সবটাই ধারনা প্রসূত। কিন্তু আমার চিন্তায় এটাই মনে হয়েছে:"ডিমের দাম বাড়ায় সরকারী এ্ট্রি ফি বেড়ে গেছে"। আর তো কারন দেখতে পাচ্ছি না।
ঘটনা হল, স্বস্ত্রীক ঘুরতে গেলাম বাগেরহাটের ষাটগুম্বুজ সমজিদ দেখতে। যাওয়ার সময় ভাঙ্গা থেকে চমৎকার রোড পেলাম পুরো সময়। যদিও গোপালগঞ্জ রোডে এসে বাস-ট্রাক ড্রাইভাররা ছোট যানবাহন কে থোরাই কেয়ার করে চালাচ্ছিল। মরতে মরতে বেঁচে গেছি রাস্তার পাশের ৩ ফুট করে যে কাচা অংশ, সেদিকে বাইক নামিয়ে দিয়ে। পরে নিজেকে নিজে বললাম, ব্যাটা কোন এলাকায় আসছোস বুঝতে হবে, যেভাবে দেশ চলে সেভাবেই গোপালগঞ্জে গাড়ি চলে...
যাই হোক বাগেরহাট পৌছে যাটগুম্বুজের টিকিট কাটলাম। বড় ব্যানারে লেখা দেখে বুঝলাম ২০ জুলাই ২০২৩ থেকে বর্ধিত হারে এট্রি ফি আদায় হচ্ছে। সে সময় ডিমের দাম ধুম করে মানে এক লাফে ৪২ থেকে ৪৮টাকা হয়েছে। প্রশাসনেরও তো ডিম খেতে হয়। তারা তো আর ডিম পাড়ে না। তাদেরও তো খরচা পাতি আছে। ধরেই নিলাম ঘটনা এটাই। প্রবেশ মূল্য বাড়ানো খুবই যুক্তি সংগত হয়েছে। আপনারা চাইলে সুংযুক্ত ছবিটি বড় করে দেখতে পারেন।
যাই হোক বাইক পার্কিং লেখা স্থলে পার্কিং করতে গেলে গার্ড ছুটে এলো। প্রথমে ভেবেছিলাম, টিকিট দিবে হয়ত। গার্ড এসে বলল, আজ এখানে পার্কিং হবে না। ২০০ হাত সামনে আমরা পার্কিং এর ব্যবস্থা করেছি। ওখানে রাখেন। বললাম, কেন? সরকারী সাইন বোর্ড তো এখানেই রাখার নির্দেশ দিচ্ছে। জানালো, আজ প্রশাসনের লোক আসছে। সিকিউরিটির ব্যাপার আছে।
ভাল কথা। আমি বাধ্য ছেলের মত ২০০হাত সামনে গেলাম। পেলাম একটা অস্থায়ী পাকা ঘর যেটা পার্কিং টিকিট ঘর আর সামনে কাদা পানিতে ভরপুর এক মাঠ। কেউ হয়ত আমার আগে বাইক ঢুকাতে গিয়ে পড়ে গেছে। টায়ার স্লিপ করে গড়াগড়ি করার মত চিহ্ন দেখলাম। যাইহোক টিকিট ২০ টাকা, ভ্যাট নিল ৩ টাকা। মোট ২৩ টাকা হবার কথা। নিল ২৫ টাকা। বললাম, চালান পত্র দেন। সরকার কে ভ্যাট দিছি তো। আমার ওপর সেই খ্যাপা খেপলো। বাইক রাখলে রাখেন, না হলে যান। আমি সরকারী স্লিপ নিয়ে বসছি, ভ্যাট একবারে জমা দিব। প্রত্যেককে দেবার চালানপত্র নাই। আমি বললাম, আপনি যে আমার ভ্যাট জমা দিবেন, আমি কি করে জানব। এমনকি টিকিটের কোথাও লেখা নাই যে ভ্যাট প্রোজেয্য।
তখন উনি দরজায় লাগান একটা প্রিন্টেড কাগজ দেখিয়ে বলল, দেখেন ভ্যাট আদায় হবে লেখা আছে। আমি ৩ টাকার জন্যে আর কিছু বললাম না। টিকিট মাস্টারের নাম ছিল মাসুদ।
