somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুলশান হামলা: রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তাহমিদ যা লিখেছিল...

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


''....পেশাগত কারণে হাসনাত-তাহমিদের বক্তব্য বা অনুভূতি জানতে চেষ্টা করি আমি। এক পর্যায়ে বিশ্বস্ত একজন সোর্সের মাধ্যমে পড়ন্ত এক বিকালে দুই পৃষ্ঠায় ইংরেজিতে লেখা একটি নথির অনুলিপি আমি হাতে পাই। ৯ আগস্ট ২০১৬ তারিখে লেখা ওই কাগজটি ছিল তাহমিদ হাসিব খানের একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, এটি তদন্তের একটি অংশ। অপরাধে সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত খুঁজতে কখনো কখনো আটক ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত অনুভূতি লেখার সুযোগ দেওয়া হয়। তাহমিদের লেখা সেই অনুভূতিটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে দেওয়া হলো-

নাম:- তাহমিদ হাসিব খান
০৯/০৮/২০১৬
বেশ কিছুদিন পর আবার লিখছি। লেখার সুযোগ পাইনি তা নয়। তবে আমাকে ব্যস্ত রাখা হয়েছিল। না, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বিপর্যস্ত করা হয়নি। প্রথম দিকের দিনগুলো পার হয়েছে এসি শাহরিয়ার স্যারের অ্যাসাইনমেন্টে কাজ করে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এমন একটি কাজে ভূমিকা রাখতে পেরেছি যেটা বাংলাদেশে নতুন ধারার পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার অভিজ্ঞতা এর থেকে ভালোভাবে কাজে লাগানো যেত না- যেটা পুলিশের অধীনে থেকে তাদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে হয়েছে।

কিন্তু ভালো দিনগুলো ফুরিয়ে আসছে। রিমান্ডের সময় শেষ হওয়ার পথে। এরপর যা অপেক্ষা করছে তা অত্যন্ত অনিশ্চিত। দুপুর ২টা ৬ মিনিটে আমি যখন এটা লিখছি, তখন খবরে দেখানো হচ্ছে- খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। আগে মিডিয়ার জড়ো হওয়াকে মনে হতো খ্যাতি পাওয়ার লোভনীয় এক সুযোগ। কিন্তু এখন তার (খালেদা জিয়া) মতো এক অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর মিডিয়ার প্রতি সেই আকর্ষণ হারিয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে, ১৩ই আগস্ট, আমাকেও আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।

সবচেয়ে আদর্শ, ন্যায্য, সত্যনিষ্ঠ আর ইতিবাচক ফল হবে যদি আমাদের জামিন মঞ্জুর হয়। কিন্তু তেমন সম্ভাবনা খুবই কম। যদিও প্রচুর তথ্যপ্রমাণ আমার পক্ষে আছে এবং জিজ্ঞাসাবাদকারীদের বেশি কিছু পর্যালোচনা করার নেই; তারপরও আমার মুক্তি আর ন্যাযবিচারের মৃত্যুদূত হয়ে দাঁড়িয়েছে মিডিয়া। মিডিয়া/সামাজিক মিডিয়ায় কিছু ছবি ছড়াচ্ছে যেখানে আমাকে বন্দুক হাতে ছাদের ওপর দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। প্রথম দিন থেকেই আমি বলে আসছি যে, ওরা আমাকে বন্দুক ধরে রাখতে বাধ্য করেছিল। আর আমি যে পরিস্থিতিতে ছিলাম, সেখানে না বলাটা ছিল অসম্ভব। মিডিয়ার কাছে আমার একমাত্র আবেদন হলো- তারা আমাকে নিয়ে নেতিবাচক, মিথ্যা, আর কল্পিত খবর প্রচার করার পরিবর্তে পুরো ভিডিওটা বিশ্লেষণ করুক। আমার মানসিকতা বা সন্ত্রাসী অথবা জঙ্গি সংগঠন বা এমন ধ্যানধারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যে সন্দেহ, সে প্রসঙ্গে বলব- আমার বন্ধু, পরিবার, প্রতিবেশী, সহকর্মী, পরিচিতজনরাই যথেষ্ট প্রমাণ। অন্যদের নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা করার কারণে বিভিন্ন সময় সমালোনার মুখোমুখি হয়েছি আমি।

