somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড হতে পারে না, কিন্তু কেন?

১৫ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০২২ সালের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ধর্ষনের রেকড

পৃথিবীর আর সব প্রাণী বা উদ্ভিদের মত মানুষের প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্যে যুদ্ধ করতে হয়। মানুষ যেহেতু বুদ্ধিমান প্রজাতি, তাই তারা পরিবার, গোত্র বা সমাজ নিয়ে একত্রে বসবাস করে, নিরাপত্তার জন্যে এবং একই সাথে তারা সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, ভাল মন্দ, প্রেম ভালবাসা, সম্পদের বন্টন ইত্যাদি বহু কিছুকে সংজ্ঞায়িত করেছে, কন্ট্রোল করার জন্যে।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের কেন্দ্রীয় কার্যকলাপ নির্দিষ্ট। যেমন, নারী পুরুষের বায়োলজিকার ফ্যাক্টর মিলে গেলে বাচ্চা হবে, জীবিত থাকতে খাদ্য গ্রহন করতে হবে, টিকে থাকার জন্যে কলা কৌশল রপ্ত করতে হবে, জেনেটিক্যালি শক্তিশালী হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে মৌলিক চাহিদার কথা বলছি না।

এই মানুষের ব্রেইনের ভেতরে টিকে থাকার একটি ব্যাপার েগঁথে রাখা আছে: প্রজনন। মানুষ এখনও আদি পদ্ধতি প্রয়োগে প্রজনন করছে বংশ বিস্তারের জন্যে: যৌনকলা। যারা বাধ্য হয়ে টেস্টটিউব বেবি নিচ্ছে বা সিঙ্গেল মাদাররা ডোনেটেড স্পাম দিয়ে মা হচ্ছে, তখন কিন্তু ধর্ষণ শব্দটা প্রয়োগ হচ্ছে না। ধর্ষণ/ধর্ষক শব্দটা প্রয়োগ হচ্ছে যখন মানুষ সুন্দর গোছানো সামাজিক বা ধর্মীয় রীতিনীতির ভেতর দিয়ে যায়।

wikipedia তে ১৩ ধরনের ধর্ষকের কথা বলা হয়েছে বা ধর্ষনের ১৩ ধরনের কারন উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য সাইটগুলোতে আরও আজাইরা কথা বার্তা বলা হয়েছে। বস্তুত: জেনেটিক্যালী স্ট্রং ভবীষ্যৎ বংশধর তৈরী করা তথা মানব সম্প্রদায় টিকে রাখার জন্যে পুরুষের আদি প্রবৃত্তি তুঙ্গে উঠে যায়, নিজের অজান্তেই, প্রাকৃতিক নিয়মে। নারীরা যে পুরুষকে ধর্ষণ করে না, তা নয়। তবে ধর্ষণ শব্দটা পুরুষের পক্ষেই বেশি প্রযোজ্য।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, বয়স জাত আত্মীয়তার সম্পর্ক সব ভুলে শিশু থেকে বৃদ্ধ/বৃদ্ধা কেউই ধর্ষণ থেকে বাদ যাচ্ছে না। মানসিক বা মানবিক বিকারগ্রস্থ মানব সমাজ মনে হচ্ছে।

বর্তমানে খুব জোরালো আন্দোলন হচ্ছে ধর্ষকের বিচার মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়নের জন্যে। আমি সরাসরি এর বিপক্ষে। কারন:
১. একটা মানুষের অমূল্য জীবন মাত্র একটি ইচ্ছা বিরুদ্ধ যৌন্ কলা প্রয়োগের কারনে হতে পারে না। যদিও এধরনের যৌনতায় মানষিক, শারীরিক বা সামাজিক সমস্যা তৈরী হয়।

২. একটা মানুষ অত্যান্ত ট্যালেন্ট বা প্রতিভাবান হতে পারে, এবং সে হয়ত সমাজ সংস্কারে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। একটি ভুলের কারনে তার অমূল্য জীবনের অকাল পরিসমাপ্তি আসলে বেমানান।

৩. ধরুন তারেক জিয়া একজন রেপিস্ট। তাকে ধরে এনে ফাসি দিলেন। বাংলাদেশ সরকার কি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে বা তার দল নেতৃত্ব শূন্য হওয়ায় ব্যালেন্স নষ্ট হবে না কি? কাজেই সরাসরি মৃত্যুদন্ড কোন ভাল সমাধান না। ধর্ষিতার যে শারীরিক মানষিক কষ্ট, সেটা ধর্ষকেও তিলে তিলে বুজতে দেয়া দরকার। মৃত্যুদন্ড সে সুযোগ টা বন্ধ করে দেয়, ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে সাহায্য করবে।

