somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরিশিরির রুপ আমি দেখিয়াছি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রকৃতির নিয়মে সূর্য উঠে গেছে কিন্তু দুর্গাপুরের মানুষগুলো এখনও লেপের তলা থেকে উঠেনি। হোটেল গুলশান থেকে আমরা যখন রুম ছেড়ে বের হলাম ঘড়িতে সকাল সাত। এখনও কুয়াশার চাদরে সূর্যমামা মুখ লুকিয়ে আছে। এইরকম ঘন কুয়াশা অনেকদিন দেখিনি। চারিদিকে সাদা আস্তরণ। দুই গজ দূরের কিছুই দেখা যায় না। কুয়াশার কারণেই হোক বা যাইহোক সকালে শীতের প্রকোপটা তেমন নাই। তারপরও রাস্তায় মানুষ নেই। দুর্গাপুর বাজারটা জন মানুষের অভাবে খা খা করছে। গতকাল রাতে ঘুরতে ঘুরতে এই বাজার ডজনখানেক খাওয়ার হোটেল দেখেছি। কিন্তু সকালে উঠে আবিস্কার করলাম হোটেলগুলো সব বন্ধ। একটা হোটেল দেখলাম মাত্রই চুলা ধরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সকালের নাস্তা? সে বহুদূর। আমরা যে পথে রওনা দেব, সেখানে পেটপুজার ব্যবস্থা আছে কি নাই, আমাদের জানা নেই। তাই আমরা চাচ্ছিলাম, সকালের নাস্তার কাজটা এই দুর্গাপুরে সেরে ফেলেই আজকের যাত্রা শুরু করতে। হাটতে হাটতে একটা ভাঙা চুড়া হোটেল গরম পরাটা, ডাল আর ডিমভাজি পাওয়া গেল। হোটেলের চেহারা যেমনই হোক, খাবারগুলো ভালোই। যাক, সকালের নাস্তা শেষ হলো, এবার ভ্রমণ গল্পে আসা যাক।
আমি এখন আছি নেত্রকোনার দুর্গাপুর বাজারের ঠিক মাঝখানে। গতকালে আমি আর পারভেজ রবিন ঢাকা থেকে সকাল আটটা চল্লিশের বাসে উঠে এখানে সাড়ে চারটায় এসে পৌছেছি। বাসের যাত্রা আর রাতের গল্প একটু পড়ে বলছি। তার আগে চলুন সোমেশ্বরী নদীর সাথে দেখা করে আসি। এই নদীটি কয়লা খনি হিসেবে খ্যাত। তবে আমরা এখানে কয়লার সন্ধানে আসিনি, এসেছি সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ নীল জলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য। এক পথচারীর নিকট থেকে আমরা সোমেশ্বরী নদীর পথ চিনে নিলাম। প্রথমে যেতে হবে আত্রিখালি, এখান থেকে ব্রীজ পার হলে মোটরসাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। মোটরসাইকেলে ফারংপাড়া। ফারংপাড়ার বুক চিরে বয়ে গেছে সোমেশ্বরী। পথচারীর দেখানো পথে আমরা হাটতে শুরু করলাম। আমরা খুব সম্ভবত মূল শহরের ভিতর দিয়ে হাটছি। কারণ, রাস্তার দুইপাশে বাড়িঘর, এনজিও অফিস, বিউটি পার্লার চোখে পড়ল। অবাক করা ব্যাপার এই ছোট্ট মফস্বলে যেমন প্রচুর এনজিওর অফিস দেখতে পেলাম, তেমন বিউটি পার্লারের সংখ্যায়ও উল্লেখযোগ্য। অপ্রশস্ত ইটের রাস্তার দুই পাশে এনজিও অফিস, সৌন্দর্য্য সর্চার অফিস সারি সারি দাড়িয়ে রয়েছে। শীতের এই ওম জড়ানো কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে হাটতে ভালোই লাগছে। আত্রিখালি পৌছানোর আগ পর্যন্ত রাস্তায় মানুষ বলতে আমরা দুইজনেই। মিনিট দশেক হেটেই আত্রিখালিতে পৌছে গেলাম। এখানে ছোটখাট বাজার আছে। মানুষের আনাগোনা আছে। চায়ের দোকানে পানি গরম হচ্ছে, মাটির চুলায় ভাপা পিঠা তৈরি হচ্ছে। গ্রামের সেই চিরচেনা পরিবেশ। আত্রিখালি এসে আমরা আরেকজন স্থানীয়বাসীর সাহায্য নিলাম। কিন্তু উনি আমাদের বললেন, ব্রীজের নিচ থেকে নদী পার হতে হবে।
