somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ছাত্রনেতার মৃত্যু

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গঃ বাংলাদেশের সকল সম্ভাবনাময় হারিয়ে যাওয়া ছাত্রনেতা।

পর্ব-১
ক্লাস এইটে সবাই যখন এইম ইন লাইফ রচনায় ডাক্তার,ইনজিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছিলো তখন ছেলেটি জাল বুনেছিলো একজন মাহান রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন।স্কুলে মেধাবী এবং ভালো সংগঠক হওয়ায় সে ছিলো সবার প্রিয় পাত্র।প্রথমে ক্লাস ক্যাপ্টেন তারপর হাউস লীডার সবকিছু মিলে স্কুলের সহপাঠী থেকে শুরু করে টিচাররা পর্যন্ত সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করলো এই ছেলে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ হবে।

মেট্রিকে স্ট্যান্ড করে সে তার মেধার স্বাক্ষর রাখলো।কলেজে পা রাখার আগেই বেচমেট (অন্যান্য স্কুল থেকে আসা ছেলে মেয়েরা) সবাই তাকে চিনতো। সে মিশুক স্বভাবের ছেলে সারাক্ষণ জমিয়ে রাখতো এবং সবার সাথে বন্ধুত্ব করতে ভালোবাসতো। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের কলেজের স্যার ম্যাডাম সবার কাছেই সে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।


হঠাৎ একদিন ক্লাসের শুরুতে কলেজের আধিপত্য বিস্তারকারী ছাত্রশিবির এসে কলেজের একাদশ শ্রেণীর কমিটি (বোর্ডে প্লেস করা সবাই কমিটিতে ছিলো) ঘোষণা করলো।কমিটির মেম্বাররা সবাই নিজেদের নাম শুনে অবাক কিন্তু কারো কিছু বলার সাহস নাই।যথারীতি সভাপতি বানালো হলো সবার প্রিয় আবিরকে।সবাইকে ক্লাসের মঞ্চে যেতে বলা হলো।সবাই শিবিরের বড় ভাইদের আদেশে গিয়ে দাঁড়ালো। উপস্থাপক বড় ভাই সভাপতিকে(আবীরকে) সবার পক্ষ থেকে কিছু বলতে বললেন(কমিটির সভাপতি হয়ে কেমন লাগছে এবং শিবিরের বড় ভাইদের কেমন লাগলো এইসব)।সাবলীল ছেলে আবীর সংকোচ না করে বলতে শুরু করলো------"আমি জানি না আমার সহপাঠী যারা কমিটিতে আছেন তারা আগে থেকে জানো কিনা(কমিটিতে থাকার ব্যাপারটা) বাট অনেস্টলী স্পীকিং আমি কিছু জানতাম না।জানলে আমার প্রান থাকতে শিবিরের কোনো কমিটিতে আমার নাম ঘোষণা হতো না কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে রাজাকারদের করা দলের কমিটির সদস্য হতে পারি না"...আবিরের কথা বলার মাঝখানেই শিবিরের এক বড়ভাই ধমক দিয়ে বললেন এই কমিটি কলেজের ডিসিপ্লিন দেখার জন্য এবং তোমাদের ভালোর জন্য করা হয়েছে।তখন আবির বললো সরি ভাইয়া এই দয়িত্ব অন্য কাউকে দিন আমাকে দিয়ে হবে না।

সেদিন আবিরের সাহস আমাদের কাছে আবিরকে একজন নির্ভীক ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় (যদি ও সে তখন পর্যন্ত কোনো ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলো না)।