টিকিটের গায়ে যা লেখা, সেটা দেখে নিজের গালে নিজে থাপ্পর মারতে ইচ্ছে করছিল। লেখা ছিল, হেলমেট এবং বাইক নিজ দায়ীত্বে রাখুন। হারনো গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। প্রথমে ভাবলাম, লক না করলেও চলবে। বাইক রেখে চলেই আসতেছিলাম। আবার ফিরে গিয়ে লক করলাম।
আমি এবং আমার স্ত্রী ষাটগুুম্বুজের চেকপোস্ট পার হতেই ২টি সরকারি জীপ ঢুকলো। ভিআইপি দের কোন টিকিট কাটতে হল না(টিকিট শুধু আমজনতার লাগে), গাড়ি পার্কিং করতে হল না। সরাসরি যাদুঘরের সামনে গিয়ে থামল। ৩ জন মহিলা, দুটি বাচ্চা এবং একজন ড্রাইভার। অন্যগাড়িতে দুজন পুরুষ লোক নামল। ১০ মিনিটের জন্যে আমরা যাদুঘরে ঢুকতে পারলাম না। রোদের ভেতরে অনেকেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
বাইরে থেকেই দেখতে পেলাম, সুন্দরি মহিলা ৩ জন যাদুঘরের ভেতরেই অনেক সেলফি তুলছে। অথচ বড় বড় করে বিভিন্ন জায়গায় লেখা যাদুঘরের ভেতরে কোন প্রকার ছবি বা ভিডিও তোলা নিষেধ। যাই হোক, আমরা সবাই তো জানি বাংলাদেশের আইন সবার জন্যে নয়। কি আর করা। হজম করে ফেললাম।
যাদুঘর দেখার পর গেলাম ষাটগুম্বুজ মসজিদে। খুবই তাজ্জব বনে গেছি আমি। পুরোটাই পাথর কেটেকেটে বানানো। একটার পর একটা পিলার দাড়িয়ে আছে। নিখুঁত ডিজাইন। বর্তমান সময়ের ব্যাঙের ছাতার মত যেমন তেমন ডিজাইন বা পরিকল্পনা বিহীন কোন স্থাপত্য নয়। সমজিদে ঢোকার পরপরই মন শান্ত হয়ে যায়, ইবাদতে বসে যেতে ইচ্ছে করে, বিশালত্যের ছোয়া সেখানে।
মসজিদের খাদেমের কাছে অনেক তথ্য পেলাম। একজন চাইনিজ স্ট্যুডেন্ট কে পেলাম। দুজন ফরেনার কে দেখলাম, সাথে গাইড ছিল। দুই হুজুর কে দেখলাম, ৬ টা জীবন্ত কালো তাবু আর ৩টা বাচ্চা কে নিয়ে পিকনিকের মত করে মসজিদ চত্ত্বরের একপাশে লাঞ্চ করতে বসেছে। তখন বেলা সাড়ে বারটা।
তারপর পুকুর ঘাট দেখে বেরিয়ে এলাম। টেনশন হচ্ছিল বাইকটা আদৌ আছে কি না...আলহামদুলিল্লাহ ঠিকঠাক ছিল। বাইক নিয়ে বের হয়ে ৯০টাকা করে ২টা ডাব খেলাম। ১ লিটারের বোতল ডাবের পানিতে ভরেও নিলাম।
বাইক চালাতে চালাতে ভাবছিলাম, চেষ্টা করলেই হয়ত বিসিএস ক্যাডার হতে পারতাম। মেধা কম ছিল না। মনে হয় ২০ বছর আগের সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। তখন বুঝিনি স্বাধীনভাবে নিজের মত করে বাঁচা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।
ভাল থাকবেন সবাই...