হ্যা, আত্রিখালিতেও সোমেশ্বরী নদীর শাখা বয়ে গেছে। কিন্তু সেই নদীর বুকে জল নেই। আমরা তার কথা মতো নদীর ভিতর নেমে গেলাম। শুকনা খনখনে নদী। আমাদের সামনে একজন কাধে ঝাকা নিয়ে হাটছে। আমরা তার পিছু নিলাম। সেই আমাদের পথের দিশারী। কিন্তু কুয়াশা এতোটাই ঘন যে হঠাৎ চোখের পলকে সামনের মানুষটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল।


এই ঘন কুয়াশায় কোথায় তাকে খুজে পাবো? খনখনে নদীতে কোন রাস্তা নেই। আমরা অচেনা পথে কোথায় যাবো, ভেবে আবারও আত্রিখালি ফিরে ব্রীজের উপর দিয়েই নদী পার হলাম।


আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি কিনা জানতে স্থানীয় একজনকে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হলাম। ফারংপাড়া পৌছাতে আমাদেরকে পাচ-ছয় কিলো হাটতে হবে। মোটরসাইকেল ভাড়া নিতে পারতাম কিন্তু গ্রামের এই অসাধারণ সৌন্দর্য্য উপভোগ করা হতো না। বাংলাদেশের হাজারও গ্রামের মতো নেত্রকোনার এই গ্রামের চিত্র একই।


গ্রামের মাঝ বরাবর পিচ ঢালা রাস্তা।(দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। গ্রামের মাটির রাস্তা এখন পিচঢালা রাস্তায় পরিণত হয়েছে) রাস্তার দুই পাশে মানুষের বাড়িঘর, পুকুর, ক্ষেত-খামার। হাজারো বছরের জীবনচিত্র। হাজারো বছর ধরে গ্রামগুলো অমলিন সৌন্দর্য্য বুকে ধারণ করে আছে। আমি যতবার বাংলার গ্রামগুলোতে যাই, ততবারই মুগ্ধ হই। রাস্তায় জ্যাম নেই, মানুষের মরিচিকার পিছনে ছুটে চলার প্রয়াস নেই, কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রকোপ নেই, ইট-পাথরের বস্তি নেই। শহুরে জৌলুস, চোখ ধাধানো রঙিন বাতির ঝকমকে আলো নেই। গ্রামে আসলে আপনি বুক ভরে অক্সিজেন নেবেন, সবুজ প্রকৃতি দেখবেন। গ্রাম সুন্দর, আজকের শীতের সকালটা আরও বেশি সুন্দর। ঠান্ডার মোলায়েম পরশ, কুয়াশার রহস্যময় পথ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমরা জানি না। কোন সে অপরুপ প্রকৃতির রুপ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আমরা জানি না। আমাদের শুধু মন বলছে এই সকাল, এই পথ যেন শেষ না হয়। কিন্তু পথের নিয়মে গন্তব্য শেষ হয়। ঘন্টা খানেক হাটার পর আমরা ফারংপাড়া স্কুলে এসে পৌছায়। এইখান থেকে ডানেই দেখা যাচ্ছে সোমেশ্বরী নদী। নদীর বুকে আমি আর পারভেজ রবিন নেমে পড়ি। এই নদী পাড়ি দিয়ে আমাদের যেতে হবে কামারখোলা। ভেবেছিলাম নদী পাড়ি দিবো নৌকায় কিন্তু পাড়ি দিতে হচ্ছে পায়ে হেটে। নদীর বুকেই মানুষ পায়ে হাটা পথ একে রেখেছে। আমরা সেই পথ অনুসরণ করতে থাকি। সোমেশ্বরী নদীতে কুয়াশার প্রকোপটা বেশি। তাই আমাদের দৃষ্টি সীমাটাও কমে আসে। যতদূর চোখ যায় শুকনো নদী। শুকনো নদীর কোন সৌন্দর্য্য নাই কিন্তু গা ছম ছমে রহস্য আছে। কেউ কি ভোলায় ধরা গল্প শুনেছেন। অশরীরও ভোলা পথচারীর পথ ভুলিয়ে দেয়। আমাদেরও তাই মনে হচ্ছে, প্রায় দশ মিনিট শুধু নদীর উপর দিয়ে হাটলাম কিন্তু কোথায় নদীর অপর কুল? কোথায় মানুষ? তারপরই আচমকা তিনজন মানুষ কুয়াশা ফুরে আমাদের অতিক্রম করলো। এরা সত্যিকারের মানুষ তো?