পর্ব-২

আবির সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। চার ভাই বোনের মধ্যে আবির ছিলো ২য়( ইমিডিয়েট বড় বোন ছিলো)।খুব ভালো ক্রিকেট খেলতো।আবির ছিলো ফ্যামিলির বড়ছেলে।আবির কাউকে কখনো মন খারাপ করে থাকতে দিতো না।কেউ মন খারাপ হওয়াটা সম্ভবত আবির অলৌকিকভাবে বুঝে ফেলতো!!! আমাদের স্কুলে কখনো গড়(১ম সাময়িক+২য় সাময়িক+বার্ষিক) হতো না। অনেকটা শেষ ভালো যার সব ভালো তার টাইপ ব্যাপার।আবিরের ক্লাস সিক্স টু নাইন ১ম সাময়িকে ফেল করতো,২য় সাময়িক কোনোরকম টেনেটুনে পাস এবং বার্ষিকে গিয়ে রীতিমতো ১ থেকে ৫ এর মধ্যে।আবার অনেকেই সারাবছর ভালো করে বার্ষিকে এসে আবিরের কাছে হেরে যেতো।এইজন্য অনেকেই আবিরের ব্যাপারে জেলাস ছিলো।এরপরো আবিরকে ভালোবাসত না পুরো স্কুলে এরকম একটা ছেলে খুঁজে পাওযা কষ্টসাধ্য ছিলো।

কেমন যেনো সপ্রতিভ,প্রান চাঞ্চল্যে ভরা,টেনশন ফ্রি যেন মানুষকে ভালোবাসাটাই সব এরকম একটা ব্যাপার ছিলো ওর মধ্যে।প্রচন্ড সহজ-সরল এবং মানুষকে খুব বিশ্বাস করতো।পুরো ক্লাসে কার ফ্যামিলিতে কি সমস্যা,কে কেনো স্কুলে আসেনি সবকিছু আবির জানতো।আমি নিজেই পার্সোনালী আবিরের সাথে অনেক কিছুই শেয়ার করতাম।ওকে দেখলেই কেমন যেনো একটা ভালো লাগা ভর করতো।মনে হতো একজন সত্যিকার বিশ্বাসী বিপদের বন্ধু।

ক্লাস টেনে সাত্তার স্যারের বউয়ের জন্য আবিরের উদ্যেগে ফান্ড রেইজ করা হলো (আমরা এসব ব্যাপারে কিছু জানতাম না,আবির কিভাবে যেন জানতে পেরেছিলো স্যারের বউয়ের হার্টের সমস্যা,ইমিডিয়েট অপারেশন করা জরুরী।আবির আমাদের সবাইকে বুঝিয়ে বললো আমাদের স্যারের দুঃসময়ে স্যারের পাশে থাকতে হবে)।এখনো চোখে ভাসে স্যারের হাতে সংগৃহীত টাকা তুলে দেয়ার সময় স্যার আবিরকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁছিলেন।

এবার আসি আবার কলেজ লাইফে-----
শিবিরের সাথে বিরোধীতা করে আবির শিবিরের চক্ষুশূল হয় ঠিকই কিন্তু সেটা তেমন ব্যাপার হয়নি কারণ সরকারী কলেজে ক্লাসের তেমন বালাই ছিলো না।আমরা বেশীর ভাগ সময় কলেজে আড্ডা দিতে যেতাম আর পড়াশুনার ব্যাপরটা ছিলো স্যারের বাসাকেন্দ্রিক।আবিরের ছিলো অসীম স্বাধীনতা।সারাদিন সে অনেক কিছু করে বেড়াতো (আমি নিজে মাম্মী-ড্যাডী টাইপ ছিলাম)।একদিন আবির আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবে বললো এইজন্য আমাকে বাসা থেকে পুরো দিন ম্যানেজ করতে বললো।আমি অনেক সিস্টেম করে সকাল বেলা বাসা থেকে বেরিয়ে কলেজে এসে হাজির।কলেজে ঢুকতেই দেখলাম আবির আমার জন্য অপেক্ষা করছে।তারপর আবির আমাকে নিয়ে রওনা দিলো(আমি কিন্তু কিছুই জানি না কোথায় যাচ্ছি)।প্রথমে গেলাম সদর ঘাট।কর্ণফুলী নদীতে ফেরী পার হয়ে গেলাম পশ্চিম পটিয়ার একটি গ্রামে(দুঃখিত গ্রামের নামটা আমার মনে নেই)।আমি আবিরকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে আসলাম কেনো? আবির বললো দেখ বাংলাদেশের ৮০% মানুষ গ্রামে থাকে আর যে পলিটিসিয়ান হতে চাইবে তাকে অবশ্যই গ্রামকে ভালোভাবে জানতে হবে,জানতে হবে গ্রামের মানুষগুলোকে।আমার এমনিতেই গ্রাম ভালো লাগতো।কারণ আমার জন্ম,বেড়ে ওঠা সবকিছু চট্টগ্রাম শহরে তাই গ্রাম ছিলো আমার কাছে ভেরিয়েশনের মতো।ওখানে গিয়ে দেখলাম সবাই আবিরকে চেনে,জানে এবং আবিরের অনেক পরিচিত।আবির নাকি সেখানে নিয়মিত যায় এবং ওখানে সমাজসেবামূলক অনেক কিছুই করে এই যেমন আমাদের বয়সী ছেলেপেলে নিয়ে সমবায় করে একটা লাইব্রেরী করেছিলো(এরকম আরো অনেক কিছুই)।

ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় আবির মোটামুটি রেজাল্ট করলো (মেট্রিকের মতো ভালো না)
ইন্টার পরীক্ষার পর পর আমরা সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলাম।আমি ঢাকার মালিবাগে খালার বাসার থেকেছি বুয়েট কোচিং এর জন্য।অন্যান্য ফ্রেন্ডরা ও যে যার সুবিধামতো নিজের লাইফ গুছানোর কাজে ব্যস্ত ছিলো।আবির চিটাগাংয়ে কোচিং করেছিলো।
এডমিশন পিরিয়ড শেষে স্কুল লাইফের ক্লোজ ফ্রেন্ডদের বেশীর ভাগ বুয়েটে ঠিকলো মাঝখান থেকে বাদ পড়ে গেলো আমাদের আবির।ওরচে অনেক খারাপ স্টুডেন্ট(স্কুল,কলেজের রেজাল্টের হিসেবে) বুয়েটে চান্স পেয়েছিলো কিন্তু বেচারা আবির মিস করে ফেললো।পরে আবির ঢাকা ভার্সিটিতে এডমিশন নিলো।


পর্ব-৩

বুয়েটে পড়তে পারেনি এজন্য আবিরের কোনো হতাশা ছিলো না।ঢাকা ভার্সিটিতে নিজের পছন্দমতো সাবজেক্টে ভর্তি হয়ে সে খুশী ছিলো। আবির ভার্সিটি লাইফের প্রথম হোচঁট খেলো হলে উঠার সময়।ঢাবি হলে সীট না পেয়ে সে আমার সাথে বুয়েটের হলে থাকতে আসে কিছুদিনের জন্য।আমরা যারা বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম আমাদের কারো হলে ওঠা নিয়ে কোনো প্রবলেম ফেস করতে হয়নি।আমার ফ্রেন্ডদের সবাই জাস্ট এক সপ্তাহর মধ্যে হলে উঠতে পেরেছিলো। আবির আমাদের সাথে ডাবলিং করে থাকতে লাগলো।কিন্তু ছেলেটার আত্মসম্মানবোধ অনেক বেশী।একে তো সে বুয়েটে ভর্তি হতে পারেনি তার উপর অন্যের আশ্রিত।প্রতিদিন সকালে সে ক্লাস করতে যেতো এবং রুটিন করে বড় ভাইদের কাছে ধরণা দিয়ে আসতো হলের সীটের জন্য।একদিন এসে অনেক খুশী হয়ে বললো সে সিট পেয়েছে হলে।২/১ দিন পর আবির ঢাবির হলে গিয়ে উঠলো। হলে উঠার সপ্তাহখানেক পর একদিন আবির আমার রুমে এসে অনেক ঠান্ডা হয়ে বসেছিলো।এতো কথা বলা মাতিয়ে রাখা একজন মানুষকে হঠাৎ চুপ করে থাকতে দেখাটা একটা অসহ্যজনক ব্যাপার।জিজ্ঞেস করলাম--------

