,
স্টোইকবাদের প্রতিষ্ঠার বেশ কিছু বছর পরের ঘটনা।গ্রীসের সামোসের অধিবাসী জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যারিস্টার্কাস সৌরজগতের কেন্দ্র সম্পর্কে বহুদিনের প্রতিষ্টিত ও ধর্মস্বীকৃত মতের বিরোধিতা করে বসেন।তিনি দাবি করেছিলেন পৃথিবী নয় বরং সূর্যই সৌরজগতের কেন্দ্র।এই মত প্রকাশের পর অধার্মিকতার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হন এবং স্টোইক দার্শনিক ক্লিনথেসের দ্বারা প্রকাশ্য ধিকৃত হন।কিন্তু তৎকালীন গ্রীক শাষকদের উপর গোঁড়াপন্থিদের তেমন প্রভাব না থাকায় অ্যারিস্টার্কাসের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি ধর্ম-গুরুরা।এর বহুবছর পর ১৩০ খ্রিস্টাব্দে টলেমী অ্যারিস্টার্কাসের মতকে খারিজ করে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে পৃথিবীর অবস্থান তত্ত্বকে পূনঃপ্রতিষ্টিত করে।প্রাচীন যুগের শেষভাগ থেকে গোটা মধ্যযুগ পর্যন্ত এই তথ্য নিয়ে কারো কোন আপত্তি ছিলনা।কিন্তু আবারো ধর্মগুরুদের মাথায় বাজ ফেললেন তরুণ গণিত অধ্যাপক নিকোলাস কোপার্নিকাস।সম্ভবত ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অ্যারিস্টার্কাসের মতের পূনঃপ্রচার করেন।দীর্ঘ ২৩ বছর গবেষণা করে তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ "On the Revolution of the heavenly bodies"।বইটিতে তিনি অ্যারিস্টার্কাসের মত সংশোধন করে প্রকাশ করেন।তিনি এই গ্রন্থে দেখান যে,পৃথিবী বৃত্তাকারে নয় বরং উপবৃত্তাকারে ঘুরছে এবং সূর্য কেন্দ্রে নয় বরং একটি উপবৃত্তের ফোকাসে অবস্থান করছে।যাজক সম্প্রদায়ের বিরোধিতার ভয়ে ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন হওয়া এই বইটি তিনি প্রকাশ করেছিলেন ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগে।পোপকে উৎসর্গ করা এই গ্রন্থটির প্রকাশক অসিয়েনডার একটা মুখবন্ধ জুড়ে দিয়েছিল যাতে এই গ্রন্থকে আবর্তন সম্বন্ধীয় কল্পনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।এত কিছুর পরও সমালোচনার দাবানল থেকে রক্ষা পায়নি গ্রন্থটি।আশ্চর্যের বিষয় এই যে,নিজেদের গোঁড়ামিমুক্ত ভাবা প্রোট্যাস্টান্টরাই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছিল এই গ্রন্থটির।এই তত্ত্বটি নাস্তিকতার অভিযোগে চরমভাবে অভিযুক্ত ছিল।এত বিরোধিতার পরও এই মতবাদ এমন কিছু প্রাণবন্ত মানুষদের উৎসাহিত করেছিল যারা প্রকৃত সত্য সন্ধানে আগ্রহী।এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার 'ধরি মাছ,না ছুঁই পানি' টাইপের একটি উদ্যেগ নিয়েছিল কেপলার।তিনি একদিকে যেমন কোপার্নিকাসের তত্ত্ব কে সত্য হিসেবে নিয়েছিলেন তেমনি অন্যদিকে ধর্মযাজকদেরও না রাগিয়ে আবর্তনের সাথে পরমাত্মার একটি সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।তবে ১৬০৯ এবং ১৬১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তার তিনটি সূত্র নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ বিষয়ক কাজের শক্তি বৃদ্ধি করেছিল বলে মনে করা হয়।যাহোক কোপার্নিকাসের তত্ত্বকে চরমভাবে সত্য হিসেবে প্রকাশ করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন ১৫৬৪ সালে জন্ম নেয়া গ্যালিলিও।গ্যালিলিওর গরীব গণিতজ্ঞ পিতা ছেলেকে ছোটবেলা থেকে লাভজনক শিক্ষার দিকে চালিত করার চেষ্টা করেন এবং গণিত থেকে দুরে রাখেন।ঊনিশ বছর বয়স পর্যন্ত গ্যালিলিওর কাছে গণিত ছিল আকর্ষনীয় নিষিদ্ধ ফলের মত।নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় তিনি গণিত শাষ্ত্রে তিনি দক্ষতা লাভ করেন।। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