এই নিয়ে মনের ভিতর যখন জল্পনা-কল্পনা তখন আরও একদল (সংখ্যায় বিশ-পচিশজন) মানুষের সারিকে আমরা আমাদের পিছনে আবিস্কার করলাম। এতটা পথ হেটে এলাম এদের দেখিও নাই, পথ চলার শব্দও শুনি নাই। যেন এদের নদীর ভিতরেই বাস। মানুষের দেখা পাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমরা সোমেশ্বরী নদীর জলের দেখা পেলাম। জলতো নয় স্বচ্ছ কাচের খনি! তীরে দাড়িয়েই নদীর বুকের ভিতরটা দেখে নেওয়া যায়। কয়লার কালচে দাগ, চিকচিকে বালু আর একটা নীলাভ আভা; নদীর সব রুপ এখন উন্মুক্ত। নদীর তন্বী দেহটা ছুয়ে দেখি। কী শীতল তার স্পর্শ। নদী ফুরে কুয়াশা ধোয়ার মতো উড়ছে। নদী বারবার জানান দিচ্ছে, আমি মরি নাই। যদিও নদী তার ভরাট যৌবন শুকিয়ে এখন শীতের বার্ধক্যে ধুকছে। নদীতে হাটু জল, চাইলে হাটু জলে পা ভিজিয়েই অপর কুলে চলে যাওয়া যায়। কিন্তু কে চায় ঠান্ডা পানিতে এই সকালে নিজেকে ভেজাতে? আমরা অপেক্ষা করছি নৌকার জন্য। আমাদের সাথে যে দলটা নদীর তীরে এসে পৌছিয়েছে তারা নৌকার মাঝির নাম ধরে ডাক দিচ্ছে। কিন্তু কোথায় সেই নৌকা? আমরা ওপারের কুল দেখতে পাচ্ছি কিন্তু নৌকা বা নৌকার ঘাটতো দেখতে পাচ্ছি না। মিনিট পাচেক অপেক্ষার পরে কুয়াশা ভেদ করে নৌকা এলো। ঘাটটা একটু আড়াআড়ি, তাই কুয়াশার কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম না। নদী পেড়িয়ে যে পাড়ে গেলাম লোকে বলে, কুল্লাপাড়া। কুল্লাপাড়ার সাথেই কামারখোলা বাজার। দুর্গাপুরের বাজারটা যেমন আকার আকৃতিতে বিশাল, কামারখোলা তেমনটি নয়। গোটা দশেক দোকান নিয়ে ছোট্ট বাজার। আমরা বাজারের এক টং ঘরে যাত্রা বিরতী দিলাম। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য বিজয়পুর চীনা মাটির পাহাড়। বহুদূর দূরন্ত থেকে মানুষ মূলত আসে এই চীনা মাটির পাহাড় দেখতে। চীনা মাটির অপরুপ সৌন্দর্য্যই পথের ক্লান্তি, থাকার কষ্ট; সব ভুলিয়ে দেয়।
গতকাল সাড়ে চারটায় যখন বিরিশিরিতে বাস থেকে নামি তখন মনে হচ্ছিল ধূর এতো কষ্ট করে এই পোড়ার দেশে কে আসে? একটা দিন বাসের ভিতরেই মাটি হয়ে গেল। মহাখালী থেকে যখন বিরিশিরি’র উদ্দেশ্যে বাস ছাড়লো তখন ঘড়িতে সকাল ৮.৪০। বাসের নাম আই.জি। ঢাকা টু বিরিশিরি সিটিং সার্ভিস। ভাড়া ৩০০ টাকা। আমরা যখন ময়মনসিংহে পৌছালাম তখন দুপুর ১। ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত আসতেই চারঘন্টা শেষ। রাস্তার যে অবস্থা, তাতে ধীরে চলো নীতি সহ্য করা যায়। কিন্তু বাকি ৬০ কিলোমিটার যেতে ব্যয় হলো সাড়ে তিনঘন্টা, যা মেনে নেওয়াটা কষ্টকর। ময়মনসিংহ পর্যন্ত মোটামুটি পর্যন্ত সিটিং থাকলেও ময়মনসিংহের পরে সিটিং গাড়ি আর সিটিং থাকলো না। আই.