বিখ্যাত ও অখ্যাত দুই ধরনের কাগজই আমি পড়ি ৷ তাতে করে সংবাদ পরিবেশনের ধরন ও গুরুত্বের পার্থক্যও চোখে পড়ে ৷ সেই দিক থেকে দেশের বিখ্যাত দুই দৈনিক প্রথম আলো ও কালের কণ্ঠ আমার প্রতিদিনের পাঠ্য ৷
সেদিন কালের কণ্ঠ আমাকে খুব বিস্মিত করল৷ ১৫ জুলাই ২০১০ সম্পাদকীয় পাতা পড়তে গিয়ে খুব অবাক হলাম৷ নিজের গায়ে দুটো চিমটিও কাটলাম আমি৷ এ কী করে সম্ভব! এ কী করে হয়! প্রথমেই চোখে পড়ল 'সময়ের প্রতিধ্বনি' কলামে মোস্তফা কামালের রাজনৈতিক লেখাটি৷ বেশ কিছুদূর পড়ার পর মনে হলো, এই লেখা তো গতকালই আমি পড়েছি৷ লেখার বিষয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার প্রয়োজন৷ একই পাতায় অন্য একটি লেখায় চোখ রাখলাম৷ 'বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগপত্র'৷ এবার আরেকটি, 'যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে বিব্রত পাকিস্তান' ড. এম এ হাসানের লেখা৷ এই সব কটি লেখাই মনে হচ্ছে, আমি গতকাল পড়েছি৷ ধেত্, পুরোনো কাগজ আবার পড়ছি কেন! নিজের ওপরেই আমার বিরক্তি৷ ১৫ জুলাইয়ের কাগজ খুজি৷ ফ্রন্ট পেইজ দেখি৷ তারিখ তো ঠিকই আছে তাহলে সমস্যা কোথায়! বুঝতে পারি না প্রথমে৷ পরে ১৪ জুলাইয়ের কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয় পাতা বের করি৷ দুটো পাশাপাশি রাখি৷ সেকি কাণ্ড! আঁতকে উঠি রীতিমতো৷ বুঝি, দেরিতে বুঝি৷ ১৪ জুলাই যে সম্পাদকীয় পাতাটি ছাপা হয়েছে ১৫ জুলাইও হুবহু তা-ই ছাপা হয়েছে কালের কণ্ঠে৷ ১৪ আর ১৫ তারিখে কোনো পার্থক্য নেই! খুব হতাশ হই একটি বড় কাগজের এমন দায়িত্বহীনতা দেখে৷ এক বন্ধুকে ফোন দিই, মন খারাপ করে৷ জানাই অবিশ্বাস্য এই ঘটনার কথা৷ বন্ধু হাসে, বলে, তুমি যে নারীদের দুর্বল অবস্থান নিয়ে, সেক্সুয়াল মাইনরিটিদের নাজুক অবস্থা নিয়ে গবেষণা করো, চিত্কার করো, তার চেয়েও তো তোমার সংবাদপত্রগুলোর অবস্থা আরও খারাপ, ঝুঁকিপূর্ণ, ভালনারেবল৷ বন্ধুর রসিকতার ইঙ্গিতটি টের পাই, বুঝি৷
পরের দিনের ঘটনাটি আরও আহত হওয়ার মতো৷ ভয়াবহ৷ পুরো কালের কণ্ঠ খুব ভালোভাবে পড়ি, দেখি, উল্টাই৷ নাহ্! কোথাও নেই৷ ভেবেছিলাম, একটি সংশোধনী অন্তত দেবে কালের কণ্ঠ৷ কিন্তু তা দেওয়ার প্রয়োজনও হয়তো তাদের নেই৷
আমরা সাংবাদিকেরা, অন্যের সমালোচনা করতে, উপদেশ দিতে সবচেয়ে ভালোবাসি৷ একই সঙ্গে এটাকে নিজেদের দায়িত্ব বলে মনে করি৷ কিন্তু হায়! দায় এড়াই নিজেদের৷ সুশাসন, সংস্কার, যোগ্যতা_এসব পাঠ দিই সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে৷ সুশীল সমাজকে৷ কিন্তু আমাদের নিজেদের দায়িত্বহীনতা কে দেখবে? কে বলবে? এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা, চরম দায়িত্বে অবহেলা, পাঠকের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং ব্যবস্থাপনার ত্রুটি থাকলেই কেবল সম্ভব৷ ভুল করে ভুল স্বীকার করার প্রয়োজনও মনে করেন না আমাদের মহান সাংবাদিকেরা৷ কেবল বড় পুঁজি আর বিনিয়োগ, পারে না ব্যবস্থাপনার ত্রুটি সারাতে৷ প্রয়োজন হয় আন্তরিকতা, দায়বোধ এবং নিজের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা৷ সবচেয়ে কষ্ট হয় যখন এই পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে অসম্ভব প্রিয়, প্রাজ্ঞ, বিচৰণ একজন মানুষ_আবেদ খানের নামটি ছাপা হয়!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




