somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই মা কি আর শান্তিতে ঘুমোতে পারবে?

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বৃৃদ্ধা মা। সত্তোরার্ধ্ব। বয়সের ভাড়ে শরীর কিছুটা ন্যুয়ে পড়েছে। শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তিন ছেলেমেয়েকে ‘মানুষ’ করেছেন। ছোট ছেলের সঙ্গে থাকেন। ছেলে অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। কাজের মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘরে হয়তো নাস্তা তৈরিতে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই এমন নির্মমতার মুখোমুখি হতে হবে কস্মিন কালেও কি ভেবেছিলেন তিনি? নিজের ছেলেকে নিয়ে এমন দুঃস্বপ্ন হয়তো কোনও মা-ই দেখেন না। দেখা সম্ভবও নয়। কিন্তু তার চোখের সামনেই ঘটে গেলো সব। একদল তরুণ এলো।

নির্বিচারে ছেলের মাথায় কোপালো, চাপাতি দিয়ে। সঙ্গে ছেলের বন্ধুকেও। মায়ের চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করারও ছিলো না। কয়েক মিনিটের কিলিং মিশন ছিলো এটা। হতভাগা এই মায়ের আদরের সন্তানের অপরাধ ছিলো সে সমকামীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। হয়তো সে নিজেও সমকামী, আমি নিশ্চিত নই। সমাজের স্বাভাবিক মত ও পথ থেকে আলাদা। তাই বলে তাকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করতে হবে? তাও আবার দশ মাস গর্ভে ধারণ করা মায়ের সামনে।

ঘটনার পর প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়েছেন সেখানে। একজন ভিডিও করেছেন সেই ভয়ঙ্কর ও নির্মম দৃশ্য। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌছার আগেই আশেপাশের ফ্ল্যাটের লোকজন উপস্থিত হয়েছেন। হয়তো বা বাইরের লোকজনও। বেশিরভাগই নারী। কিন্তু কেউ জুলহাজ ও তনয়কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার সাহস পাচ্ছেন না। দরজার কাছাকাছি জায়গায় পড়ে আছে জুলহাজের লাশ। দরজা থেকে ভেতরের ড্রয়িং রুম রক্তাক্ত। দরজা খোলা। সবাই সেই দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন। বৃদ্ধা মা প্রতিবেশীদের ডাকছেন। সাহায্য চইছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ আসুক। ক্রাইম সিন নষ্ট হতে পারে। খুনিদের ছাপ নষ্ট হতে পারে।

কিন্তু মায়ের মনে তো আর সেসবের কিছু থাকার কথা নয়। তিনি সাহায্যের জন্য ডাকছেন। বাইরে দাড়ানো অপর এক নারীকেও সাহায্যের জন্য পুরুষদের ধরতে বলা হচ্ছে। শেষে এক তরুণ এগিয়ে গেলো। তার মাথায় টুপি, গায়ে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী। দেখে মনে হচ্ছে মৌলভী টাইপের। সে একটি তোয়ালা হাতে নিয়ে এগিয়ে গেলো। জুলহাজের দেহটাকে টেনে আনা হলো দরজার বাইরে, অর্ধেক। মা তখনও ছেলের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছিলেন, চাপাতির কোপে জুলহাজের মাথার মগজ বেড়িয়ে আসছিল। মা সযতেœ তা হাতে তুলে আবার মাথার কাটা জায়গায় ঢুকিয়ে রেখেছেন। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন সন্তান তার কোলে ফিরে আসবে। কিংবা আদরের সন্তানের প্রতি এমন নির্মমতা দেখে তার মাথা কাজ করছিল না। এই দৃশ্য দেখার মতো নয়। বুক ফেটে যায়। হতে পারে একজন সমকামী। মানুষ তো। একজন মানুষের প্রতি এমন নিষ্ঠুর হতে পারে অপর মানুষেরা।

এখন পর্যন্ত যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, উগ্রপন্থী ইসলাম ধর্মীয় জঙ্গি এর সঙ্গে জড়িত। সমকামীদের সংগঠিত করায় জুলহাজকে টার্গেট করা হয়েছিল। তনয় হয়তো টার্গেটেট ছিলো না। কিংবা তনয়ও হয়তো টার্গেটেড ছিলো। খুনিদের না ধরা পর্যন্ত নিশ্চিত বলা যাবে না। ধর্মের রক্ষার নামে একদল মানুষ কুপিয়ে ঘিলু বের করছে, আবার মাথায় টুপিওয়ালা মৌলভী সে জুলহাজকে বাঁচনোর শেষ চেষ্টায় শামিল হয়েছে।

অদ্ভূত আমাদের এই দেশ, অদ্ভূত আমাদের মানব সমাজ। মতের মিল না হলেই তাকে হঠাও। ভিন্ন মত জাগতে দেয়া যাবে না। ভিডিও দৃশ্যটি আমি একাধিকবার দেখেছি। অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমার অনুভূতি ভোতা। তবুও শিউরে উঠেছি আমি...এত রক্ত...মাথাটা...আহ্ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়...তবু আমি হয়তো ভুলে যাবো। নতুন আরো বেশি মর্মান্তিক ঘটনার পেছনে ছুটবো।

