somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলোমেলো ভূতুরে কাহিনী: আমার পরিচিত জনের জীবনে ঘটা

০৩ রা জুন, ২০২৫ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক ঘটনা ভুলে গেছি। অনেক ঘটনা আবছা হয়ে গেছে। তবুও স্মৃতির পাতা ঘেটে লিখতে বসলাম। লিখতে বসলাম মানে এটা নয় যে, বানিয়ে লিখতে বসলাম। সত্য ঘটনার প্রেক্ষিতে যতটুকু মনে পরে, ততটুকুই...



ঘটনা ১.
তখন ২০১৮। প্রায় ৬ বছর পর বিদেশ থেকে আমার ছোট শালা দেশে ফিরল। ফেমিলি গেট টু গেদার শুরু হল। ২দিন পর সব পানসে হয়ে গেল। সবাই সবার রেগুলার লাইফে মিশে গেল। আমার তখন আরও দুদিন ছুটি বাকি। শালা কে বললাম চলো মাওয়া যাই। পদ্মার ইলিশ খেয়ে আসি। যে কথা সেই কাজ।

দুপুর ১২ টার পর মিরপুর ১১ থেকে বেরিয়ে পরলাম। ঢাকার জ্যাম ঠেলে ভাঙ্গা চোড়া রোড মারিয়ে বাইকে করে আমরা দুজন পৌঁছালাম ৩টার পর। তখন ঢাকা মাওয়া রোডের কাজ চলছিল। তারপর গোটা দুই বড় ইলিশ দেখে শুনে কিনলাম। এক হোটেলে গিয়ে ভাজতে বললাম। মাওয়া ফেরি ঘাটে কিছু হোটেল ছিল, এখনও আছে, তারা ইলিশ সাইজ করে ভেজে দেয়, বেগুনভাজি, আলু ভাজি সমেত ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।

তো আমাদের ইলিশের সাইজ বেশ বড় ছিল। আর এত তেল যে গোটা একটা ইলিশ খাবার পর দুজনে ২য় ইলিশটায় হাত দিতে সাহস করলাম না। প্যাকেট করে নিলাম। খেতে খেতে এত খেয়েছি যে, সোজা হয়ে বসে থাকতে পারছিলাম না। তাই এদিক সেদিক হাটা হাটি করে রওনা দিলাম ৬ টার দিকে।

ডিসেম্বর মাস তাই ঠান্ডা আর কুয়াশা দুটোই অন্ধকার কে আরও অন্ধকার করে দিয়েছে। ইলশা বাড়ি পেরিয়ে আরও অনেকটা ঢাকার দিকে এগিয়েছি। রাস্তা একদম ফাঁকা। মাঝে মাঝে একটা দুটা বাস-মাইক্রোবাস ওভারটেক করছে বা ক্রস করছে।

যাইহোক শুনশান নিরবতা ভেতরে আমি বাইক ধীরে ধীরে চালাচ্ছি। শালা পেছনে বসে ফেসবুকিং করছে। হঠাৎ গাছের আড়াল থেকে চটের ছালা পড়া এক লম্বা মত ঝাকড়া চুলের লোক বেরিয়ে আসল। আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি ক্রস করে গেলাম। ভাবলাম পাগল টাগল হবে। ২মিনিট পরেই আবার সে লোকটাকে দেখলাম, চটের ছালার পোশাকে দাঁড়িয়ে আমার বাম পাশের হেন্ডেলে ইলিশের ব্যাগে তাকিয়ে আছে।

আমি ছোট শালাকে বললাম, তুমি কিছু দেখলা? একটা লোক হাতের বামে দাঁড়িয়ে ছিল।
সে বলল: কৈ, কাউকে তো দেখলাম না।
আমি বললাম, ফেসবুকিং করতেছো তাই খেয়াল করনি বোধায়।
শালা: আরে নাহ! আমি তো ১০ মিনিটের মত রাস্তার দিকেই তাকিয়ে আছি।

আরো কিছু সামনে এগুতেই, একটা কালো বিড়াল রাস্তা ক্রস করতে করতে থেমে গেল। আর একটু হলেই চাকার নিচে পড়ত। শেষে মাছের প্যাকেট শালার কোলে দিয়ে দোয়া দরুদ পরে বাসায় ফিরলাম। পরে শুনলাম, ইলিশ সাথে থাকলে ঐ রোডে টুকটাক সমস্যা হয়।


ঘটনা ২.
আমার বোন তখন প্রেগনেন্ট। বাবা মার সাথে সে তখন একা থাকছে দেশের বাসায়। ওর বর তখন ঢাকায়। সবকিছু ভালই চলছিল। ঘটনার দিন সে এক বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে যায়। ওর সেই বান্ধবী হিন্দু। তারও বাচ্চা কাচ্চা আছে। তখন পূজা চলছিল। মুলত পূজার কারনেই দাওয়াত দিয়ে বসে। আমার বোন ফেরে রাতের ডিনার করে। আসার পথে দুটো পূজা মন্ডব পরে। সারা জীবন সে এসব এলাকায় বহুবার গেছে। কখনও কোন সমস্যা হয়নি।

