অনেক বছর যাবৎ আছি সিলেট শহরে। একটু একটু করে পরিবর্তন হতে দেখেছি। আমি ঢাকায় থেকেছি, খুলনায় থেকেছি, দিনাজপুর, রংপুরেও থেকেছি। কিন্তু কিছু জিনিস মাথায় আসে না...
১. স্পিড ব্রেকার: আমার জীবনে এত স্পিড ব্রেকার কোন জায়গায় দেখিনি। কি গ্রামে কি শহরে... সব জায়গায় একই অবস্থা। সিলেট সেনানিবাসের ১কিমি জায়গায় ১২ টা স্পিড ব্রেকার। বাংলাদেশ বাংকের সামনে থেকে রিকাবী বাজার হয়ে মদিনা মার্কেট পৌছাতে ৩১টা স্পিড ব্রেকার। সিলেট টু জাফলং ৪৩টা স্পিড ব্রেকার। কেন রে ভাই ? তোমরা কি অন্ধ? নাকি যত ঝাকি তত নেকি?
২. আবর্জনা: ঢাকাতে মানুষ বেশি, ময়লা আবর্জনা বেশি। ঢাকার কথা বাদ দিলাম। আরও তো শহরে থেকেছি, ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে রাখা বা ড্রেনে ফেলা বোধায় সিলেটবাসীর চেয়ে বেশি আর কেউ করেনা। ছোট্র একটা শহর। অথচ নিয়ন্ত্রন নেই। এমনও দেখেছি ভিআইপি এলাকা থেকে ময়লা ভ্যানে নিয়ে কাছের ডোবায় বা সুরমা নদীতে ফেলে। যদি সন্ধ্যার পর কিং ব্রিজ, নয়াব্রিজ বা সুনামগঞ্জ বাইবাস সেতুতে দাড়ান, নিজ চোখে দেখতে পাবেন।
৩. বাসার মালিক: বেশির ভাগ বাড়ির মালিক অশিক্ষিত। টাকা আছে তাই ব্লিডিঙের মালিক। শিক্ষিত - অশিক্ষিত যাই হোক, কোন বাসার মালিকের আচরন ভাল পেলাম না। টাকা হলে পোশাকের ধরন পাল্টানো যায়, কিন্তু ভেতরটা তো পাল্টানো যায় না। আফসোস...
৪. স্বজনপ্রীতি: আমরা শুধু BNCC নিয়ে কথা বলি। সিলেটিরাও কম না। অন্যায় হলেও যদি নিজ এলাকার হয় বা সিলেটি হয়, তা হলেও তারা নিজেদের পক্ষে। ন্যায় অন্যায় ব্যাপার না।
৫. চুরি ডাকতি: গত বন্যায় সারা দেশ এমনকি বিদেশ থেকেও সাহায্য এসেছিল। মানুষের বিবেক কতটা নিচু হলে নৌকা করে গিয়ে পাশের গ্রামের / ইউনিয়নের বন্যার্ত মানুষের ঘরে চুরি / ডাকাতি করতে পারে ? এমনকি রিলিফের নৌকাতেও চুরি/ছিনতাই হয়েছে। এমন কেন?
৬. অলস: এক শ্রেণির মানুষ স্বাভাবিক পরিশ্রম করে, আর এক শ্রেনী অলস জীবন যাপন করে। ২য় শ্রেনীর মানুষের সংখ্যাটাই বেশি। ভাগ্য পরিবর্তনে তেমন আগ্রহী না। যদি জিজ্ঞেস করেন, বলবে, আমরার লাগে না, তো করতাম কিল্লাই। বছরে একবার ধান চাষ বা কিছু স্ববজি চাষ, মাছ ধরা... ব্যাস হয়ে গেল। না হলে লন্ডনে ফোন করবে... আজব...