কিরে তোর টাকা-পয়সা আছে তো?
আবিরঃ হুম
তাহলে এরকম মন খারাপ করে বসে আছিস কেনো?
আবিরঃ আমার বই খঁজে পাচ্ছি না।
এটা আবার কি ধরণের কথা,বই খুঁজে পাবি না কেনো?
আবিরঃ তোদেরকে বলিনি আসলে আমি গণরুমে উঠেছি।নতুন বই কিনেছিলাম গতকাল সন্ধ্যায়।ঘুমানোর সময় মাথার পাশে রেখেছিলাম।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বইগুলো নাই।
তখন আমি আবিরকে বললাম তুই গণরুমে না থেকে আমার সাথে আর কিছুদিন থেকে যা।

আমার অনেক পীড়াপীড়িতে আবির থাকতে রাজী হলো।
এবার দেখলাম আবির সকালে একসাথে আমার সাথে বের হয় কিন্তু রুমে ফিরে রাত ১২টার দিকে।জিজ্ঞেস করলে বলতো ভার্সিটির ফ্রেন্ড এবং সিনিয়রদের সাথে আড্ডায় ছিলো তাই দেরী হয়েছে।
৩সপ্তাহ থাকার পর আবির বললো এবার সে রুম পেয়েছে তাই চলে যাবে।
ভালো কথা আমি ওকে হলে তুলে দিয়ে আসতে চাইলাম কিন্তু ও আমকে সাথে নিতে চাইলো না। আমার অনেক অবাক লাগতো আবির কখনো আমাদের কাউকে ঢাবিতে নিয়ে যেতে চাইতো না এবং ঢাবির কোনো ফ্রেন্ডদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতো না।
আমাদের আরো কিছু স্কুল,কলেজের ফ্রেন্ড ঢবিতে পড়তো।সবাই বুয়েটে এসে থাকতো আড্ডা দিতো কিন্তু একজন(আবির) বুয়েটের রাস্তা ভূলে গেলো।অন্যদের কাছে শুনতাম আবির অনেক ব্যস্ত সময় কাটায়--রাজনীতি,ডিবেট,নাটক,আবৃত্তি এমন কোনো কাজ নাই যেটা আবির করে না।অন্য ফ্রেন্ডদের অনেকেই আবিরের জোরে হলে সিট পেয়েছিলো।অল্প কিছুদিনেই সে ঢাবির অনেকের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।আবির অনেক কিছুই করছিলো কিন্তু ওর বাবা মা ওকে ঢাকা পাঠিয়েছিলো সে কাজ অর্থাৎ পড়াশোনা থেকে আবির একটু একটু করে দূরে সরে যেতে লাগলো।
১ম বর্ষের সব বিষয় পাস করতে পারেনি। যতো সময় যাচ্ছিলো আবিরের ব্যস্ততা ততোই বাড়ছিলো।

একটা সময় ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে আবির অনেক দূরে সরে গেলো।সবচে দুঃখজনক ব্যাপার ছিলো আবির ফ্যামিলি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলো।একদিন আন্টি(আবিরের মা) আমাকে ফোন করে কান্না করেছিলেন।আন্টি বলছিলেন আবির বাসা থেকে কোনো টাকা নেয় না,বাসার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে না।আমি আন্টিকে বললাম আমি ওর সাথে কথা বলে ওকে বুঝিয়ে বলবো।

