য শক্তি আবদুস সামাদের ছিলনা, সে পারেনি। দূর্বল চিত্তের লোকটি অত্যাচার সহ্য করতে পারেনি, এই ভেবেই হয়তো কেউ কিছু বলেনি কিন্তু যখন এই দূর্বল চিত্তের মানুষটি তার দূর্বলতার ইতিহাসটুকু আড়ালে রেখে শুধু বীরত্বগাঁথা শোনায় তখন ক্ষুব্ধ হওয়াটা অস্বাভাবিক মনে হয় না, ক্ষুব্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক।একজন বীর কখনো মাথা নোয়াতে জানে না, না অত্যাচারে মুখে, না স্বার্থের কাছে । আবদুস সামাদ মাথা নুয়েছিল, ২৯ আগস্ট পূর্ববর্তী অবদানের জন্য তাকে যোদ্ধা বলতে পারি, কিন্তু ২৯ আগষ্টের পর ?? তবুও আমরা বলি আবদুস সামাদ - একজন বীর প্রতীক (!)
আর ভুলে যাই রুমি, বকর, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল, আজাদ, বদি, হাফিজ -দের মত বীরদের! এগুলো সবই ধুলোপড়া ইতিহাস ...........
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×