৭. নারী চিকিৎসা: সিলেটের কোন এক রিপোটে দেখেছিলাম, মাতৃমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। ঘটনা সত্য আমারও ধারনা তাই। মেয়েদের চিকিৎসা আমলে নেয় না পুরুষ রা। আর সেটা যদি মেয়েলি রোগ হয়, তা্হলে তো কথাই নাই। দ্বিত্বীয়ত, সিলেটে চিকিৎসা খরচ খুব ব্যয়বহুল। পরিবারের কেউ একজন বিশেষ রোগে অসুস্থ্য হলে মোটামুটি সব জমি জমা বিক্রি করে ফেলতে হয়। এখানে মানুষকে ঠকানো খুব সহজ, কেননা শিক্ষিতের হার কম। যাদের টাকা আছে তাদের কাছে লন্ডন বা ই্ন্ডিয়া হল ঢাকার চেয়ে কাছে। কিন্তু প্রশ্ন হল নারীদেরকে এত অবজ্ঞা কেন?
আমি রাত ৪টায় এক হাসপাতালে নিজে চিৎকার শুনে গেলাম। দেখি এক গর্ভবতি মহিলাকে নিয়ে আসছে যে কিনা রাত ১০ টা থেকে বিভিন্ন হসপিটালে ঘুরছে প্রষব ব্যাহায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে। কারন কি? জানাল যে, নারী ডাক্তার ছাড়া তার রুগীকে দেখাবে না। কোথাও নারী ডাক্তার নাই। কোন ভাবে জেনেছে, এখানে আছে...
৮. সিটি কর্পোরেশান: সিলেটের রাস্তা ঘাট হল সবচেয়ে সরু সরু বাকি সব সিটি কর্পোরেশানের ভেতর। কোন ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট নাই। কারন ট্রাফিকদের যখন তখন বাশি বাজিয়ে ট্রাক থামাতে হয়। ট্রাক ড্রাইভাররা হল ওনাদের বন্ধু। হ্যান্ডসেক না করে ছাড়েননা। সেটা সকাল ১০ হোক বা রাত ১০টা। চোখের সামনে দেখেও কখনও কোন সিলেটিকে কিছু বলতে শুনিনি...
৯. স্কুল বিড়ম্বনা: যেখানে সেখানে স্কুল। ভিআইপি বাচ্চাদের স্কুল। একটা গাড়িতে একটা বাচ্চা। ৫০০ বাচ্চা কে রাখতে কম করে হলেও ৩০০ গাড়ি রাস্তায় নামে। জিজ্ঞেস করেছিলাম এক শিক্ষককে। তিনি বললেন, আমরা উদ্দ্যোগ নিয়েছিলাম স্কুল বাস চালু করার। ৯০% ভিআইপি মাতাপিতা চান না তার বাচ্চা কোন রিস্কের ভেতর পরুক। বুঝতেই পাচ্ছেন... কিন্তু এমন কেন? দেশের সব ম্যাজিস্ট্রেট সরকারী স্কুল কেলেজে পড়ে যোগ্য হয়েছেন। কিন্তু দু:খের বিষয় এসব স্কুল থেকে আজও কেউ ম্যাজিস্ট্রেট হয়নি। ডাক্তার হয়েছে প্রাইভেটে মেডিক্যালে পড়ে। কিন্তু কি এমন করেছে যে ৯০ শতাংশ বাবা মা ভাবেন, তার বাচ্চা স্কুল বাসে গেলে রিস্কের ভেতর থাকবে। কিন্তু তাদের কারনে রাস্তায় রাস্তায় জ্যাম লেগে থাকে, সেটা দেখবে কে? কত কর্ম ঘন্টা নষ্ট হয়, তার কোন হিসাব নাই।
১০. বৃক্ষ রোপন বিমুখী: আমি কোন সিলেটি কে আগ্রহ ভরে গাছের চারা রোপন করতে দেখিনি। ফুলের চারা কিনে টবে লাগাবে, কিন্তু নিজের কয়েক একর টিলা বা জমি পড়ে আছে, তারা ইচ্ছে করলেই গাছ লাগতে পারে বা লাগিয়ে নিতে পারে। কিন্তু করে না। ওরা এমন কেন? বাসায় ঢুকলেই দেখবেন, কাঠ বেতের ফার্নিচারে অভাব নেই। কিন্তু ...যেই লাউ সেউ কদু...গাছ কাটবে, লাগাবে না।
একটা কবতিা মনে পড়ে গেল:
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাটিয়া চলিল,
কিছু দূর গিয়া মর্দ রওনা হইল।
ছয় মাসের পথ মর্দ ছয় দিনে গেল!
লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতারে,
শুমার করিয়া দেখি পঞ্চাশ হাজার...
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