আমি আবিরের সাথে দেখা করে ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম----
আবির তুই ভূল পথে পা বাড়িয়েছিস
আবিরঃ কোনটা ভূল পথ?পলিটিক্স!!!! আরে দূরে যেটা বুঝিস না সেটা নিয়ে কথা বলিস না।এটা আমার লাইফ।আমি দেশের মানুষের জন্য নিজের লাইফটাকে উৎসর্গ করেছি।আমি দেশটাকে এবং স্টুডেন্ট পলিটিক্সকে বদলে দিবো।তোদের মতো মাম্মী-ড্যাডীর ছেলে হয়ে সবাই যদি তোদের কথিত নোংরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকে তাহলে এদেশের মানুষের কি হবে? শূণ্য স্থান কখনো খালি থাকে না।আমি ভালো চিন্তা এবং যোগ্যতা নিয়ে পলিটিক্সে না যায় তাহলে এই জায়গা পূরণ করবে কোনো নোংরা মানুষ।আমি যদি একটা পার্টির ছাত্র সংগঠনের টপমোস্ট পজিশনে যেতে পারি তাহলে আমার ভালো চিন্তাটা হবে ঐ ছাত্র সংগঠনের চিন্তা।তোদের মতো ডাক্তার,ইনজিনিয়ারের চে এখন দেশে ভালো পলিটিশিয়ান বেশী দরকার।একজন ভালো পলিটিসিয়ান পারে শুধু দেশ এবং সমাজকে চেঞ্ঝ করতে।দেশের সেরা ভার্সিটি থেকে শুধু কেমিস্ট,সফটওয়্যার ইনজিনিয়ার,ফার্মাসিস্ট বের হলে পলিটিসিয়ান হবে কারা???
আমিঃ দেখ আবির, তুই একা কিছু পারবি না।সবাই তোর মতো ভাবে না।বিরুদ্ধ স্রোতে বেশীদিন সাতাঁর কেটে ঠিকে থাকা যায় না।এসব লেজুড় পলিটিক্স তোর জন্য না। আর তাছাড়া তুই আঙ্কেল-আন্টির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলি কেনো?পলিটিক্স করার মানে কি সমাজ,ফ্যামিলি সবকিছু থেকে দূরে সরে যাওয়া ???
আবিরঃ শতাব্দী একজনকে দিয়ে শুরু হয়।আমি একলা ভালো সূচনা নিয়ে আগালে আমার সাথে অনেকেই আসবে।ভালো কিছু পেতে হলে অনেক সেক্রিফাইস করা লাগে।লেজুড়বৃত্তিটাকে আমি কম্প্রোমাইশ হিসেবে নিয়েছি।মানুষ লাইফের অনেক ক্ষেত্রেই কম্প্রোমাইশ করে আমি না হয় পলিটিক্সের জন্য একটু করলাম। এনি হাউ একবার প্লাটফরম চাই।একবার প্লাটফরমে উঠতে পারলে আমি বাংলাদেশের মানুষকে ভালো পলিটিক্সের স্বরুপ দেখাবো।আমি আমার লক্ষ্যে যাওয়ার জন্য যা যা করতে হবে তার সবকিছুই করে যাচ্ছি।শুধু মনে রাখবি পলিটিক্স হচ্চে আমার লাইফ তাই প্লিজ দয়া করে আমাকে এসব জ্ঞান দিতে আর আসিস না।
আমি আবিরকে বোঝাতে না পেরে হতাশা নিয়ে চলে আসি।
পরে জানতে পেরেছিলাম আবির ঐ বছর ঈদে বাড়ী যায়নি।



পর্ব-৪

দেখতে দেখতে আমাদের সবার ভার্সিটি লাইফ শেষ হওয়ার পথে।
ঠিক তখনি আবিরের ফ্যামিলিতে চরম দুঃসময়।একদম হঠাৎ করে আবিরের বোন মারা গেলো।এর কিছুদিন পর আবিরের বাবার ব্রেইন স্ট্রোক করলেন।সবচে বড় ঝামেলার ব্যাপারটা ছিলো বড় বোনের শোকে আবিরের ছোটো বোনের মানসিক ভাবো অসুস্থ হওয়া।সবকিছু মিলে কোনো ফ্যামিলির এরচে খারাপ অবস্থা হওয়া পসিবল না।
(আবিরের সব দুঃসময়ে আমরা ফ্রেন্ড সার্কেল আবিরের পাশে ছিলাম,এই যেমন আবিরের বোনকে বাচাঁনোর জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলের ফ্রেন্ডরা প্রানপন চেষ্টা করেছিলো।তারপর আবিরের বাবার অসুখের সময় আমাদের ডাক্তার বন্ধুদের চেষ্টাকে শুধু স্যালুট দিয়ে হয়তো মর্যাদা দেয়া যাবে না)