জি এর কল্যানে দিনটাই মাটি। বিরিশিরিতে যখন নামলাম ঘড়িতে তখন সাড়ে চার। শীতের বেলা, সূর্য ডুবিডুবি করছে। রাত নামার আগেই আমাদের একটা মাথা গোজার ব্যবস্থা করতে হবে। মফস্বল এলাকা। জেলার বাইরে থেকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এখানে কারও এসে থাকার দরকার হয় না। তাই থাকার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যারা বিরিশিরিতে বেড়াতে আসেন তাদের থাকার মূল ভরসা খ্রিষ্টানদের দুইটা মিশনারী ইয়াইডব্লিউসিএ আর ইয়াইএমসিএল। আমরা ঢাকা থেকেই খোজ নিয়ে এসেছি যে এই দুইটার কোনটাতেই সিট খালি নাই। একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবেই এই ভরসায় আমরা রওনা দিয়েছিলাম। কারণ বিরিশিরিতেই নতুন দুইটা হোটেল হয়েছে। স্বপ্না হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এবং নদী হোটেল। কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ দুইটার কোনটাতেই রুম খালি নাই। দীর্ঘ বাসযাত্রা, পেটে ক্ষুধা, সূর্য ডুবতে বসছে কিন্তু এখনও মাথা গোজার কোন ব্যবস্থা করতে পারি নাই। আমার সফরসঙ্গী পারভেজ রবিন অবশ্যই নির্বিকার। তার কথা, কোথাও ব্যবস্থা না হলে মসজিদে থাকবো। ইয়াইডব্লিউসিএ, ইয়াইএমসিএল এ রুম খালি নাই জেনেও আমরা সশরীরে মিশনারী দুটিতে ঢু মারি যদি শেষ পর্যন্ত কেউ বুকিং ক্যান্সেল করে অথবা দৈব্যক্রম কোন রুম খালি থাকে। যদি, অথবা, কোনটায় আমাদের কপালে জুটলো না। কোথাও কোন রুম খালি নাই। পরপর তিনদিনের ছুটি। তাই অনেক পর্যটকই বিরিশিরিতে এসেছে। এখানে রুম সংখ্যাও কম। তাই অল্পতেই অসঙ্কুলান। এতটায় অসহায় লাগছিল যে মনে হচ্ছিল আজ রাতেই ঢাকায় ফিরে যাই। লোকমুখে খবর পেলাম দুর্গাপুরে দুইটা থাকার হোটেল আছে। মোটামুটি ভালোই। এখন দুর্গাপুরই ভরসা। বিরিশিরি থেকে দুর্গাপুরের দুরত্ব খুব বেশি না। পনের মিনিট হাটলেই চলে যাওয়া যায়। শরীর ক্লান্ত, তাই এক অটোতে উঠলাম। ভাড়া দুইজনের বিশ টাকা। দুর্গাপরে নেমেই রাস্তার পাশে যে হোটেলের খোজ পেলাম দেখেই আমাদের চক্ষু চড়কগাছ। হোটেলের নাম সুসঙ্গ। পুরানো দিনের বাড়ী। যেকোন সময়েই ভেঙে পড়তে পারে। ছোট ছোট রুম। কাঠের দরজা। দরজায় একটা তালা মারা ব্যবস্থা আছে বটে কিন্তু কেউ ইচ্ছা করলে দরজা শুদ্ধই রুমের বোর্ডারকে তুলে নিয়ে যেতে পারবে। আর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার প্রসঙ্গে নাই বা বলি। তবে রুম ভাড়া একদম পানির দর। সিঙ্গেল রুম ১০০ টাকা। আমি আর পারভেজ রবিন পরষ্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করলাম। আশার কথা, আর যাইহোক রাতে নীল আকাশের নিচে থাকতে হবে না। আমরা সুসঙ্গ হোটেলে ঠিক ভরসা করতে না পেরে আমাদের শেষ বিকল্প হোটেল গুলশানের খোজে বের হলাম। হোটেলটা দুর্গাপুর বাজারের ঠিক মাঝখানে। অনামিকা সিনেমা হলের সাথে লাগানো। হঠাৎ করে দেখে বোঝার উপায় নাই, এটা একটা হোটেল। বেশ কিছুক্ষন আমি আর পারভেজ রবিন হোটেলের সামনে দিয়ে ঘোরাঘুরি করলাম। খুজে না পেয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করতেই আবিস্কৃত হলো আমরা হোটেলের সামনেই দাড়িয়ে আছি। দেখেই বোঝা যায়, অনেক পুরানো হোটেল। অনেকদিন ধরেই বিরিশিরিতে আগন্তক মানুষদের রাতে মাথা গোজার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। হোটেল গুলশান মানসম্মত নয়, তবে হোটেল সুসঙ্গ থেকে ভালো। আমরা রাতটা মাথা গোজার জন্য সুসঙ্গতে পরিত্যাগ করে গুলশানকেই বেছে নিলাম। রুম ভাড়া একদম পানির দর। সিঙ্গেল রুম ১৫০ টাকা।
