আমি এখন যা বলবো আমার আওয়ামী লীগ - অন্ত প্রাণ বন্ধুরা একটু বেজার হতে পারেন, আমি নিজেও বেজার।
দেশের কথা ভেবেই লিখছি...
আমি আওয়ামী লীগের 'মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি' নামের ন্যারেটিভের কথা বলতে চাই। গত প্রায় চল্লিশ বছর যেই গীত আমরা শুনছি। টু বি অনেস্ট, আমি নিজেও এই গানে বিশ্বাস করতে চাই, মনে প্রাণে চাই।
আমরা এতোদিন জেনে এসেছি বাংলাদেশে দুইটা ধারা আছে জাতীয়তাভিত্তিক রাজনীতির।
১. আওয়ামী ধারা (মধ্য, মধ্য-বাম চিন্তার, নিজেদের সেকুলার দাবি করা)
২. বিনপি-জামাত ধারা (ডানপন্থী, ইসলামী/সউদি লবির এজেন্ট)
বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগন রাজাকারদের বিচার চায়, চার দশকের বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান চায়। বিনপি/জামাত কখনোই এই দাবি পুরন করবে না বলে আমরা জানি, কারন তারা নিজেরাই রাজাকারের দল।
বিপরীতে আমাদের হাতে একমাত্র সম্বল, গরীবের থালাবাটিকম্বল এবং অন্ধের যষ্ঠি ছিলো আওয়ামী লীগ, যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতো, রাজাকারের বিচারের দাবিতে আড়ষ্ট সম্মতিমূলক মাথা নাড়তো।
আমরাও বিগলিত হয়ে তাদের দুদু-বার-করে ভোট দিয়েছি, তারপর চোখের সামনে দেখেছি রাজাকারদের বিচার নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রহসন। বিচারকে নিজস্ব ভঙ্গিতে চলতে না দিয়ে প্রথমবার জাহানারা ইমামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, এবং দ্বীতিয়বার, এবার আমাদের চোখের সামনে গত তিন/চার মাসে আওয়ামী লীগ বদলে গেলো একটা মৌলবাদী দলে।
কিভাবে? এটা যদি জিজ্ঞেস করেন আওয়ামী সুশীল কিংবা পেইড ব্লগার হিসেবে... তবে উল্টা জিগাবো, আপনি কি গোল্ডফিস মেমোরী? তিনমাসেই ভুলে গেলেন?
ক্রমাগত হেফাজতকে লাই দেয়া, আমারদেশ পত্রিকা নামের বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী পত্রিকার ব্যাপারে সম্পূর্ন উদাসীন থাকা, বাকস্বাধীনতা হত্যা করা, জামাত শিবিরের সাথে নমনীয় আচরনের ভেতর দিয়ে পুলিশের এবং নাগরিকের জীবন ধ্বংস করা, দেশের হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করার যে জঘন্য 'পলিটিক্স' আমরা আওয়ামী লীগ চালিত সরকারের ভেতরে দেখলাম, সবচে বড়ো কথা বিচারের রায় যাতে জামাতের পক্ষে যায় সেজন্য দুর্বল কেস সাজানো এই সরকারেরই ইচ্ছাকৃত অবহেলা। জামাতের সাথে আঁতাতে আমরা দেখতে পেলাম কি করে কাদের মোল্লার রায় এলো সুবিধাবাদী, এবং ষাট দিন যাবার পরেও এখনো সরকারের আলসেমী দৃষ্টিকটু এবং আমাদের উপলব্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
এই মেটামরফোসিস দেখার পরে যে কেউ আওয়ামী লীগের পুরনো গান গেয়েও আর ফায়দা করতে পারবে না।
তারা যদি বলে আওয়ামী কে ভোট না দিলে বিনপি আসবে, আমরা বলি জামাত এখন বিনপিকে ত্যাগ করেছে।
জামাত এখন আওয়ামী'র ঘাড়েই সওয়ার হয়েছে।
একটা দল তার নেতৃত্ব এবং কর্মীর সামষ্টিক প্রতিফলন। নেতৃত্বের সিংহভাগ যখন জামাতের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ 'আর্থিক বানিজ্য' এবং বিবিধ সুবিধা-ভোগে মত্ত, ছাত্রলীগ নামক কর্মী বাহিনী যখন শিবিরের সাথে এক লাইনে দাঁড়িয়ে দেশের প্রগতিশীল ও মুক্তমনাদের হত্যা নির্যাতনে লিপ্ত, তখন আওয়ামী ভার্সাস জামাত ন্যারেটিভ তাল-সুর-হীন ভাঙ্গা বাঁশির মতোই বাজতে থাকে।
আওয়ামী'র মধ্য-মধ্য-বাম ইতিহাস আজ মৃত। আওয়ামী নিজেই বামের ওপর খড়গহস্ত, কারন বামের চেয়েও বড়ো সুহৃদ এখন তার জামাত, মানে সউদি লবি।
এতদঞ্চলে ইসলামের নামে সউদি-পুঁতিগন্ধময় নোংরা সংস্কৃতির বিস্তারের কসাইয়ের দায়িত্ব এখন আওয়ামী লীগ নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে। তাই বাংলাদেশে এখন একটাই মুলধারা রাজনীতি... জামাতে আওয়ামী।