somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাচময়ুরী নাচরে, রুমঝুমাঝুম বাজরে

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগে ব্লগার আনোয়ার সাদীর একটা কমেন্ট থেকে ভাবছিলাম "আমি ও আমার নাচ" নিয়ে কিছু লিখবো।ভাবতে ভাবতে আর রোযা, সপিং আর তার চাইতেও বেশী ঘুরাঘুরি নিয়ে সময়টা বেশী কাটিয়ে ফেল্লাম। তাই এই বিষয়ে লিখতে একটু দেরী হয়ে গেলো।

খুব ছোটোবেলায় স্কুলে যাবার আগে থেকেই আমার নাচে হাতেখড়ি।আচ্ছা লেখাপড়া শেখার শুরুকে হাতেখড়ি বলা যায় আর নাচ শেখার শুরুকে কি বলা যায়?নিশ্চয়ই পায়ে খড়ি বা পায়ে নুপুর না। যাই হোক আমার মা টিভিতে একটা পিচ্ছি মেয়ের নাচ দেখে এতটাই মুগ্ধ হলেন যে ঐ মুহুর্তে নাকি সিদ্ধান্ত নিলেন, উনার মেয়েকে নাচ শেখাবেন ই শেখাবেন।

তো সেই অনুযায়ী পরদিন থেকেই আমাকে বাসার পাশেই এক নাচ শিক্ষিকার বাসায় পাঠানো হল। সপ্তাহে ৩ দিন উনি আমাকে নাচের তালিম দিতে লাগলেন।তখন আমার বয়স চার বছর।প্লে গ্রুপেও ভর্তি হইনি। আজকাল অবশ্য সাড়ে তিন বছরেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। আমি গিয়েছিলাম সাড়ে চারে।

এই ভাবে নাচের তালিমের এক মাসের মাথায় আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা অরুণাদিদি এক অনুস্ঠানে আমাকে নাচ করাবার জন্য নিয়ে গেলেন। অনুস্ঠান টা কোনো এক প্রতিস্ঠানের প্রতিস্ঠাবার্ষিকী ছিলো।
আমি তখনো স্টেজে নাচের কিছুই জানতাম না। তার আগে মনে হয় কাউকে স্টেজে নাচতেও দেখেছি কিনা সন্দেহ।

যাইহোক মা আমাকে কুচি কুচি করে ঘাগরীর মত করে মায়ের নিজের একখানা শাড়ী পরিয়ে দিলেন। মায়ের সবথেকে লোভনীয়(আমার কাছে) দামী লিপস্টিক(যে লিপস্টিক মায়ের অগোচরে সুযোগ পেলেই নাড়াচাড়া করতাম।চুপিচুপি ঠোটে লাগিয়ে তাড়াতাড়ি মুছে ফেলতাম) লাগিয়ে দিলেন। ঐ লিপস্টিক দিয়েই টিপ পরিয়ে দিলেন।(পরে প্রতিবার নাচের সাজের সময়ই আমার ঐ দিনটির কথা মনে পড়ে।এখন কত ধরণের টিপ কাজল চোখের সাজ মুখের সাজ করি। অথচ সেই সাজের আনন্দটুকু মনে হয় কোনোটার সাথেই তুলনা করা যায়না।)গলায় পরিয়ে দিলেন মায়ের সাতনরী হার, কানে টিপদুল। কারণ তখনও আমার কান ফোঁড়ানো হয়নি। এইভাবে হাতে চুড়ী , পায়ে আলতা দিয়ে সেজে গুজে মহাসমারোহে আমি নাচ করতে গেলাম।
যথারীতি আমার সময় এলো। অডিয়েন্সের প্রথম সারিতে মা বসে। আমি স্টেজে উঠে ভুলে গেলাম আমাকে এই খানে চুপ থাকতে হবে। পাকা অভিনেত্রীর মত মাকেও না চেনার ভান করতে হবে।সব ভুলে আমি মাকে দেখে খুশীতে "মা" বলে চিল্লিয়ে উঠলাম । হাত নেড়ে মায়ের দৃস্টি আকর্ষনের চেস্টা করতে লাগলাম।মা আমার ভাব সাবে অন্যদিকে তাড়াতাড়ি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। কিন্তু আমি মা কেনো দেখছেনা এই দুঃখে আরো বেশী জোর গলায় মাকে ডাকতে শুরু করলাম। শেষে মা চোখ পাকিয়ে ঠোটে তর্জনী দেখিয়ে ইশারা করতে আমার মনে পড়ে গেলো স্টেজে উঠে এই সব বাচ্চামী করা নিষেধ।আমি সাবধান হয়ে গেলাম।

তারপর মিউজিকের সাথে নাচ শুরু হলো। নাচটা ছিলো "নাচময়ুরী নাচরে, রুমঝুমাঝুম বাজরে।" তো নাচের প্রথম প্যারা ভালো ই হল কিন্তু সেকেন্ড প্যারা শুরু হতেই আমার খুব কান চুলকোতে লাগলো। আমি নাচ থামিয়ে কান চুলকাতে শুরু করলাম। এই দিকে হাসির রোল উঠলো। আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ ই নেই।কান চুলকানো থামলে, আবার ইচ্ছে মত নাচ শুরু করলাম।
কিছুক্ষন পরে আবার মনে হল ঘাগরীর গিট টা ঠিক আছে কিনা দেখে নেই। তো সেটাও নাচ থামিয়ে পরখ করে নিলাম।এইভাবে দর্শক শ্রোতাদের কে নাচ দেখিয়ে আনন্দ দেবার বদলে বলতে গেলে এক রকম কৌতুক দেখিয়ে আমি সেদিন আনন্দ দিলাম।

এর পরে বাড়ী ফিরতে সবাই যখন আমার নাচ নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো তখনই শুধু বুঝে গেলাম নাচের সময় যতই কান নাক গলা চুলকাক , চুলের খোপা কানের দুল, নুপুর খুলে পড়ে যাক কিছুতেই নাচ থামানো চলবেনা।

এই হল আমার জীবনের স্টেজে প্রথম নাচের অভিজ্ঞতা ।
এর পরে আর জীবনে কখনও এমন ভুল হয়নি। তবে আজকাল দেখি আমার থেকেও কতত পিচ্চি বাচ্চারা একটুও বাচ্চামী না করে নির্ভুল ভাবে নাচ করে যায়।তখন আমার পুরানো সেই দিনের কথা মনে পড়ে যায়। খুব দুঃখ হয়। ভাবি আমি এত গাধা ছিলাম কেনো?

ইদানিং কালের একটা পিচ্চির নাচের লিন্ক দিলাম । পিচ্চিটা একটুও ভুল করেনি।এদেরকে দেখে আমার পুরানো দিনের দুঃখ মাঝে মাঝে উথলে ওঠে।আবারও ভাবি আমি এত গাধা ছিলাম কেনো?
http://www.youtube.com/watch?v=2Nd-CoGRuqw
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১০ বিকাল ৪:৪১
৪৩টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×