somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাকে আমি খুজে ফিরি

১৫ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

:চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন?
মেয়েটি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। যেন আমি চরম অন্যায় প্রশ্ন করেছি। সুন্দরী মেয়েরা একটু অহংকারী হয়। এই মেয়েটা পরমা সুন্দরী। অহংকার একটু বেশিই মনে হয়। শুধু ছোট্ট করে বলল, ‘হু’।
আমার মাথায় তখন কথা বলার ভুত চেপে বসেছে। গত একঘন্টা এই ওয়েটিং রুমে অলস বসে আছি। একে একে সবারই ইন্টারভিউ বোর্ডে ডাক আসছে। আমার সিরিয়াল আর আসে না। কাহাতক আর চুপচাপ বোবা সেজে বসে থাকা যায়। আমি পাশে বসা পরমা সুন্দরীর সাথে আলাপ জমাবার চেষ্টা করি। বলি, ‘আমিও’। মেয়েটি দ্বিতীয়বার আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। এতক্ষণ খেয়াল করি নাই। ভ্রু কুচকে তাকালে মেয়েটাকে আরও সুন্দর লাগে।
:এইটা কী আপনার ফার্স্ট ইন্টারভিউ?
ভেবেছিলাম মেয়েটি আবারও ভ্রু কুচকে তাকাবে। কিন্তু না। এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকালো। আমার চেহারায় কিছু একটা পড়তে চেষ্টা করলো। মুখ দিয়ে শুধু এক অক্ষরের শব্দ বের হলো, ‘না’।
:আমারও। এর আগেও বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউ ফেস করেছি। কিন্তু কপাল। কপাল নাই বুঝেছেন? মামা খালুও নাই। কিন্তু আপনার? আপনার কী সমস্যা? চেহারা দিয়েই তো বাজিমাত করে দেওয়ার কথা।
:আমারও।
:আপনারও কী?
:মামা খালু নাই।
:রিয়েলি।
:হুম।
:ভেরি স্যাড। আপনার আর আমার অবস্থা একই। আমি ঢাবি, আপনি?
:আমিও।
কথার খেলা ভালোই জমে উঠেছে। প্রথম দিকে যতটা অহংকারী ভেবেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে ততটা না। মেয়েটিরও মন আছে! আমি আরও অন্তরঙ্গ আলাপ শুরু করে দেই। ‘আপনার আমার ভালোই মিল আছে। আপনারও মামা-খালু নাই, আমারও না। দু’জনেই ঢাবি। মাস্টার্স পাশ। বেকার। আশ্চর্য দেখেছেন? আজকে দু’জনের জামার রঙও এক, ‘নীল’।
‘নীল আমার প্রিয় রঙ’। মেয়েটি ছোট্ট করে উত্তর দেয়।
আমি তো মেয়েটির কথা শুনে অবাক। এতকিছু কিভাবে মিলে যায়? ‘নীল’ আমারও প্রিয় রঙ। সবকিছুই মিলে যাচ্ছে। আমি শেষমেষ বলেই ফেলি, ‘আচ্ছা বিয়ে করেছেন?’ আরও একবার মেয়েটি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো। আমি মুগ্ধ। এই মেয়েটা এতো সুন্দর কেন?
‘কেন বলুন তো?’ ভ্রু কুচকেই মেয়েটি জানতে চায়।
আমি আমতা আমতা করতে থাকি। এতদিন জেনে এসেছি মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই। এখন আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, মেয়েদের বিবাহ বিষয়ক প্রশ্ন করতে নেই। আমি উত্তরে বলি ‘না মানে সবকিছুই দারুন মিলে যাচ্ছে। বিবাহ বিষয়ক ব্যাপারটাও মিলে যায় কিনা জানতে ইচ্ছা হলো’।
:আপনি করেছেন?
:বিয়ে? উননন নাহ।
:আমিও না।
:দারুন। সবকিছুই মিলে যাচ্ছে, মামা-খালু, লেখাপড়া, চাকরী, পছন্দ, বিয়ে…
:মিলাইতে চান?
আমি মেয়েটির প্রশ্নটা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। আর কি মিলাইতে চাচ্ছে?
মেয়েটিই বলে, ‘সম্পর্ক’।
আমার মাথায় ঠিক ঢুকছে না। কিসের সম্পর্ক সে মিলাইতে চায়?
:আমাকে বিয়ে করবেন?
বিদ্যুতের শক খেলে মানুষ যেমন ঝাকি দেয়, আমার ভিতরেও তেমন ঝাকি দিল। মেয়েটা ভালো খেলোয়াড়। মোক্ষম সময়ে, দারুন বাউন্সার দিয়েছে। আমি কী করবো? পুল করবো না ছেড়ে দিবো? এমন সময়ে মেয়েটির ইন্টারভিউ বোর্ডে ডাক এলো। আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মেয়েটি হনহন করে ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকে গেল। তার পরপরই আরেকটা ইন্টারভিউ বোর্ডে আমারও ডাক এলো। রোবটের মতো আমি ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকলাম। কি প্রশ্ন করলো আর আমি কি উত্তর দিলাম, আল্লাহ মাবুদ জানে। ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বের হয়ে দেখি, ফাকা। মেয়েটি নেই। আমি ইন্টারভিউ কোঅর্ডিনেটর ছেলেটার কাছে ছুটে গেলাম। ‘ভাই, কিছুক্ষন আগে নীল রঙের জামা পড়া যে মেয়ে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল, সেই মেয়েটা কোথায়?’ কোঅর্ডিনেটর আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ‘কোথায়? আজকের ইন্টারভিউ লিস্টে কোন ফিমেল ক্যান্ডিডেটই নাই। আপনার কাকে খুজছেন?’ বলে কী লোকটা? এতক্ষণ ধরে আমি কথা বললাম। আর, এ বলে নাই। আমি বেশ কয়েকবার তাকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তার একই উত্তর, ‘এখানে কোন মেয়েপ্রার্থীই ছিল না’। তার শেষ কথাটা আমাকে হতবুদ্ধ করে দিল। আমি নাকি প্রথম থেকেই একা একা বসে বিড়বিড় করছিলাম। মেয়েটি আমার কল্পনা! যার সাথে আমার এতো মিল সে কিভাবে আমার কল্পনা হয়? এতক্ষণে খুব বেশি দূর হয়তো যায় নাই। অফিসের নিচেই হয়তো সে অপেক্ষা করছে। তার শেষ প্রশ্নের উত্তরটা আমার দেওয়া হয়নি। উত্তরটা জানানো বিশেষ প্রয়োজন। আমি আর এক মুহুর্ত দেরি না করেই লিফটের দিকে হাটা শুরু করলাম। হারিয়ে যাবার আগেই তাকে খুজে পেতে হবে।



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:৩৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×