somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আযান, সুর - বেসুর

১১ ই জুন, ২০২৩ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা এমন এক দেশে বাস করি, যার রাজধানী শুধু দূষণ আর ঘন বসতির জন্যেই বিখ্যাত নয়, অন্য অনেক কারনেও বিখ্যাত। তারমধ্যে ভাল একটি খ্যাতি হল, ঢাকা শহর হল সমজিদের শহর। মুসলিম বিশ্বে এ এক অনন্য পরিচিতি, উপাধি। প্রায় ৫৭৭৬টি তালিকাভুক্ত মসজিদ আছে ঢাকা শহরে। আমার ধারনা এর বাইরেও অনেক মসজিদ আছে।



আমি জানিনা, শরীয়তে শর্ত মেনেই এসব সমজিদ নির্মিত হয়েছে কিনা। গত দু'দিন মসজিদ এবং এর আনুসঙ্গিক নির্দেশনা নিয়ে অল্পবিস্তর পড়ালেখা করলাম। সবগুলো নির্দেশনা আমি যেমনটা না জেনেই মনে মনে ভাবতাম, ঠিক তেমনই। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। দু একটি শেয়ার করছি:

ক) আর যারা নির্মাণ করেছে মসজিদ জিদের বশে এবং কুফরীর তাড়নায় মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃস্টির উদ্দেশ্যে এবং ঐ লোকের জন্য ঘাটি স্বরূপ যে পূর্ব থেকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করে আসছে,আর তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, আমরা কেবল কল্যাণই চেয়েছি। পক্ষান্তরে আল্লাহ সাক্ষী যে,তারা সবাই মিথ্যুক। {সূরা তওবা-১০৭}

### কাজেই জেদ, খ্যাতি, লোক দেখানো বা অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা, যাকাতের টাকা ইত্যাদি কোন একটি ঘটনা সম্পৃক্ত থাকলে সে মসজিদে জেনে বুঝে নামাজ পড়লে কবুল হবে কিনা আল্লাহ পাক ভাল জানেন। আমি কোন ফতোয়া দিচ্ছি না। আপনারা জ্ঞানী ইসলামিক স্কলাদের কাছে জেনে নিবেন।

তবে সত্যি কথা হল, বর্তমানের মসজিদ গুলো অভ্যন্তরীন আর্কিটেক্চার + ডেকোরেশন খুবই দৃষ্টিগ্রাহ্য। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন- আমার খুব ভাললাগে। বেশিরভাগ মসজিদে এসি আছে। মেঝেতে আরাম দায়ক মখমলের কার্পেট থাকে। কিন্তু কিছু তথ্য ঘেটে আমি কিছুটা আতঙ্কিত। যেমন পড়লাম:

খ) মহানবী (ﷺ) বলেন, “যখন তোমরা তোমাদের মসজিদসমূহকে সৌন্দর্য-খচিত করবে এবং কুরআন শরীফকে অলঙ্কৃত করবে, তখন তোমাদের উপর ধ্বংস নেমে আসবে।” (ইআশা: ৩১৪৮ নং)

গ) মসজিদ (তার নির্মাণ-সৌন্দর্য) নিয়ে গর্ব না করা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না।” (আবূদাঊদ, সুনান ৪৪৯ নং) অর্থাৎ এ কাজ হল কিয়ামতের একটি পূর্ব লক্ষণ।




এখন আসি মসজিদের ইনডোর সাউন্ড সিস্টেম বা আযান দেবার মাইকিঙ সিস্টেম নিয়ে। কম বেশি আমরা সবাই জানি, আযান কিভাবে প্রথাসিদ্ধ হয়েছিল নবিজীর (সা: ) সময়ে।




আমি এক হুজুরের বয়ানে শুনেছিলাম, এক মসজিদের আওয়াজ যত দূর শোনা যাবে, তার মধ্যে ২য় কোন মসজিদ স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু এর কোন রেফারেন্স আমি ইন্টারনেটে পেলাম না। বরং এটা পেলাম যে, দুটি মসজিদের দূরত্ব এমন হতে পারে যে, কমপক্ষে তাদের মধ্যে একটি দেয়াল আছে, যাতে এক ইমামের কেরাত, অন্য ইমামের কেরাতের মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি না করে।

তারমানে শব্দ একটা বিশেষ ব্যাপার। আমি এমনও দেখেছি, এক মসজিদের সাউন্ড সিষ্টেম এতটাই পাওয়ারফুল যে, অন্য মসজিদ থেকে নামাজে দাড়িয়ে মনোযোগ দেয়া যাচ্ছে না। তারাবির নামায শেষে কান ঝি ঝি করতে থাকে যদি সাউন্ড বক্সের কাছে কাতারে দাড়ান হয়। অথচ নেটে পেলাম:
"উমর ইবন আবদুল আযিয (রহঃ ) (মুয়াজ্জিনকে) বলতেন, স্বাভাবিক কণ্ঠে সাদাসিধাভাবে আযান দাও, নতুবা এ পদ ছেড়ে দাও।"

