আজ থেকে প্রায় আটশত বছর পূর্বে অধিকাংশ রাজসভার কবি তাদের কাব্যে, নারীর রূপের দীর্ঘ গুণকীর্তন করতেন । তার অবশ্য যাথযথ কারণ ছিল ।রাজার সামনে নারীর রূপের বর্ণনা দিলে রাজা শুনে আনন্দিত হতেন । তাদের মনোরঞ্জনের জন্য কবিগণ কাব্যের অনেকটা অংশ জুড়ে লিখতেন নারীর রূপের বর্ণনা ।
কবির নাম মনে নেই ,তার বর্ণনাটা এমন ,
রূপ লাগি আখি জুড়ে
গুনে মন ভোর
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে
প্রতি অঙ্গ মোর ।
আধুনিক যুগের সাহিত্যিকদের বর্ণনা তাদের মত গুরুগামম্ভর্যময় নয় অনেক সাবলীল । দুই-তিন পাতায় বা আরো কম কথায় বর্ণনা শেষ । তার কারণ হিসেবে মনে হল ,যুগ বদলেছে ….এখন আর সেই দিন নেই ।
একটা অন্তমিল করছি ,
সখি কেমনে ধরিব হিয়া
আমারি বঁধূয়া আন বাড়ি যায়,
আমারি আঙিনা দিয়া । -দ্বিজ চন্ডিদাস
এত দূরবোধ্য কবিতা পড়ার সময় কয়জনের আছে । তার চেয়ে বরং মমতাজের গানটা শোনাই উওম
বন্ধু যখন বউ লইয়া
আমার বাড়ির সামনে দিয়া
রঙ্গ কইরা হাইট্টা যায়
ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায় ।
আগেকার দিনে মনোরঞ্জন প্রয়োজন ছিল এখন যে নেই তা নয় । এখন ও আছে তবে ক্ষেএ বদলে গেছে ..নাইট ক্লাব, মেলার উৎসবে বাইজির নাচ বা পতিতালয়ে যাবার বৈধতা তো আছেই । মনোরঞ্জনের আর অভাব কোথায় !!
রবীন্দ্র, নজরুল, বাউল, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া গান আর শ্রতার মনে ধরে না । অনুষ্ঠানে গেলে শুনতে হয় ঝাকানাকা গান শোনাতে হবে । ঝাকানাকা মানে যে গান শোনার বা বুঝবার প্রয়োজন নেই, শ্রতার শরীর ঝাকাতে পারলেই হল ।
গতকাল মিডওয়ে বাসের পিছনে আপার বাড়ি যাচ্ছিলাম ,এ-লেভেলের কিছু ছাএ এত বিশ্রী ভাষায় কথা বলছিল, যা শুতে একজন ভদ্রলোক সহ্য করতে না পেরে তাদের সাথে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো ।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সব কিছুই পরিবর্তিত হবে ,এটাই হয়তো স্বাভাবিক । আর কিছু দিন পড়ে শ্যামলী ,মনসী,চৈতালী ,বিনোদিনী,বনলতা সেন ,মধুমালতীর স্হান হবে বড় বড় মিউজিয়ামে । টিকিট কেটে বইয়ের নামগুলো দেখতে যাবেন ,হাজার হাজার ভক্ত ও অনুরাগী ।