রাতে একটা থাকার ব্যবস্থা হলো। এখন অনেকটা নিশ্চিন্ত। গুলশান হোটেলের সামনেই দুইটা খাওয়ার হোটেল। সেখানে গরম গরম পরেটা ভাজা হচ্ছে। পরেটা খাবো নাকি ভাত? সারাদিন একমুঠো ভাত খাইনি। তাই ভাতের সন্ধানে বের হলাম। বিরিশিরিতেই মূলত পর্যটকরা এসে থাকে। তাই ঐখানকার খাবারটা মানসম্মত হবে ভেবে আমরা রিকশা নিয়ে দুর্গাপুর বাজার থেকে বিরিশিরির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। দুর্গাপুর আর বিরিশিরি বিচ্ছেদের মূলে সোমেশ্বরী নদী। এই দুই মফস্বলের মাঝদিয়ে সোমেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। একটা ব্রীজ দুর্গাপুর আর বিরিশিরির মিলন ঘটিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দিয়েছে। রাতের বেলা ব্রীজের উপর থেকে দূরে নদীর বুকে আলো জ্বলা নেভা দেখতে পেলাম। এ কিসের আলো? লঞ্চের? কিন্তু নদীর যে যৌবন হারানো রুপ দেখেছি, তাতে এই নদীর লঞ্চ চলাচলের কথা নয়। তবে কিসের আলো? তা আমাদের কাছে রাতের আধারে রহস্যই রয়ে গেল। (পরদিন সকালে আবিস্কার করেছিলাম এই আলো জ্বলা স্থানগুলোতে বিশেষ উপায় নদী থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে।)
মাথার ভিতর রহস্যের পোকা নিয়েই স্বপ্না হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলাম। হোটেলটা নতুন। আকারে ছোট কিন্তু রুচিশীলতার ছাপ আছে। ঘড়িতে তখন সবে সাত। এই সময়টা রাতের খাবারের সময় নয়। সবাই দেখলাম পিঠা খাচ্ছে। আমরা ধন্দে পড়ে গেলাম। এখন কী ভাত পাওয়া যাবে? হোটেলের মালিকিন বেশ আন্তরিক। মুখ টিপে হেসে বললেন, ‘হবে। বসেন।‌‍’ খাবার সাজানো আছে। খাবার দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কী খাব? পারভেজ রবিন বলল, সে ট্যাংরা মাছ খাবে। আমি মুরগীরে সালুন অর্ডার করলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর গরম ধোয়া ওঠা ভাত এলো। সকাল থেকে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে এখানে খাবার নিয়েও আমাদের দুইজনের কোন এক্সপেকটেশন ছিল না। শুধু পেট ভরলেই হলো। কিন্তু ট্যাংরা মাছের ঝোল খেয়ে মাথা খারাপ অবস্থা। এই পাড়াগায়ে এতো ভালো খাবার আমরা আশা করি নাই। মুরগীর সালুনের স্বাদও আশাতিত ভালো। বিরিশিরিতে আসার পর এই প্রথম বিরিশিরিকে ভালো লাগতে শুরু করলো। প্রথমবার মনে হলো বিরিশিরি সুন্দর। যতক্ষণ এই বিরিশিরিতে ছিলাম তারপরের প্রতিটাক্ষণই এই ভালো লাগাটা ছিল। স্বপ্না হোটেলে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। মনটা ফুরফুরে হওয়া আরেকটা সুপ্ত কারণ হয়তো সামনে বসমান গারো মেয়েটি! খুব সম্ভবত এই হোটেলের মালিকিনের মেয়ে। পৃথিবীর সব রুপ নিয়ে হোটেল আলো করে সে আমাদের সামনের টেবিলে বসে আছে।
পরদিন সকালে কামারখোলা বাজারে বসে পারভেজ রবিন পরিকল্পনা করছে, কিভাবে বিজয়পুরে চীনা মাটির পাহাড়ে যাওয়া যায়? সবচেয়ে সহজ উপায়, একটা মোটরসাইকেল ভাড়া করে ভু করে চলে যাওয়া। কিন্তু ভ্রমণের সম্পূর্ণ থ্রিলটা নিতে চাচ্ছি। একদম ট্রেকাররা যেভাবে ঘুরে বেড়ায়। কাধে বড় ব্যাগ ঝুলিয়ে, হাতে ম্যাপ নিয়ে রাস্তা চিনতে চিনতে পথ এগোনো। আমারও সেভাবে এগোতে থাকলাম। পারভেজ রবিন ঢাকা থেকেই ছক একে নিয়ে এসেছে, কোথা থেকে কোথায় যেতে হবে? মাঝে মাঝে গুগল ম্যাপ আর স্থানীয় পথচারীর সহায়তা নিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছি, ঠিক পথে আছে কিনা। বিজয়পুরে যাওয়া পথে বহেরাতলা নামক স্থানে আপনি পাবেন রাশিমনি স্মৃতিসৌধ। দেখতে অনেক চোখের মতো। স্মৃতিসৌধ হয়তো আলাদা কোন সৌন্দর্য্যধারণ করে না। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস বহন করছে। ১৯৪৬ সালে টংক ও কৃষক আন্দোলনের নেত্রী হাজংমাতা রাশিমনি এইখানে শহীদ হন। আমরা এইযুগের ডিজিটাল প্রজন্ম পুরানো ইতিহাসের মহার্ত অনুধাবন করতে পারি না। তাই ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা শেষ হলে বিজয়পুরের উদ্দেশ্যে আবার যাত্রা শুরু করি। এবার পিচঢালা রাস্তা পেরিয়ে মাটির রাস্তা। আমরা আরামসেই হাটতে পারলেও যারা রিকশায় করে আরাম খেতে খেতে বিজয়পুরে আসছেন, তারা মাটির রাস্তায় ঝাকি খেতে খেতে যাত্রা হারাম করতে করতে বিজয়পুরে এসে পৌছাচ্ছেন।


আমাদের ধারণা ছিল, এই সাতসকালে আমরাই সবার আগে বিজয়পুরে পৌছাবে। কিন্তু দেখা গেল, আমাদের আগেই আরেকদল ভ্রমণার্থী বিজয়পুরে হাজির। বউ বাচ্চা নিয়ে ফ্যামিলি প্যাক ট্যুরিস্ট। তাদের দেখা দেখি আমরাও পাহাড়ে উঠা শুরু করলাম। আহামরি বড় পাহাড় না। সহজেই পাহাড়ের মাথায় চড়ে ফেলা যায়। সাদা পাথরের উপর শ্যাওলা ধরা পাহাড়। কোথাও কোথাও পাহাড়ের রং গোলাপী। ছবি দেখলে যে কেউ অ্যামেরিকার কোন ন্যাড়া পাহাড় ভাবলে আশ্চর্যের কিছু নাই।


পাহাড়ের বিস্তৃত খুব বেশি জায়গা জুড়ে নয়। আধাঘন্টা হাটলেই সম্পূর্ণ এলাকা ভালোভাবে দেখে নেওয়া যায়। এই পাহাড়গুলো চীনা পাথরের খনি। আর খনিগুলো কাটতে কাটতে পাহাড়ের মাঝখানে গর্ত তৈরি হয়েছে। সেই গর্তে পানি জমে হয়ে গেছে পাহাড়ের মাঝে লেক। লেকের পানি অদ্ভুত রকমের সবুজাভ।


এমন অনিন্দ্য সুন্দর লেক আমি এর আগে কোথাও দেখিনি। হলুদাভ গোলাপী রঙের পাহাড়, সবুজাভ লেক, লেকের পানির উপর কুয়াশা ধোয়ার কুন্ডলি পাকিয়ে পেজা তুলার মতো উড়ছে; সবমিলিয়ে এ যেন পৃথিবীর বুকে স্বর্গীয় রুপ।


পাথর কুড়ানো ঠিক না বেঠিক ভাবতে ভাবতে কয়েকটা সাদা আর গোলাপী পাথরের টুকরা সুভিন্যুর হিসেবে ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে ফেললাম। হাতে যেহেতু আমাদের পর্যাপ্ত সময় আছে, আমরা পাহাড়ের উপর বসে সৌন্দর্য্যটা উপভোগ করার চেষ্টা করলাম। মনে ক্ষীণ আসা, হয়তো কুয়াশা কেটে সূর্যমামার দেখা পাওয়া যাবে। তাহলে রোদের আলোয় ঝলমলে পাহাড়ের প্রতিবিম্ব লেকের ভিতর কেমন দেখায়, দেখতে পাবো। আমাদের অপেক্ষাটা বৃথা গেল না। দেখতে দেখতে সূর্যমামা কুয়াশা কাটিয়ে উকি দিয়ে লেকের আয়না জলে তার আজকের চেহারাটা দেখে নিল। আমরা দেখে নিলাম রোদের আলোয় হলুদাভ পাহাড় কেমন দ্যুতি ছড়ায়। নতুন বউয়ের মতো এক পলক দেখা দিয়ে সূর্য আবারও কুয়াশার মেঘে হারিয়ে গেল। তবুও আমরা বসে রইলাম। আসার সময় দেখেছে গ্রামের মানুষ এই শীতের সকালে কিভাবে অলস সময় কাটাচ্ছে। সেই আলস্য আমাদের ভিতরেও সঞ্চারিত হয়েছে।