তারা কিন্তু মাইক/সাউন্ডবক্স/এমপ্লিফায়ার/চোঙ্গা... কিছুই ব্যবহার করতেন না। তবুও এমন নির্দেশনা এসেছে।

বাংলাদেশে বেশ কয়টি দুর্ঘটনা ঘটেছে উচ্চ শব্দের কারণে। পেপারে এসেছিল, আযানের উচ্চ শব্দের কারনে হার্টের বৃদ্ধ রুগী এবং একটি শিশু মারা গেছে। অনেক মসজিদের পাশেই আবাসিক বিল্ডিং থাকে। অনেক শিশুই ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মাইকের আযানের শব্দে ভয়ে কেপে ওঠে। আমরা জানি, প্রতিবাদ করা সম্ভব নয়। এই মাইকিং পদ্ধতি বন্ধ করাও সম্ভব নয়।

আপনারা যারা লন্ডন, সিডনি, নিউইয়র্কে গেছেন, হয়ত দেখেছেন, কোন মসজিদেই মাইকে আযান দেবার সিষ্টেম নেই। আযান হয়, খালি গলায়, ইসলামিক পদ্ধতিতে, নমনীয় ভাবে, মাধুর্য মিশিয়ে। কোথাও কোথাও কম ডেসিবেলের ইনডোর সাউন্ড সিস্টেমে। অন্যকে কষ্ট দিয়ে নামাযের আওভান করে না। ওদের দেশে নও মুসলিমদের সংখ্যা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে আমাদের তুলনায়। আমাদের দেশে জন্ম সূত্রে মুসলিম বেশি। আলহামদুলিল্লাহ।

৫৮২। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ‌ ইবনু আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, যে আবূ সায়ীদ খুদ্‌রী (রাঃ ) তাঁকে বললেন, আমি দেখছি তুমি বক্‌রী চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালবাস। তাই তুমি যখন বক্‌রী নিয়ে থাক, বা বন-জঙ্গলে থাক এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য আযান দাও, তখন উচ্চকণ্ঠে আযান দাও। কেননা, জ্বীন, ইনসান বা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াযযিনের আওয়াজ শুনবে, সে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবূ সায়ীদ (রাঃ ) বলেন, একথা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শুনেছি।

আবূ মাহযূরা বলেন, আমি একটি দলের সাথে রওয়ানা হলাম এবং আমরা কোন এক রাস্তা অতিক্রম করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুয়ায্যিন তাঁর উপস্থিতিতে সালাতের আযান দেন।

আমরাও মুয়াযযিনের আযান ধ্বনি শুনলাম। তা অপছন্দ হওয়ার কারণে আমরা তার শব্দাবলীর প্রতিধ্বনি করতে লাগলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিধ্বনি শুনে আমাদের নিকট লোক পাঠান। আমাদেরকে তাঁর সামনে পেশ করা হলে তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কার কন্ঠস্বর উচ্চ, যার কন্ঠস্বর আমি শুনতে পেলাম?

আমাদের দেশে অনেক মুয়াযযিন আছে, খুবই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, আযানের বাক্য অস্পষ্ট শোনা যায় বা গলা কাপে। অনেক যুবক মুয়াযযিনের সুর খুবই বেসুর, অনেকের কর্কশ। মসজিদ কমিটির এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কেননা নবী (সা: ) নিজেও এ নিয়ে সচেতন ছিলেন।

মানুষের ব্রেনে সুরেলা সুর, মূর্ছনা, মেলোডি বিশেষ প্রভাব ফেলে। সুন্দর সুরের একটা গুরুত্ব আছে। হাসরের ময়দানে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরান শরীফ হয়রত দাউদ (আ: ) কে দিয়ে পড়াবেন একবার। কারন সব নবী রাসূলদের মধ্যে তার কন্ঠ সবচেয়ে শ্রুতিমধুর ছিল।

ব্যক্তিগতভাবে যে মসজিদে সুন্দর আযান হয়, আমি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনি। সময় থাকলে অনেক দূরের মসজিদ হলেও সেখানে জামাতে নামাজ পড়তে যাই। আপনারও ভেবে দেখুন, যে বক্তার কন্ঠ সুন্দর, গুছিয়ে কথা বলতে পারে, তার ওয়াজ বেশি বেশি শুনি কি না?

মানুষ মাত্রই সৌন্দর্য প্রিয়। সুর-বেসুর আর আত্মতৃপ্তির সাথে খেলা করে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:৪৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×