ততোদিনে ১/১১ হয়ে গেছে বাংলাদেশে।ফ্যামিলির আকস্মিক বিপর্যয় গুলো দেখে আর আবির তার মহান স্বপ্নের পথে ছোটার সাহস পেলো না।আমরা পাস করে বুয়েটের হল ছেড়ে নতুন বাসা নিয়েছি(৮জন বন্ধু একসাথে)।আবিরকে জোড় করে আমরা ঢাবি হল ছাড়িয়ে আমাদের বাসায় নিয়ে তুলেছি।আবির আমাদের কাছে টিউশনী চাইল।আমরা প্রানপন চেষ্টা করে আবিরকে টিউশনী যোগার করে দিলাম।মজার ব্যাপার হলো আবির আমাদের কাছে মেট্রিক-ইন্টারের পড়া গুলো পড়লো নতুন করে।একদিন আমাদের বলছিলো পলিটিক্স করে কিভাবে লিখতে হয় আমি তাই ভুলে গেছি।দেখতে দখতে আমাদের বন্ধুরা একে একে দেশ ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমাতে শুরু করলো।অনেকেই বিয়ে করলো।আবার অনেকেই চাকরী নিয়ে ঢাকার বাইরে চলে গেলো।
আবির প্রতিমাসে বাসায় টাকা দেয়।নিজের ফ্যামিলিকে আগলে রেখেছে।ছোটোবোন সুস্থ গয়ে অনার্স শেষ করার পথে।আবির হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই চাকরী করে ঘর সংসার করবে।আবির অনেক বদলে গেছে।আগের মতো অনেক কথা বলতো না।আসর জমিয়ে রাখতো না।আবিরকে দেখলে আমাদের অনেক কষ্ট হতো।আবির প্রচুর খাটতে পারতো।সারাদিন ক্লাস করে টিউশনী করে রাতে এসে পড়তো।আবির পলিটিক্সের কারণে রেগুলার ব্যাচ থেকে ৩বছর পিছিয়ে গিয়েছিলো।
আবির অনেক চাপা স্বভাবের ছেলে।মানুষের কষ্ট বুকে নিতো কিন্তু নিজের ব্যাপারে ছিলো নিশ্চুপ।আমরা ও ওকে বেশী ঘাটাতাম না।
একদিন আমাদের বাসায় একজন বন্ধু তার বাইরে যাওয়া উপলক্ষে ড্রিঙ্ক পার্টি দিলো। সবাই অনেক ফানমুডে ছিলাম।আবির মাতাল হয়ে নিজের অনেক বছরের জমানো কষ্টগুলো উগরে দিলো।আবির কাদঁছিলো আর চিৎকার করে বলছিলো--------