পাহাড়ের পূর্ব দিকে যতদূর চোখ যায়, সবুজের দিগন্তরেখা। তার মাঝখানে মাথা উচু করে দাড়িয়ে দুইটি বটসদৃশ বৃক্ষ। বৃক্ষ দুইটির পাশেই ছনের পালা। দৃশ্যটা ছবির মতো। প্রকৃতি এখানে অলস বসে আছে। আমরাও। কিন্তু কতক্ষণ? কতক্ষণ আর এই চীনা মাটির পাহাড় টিকে থাকবে কে জানে? আমাদের থাকাকালীন একদল ভ্রমণার্থী দেখলাম মটর সাইকেল নিয়ে এখানে আসল। নেতাগোছের একজন দলের আরেকজনকে জিজ্ঞাস করতে শুনলাম, ‘এমপির খনি কী এইটা?’ সেইজন জবাব দিল, ‘জ্বী। এইটা না। ঔ পাশে।’ বুঝতেই পারলাম। এই এককটা পাহাড়ের খনি একেকজন প্রভাবশালীদের দখল। তাদের কাছে এগুলো শুধুই খনি। অর্থের যোগানদাতা। হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা এই চীনা মাটির পাহাড় কাটা চলছে। খনি আহরণ শেষ হলে একসময় হয়তো সূর্য তার চেহারার দেখার আয়না খুজে পাবে না।
আমরাও পথ খুজছি। এবারের গন্তব্য রানিখং গীর্জা। বিজয়পুরে এক রিকশাওয়ালা জিজ্ঞাস করলাম, রানীখং গীর্জায় যাবে কিনা? সে ভাড়া চায়, ২০০ টাকা। ২০০ টাকায় তো সারা নেত্রকোনা ঘুরে আসা যায়। তাই আবারও হাটতে শুরু করলাম। কিছুদূর হাটার পর ৭০ টাকায় এক মোটরবাইক রানীখং গীর্জায় যেতে রাজি হলো। হাটতে হাটতে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আর যেহেতু ফিরতে হবে আগের রাস্তায় তাই নতুনত্বের কিছু নেই। দূরত্বটাও কম নয়। বিজয়পুর থেকে ফিরতে হবে বহেরাতলা, তারপর রানীখং গীর্জা। পাহাড়ের উপর এই গীর্জা অবস্থিত। এটা একটা ক্যাথলিক গীর্জা। এই বিরিশিরিতেই আরেকটি গীর্জা চোখে পড়েছে। ওইটা ব্যাপটিস্টদের। পর্যটকররা পাহাড়ের উপর এই গীর্জাটাতেই আসে। কারণ গীর্জাটা মনমুগ্ধকর এবং শত বছরের পুরানো। ইতিহাস বলে, এখানকার গারোরাই পৃথিবীর প্রথম গারো সম্প্রদায় যারা প্রথম ক্যাথলিক ধর্মে দিক্ষিত হয়। সময়টা অবশ্য আজ থেকে একশত বছর আগে। বিজয়পুরের চীনা পাহাড়ের তুলনায় এখানে ভ্রমণার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। কেউ গীর্জার সিড়িতে বসে খানিকটা জিরিয়ে নিচ্ছে, কেউ যিশুর মুর্তির নিচে বসে ছবি তুলছে। কেউ ঘুরে ঘুরে গীর্জাটা দেখছে। আমার প্রথম কোন গীর্জাতে আগমন। তাই আমি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। দুঃখের বিষয়, মূল প্রার্থনা ঘরটা বন্ধ। ভিতরের অনেক অংশই সাধারণের জন্য প্রবেশ নিষেশ। আমরা সাধারণ মানুষ তাই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তস্থান ও স্থাপনাগুলোয় মনোনিবেশ করলাম। গীর্জার ভিতরের সবকিছুই সাজানো গোছানো, শান্ত এবং স্নিগ্ধ। ফুলের বাগানে মৌসুমী ফুলের সমাহার। পাহাড়ের কোল ঘেষে টিনের বিশ্রাম ঘর। এই ঘরে এসে দাড়ালে নিচের সোমেশ্বরী নদী আপনাকে স্বাগত জানাবে। এই বিশ্রাম ঘর থেকে সোমেশ্বরী নদী পূর্ণরুপে দেখা যায়।


সকালে আমরা কুয়াশার ভিতর দিয়ে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে আসলেও এর রুপটা দেখি নাই। রানীখং গীর্জার পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে সেই সোমেশ্বরী তার অপরুপ ধরা দিল। এই শীতের মৌসুমে সোমেশ্বরীর নীলজলের অস্তিত্ব কমই। নদীর বুকে এখন শুধুই ধু ধু চর। শুকনো চরের বুক চিরে সাপের মতো বয়ে গেছে কুমারী সোমেশ্বরী। সেই দৃশ্যই কম সুন্দর নয়।
