somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অপলক
আমি সাদামাটা মানুষ। ভালবাসার কাঙ্গাল। অল্পতেই তুষ্ট। সবাই আমাকে ঠকায়, তবুও শুরুতে সবাইকে সৎ ভাবি। ভেবেই নেই, এই মানুষটা হয়ত ঠকাবেনা। তারপরেও দিনশেষে আমি আমার মত...

ছোট অরন্য বানাতে জাপানিজ পদ্ধতি: মিয়াওয়াকি (Miyawaki)

০৩ রা জুন, ২০২৫ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহু আগের কথা। আমার এক বন্ধু ছিল নাম রানা। মাথা মোটা টাইপের। ওর বাসায় একবার গেলাম। দেখি অনেক অচেনা গাছ টবে লাগানো। সেখানে লক্ষ্য করলাম ১১ জাতের ঘাস সে যত্ন সহকারে টবে লাগিয়েছে। যাই হোক ওকে তেল মারলাম, যে খুব ভাল একটা কাজ করছিস, কেউ তো ভাববেই না ১১ জাতের ঘাস দেশে আছে, তাও তোর কাছে। আসলে আমার একটা টার্গেট ছিল ওর কাছে একটা লিলিফুলের চারা নেয়া, যেটা কি না ১২ টা ১২দিকে মুখ করে ফোটে।

রানা আমাকে এমনি এমনি দিল না। শর্ত দিল, চাহিবা মাত্র যে কোন ফুল প্রেমীকে চারা দিতে হবে। আমিও রাজি হলাম এবং এখন পর্যন্ত বহুজন কে চারা দিয়েছি। এখন কাজের কথায় আসি। জাপানে একটি জনপ্রিয় অরণ্য সৃষ্টিকারী পদ্ধতি প্রচলিত আছে, নাম মিয়াওয়াকি। ভারত, নেদারল্যান্ড সহ নানা দেশে মিয়াওয়াকি পদ্ধতির অরন্য তৈরী করা হচ্ছে।



সুবিধা কি কি?
১. অল্প জায়গায় বন বা অরণ্যের ছোয়া পাওয়া যায়। এক শতাংশ জায়গা বা কমপক্ষে ৩*৪ বর্গমিটার জায়গা থাকলে এই ছোট বন বানানো যায়।
২. বছর খানেকের পর থেকে পরিচর্যা, আগাছা দমন বা সার প্রয়োগের দরকার হয় না।
৩. এই ক্ষুদ্র অরণ্যে আশে পাশে বাতাস কিছুটা হলেও আদ্র থাকে, তাপমাত্রা কম থাকে, পাখির আশ্রয় স্থল হয়, নাগরিক শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করে, বাতাসের ধুলো কমায়।
৪. কোন বিদেশী জাতের গাছ লাগানোর প্রয়োজন হয় না। স্থানীয় গাছ নির্বাচন যথেষ্ট।
৫. মাটির সব স্তরের খাবার সুষম বন্টন নিশ্চিত হয়।
৬. সাধারন অবস্থার চেয়ে মিয়াওয়াকি বনে গাছ ১০গুন বেশি বাড়ে।
৭. মাটি প্রাকৃতিক ভাবে উর্বর হয়।


মিয়াওয়াকি পদ্ধতিতে বন তৈরীর বিশদ বিবরন বিভিন্ন ওয়েব সাইটে আছে। আমি বাংলায় লেখা লিঙ্কটা এখানে শেয়ার করছি।
মিয়াওয়াকি পদ্ধতি: ছোট পরিসরের জঙ্গল তৈরির অভিনব প্রক্রিয়া



যাদের এত বড় নিউজ পড়ার ধৈর্য্য নেই তাদের জন্যে সংক্ষেপে পদ্ধতি বলে দিচ্ছি:

১. কমপক্ষে ৩ বাই ৪ বর্গ মিটার জায়গা নির্বাচন করুন। বেশি পরিমান কত হবে, সেটা আপনার ইচ্ছা।

২. একটি বর্গক্ষেত্র কল্পনা করুন ১x১ বর্গমিটার বা ৩ফুট x ৩ফুট জায়গা। এর ভেতরে ৪টি ভিন্ন জাতের চারা এলোমেলো ভাবে রোপন করতে হবে।

৩. খেয়াল রাখবেন, একই জাতের ২টি চারা যেন পাশাপাশি রোপন না হয়। খুব সহজ। ধরুন আপনি ১০ জাতের চারা সংগ্রহ করেছেন। প্রতিটি বর্গক্ষেত্রে ৪টি আলাদা চারা লাগাবেন।

