লেখক তৈরিতে অসামান্য ভূমিকা রাখছে ব্লগ। প্রতিষ্ঠিত অনেক লেখক যেমন নিয়মিত ব্লগে লেখেন, তেমনি ব্লগে লিখতে লিখতে অনেকে লেখক বনে যাচ্ছেন। গত কয়েক বছরের বইমেলায় ব ব্লগার লেখকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং বলা যায়, অন্যবারের চেয়ে এবার বইমেলায় ব্লগ এবং ব্লগারদের উপস্থিতি অনেক বেশি দৃশ্যমান। এবারের বইমেলায় প্রথমবারের মতো একটি ব্লগ সাইটের স্টল বসেছে। ব্লগারদের লেখা একটি অভিনব উপন্যাসও এসেছে, যেখানে একদল ব্লõগার মিলে একেকজন একেকটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন। এর বাইরেও ব্লগ লেখকদের প্রকাশিত বই তো আছেই।
বাংলা ভাষার ব্লগ সামহোয়্যারইন, প্রথম আলো ব্লগ, আমার ব্লগ বা সচলায়তনের মতো বহুল ‘ভিজিটিত’ (পঠিত বা আলোচিত শব্দগুলো এখানে জুতসই হবে না বলে উলিস্নখিত শব্দটি ব্যবহার করা) সাইটগুলো ঘুরে ব্লগারদের বইয়ের সচিত্র উপস্থিতি চোখে পড়ে। বইমেলায় প্রতিদিনই বসছে ব্লগারদের জমজমাট আড্ডা।
সম্মিলিত উপন্যাস
ব্লগারদের সম্মিলিত উপন্যাসের নাম নির্বর্ষ শ্রাবণ। প্রকাশনা সংস্থা পাঠসূত্র বইটি মেলায় এনেছে। পাঠসূত্রের স্টলে এটি পাওয়া যাবে। পাঠসূত্রের কর্ণধার রাজীব নূর বইটি প্রসঙ্গে মিডিয়াওয়াচকে বলেন, এটি একেবারেই নতুন ধরনের একটি উদ্যোগ। প্রথম আলো ব্লগের কয়েকজন মিলে এটি লিখেছেন। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগকে উতসাহিত করতেই পাঠসূত্র এ গ্রন্থটি প্রকাশ করছে।
বইটির ভূমিকায় একবার চোখ বোলালেই এ উপন্যাস রচনার প্রেড়্গাপট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
“সময়টা ছিল গত বছর রমজানের ঈদের ছুটি। প্রথম আলো ব্লগ একবছর পূর্ণ করতে যাচ্ছিল। ব-গাররা ঠিক করল উপন্যাস লিখবে। উপন্যাস! বললেই তো হয় না। একটি পোস্ট দিয়ে আহ্বান করলাম, লিখুন বন্ধুরা। কী লিখবেন তারা? বিষয় দেওয়া হলো। বিষয় বলতে ছোটখাটো একটা পস্নট। এটাকে টেনেহিঁচড়ে লম্বা করার জন্য দেওয়া হলো ব্লগার বন্ধুদের।
উপন্যাসের ঘোষণাটি ছিল ঠিক এমনঃ
আজকে একটা চমতকার ঈদের দিন পার হলো। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
যারা মোটামুটি অনলাইনে আছেন, বাসায় বসে ব্লõগিং করছেন, তাদের সান্নিধ্য আমরা পাব ছুটির দিনগুলোতে। ঈদের দিনের ব্যস্ততা তো মাত্র শেষ হলো। এখনো বেশ কিছুদিন ছুটি আছে। আর প্রবাসী ব্লগারদের ছুটিময় বা ছুটিহীন ঈদ কাটছে। তারা নিয়মিতই আছেন। গতবার কোরবানির ঈদের ছুটিতে আমাদের ব্লগাররা একটা উপন্যাস লিখে ফেলেছিলেন। এবারও সে রকম কিছু করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। চলুন, একটা ঈদ উপন্যাস লিখে ফেলি। ইথারে ভেসে রইবে ঈদের ভালোবাসা।
উপন্যাসের নামঃ ঈদের ছুটিতে (প্রস্তাবিত)
উপন্যাসের কাহিনীঃ (প্রস্তাবিত)
তরু, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ঢাকার কুর্মিটোলায় ওদের বাসা। মা মারা গেছেন। বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে তার সংসার, পড়ালেখার পাট চুকিয়েছে অনেক আগেই। একটা এনজিওতে কাজ করে। এই বিল্ডিংয়ে তারা নতুন এসেছে। কারও সঙ্গে তেমন চেনা-জানা হয়নি। ঈদের ছুটিতে তাদের বিল্ডিংয়ের সবাই বাড়ি গেছে। এমনই এক রাতে বাবার হার্ট অ্যাটাক হলোঃ
উপন্যাস লেখার নিয়মঃ
১· এই পোস্টে এসে বুকিং দিতে হবে। যিনি আগে বুকিং দেবেন তিনি প্রথম পর্ব লিখবেন। তারপর যারা আসবেন তারা প্রথম পর্ব লেখার পর দ্বিতীয়-তৃতীয় করে একেকটি পর্ব লিখবেন। ফলে কেউ বুকিং দিয়ে দেরি করলে উপন্যাস লেখা পিছিয়ে যাবে। তাই হাতে লেখার সময় থাকলেই কেবল বুকিং দেওয়া যাবে।
২· প্রথম পর্ব পড়ার পর দ্বিতীয় পর্ব লেখা শুরু হবে। এভাবে চলতে থাকবে।
৩· কপি-পেস্ট করে আমরা লেখকের নামসহ উপন্যাসটি একটি পোস্টে একত্র করব।
