ব্যাংকে কিছু কাজের জন্যে গিয়েছিলাম বগুড়া সাত মাথার DBBL শাখায়। যেখানে গিয়ে ৩টি ঘটনা আমাকে খুব মর্মাহত করল।
ঘটনা ১: সিরিয়ালের জন্যে টোকেন হাতে বসে আছি। একজন যুবক অনেক ক্ষণ যাবৎ বোঝানোর চেষ্টা করছে এক সিনিয়র অফিসার কে, যে সে বগুড়া সদরের বুথ থেকে টাকা তুলে ব্যবসার প্রোডাক্ট নিতে দুপচাচিয়ায় যায়। যখন সে বাসের ভেতর, দেখতে পায় একটি টাকা উত্তোলনের ম্যাসেজ ফোনে আসল। যদিও তার ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড পকেটে। (টাকার পরিমান কত বলেছিল আমার মনে নেই। )
অফিসার মানতে নারাজ। ভুক্তভোগী বললেন, আপনি অমুক সময়ের আমার মোবাইলের অবস্থান দেখেন। আমি ঐ সময় কোথা থেকে ফোন করেছি পরিবারের কাছে, সেটাও ভেরিফায় করেন। দুপচাচিয়া থেকে আপনাদের যে বুথ থেকে তোলা হয়েছে, সেখানে যেতে কত সময় লাগবে, সেটা যাচাই করুন।
অফিসারের সাথে যোগ হল, জুনিয়র অফিসার এমনকি পিয়ন পর্যন্ত। তারা সবাই এক যোগে ভুক্তভোগীকে মিথ্যুক প্রমান করা্য় ব্যস্ত। আইটি অফিসার কে ডাকতে বললেন ভুক্তভোগী। কিন্তু ব্যাংকের লোকেরা এবার চড়াও হয়ে গেল। আপনি থেকে তুমিতে ভাষা নেমে গেল, বলল, তোমার সমস্যাটা কোথায়? কার্ড ছাড়া কোন ভাবেই বুথ থেকে টাকা তোলা সম্ভব না। ভুক্তভোগী আবারও বলল, কার্ড আমার কাছে, পিন নাম্বার শুধু আমিই জানি। ক্যামনে টাকা ওটায় আমি ছাড়া? ৩ মাস আগেও একই ঘটনা ঘটছে। পরীক্ষা থাকায় আসতে পারিনি তখন।
অফিসাররা গেটের দিকে হাত দেখিয়ে বলল, যাও তো যাও, মাথা ঠান্ডা করে আসো, বাসায় গিয়ে মনে করার চেষ্টা কর। তারপর ডেস্ক থেকে অফিসার উঠে চলে গেল। অন্যরা সরে ফাকা হয়ে গেল। ছেলেটা কিছুক্ষণ বসে থেকে বেরিয়ে গেল।
প্রশ্ন হল, যার টাকা খোয়া গেল সে চিটার হলে ব্যাংকে যাবার সাহস রাখবে কিনা? অফিসাররা কেন ভুক্তভোগীর অভিযোগ লিখিত আকারে গ্রহন করল না?
ঘটনা ২: টোকেনে লেখা বুথ নাম্বার হিসেবে আমি অপেক্ষায় আছি ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট তুলব বলে। সিরিয়াল আসায়, আমি সেই টেবিলের কাছে যেতেই, দ্বায়ীত্বরত ব্যক্তি বলল, আপনার কি কাজ? ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট তুলব... আমি একটু ব্যস্ত (যদিও তিনি ফ্রি, কোন ক্লাইন্ট নেই তার সামনে) ... ঐ ডেক্সে যান। সেই দেখানো ডেস্কে গেলাম। বললাম ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট তুলব... শুনে তিনি ব্যক্তিগত ফোন করলেন ১১ মিনিট। আবারও বলল একটু বসুন, বলেই উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর এসে পিয়নকে বললেন, ওনাকে একটা স্টেটমেন্ট প্রিন্ট করে দাও। পিয়ন আরও অনেক কিছু প্রিন্ট করছিল আর এই-সেই ডেস্কে পেপারগুলো পৌছে দিচ্ছিল। এক সময় আমারটাও হাতে পেলাম।
প্রশ্ন হল, আমার সিক্রেট ইনফরমেশান তো ব্যাঙ্কে ওপেন। একটা পিয়নের ব্যাঙ্কের সারভারে এক্সেস রয়েছে যে কিনা আমার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট প্রিন্ট করে দিল। তাহলে DBBL ইন্টার্নালি কতটা সুরক্ষিত? যে কেউ আমার সমস্ত লেনদেনের সমস্ত তথ্য যে কোন সময় টিপসের মাধ্যমে খুশি করে নিয়ে নিতে পারে? তাহলে DBBL এ কেন টাকা রাখব?
ঘটনা ৩: অন্য দিনের ঘটনা। অনেক মানুষ অপেক্ষায়। আমি হিসেব করে দেখলাম, ১০৩ জন পরে আমার সিরিয়াল। ২ মিনিট করে হলে ২০৬ মিনিট। টাকা গ্রহনের ৩টা টেবিল, মানে প্রায় ১.৫ ঘন্টা লাগবে। এর ভেতর আমার এক স্কুল বন্ধুর সাথে দেখা। বলল আমার সিরিয়াল কত? ওর সিরয়াল আরও পরে। আমাকে বলল: ১০টাকা আছে? সিরিয়াল আগায়ে নেয়া যাবে... সে আগায়ে নিবে কিন্তু ওর কাছে খুচরা নাই। আমি শুনে অবাক। বন্ধুকে ২০টাকা দিলাম। সে গিয়ে গেটের কাছে গার্ড কে কানে কানে কি যেন বলল। তারপর দুটা টোকেন নিয়ে ফিরল। তখন আমার সিরিয়াল ১০৩ জনের জায়গায় ৭ জন পরে।
প্রশ্ন হল: ব্যাঙ্কের ভেতর যারা ১০ টাকায় অন্যায় করে, ১০ হাজার টাকায় তারা আরও কত না বড় অপরাধ করবে?
বাস্তব কথাগুলো লিখলাম যাতে আমরা আমজনতা সচেতন হই, সেই সাথে DBBL কর্তৃপক্ষও সচেতন হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:০৪