এই মা কি কোনও দিন আর শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন?
বৃৃদ্ধা মা। সত্তোরার্ধ্ব। বয়সের ভাড়ে শরীর কিছুটা ন্যুয়ে পড়েছে। শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তিন ছেলেমেয়েকে ‘মানুষ’ করেছেন। ছোট ছেলের সঙ্গে থাকেন। ছেলে অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। কাজের মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘরে হয়তো নাস্তা তৈরিতে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই এমন নির্মমতার মুখোমুখি হতে হবে কস্মিন কালেও কি ভেবেছিলেন তিনি? নিজের ছেলেকে নিয়ে এমন দুঃস্বপ্ন হয়তো কোনও মা-ই দেখেন না। দেখা সম্ভবও নয়। কিন্তু তার চোখের সামনেই ঘটে গেলো সব। একদল তরুণ এলো।

নির্বিচারে ছেলের মাথায় কোপালো, চাপাতি দিয়ে। সঙ্গে ছেলের বন্ধুকেও। মায়ের চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করারও ছিলো না। কয়েক মিনিটের কিলিং মিশন ছিলো এটা। হতভাগা এই মায়ের আদরের সন্তানের অপরাধ ছিলো সে সমকামীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। হয়তো সে নিজেও সমকামী, আমি নিশ্চিত নই। সমাজের স্বাভাবিক মত ও পথ থেকে আলাদা। তাই বলে তাকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করতে হবে? তাও আবার দশ মাস গর্ভে ধারণ করা মায়ের সামনে।

ঘটনার পর প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়েছেন সেখানে। একজন ভিডিও করেছেন সেই ভয়ঙ্কর ও নির্মম দৃশ্য। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌছার আগেই আশেপাশের ফ্ল্যাটের লোকজন উপস্থিত হয়েছেন। হয়তো বা বাইরের লোকজনও। বেশিরভাগই নারী। কিন্তু কেউ জুলহাজ ও তনয়কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার সাহস পাচ্ছেন না। দরজার কাছাকাছি জায়গায় পড়ে আছে জুলহাজের লাশ। দরজা থেকে ভেতরের ড্রয়িং রুম রক্তাক্ত। দরজা খোলা। সবাই সেই দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন। বৃদ্ধা মা প্রতিবেশীদের ডাকছেন। সাহায্য চইছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ আসুক। ক্রাইম সিন নষ্ট হতে পারে। খুনিদের ছাপ নষ্ট হতে পারে।

কিন্তু মায়ের মনে তো আর সেসবের কিছু থাকার কথা নয়। তিনি সাহায্যের জন্য ডাকছেন। বাইরে দাড়ানো অপর এক নারীকেও সাহায্যের জন্য পুরুষদের ধরতে বলা হচ্ছে। শেষে এক তরুণ এগিয়ে গেলো। তার মাথায় টুপি, গায়ে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী। দেখে মনে হচ্ছে মৌলভী টাইপের। সে একটি তোয়ালা হাতে নিয়ে এগিয়ে গেলো। জুলহাজের দেহটাকে টেনে আনা হলো দরজার বাইরে, অর্ধেক। মা তখনও ছেলের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছিলেন, চাপাতির কোপে জুলহাজের মাথার মগজ বেড়িয়ে আসছিল। মা সযতেœ তা হাতে তুলে আবার মাথার কাটা জায়গায় ঢুকিয়ে রেখেছেন। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন সন্তান তার কোলে ফিরে আসবে। কিংবা আদরের সন্তানের প্রতি এমন নির্মমতা দেখে তার মাথা কাজ করছিল না। এই দৃশ্য দেখার মতো নয়। বুক ফেটে যায়। হতে পারে একজন সমকামী। মানুষ তো। একজন মানুষের প্রতি এমন নিষ্ঠুর হতে পারে অপর মানুষেরা।

এখন পর্যন্ত যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, উগ্রপন্থী ইসলাম ধর্মীয় জঙ্গি এর সঙ্গে জড়িত। সমকামীদের সংগঠিত করায় জুলহাজকে টার্গেট করা হয়েছিল। তনয় হয়তো টার্গেটেট ছিলো না। কিংবা তনয়ও হয়তো টার্গেটেড ছিলো। খুনিদের না ধরা পর্যন্ত নিশ্চিত বলা যাবে না। ধর্মের রক্ষার নামে একদল মানুষ কুপিয়ে ঘিলু বের করছে, আবার মাথায় টুপিওয়ালা মৌলভী সে জুলহাজকে বাঁচনোর শেষ চেষ্টায় শামিল হয়েছে।

অদ্ভূত আমাদের এই দেশ, অদ্ভূত আমাদের মানব সমাজ। মতের মিল না হলেই তাকে হঠাও। ভিন্ন মত জাগতে দেয়া যাবে না। ভিডিও দৃশ্যটি আমি একাধিকবার দেখেছি। অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমার অনুভূতি ভোতা। তবুও শিউরে উঠেছি আমি...এত রক্ত...মাথাটা...আহ্ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়...তবু আমি হয়তো ভুলে যাবো। নতুন আরো বেশি মর্মান্তিক ঘটনার পেছনে ছুটবো।

এই মা কি কোনও দিন আর শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৫২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×