যাই হোক, রাত ১২টার দিকে দেয়ালে ধুপ ধুপ শব্দ শুনতে পায় মা-বাবা। চোর টোর ভেবে শোবার ঘর থকে বেরিয়ে দেখে আমার বোন ডাইনিং স্পেসের এক দেয়ালে মাথা ঠুকছে। ডিম লাইটের আলোতে মা দেখল, চুল এলোমেলো, বিবস্ত্র অবস্থা। বাবাকে আসতে বাধা দিয়ে মা দ্রুত চাদর নিয়ে গিয়ে গায়ে হাত দিতেই অজ্ঞান হয়ে পরে যায়। হসপিটাল নেয়া হয়, জ্ঞান ফেরে পরের দিন বিকেলে। জ্ঞান ফেরার পর থেকে এলোমেলো কথা বার্তা। চিৎকার চেচামেচি। অবস্থা যা বোঝার বুঝে, মওলানা সাহেবের কাছে দোয়া দরুদ পড়ে ঠিক হয়। শরীর বন্ধ করা হয়।

পরে জানা গেল সন্ধ্যায় পূজা মন্ডবের সামনে দিয়ে চুল ছেড়ে রিক্সায় যখন আসছিল, তখন খারাপ কিছুর নজর লাগে। যেহেতু পোয়াতি বা প্রেগনেন্ট অবস্থায় এসব অদ্ভূত ঘটনা বেশি ঘটে, সেও পরিস্থিতির শীকার।




ঘটনা ৩.
আমার ছোট ভাই বগুড়া পাঁচ পীরের মাজার জিয়ারত করে এরিয়ার বাইরে গিয়ে একটা ঝোপ দেখে হালকা হয়। সে তার বন্ধু সহ যখন বগুড়া শহরে নিজ এলাকায় ঢুকবে, তখন আর ঢুকতে পারে না। যে রোড দিয়েই যাক, একই জায়গায় চলে আসে। এভাবে দেড় ঘন্টা চেষ্টা করে পেট্রোল ফুরে আসলে একটি পেট্রোল পাম্পে দাঁড়ায় যেটা কিনা আমাদের বাসা থেকে ১কিমি দূরে। ঐ পেট্রোল পাম্পের সামনেই ৮-৯বার চক্কর দিয়েছে। দু বন্ধুর কারও ফোনে নেটওয়ার্ক ছিল না। শেষে পেট্রল পাম্পের ম্যানেজারের ফোন থেকে কল করে বাবাকে। বাবা গিয়ে গায়ে স্পর্শ করা সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়। একদিন পর জ্ঞান ফেরে। পুরো গা লাল লাল রাসে ভরে যায়, চোখ লাল, ভুল বকছিল বেশ কয়েকদিন। এলার্জির ওসুধ চলছিল। কাজ না হওয়ায় ইনজেকশান দেয়া হয়। তারপরেও কাজ না হওয়ায় ঝার ফুকে ভাল হয়।





ঘটনা ৪.
২০১৪তে গেলাম কাশিয়ানিতে শ্বশুড়ের গ্রামের বাড়ি। বাড়ির কাছেই মধুমতি নদী। টলটলে পানি। বর্ষার শেষ, শীতের শুরু। নদীতে গোসলের লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি আবার সাঁতার জানি না। গ্রামের সমবয়সী ভাই ব্রাদার সহ ৭-৮জনে গেলাম ঘাটে। মাথার উপর কড়া রোদ আর নদীর হিম শীতল পানি। আমি একটা চিকন বাঁশ নিয়ে নেমে পড়লাম। কেউ কেউ কাছাকাছি সাঁতার কাটছে। ডুব দিচ্ছে। ভীষণ ভাল লাগছিল। আগের দিন বিকেলে ডিঙি নৌকায় নদীর ওপার গেছি। এত পরিষ্কার পানি যে, নীচের আগাছা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। আগাছার ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট মাছেরা সাঁতার কাটছিল, লুকাচ্ছিল, সব দেখে মন ভরে গেছে আগেই।

ঘন্টা খানেক ধরে আমি ভিজতেছিলাম। চোখ লাল হয়ে খচখচ করছিল। এর ভেতরে আমার মেজ শালা হাজির। সে ঘাটে দাঁড়িয়ে। নামতে বললে সেও পানিতে নেমে বুক পানিতে আমার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিল। অন্যদের মজা দেখছিল। এর ভেতরে আমি খেয়াল করলাম, কঁচুরি পানায় চারপাশ হঠাৎ করেই যেন ভরে গেল। এমন মনে হল যেন আমাদেরকেই ঘিরে ধরেছে।

নিচ থেকে ভাত বলক দেবার মত বড় বড় বলকানো পানির দলা দেখতে পেলাম। পানি যেন একটু একটু গরম অনুভব করলাম। গরম পানিতে একটু আরাম বোধ হচ্ছিল। চারপাশের পানা ধীরে ধীরে সরতে শুরু করল। কিন্তু খেয়াল করলাম, পানি আর আগের মত পরিষ্কার নেই। এদিকে আমার সেই শালা কাঁপছে। পানিতে ডুব দেয়নি কিন্তু চোখ রক্ত লাল। আমি বুঝলাম, সাম থিং রং।

ওর গায়ে হাত দেবার সাথে সাথে গা ছেড়ে দিল। পানিতে গা ভাসিয়ে তলিয়ে যাবার অবস্থা। শেষে আশপাশে ছেলেদের নিয়ে পাড়ে তুলে আনা হলে দেখি সে অজ্ঞান। জ্ঞান ফিরল মাগরিবের পর এবং যথারীতি ঘন্টা দুয়েক ভুল বকাবকি চিৎকার চেচামেচি করল।

আমি জানিনা, কেন কঁচুরিপানা আমাদের ঘিরে ধরল, কেন পানি গরম হয়ে উঠল বা এতজনের ভেতরে শালাবাবু কেন ভিক্টিম হল।


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২৫ রাত ১০:৩৮
২২টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×