৪· সবার লেখা শেষ হলে কমেন্টের ভিত্তিতে কাহিনীতে সংশোধনী আনা যেতে পারে।
৫· নতুন যিনি লিখবেন তিনি আগের কাহিনীকে নতুন মোড় দিতে পারবেন, কিন্তু পুরোপুরি বাতিল করতে পারবেন না।
৬· পোস্টের শিরোনাম হবেঃ উপন্যাস-প্রথম পর্ব, উপন্যাস-দ্বিতীয় পর্বঃ এই রকম।
৭· আকার নিয়ে বাঁধাধরা কোনো নিয়ম নেই। তবে খুব বেশি দেরি করা যাবে না।
এই ঘোষণার পর কাজে নেমে গেল অনলাইনে ঈদের ছুটি কাটানো ব্লগাররা। পর্ব ভাগ করে দেওয়া হলো ব্লগারদের মাঝে। একজন শেষ করলে আরেকজন লিখছেন। এ রকম করে চলতে চলতে আমাদের ২৪ পর্বের এই উপন্যাস শেষ করতে লাগল পাক্কা পাঁচ মাস। কয়েকজন লেখার কথা বলে সময় চেয়ে নিয়ে আর লেখেননি। আবার অনেকে মনে করেছেন, এই সব বারোয়ারি লেখকের মাঝে লিখলে তার লেখার মান নষ্ট হবে। কেউ অসীম আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কেউ বা করেছেন বিমুখ। কেউ দুই দিনে পর্ব লিখে দিয়েছেন কেউ বা দুই ঘণ্টায় আবার কেউ ২২ দিনেও এক পর্ব দেননি। আসলে ব্লগিং মূলত মানুষ কাজের ফাঁকে সামান্য একটু রিফ্রেশনেসের জন্য করে থাকেন। সেই সব মূল্যবান সময় বের করে যারা আমাদের এই লেখা দিয়েছেন তাদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। নানা বয়সের নানান চিন্তাভাবনার মানুষ লিখেছেন। তাদেরই উপন্যাস নির্বর্ষ শ্রাবণ। লেখা তো শেষ হলো, এবার এডিটিং। উপন্যাস পড়তে গিয়ে খেয়াল করা হলো, আমরা নিজেরা যখন কিছু লিখিÌৈকউই নিজেকে রবীন্দ্র বা নজরুল থেকে ছোট ভাবি না। তাই মনে মনে বায়রন হওয়ার সময় পুরোটাই ভুলে গেছি আগের লেখক কী লিখেছিলেন। সুতরাং পাওয়া গেল চরম অসামঞ্জস্যতা। কারও চরিত্রে নায়কের বাবা গ্রাম থেকে এসেছেন, কারও পর্বে নায়ক গ্রামে বড় হয়েছে, কারও পর্বে নায়ক খুব কঠোর মনের শক্ত মানুষ, কারও পর্বে নায়ক কাঁদে। কোথাও নায়ক ভাড়া বাসায় থাকে, কোথাও নিজেদের বাড়ি। আবার কোথাও ঈদের আগের ঘটনা ঈদের পরে চলে গেল। কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। একলা এই কাজ করা সাধ্যি আমার নেই। ঘোষণা করা হলো এডিটিং প্যানেল।
ব্লগ স্টল
এবার বইমেলায় প্রথমবারের মতো কোনো ব্লগ সাইট স্টল দিয়েেছ। বর্ধমান হাউস এবং বাংলা একাডেমীর প্রশাসনিক ভবনের মাঝখানে, একুশে বইমেলার মূল মঞ্চের ডান দিকে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের ঊ নম্বরের স্টলটিই আমার ব্লগের স্টল। এই স্টলটি সব সময়ই গমগম করছে ব্লগারদের সরব উপস্থিতিতে।
ব্লগারদের িকছু বই
মেলা শুরুর পর থেকেই প্রতিটি বাংলা ব্লগ সাইটে ব্লগারদের বইয়ের সচিত্র বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। সচলায়তনের ব্লগারদের গ্রন্থের মধ্যে আবু মুস্তাফিেজর গল্পগ্রন্থ লুহার তালা, তারেক নূরুল হাসানের গল্প সংকলন কাঠের সেনাপতি, সাইফুল আকবর খানের উপন্যাস ত্রিধা, পান্থ রহমান রেজার গল্প সংকলন সন্ধ্যার মেঘের রঙ অন্ধকার হলে, মাহবুব আজাদের গল্পগ্রন্থ ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প, আরিফ জেবতিকের ডকুফিকশন ১/১১-র রাতে একুশ নম্বর আঙুল, রজিউদ্দীন রতনের বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ অণুজীবের পৃথিবী, আনিস হকের ছোটগল্প সংকলন অন্ধরাতের ঘোড়া এবং ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ জাহাজী যাযাবর, নজমুল আলবাবের কাব্যগ্রন্থ মিহিদানা দিনলিপি, মাহবুব লীলেনের ছোটগল্প বেবাট, আকতার আহমেদ ও মৃদুল আহমেদের রাজনৈতিক ছড়ার বই রাজাকার ইস্যুতে, মানবতা মুছে ফেল টয়লেট টিস্যুতে ইত্যাদি উেল্লখযোগ্য।
সূত্র: মিিডয়া ওয়াচ
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৪:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