৪. ধরুন আইন করা হল রেপিস্ট কে ফাসি দেয়া হবে। আপনি কি মনে করেন, তারপরেও রেপ বা ধর্ষন থেমে থাকবে? মোটেও না। বরং নির্যাতনের মাত্রা তখন আরও বাড়বে। ধর্ষিতার পরিবারে চাপ আসবে বিচার না চাইতে, বা প্রত্যেক ধর্ষিতাকে ধর্ষনের পর মেরে ফেলবে। আগে যেখানে রেপ করে ফেলে যেত, সেখানে ভিক্টিমকে মেরেই ফেলবে। লাশ গুম করবে। ধর্ষিতার পরিবার লাশ না পেয়ে বা আইনের উপর শ্রদ্ধা হারিয়ে আত্মপ্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেবে। খুন খারাপি বাড়বে। তাই এমন কোন আইন করা উচিত নয়, যা অন্যায় করতে উদ্বুদ্ধ করে।

৫. একটা নারী রেপ হওয়া মানে কি তার জীবনের সব শেষ? তার কি নিজের জীবন কে, মা বাবা পরিবার পরিজন কে কিছুই দেবার নেই? সে তো নিজে দোষী না। তার তো লজ্জার কিছু নেই। যে অপরাধী লজ্জা তার। যে মেয়ের বয়ফ্রেন্ড ছিল বা আছে, তার চেয়ে একটা ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করা বেশি সেফ। কারন সে মানসম্মান আর পবিত্রতার গুরুত্ব অনেক বেশি বোঝে।

ধর্ষকের শাস্তি কি হওয়া উচিত?
১. এক কালীন ১০লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ , অনাদায়ে যাবৎজীবন এবং তদসঙ্গে ১০ বছরের জন্যে যৌন উত্তেজনা নিরোধক ড্রাগ ইনজেক্ট করা। অপরাধ সংশ্লিষ্ট সকল সােস্যাল সাইটে ধর্ষকের পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করা। ১০লক্ষ টাকা আদায় না হলে ২০ বছরের জন্যে ড্রাগ দেয়া যেতে পারে।

২. যদি ধর্ষক ২য় বার একই অপরাধ করে থাকে একই ব্যক্তি বা ভিন্ন ব্যক্তির সাথে, তবে এক কালীন ১০লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ , অনাদায়ে যাবৎজীবন এবং তদসঙ্গে যৌন অঙ্গচ্ছেদ করা। তার বংশধরদের সরকারী সকল চাকুরী থেকে অব্যাহতী দেয়া বা নিয়োগ না দেয়া।

৩. যদি ধর্ষক ফরেন বডির মাধ্যমে ২য় বা ৩য় বারের মত ভিন্ন কাউকে ধর্ষণ করে তবে, এক কালীন ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, তদসঙ্গে তার সরাসরি ফাসি দেয়া এবং তার সমস্ত অর্গান ডোনেট করা।


ধর্ষণ শুধু একটি নারীকেই করা হয় না, পুরো পরিবারের মান সম্মানকেও ধর্ষণ করা হয়, সেই সাথে সমাজ আর রাষ্ট্রে ব্যবস্থার বিশুদ্ধতাকেও। অন্যদিকে নারীরাই শুধু যে ধর্ষণ হচ্ছে তা না। নাবালক রা হচ্ছে, অবুঝ শিশুরাও হচ্ছে। অসংখ্য এতিমখানা বা মার্দাসায় আবাসিক হুজুররা নাবালকদের সাথে কত কি যে করে, বলে বোঝানো যাবে না। স্কুলে আবাসিক হোস্টেল গুলোতেও হয়। প্রকাশ হয় না। গ্রামের দাদুরা নানুরা নাতনীদের সাথেও অকাম করা বাদ রাখছে না। সব খবর যদি খবরের কাগজে আসতো, এ দেশের পুরুষ সমাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলে আসতো, পুরুষ হিসেবে নিজের ওপর নিজের ঘৃনা হত।

পরিবারের সবার মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার ওপর জোড় দেয়া দরকার। না হলে আইন করে, এ অবস্থা ওৎরানাে যাবে না। সঠিক শিক্ষাটা পরিবার থেকেই আসা দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×