৪. চারা নির্বাচনে আর একটু খেয়াল রাখতে হবে যেন, সব জাতের চারা পূর্ণ বয়সে একই উচ্চতার না হয়। মানে কিছু গাছ ম্যাচুউর হলে যেন ১০ফুট হয়, কোন টা যেন ১৫, ২০, ৩০ বা ৪০ ফুট হয়। যেমন, হাসনাহেনা ৫-৭ফুট, পেয়ারা ১৫ফুট, বাঁশ ৪০ফুট, বকফুল বা কৃষ্ণচূড়া ৩০ফুট, চাপালিশ ৬০ফুট হয় ইত্যাদি। আপনি আপনার পছন্দের চারা কিনবেন যেন সে গুলো পরিনত বয়সে বিভিন্ন উচ্চতার হয়।

৫. দিনের বেশিরভাগ সময় যেন রোদ পরে এমন জায়গা হলে ভাল হয়। কারন ঘন করে চারা রোপনের জন্যে সূর্যলোক নিয়ে এই বনে খুব কম্পিটিশন হবে। তাই তারা প্রাকৃতিক ভাবেই লম্বা হবে।

৬. কোন ডালপালা ছাটার দরকার নেই। ঝরে যাওয়া পাতা পরিষ্কারের দরকার নেই। শুধু গাছ গুলো লেগে ওঠার জন্যে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে প্রথম কয়েক মাস বা বছর খানেক। এক গাছের ঝরে যাওয়া পাতা অন্য গাছের পুষ্টি যোগাবে প্রাকৃতিক নিয়মে। পিঁপড়া এবং অন্যান্য অনুজীব কেউ পাতা বা ডালে , কেউ আবার মাটির নিচে বাসা বাধবে। একগাছের আঠা, রস বা ছত্রাক ঐ প্রাণী বা জীবগুলো প্রত্যাক্ষভাবে প্রত্যেকটা গাছের পুষ্টি যোগাবে। তাই সার দেবার প্রয়োজন পরবে না।

৭. যেহেতু বাংলাদেশের মাটিতে সব ধরনের গাছ গজায়। তুবুও ভাল রেজাল্ট পেতে চারা রোপনের পূর্বে জমিতে কিছু গোবর সার প্রয়োগ করে গভীর করে চাষ দিয়ে নেবেন। এঁটেল মাটি বা লাল শক্ত মাটি হলে গবর, কেকোপিট ইত্যাদির পরিমান বাড়াতে হয়। গবর সারে সংকট হলে মাটি নরম করতে মেটেবালি বা নদীর পলি বালি ফেলে চাষ দিয়ে নিতে হবে। মাটি যত নরম হবে, শেকড় তত তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়বে। গাছের শেকড় মাটির ৫-১০ফুট গভীর পর্যন্ত যেতে পারে। চাষ দিলে সাধারনত ৬ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি গভীর হয়। চারা গাছের পুষ্টির জন্যে এই লেয়ারটা নরম হওয়া যথেষ্ট।

৮. পলি ব্যাগের চারা কিনবেন না। কারন পলি ব্যাগের চারার প্রধান মূল নার্সারীর লোকেরা ছেটে ফেলে। সেক্ষেত্রে বৃক্ষজাতীয় গাছ শুধু প্রছন্ন মূল দিয়ে মাটি আকড়ে থাকবে, পুষ্টি নিবে কিন্তু ঝড়ে উপড়ে পড়বে।

৯. মে থেকে আগস্ট মাসের ভেতর চারা লাগালে পানি সেচ দেবার দরকার নেই। অন্যথায় হালকা পানি প্রয়োগ করতে হবে।

১০. ডাল ছাটার দরকার নেই। পাতা পরিষ্কার বা পোড়ানোর দরকার নেই। কোন কিটনাশক বা রাসায়নিক সার প্রয়োগের দরকার নেই। অবশ্যই মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, ইপিল ইপিল, রোড কড়ই, এন্টিকড়ই, লম্বু বা বিদেশী জাতের ক্ষতিকর গাছ লাগাবেন না।



আপনার বাসার পেছনে হয়ত এক টুকরো জমি আছে বা এক টুকরো ছোট জমি দূরে কোথাও আছে, কোন আবাদ হয় না, পেড়েই থাকে , মিয়াওয়াকি বন তৈরী করে ফেলুন। পরিবেশ রক্ষায় অংশীদার হয়ে যান, পাখিদের আবাসস্থল বানিয়ে দিন। ফলদ গাছ লাগালে ফল মূল পেতে পারেন।


বাংলাদেশেও অনেক জায়গায় মিয়াওয়াকি বন তৈরী হচ্ছে। আপনিও শুরু করুন।
এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক দেশজুড়ে





সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×