তখন বড় ভাইয়ার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখাশোনা চলছিল। একদিন শুনতে পেলাম চট্টগ্রামের কোন এক মেয়ের ব্যাপারে আমার চাচা প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। আমার আব্বু আর আপু চাচার বাসায় গিয়ে মেয়েটিকে দেখেও এল। ঘটনাটা প্রথম দিকের। তাই আমরা সবাই খুব উৎসাহী এবং উত্তেজিত। আমি, বড় ভাইয়া আর আম্মু তখন ঢাকায় থাকি। ঢাকা থেকে আপুকে ফোন দিয়ে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলাম। আপু বলল মেয়ে দারুণ সুন্দরী। চেহারা খুবই সুন্দর। গায়ের রঙ দুধে আলতা রঙের। ওকে জিজ্ঞেস করলাম দুধে আলতা রঙ আবার কেমন জিনিস? তখন উত্তর পেলাম দুধের সাথে আলতা মিশালে যেমন হয় সেটাকে দুধে আলতা রঙ বলে। কিন্তু দুধ আর আলতা কি অনুপাতে মিশাতে হবে সেটাসে বলেনি। একটা জিনিসের প্রোডাক্ট কেমন হবে সেটা তার কাঁচামালের অনুপাতের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভর করে। যেমন ইথানল আর সালফিউরিক এসিড ১ অনুপাত ১ হারে মেশানো হলে উৎপন্ন হয় ইথিন। আবার ২ অনুপাত ১ হারে মেশানো হলে উৎপন্ন হয় ডাই ইথাইল ইথার। তাই অনুপাতটা খুব জরুরী। জানতে চাইব ভেবেছিলাম কিন্তু সে ক্ষেপে যাবে এই আশঙ্কায় আর জিজ্ঞাসা করিনি। অতএব মেয়ের গায়ের রঙ ঠিক কেমন সেটা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারি নি। ভাইয়া খুব উৎসাহী হলেও সেটা দেখাতে পারছেন না। তবুও বললেন আপুর কাছে মেয়ের মোবাইল নাম্বার আছে কিনা জিজ্ঞেস করতে। আপু মেয়ের মোবাইল নাম্বার নিয়ে এসেছে। আমি না চাইতেই দিয়ে দিল।
আমার মোবাইল থেকে ফোন দিলাম। চার-পাঁচ মাসের কোন শিশুকে কোলে নিলে তার মুখ থেকে যেমন ভুরভুর করে দুধের গন্ধ বের হয়, তেমনি এই দুধে আলতা দেয়া রঙের মেয়ের কথা থেকেও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার ভুরভুরে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। মেয়েরা কোন অপরিচিত ছেলের নাম্বার থেকে কল আসলে যা বলে তাই বলল। আপনি কে, কেন ফোন দিয়েছেন, নাম্বার কোথা থেকে পেয়েছেন এইসব। অন্য কেউ হলে পরিচয় দিত কিনা জানিনা তবে আমি আমার পরিচয় দিইনি। ফোন দিলাম আর কথা হল এমন-
হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
কেমন আছেন?
ভাল আছি। আপনি কে?
এই আপনাদের মেয়েদের একটা সমস্যা। কেউ ফোন দিলেই কে কে করে কয়েক মিনিট নষ্ট করেন।
এমনিতে কি শান্তিমত কথা বলা যায় না? আমি মানুষ।
আপনার নাম কি?
কি ব্যাপার নাম জিজ্ঞেস করছেন কেন? আমি কি আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছি?
আপনার নাম বলেন নাহয় আমি আর কথা বলব না।
আমার নাম মুন্তাসির আল সাইদী। আমি মুন্তাজির আল জাইদীর ছোট ভাই।
মুন্তাজির আল জাইদী? উনি কে? বুঝতে পারলাম এই মেয়ে আবুল মার্কা। মুন্তাজির আল জাইদী একজন ইরাকি সাংবাদিক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশকে পাদুকা নিক্ষেপ করে তখন রাতারাতি বিখ্যাত ব্যক্তি। এই ঘটনা যেদিন ঘটে তার তিন-চারদিন পরের কথা। এতদিনেও যদি এই ঘটনা সে না জানে তবে তাকে আবুল না ভেবে কি করব? বা এটা এমন কোন বাসি ঘটনা না যে জানলেও ভুলে যেতে হবে।
থাক বাদ দেন। ভাইয়াকে না চিনলেও চলবে। আমাকে চিনেন তাতেই হবে।
আপনি কেন ফোন দিয়েছেন?
আপনার সাথে কথা বলার জন্য।
কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন। আমি ঘুমাব। আমি ঘড়ি দেখলাম মাত্র সাড়ে দশটা বাজে। চট্টগ্রাম শহরে এটা এমন কোন রাত না যে এখনি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। চট্টগ্রামের অনেকেই এখন বিকেলের চা খাচ্ছেন।
আমি না খুব একা। আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। আমার না একটা গার্লফ্রেন্ড খুব দরকার। আপনি কি আমার গার্লফ্রেন্ড হবেন?
গার্লফ্রেন্ড কি? ভাবলাম এই মেয়ে হয় সেরের উপর সোয়া সের নাহয় সে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে না। আমার চাচাকে কেউ মদন বানানোর চেষ্টায় আছে।
গার্লফ্রেন্ড মানে বান্ধবী।
ছিঃ আপনি এত পচা? আপনার এরকম বলতে লজ্জা লাগে না।
আরে লজ্জার কি আছে? আমার একটা বান্ধবী দরকার হতেই পারে।
আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছেন?
রিচার্জের দোকান থেকে। দেখেন আপনি কিন্তু কথার মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করছেন। আপনি আমার বান্ধবী হবেন কিনা জলদি বলেন নাহয় রিচার্জের দোকান থেকে আরও কিছু মেয়ের নাম্বার নিয়েছি ওদেরকে ট্রাই করে দেখতে হবে।
আচ্ছা আপনার নামটা কি সত্যি করে বলেন না।
দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্য
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




