টাইটেল দেখে রাগান্বতি হবেন না। বলছি কেন?
১. সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা কমিটি হাত গুটিয়ে বসে ছিল বা কিছু লোক দেখান কাজ করেছিল, কারন আমজনতার সহোযগিতার হাত অনেক প্রসারিত ছিল। ভবিষ্যতে সেই সরকারী কমিটি আরও কিছু করবে না। বরং সরকারি বরাদ্দ লুটেপুটে খাবে।
২. আমজনতা যে ত্রান দিতে গিয়েছে, তাদের বেশির ভাগ সুবিধাজনক জায়গায় ত্রান দিয়েছে। নিজেদের সংস্থার পাবলিসিটির জন্যে বা দানের টাকা লামছাম হচ্ছে না তা প্রমান করতে। যেটা অবশ্য নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল টাইপের কাজ হয়েছে। নিবেদিত প্রাণের ভাইদের বলছি না। মনে কিছু নিবেন না।
৩. প্রত্যান্ত অঞ্চলে ত্রান পৌছায়নি, যাদের প্রকৃত অর্থে বেঁচে থাকার তাগিদে ত্রানের ভীষণ দরকার ছিল। তারা একে অপরকে সাহায্য করে টিকে ছিল। এই বন্যায় তারা নগরবাসীর বা দাতা গোষ্ঠীর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এই ক্ষোভ আর বাড়ান ঠিক হবে না।
৪. ত্রান দিতে গিয়ে দেখা গেছে, ডিসিপ্লিন নেই। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেই। যার বাড়িতে খাবার আছে সেও এসেছে এবং নিয়ে যাচ্ছে ত্রানের প্যাকেট/খাবার। যারা পানি সাঁতরে আসতে দেরি করছে, যারা টিনের চালে বা বাঁধের উপর শূন্য হাতে আছে, তারা ত্রান শেষে গিয়ে পাচ্ছে না। মানুষের হাহাকার বাড়ানো ঠিক না। যে কাদছে তাকে আরও কাদানো উচিত না। কেউ ভাল করতে গিয়ে নিশ্চয় অভিশাপ কুড়াতে চাইবে না।
৫. যে গ্রামে / ইউনিয়নে ত্রান দেয়া হল, তারাই কিনা ডাকাতি করল? ছড়িয়ে পড়ল শহর নগরে ? যাদের বাঁচিয়ে রাখতে দাতা সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল, ভয়ঙ্কর পানির স্রোত ঠেলে, জীবনের ঝুকি নিয়ে রাতদিন এখানে সেখানে ছুটল, সেই দুস্থ মানুষরাই কিনা ত্রান খেয়ে বেঁচে ফিরে ডাকাতি করল? তাহলে কেন আপনি একদল ডাকাত কে মানবিকতার খাতিরে সাহায্য করবেন? খাল কেটে কুমির আনার দরকার কি? অবশ্য এটা নতুন নয়। এই হাওড় অঞ্চলের মানুষ অনেক আগে থেকেই দুর্ধষ। মাইকে ঘোষনা দিয়ে তারা আগে মারামারি করতে যেত, খুনাখুনি করতে যেত, মানুষ মেরে পানিতে ভাষিয়ে দিত। বিচার হত না। তারা এসব করতেই পারে। বন্যাই কি আর দূর্ভীক্ষই কি !
৬. হাওড়ে কিন্তু লন্ডনি বা টাকা ওয়ালা মানুষের অভাব নেই। হঠাৎ হঠাৎ দেখবেন গহীন গ্রামে আলীশান বাড়ী। একটা দুটা নয়, অনেক । শুধু নিজের বাসায় যাওয়ার জন্যে ঘাট বসানো হয়েছে। নামাজী নেই তবুও আলীশান মসজিদ করা হয়েছে। এরবাইরে তারা কিন্তু নিজের এলাকায় উন্নয়ন কাজ করে না। তারা ইচ্ছা করলেই কোটি টাকা দান করতে পারে, কিন্তু করেনি বা করবে না। অথচ আপনি আমি চাকরির গনা টাকার ভেতরেও হিসাব ছাড়া দান করেছি। মানবিকতা আর আত্মতৃপ্তির জন্যে। কিন্তু এটা কি ওই সব বিলিওনিয়ারদের সন্মান বয়ে আনলো?
৭. নির্দয় এবং কট্টর সুবিধাবাদী অলস সম্প্রদায় হাওড়ের মানুষ। যে নৌকা ভাড়া ৮০০ টাকা, এক প্রসূতি মাকে হসপিটাল নিতে ৫০ হাজার টাকা দাবি। যে নৌকা ভাড়া ১৫০০-২০০০টাকা, ত্রানের সময় ভাড়া নিতে ২০হাজার টাকা দাবি। ঘাট পার হতে যে ভাড়া ১০টাকা সেটা ২০০টাকা, যে মোমবাতি ১০টাকা, বন্যার সময় সেটা ১২০টাকা, যে এক ডজন ম্যাচ বক্সের দাম ২২টাকা সেটা ১০০ টাকা। কোন অঞ্চলের মানুষকে সাহায্য করবেন আপনি? এই ধরনের মানসিকতার জনগোষ্ঠীকে? সুযোগ বুঝে কোপ মারে যারা ?
অলস কেন বললাম শুনেন এবার: বছরে একবার ধান চাষ করে, বাকিটা সময় মাছ মারে, অতিথি পাখি ধরে ব্রিকি করে নয়ত সীমান্তের মাল এপার ওপার। কিছু অঞ্চলে পাথর/কয়লা তোলে বা বাথান আছে। মোটামুটি ৪-৬ মাস কাজ করে। বাকিটা সময় হাত গুটিয়ে থাকে। যদি জিজ্ঞেস করেন তবে বলবে, তার অত লাগে না। তাই দরকার নাই।
৮. যদি চীনাদের দিকে তাকান। তারা বলবে, আমাকে ঝুড়ি দিও না, ঝুড়ি কিভাবে বানাতে হয় শিখিয়ে দাও। এই টেন্ডন্সি কিন্তু এদেশে নেই, হাওড়ে তো একেবারেই নেই। দেশের দক্ষিনাঞ্চল বা উত্তারাঞ্চলের দিকে তাকান, সেখানেও কিন্তু প্রতি বছরেই বন্যা হয়। সিলেটের মত ১২৭ বছরে একবার নয়। বা শুধু ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ বা ২০১৯ সালেই নয়। প্রতি বছর বন্যা হয় তিস্তা, যমুনা, ব্রক্ষ্মপুত্র বা পদ্মার অববাহিকায়। তাদের সব তলিয়ে যায়, বা তীর ভেঙ্গে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারা আবার যৎসামান্য সাহায্যে দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠে, ডাকাতিও হয়না, লুটপাটও করে না বানবাসী মানুষ। তবে সেসব জায়গায় ভয়ঙ্কর থাবা হল দাদন ব্যবসায়ীর থাবা, এনজিওর থাবা। সে যাই হোক, সেটা অন্য একটা দিক।
হাওড়ের মানুষ সত্যিই কষ্টে আছে নিজেদের কর্মের ফলে। আরও থাকবে যদি না নিজেদের ভালর দিকে বদলায়, আর সরকার সুদৃষ্টি না দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৩৪