"আমি তো যা চেয়েছিলাম সৎ ভাবে মন থেকে চেয়েছিলাম,পেলাম না কেনো?
আমাকে হলের সীটের জন্য পলিটিক্স করতে হলো কেনো?তোরা বুয়েটে পড়েছিস তাই তোদের আমি বুঝাতে পারবোনা বাসা ছেড়ে আসা একটা ছেলের জন্য হলে সীট নিয়ে ঝামেলা পোহানো কতোটুকু কষ্টের।ওখানে কিছু নরপিশাচ থাকে যারা চানখার পুলে নিয়ে নতুন আসা ছেলেদের ভরপেট খাওযায় তারপর নিয়ে যায় মানুষ পিটানোর জন্য(যেদিন এসব পিশাচ ভরপেট খাওয়াতো সেদিন কোনো অপারেশনে যেতে হতো)।আওয়ামীলীগ,বিএনপি সব লোক দেখানো।আমি নিজের চোখে দেখেছি ওরা এক বোতলের মদ খায়,শুধু ডিফারেন্স হচ্ছে যে পাউয়ারে থাকে বোতলটা সে স্পন্সর করে।দিনের বেলায় লোক দেখানো পলিটিক্স আর রাতের বেলায় একসাথে মাস্তি করা।সব শুয়োরের বাচ্ছা হিপোক্রেট।আমি অনেক ট্রাই করেছি এসব নোংরামী এড়িয়ে পলিটিক্স চালিয়ে যাওয়ার কিন্তু পারিনি আমি হেরে গেছি।আমি এখন শুধু আমার ফ্যামিলির জন্য বেঁচে আছি।আমি ছাড়া ওদের কেউ নেই তাই আমি পৃথিবীতে মাটি কামড়ে পরে আছি,আমার আসলে বেচেঁ থাকার কোনো মোহ নেই।আমি এখন আমার নিজের পলিটিক্যাল মোটিভেশন টাকে চেঞ্ঝ করে নিয়েছি।আগে ভাবতাম দেশ এবং সমাজ বদলে দিবো আর এখন ভাবি "আমি" বাংলাদেশের সবচে ছোটো ইউনিট।আমার ফ্যামিলি বাংলাদেশের একটা ছোটো অংশ।আমি যদি নিজের যত্ন নিতে পারি তাহলে আমি ভালো থাকব এবং আমার ফ্যামিলি ভালো থাকবে।আমি বাংলাদেশের ৫জন(আবিরের ফ্যামিলি) মানুষকে ভালো রাখতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে।আমি সান্তনাসূচক ফিলোসফি দাঁড় করিয়ে কোনোরকমে নিজেকে বাচিঁয়ে রেখেছি।আমার আসলেই জীবনের প্রতি আর কোনো মোহ নেই।"

আমরা এধরণের কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।তারপরো আমরা ওকে বোঝানোর ট্রাই করলাম----
দেখ আবির আজকে কিংবা এখন হয়তো তোর সময় না কিন্তু ১০ বছর পর হয়তো সিচুয়েশান এরকম থাকবে না।যখন-তখন লীডারের জন্ম হয় না,একটা জাতি লীডার পায় ক্রান্তিকালে।তুই ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখবি নেলসন ম্যান্ডেলা,মাহাত্মা গান্ধী,বঙ্গবন্ধু সবাই জাতির দুঃসময়ের লীডার ছিলেন।আমাদের এখন মাঝামাঝি সময় তাই এখন তুই চাইলে ও কাউকে গরজ বোঝাতে পারবি না। ভূল সময়ের ভূল পলিটিক্সে হতাশা থেকে কেনো তুই নিজের রাজনৈতিক সত্তাকে মেরে ফেলবি।ইনশাল্লাহ একদিন তোর সময় আসবে।তুই তোর ইচ্ছে পূরণ করতে পারবি.....সব মাতাল মেনটাল স্ট্রেস নিয়ে টাইয়ার্ড হয়ে একসময় ঘুমিয়ে পরেছি।
সকালটা একটা নতুন সকাল ছিলো কেউ সচেতনভাবে রাতের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলিনি।
কিন্তু আবিরের কথাগুলো আমার মাথায় ঘোরে,আমরা কি আসলেই নিয়তির কাছে হেরে যাওয়ার জন্য এসেছি???
এভাবে আমার প্রিয় ছাত্রনেতাকে মৃত্যুবরণ করতে দেখেছি।


বিঃদ্রঃ অনেক জায়গায় "আমি" ব্যাবহার করেছি চরিত্রের আধিক্য কমানোর জন্য।"আমি" আসলে ১০-১২ জন আবিরের বন্ধুকে নিয়ে।আরো অনেক কিছু লেখার ছিলো তবু ও লেখা হলো না।সামারী করার চেষ্টা করেছি মাত্র।

রিলেটেড লিঙ্ক

একজন ছাত্রনেতার মৃত্যু-১
একজন ছাত্রনেতার মৃত্যু-২
একজন ছাত্রনেতার মৃত্যু-৩
একজন ছাত্রনেতার মৃত্যু-৪(শেষ পর্ব)
আপনার কিংবা আমার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চান্স কতোটুকু?????

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩
২৬টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×