খুব ইচ্ছা ছিল, সোমেশ্বরী নদীতে গোসল করার। কিন্তু ইচ্ছাটা অপূর্ণই রয়ে গেল। ভেবেছিলাম, বিরিশিরিতে এসে নদীতে নামবো। কিন্তু বিরিশিরিতে নদীর কালো পানি দেখে আর নামতে ইচ্ছা হয়নি। বিরিশিরি এই অঞ্চল জুড়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় নদীতে থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। তাই এখানকার পানি ঘোলা।


রানীখং গীর্জার ওইখানের পানি ছিল ঘন নীল। ভুল হয়ে গেল, কুল্লাপাড়া বা রানীখং গীর্জার ঐখান থেকে সোমেশ্বরীর জলে গা ভেজানো উচিত ছিল। কী আর করার? এই সামান্য অপূর্ণতা নিয়েই আমরা ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। এই বিরিশিরিতে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন- কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে ভারত সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, রানীখং গীর্জা থেকে বিরিশিরির পথের মাঝে কমলা রংয়ের মন্দির, বিরিশিরিতে ব্যপটিস্টদের গীর্জা। হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলে, এই দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে আসতে পারেন। বিরিশিরিতে ভ্রমণের সবচেয়ে সেরা সময় হচ্ছে শরৎকাল। এই সময় নদী থাকবে টয়টম্বুর। আকাশ থাকবে পেজা তুলায় অলংকৃত নীল। সেই আকাশ সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ নীল জলের ক্যানভাসে মনমুগ্ধকর ছবি আকবে। তবে আমরা যে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলাম, এইটা ব্যতিক্রম।
আমরা স্বপ্না হোটেলে দুপুরে খাবার খেয়ে এক সিএনজি ভাড়া করলাম ময়মনসিংহ যাওয়া জন্য। এখানকার সব বাসই লোকাল। রাস্তার অবস্থাও নিদারুন করুন। তাই বাস থেকে সিএনজি অনেক ভালো। রাস্তার দুই পাশের হলুদ শরিষা ক্ষেত, সবুজ মাঠের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে যাওয়া যাবে। ময়মনসিংহ থেকে এনা বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে। সিটিং সার্ভিস। লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কাটতে হয়। একটার পর একটা বাস ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতিটা বাসের যাত্রী উঠতে যতটুকু দেরি। যাত্রীর যেহেতু কোন অভাব নেই। সুতরাং যাত্রীরা বাসে উঠে সিটে ঠিকঠাক মতো বসলেই গাড়ী স্টার্ট হচ্ছে। আগের গাড়ী ছেড়ে দিলে নতুন আরেকটা গাড়ী যাত্রী উঠাচ্ছে। এখানে লাইনে টিকিট কেটে নিজ সিরিয়ালের গাড়ীর জন্য আধাঘন্টা খানেক অপেক্ষা করতে হয়। তবে বেশ আরামসে এবং দ্রুতই ঢাকায় পৌছানো সম্ভব। রাত সাড়ে নয়টায় ফিরে আসলাম চিরচেনা সেই ঢাকায়। বাসে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম ভেঙে মন হলো, বিরিশিরি ভ্রমণ কী স্বপ্ন ছিল? শুরুটা মন্দভাবে শুরু হলেও যতই সময় গরিয়েছে ততই বিরিশিরি তার রুপের মায়াজলে আচ্ছন্ন করেছে। বিরিশিরি সফরটাকে তাতেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন বললে খুব বেশি বলা হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৪
১৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×