আসুন জেনে নেই, ঈদ আসলেই কিছু বিশেষ মহল কেন বাইক রাইডারদের উপর চড়াও হয় ?
আসলে যারা ক্ষমতায় থাকে তারা মুখোশধারী। নির্বাচন সামনে, প্রচুর কাঁচা টাকা দরকার হবে। ভোট কেনা বেচা হবে। টাকার যোগান কোথা থেকে আসবে? যারা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন পন্যের দাম বাড়ায়, জীবন যাত্রার খরচ বাড়ায়, জনগনের পকেট থেকে টাকা বের করে আনে, তারাই সেই টাকার দাতা। সুতরাং তাদের কথায় দু একটি সুবিধা তো দিতেই হবে। আইন পাশ করতে হবে, কাল কে সাদা বানাতে হবে, এটাই তো তাদের কাজ, যারা ক্ষমতায় থাকে।
প্রাসঙ্গিক কথায় ফিরে আসি। এই ঈদে কেন হঠাৎ বৃষ্টির মত করে আইন জারি করা হলো, তার জন্য একটি বিশেষ সরকারি সংস্থা এবং বাস মালিক সমিতির সুরেশ সরিষা তেলের তেলেসমাতি কাজ করেছে।
কিভাবে?
হাইওয়ে পুলিশের হিসাবে ঈদের আগে এবং পরে ছয়দিনে ২৫ লাখ মোটরসাইকেল মহাসড়কগুলোতে চলাচল করবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করছে এই সংখ্যা হবে তার তিনগুণ। মানে দাঁড়ালো, এই ২৫-৭৫ লাখ মানুষ আসবে যাবে কিন্তু বাস ব্যবহার করবে না।
অর্থাৎ, যদি একজন যাত্রী গড়ে আসা যাওয়ায় ১০০০*২=২০০০টাকা বাস মালিকদের পকেটে না ঢুকিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে সেটা কি ঠিক? সোজা অংকে ২০০০*৭৫,০০,০০০=১৫০০,০০,০০,০০০ টাকা, প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা লস।
এর ভেতর থেকে যদি ২০০ কোটি টাকাও বিশেষ মহলকে খুশি করে আইন পাস করে দেড় হাজার কোটি টাকা ৭ দিনে পকেটে ঢোকানো যায় তাতে ক্ষতি কি?
আইন প্রনেতারা খুশি, বাস মালিক সমিতিও খুশি। আমজনতা হিসেবে আসুন আপনি আমি পকেট উজার করে দেই। তাছাড়া জানেন তো, ঈদের সময় রাস্তায় জ্যাম থাকায়, ট্রাফিক পুলিশ হাইস্পিডের বাইক থামিয়ে ঈদের সেলামি নিতে লজ্জা পায়। কত জনকে থামাবে ভাই? ইনকাম এমনিতেও ভাল হয় না বাইকারদের থেকে। গরুর ট্রাকই যথেষ্ট...গরু প্রতি ৫০০, একট্রাকেই ১০হাজার...
সাইড ইফেক্ট:
১. দেশে কুরবানি কম হবে। কৃষকরা গরু ছাগল বিক্রি করতে না পেরে এনজিও+মহাজন+ব্যাংকের লোন বাড়াবে।
২. কাঁচা টাকা লেনদেন কম হবে, মানে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
৩. যে এতিমরা চামড়া টাকা পেত, হুজুররা বখশিস পেত, সেটার পরিমান কমবে।
৪. বেশি পশু কুরবানি মানে বেশি আমিষ গরীবের পেটে যাওয়া। সেটা কমবে। ফলে গরীব পরিবার গুলো আমিষের অভাবে ভুগবে।
৫. চামড়া শিল্পের কাঁচা মাল কম সরবরাহ হবে।
৬. অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ সরকার চাপে পড়বে। কারন টাকা গবরে রুপান্তর হবে। একটা গরু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর গড়ে কম বাড়ে কিন্তু খায় বেশি। কুরবানির পশু যদি ফেরত যায়, কৃষক উপযুক্ত ক্রতা না পেলে সেটা বাচিয়ে রাখতে খাওয়াবে। একটা গরু যদি গড়ে ৩০০টাকা দিন খায়, তবে আরও ৬-১২ মাস পালতে কতো উপরি খরচ করতে হবে? সে খেয়াল কেউ রাখে?
৭. কুরবানি একটা আনন্দ উৎসব। মাংস বিলি করতেও আনেক ভাল লাগে। মানসিক উদ্বেগ কমে, কর্ম উৎফুল্লতা বাড়ে। যদি একটা পরিবার সেটা উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে সেই মানসিক উৎকন্ঠা কিন্তু কাজের উপর প্রভাব ফেলবে। মানে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। ৭ দিনের হিসাব বড়, নাকি সারাবছরের বিসাব বড়?
ব্যক্তিগত ভাবে আমি যদি এবার না যেতে পারি, তাহলে গ্রামের বাসায় কুরবানি হবে না। সাধারনত একটা গরু আর একটা ছাগল দেয়া হয়। আমার মত যদি ৫০হাজার মানুষ যেতে না পারে, তবে ব্যাপারটা অনেক বড় দেশের জন্যে। আমার একার জন্যে যদি ১০০ জন লোক মাংস না পায়, তাহলে ৫০হাজার কুরবানি দাতার কথা চিন্তা করুন একবার।
যদি দুর্ঘটনার কথা বলি, ঈদের সময় বাস দুর্ঘটনা বেশি হয়, লঞ্চেও হয়। গত মাসে সীতাকুন্ডে যে ডিপোতে আগুন লাগলো, ৪৬জন মারা গেল, বা সুনামগঞ্জের হাওড়ে ২১৩জন বন্যায় মারা গেল, তার কি হবে?
আসলে কি জানেন? গরীবের বউ সবার ভাবী... যত নির্যাতন সব মধ্যবিত্তের উপর। প্রতিরাতে যে গুলশান বনানি বারিধারা ৩০০ফুট আর ফ্লাইওভারে ড্রাগ রেসিং হয়, কখনও দেখছেন, নিউজ হতে? আইন হতে? বিচারকের ছেলে যে মানুষ খুন করল, কিছু হইছে? ড্রাগ রেস বন্ধ হয়েছে? যারা টাকা বানায়, ওরা তাদের সন্তান। আপনি কে? কোথাকার কোন ১৫০ সিসির মাঙ্গো পিপল... জেন্টল রাইডার। সব পেপারস পকেটে নিয়ে ঘোরেন। ধুর ভাই... দূর হন তো... য্ত্তসব !
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২২ রাত ১১:২২