আমি শুধু চাই সত্যটা বের হয়ে আসুক। এই ঝামেলা থেকে বের হতে আমাকে যেটা সাহায্য করবে তা হলো- আমার নির্দোষত্বের ওপর নিজের আত্মবিশ্বাস এবং আমার পরিবারের প্রার্থনা ও সমর্থন। অনেক বেশি চিন্তা ভাবনা না করার চেষ্টা করেছি। এটা মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। বিশেষ করে আমার মতো পরিস্থিতিতে। আমার বাবা-মার চিন্তা মাথা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তাদেরকে; যে কারও থেকে বেশি। আমাকে যে ভালোবাসা ও সমর্থন তারা দিয়েছেন এমনকি আমার ভুলের ক্ষেত্রগুলোতেও; সেটা আমাকে- আমি যেমন, তেমনটা হতে সাহায্য করেছে। তারা সবসময় ভুল ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। আমাকেও শিখিয়েছেন অন্যায়ের নিন্দা করতে। তারা তো আমার আদর্শের দুই স্তম্ভ বটেই। এছাড়াও, তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা আমি কখনই পরিশোধ করতে পারব না। ওই ঘটনার পর আমি যখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলাম, তখন আমি চেষ্টা করেছি এসব চিন্তা মনে না আনতে। এসব ভাবনা আমার চোখে পানি আনত আর দুর্বল মানসিক স্থিতিতে যাওয়ার কোনো সুযোগ আমার ছিল না। আমি শুধু তাদের মুখটা দেখতে চাইতাম। আর সে সুযোগ আমার হয়েছে। যেভাবে তারা আমাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তারা আমার জন্য লড়ছেন। আর প্রতি মুহূর্তে আমার উপলব্ধি হচ্ছে যে, আমার ওই বিভীষিকাময় ভাগ্য স্বত্ত্বেও যেটা আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছে, আমি অন্যতম সৌভাগ্যবান একজন মানুষ যার এমন দু’জন অভিভাবক ফেরেশতা আছে। বাবা, আম্মা- আমি তোমাদের ভালোবাসি।

আরেকটা কথা না বললেই নয়। ফাইরুজ- আমি ক্ষমা চাচ্ছি। প্রথমত তোমার সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারার জন্য (এমন নয় যে আমি যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ পেয়েছি)। তোমার সৌন্দর্য আমাকে সম্মোহিত করেছে। আর আমাকে মুগ্ধ করেছে তোমার চরিত্র। আমি এমন সময় প্রেমে পড়েছিলাম যখন ভাবিনি যে প্রেমে পড়তে পারি। ওই রাতে যদি মরে যেতাম, তাহলে একমাত্র ইতিবাচক বিষয়টা হতো তোমার সঙ্গে থাকাটা। এসব কিছুর পর আমার মনে হয় না আমরা এক হতে পারব; আর তোমার পরিবার কখনই আমাকে মেনে নেবে না। মনে হয় আমাদের একসঙ্গে বুড়ো বুড়ি হওয়া হবে না। আর সিঙ্গেল ফাদার হিসেবে এতিম শিশুদের দত্তক নেওয়ার পুরোনো পরিকল্পনাটাই বাস্তব হবে। যে আদর্শে তোমাকে বড় করা হয়েছে তুমি শুধু সেই আদর্শ নিয়ে তোমার জীবন যাপন করো। তুমি চমৎকার একজন মানুষ।

ভাইয়া, প্লিজ, বাবা ও আম্মার খেয়াল রেখো। সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও অন্য কারো মাধ্যমে করো। তুমি সবসময়ই আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছ যে, জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিতেই একজন ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব। আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি। আমার সব বন্ধু, পরিবার আর শুভাকাক্সক্ষীদের ভালোবাসি (অনিল, সুদীপ আর ফেসবুকও!)। প্রার্থনা কোরো যেন আমি মুক্তি পাই। আর এই পৃথিবীকে আরও উন্নত আবাসস্থলে পরিণত করতে ভূমিকা রাখতে পারি.....।''

-------------------''হোলি আর্টিজান- একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান'' বই থেকে নেয়া। গুলশান হামলার অজানা অনেক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে লেখা বইটির লেখক নুরুজ্জামান লাবু। বইটি প্রকাশতি হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। প্রকাশক: অন্বেষা প্রকাশন। পাওয়া যাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ১২ নম্বর প্যাভিলিয়নে...
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×