"আঙ্কেল,পাহাড়ের উপরে নিঃশ্বাস নিতে আমার কষ্ট হচ্ছে না কেন?"শুভ্রের প্রশ্নে সম্বিত ফিরে আসে আখলাক সাহবের।
"আমি জানি"মোটা চশমার কাঁচে জমে যাওয়া কুয়াশা মুছতে মুছতে হাসে শুভ্র।
বুকে কেমন যেন চিনচিনে ব্যথা করে ওঠে আখলাক সাহেবের,
কোনো পুরুষ মানুষের হাসি এতো সুন্দর হয় কেমন করে?
-আঙ্কেল,একটা কথা বলবেন?
-হুম,বলো।
-বাবা আমাকে কেনো হঠাৎ বান্দরবান ঘুরতে পাঠালো,আপনি জানেন?
-হুম।
-আমিও জানি।
সামনের মেঘগুলো সরে শীতের সকালের প্রথম সূর্য উঁকি দিতে শুরু করেছে।কেমন যেন এক নিস্তব্ধতা,
আকাশ আর পাহাড়ের একসাথে মিশে যাবার প্রান্তে যেন চাপা পড়ে গেছে সবগুলো শব্দ।
একইভাবে চাপা পড়ে যাবে শুভ্রের আর তার দেহ।
"আচ্ছা,মৃত্যু কি খুব খারাপ কিছু?" আনমনে ভাবতে থাকা প্রশ্নটা শুভ্রের মুখে শুনে চমকে উঠলেন তিনি।
"আমার মনে হয়,মোটেও খারাপ কিছু নয়...অন্তত আমার মৃত্যুতে বেঁচে যাবে আপনার ছেলে,তাই না?
আজ অনিক ভাইয়ার অপারেশন না আঙ্কেল?অনেক টাকা লাগবে তাই না?"উত্তরটা যেন শুভ্রের মুখেই চলে এলো।
"না বাবা,তার ব্যবস্থা হয়ে গেছে"ইষ্পাতদৃঢ় নার্ভের আখলাক সাহেব যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন আজ।
"আমি জানি আঙ্কেল,বাবা কোনো কাঁচা কাজ করেননা।
মা'কে মারার সময়ও প্রমাণ রাখেননি,আজ আমাকে মারার সময় রাখবেন কেন?"
আশ্চর্য্য শান্ত দেখাচ্ছে শুভ্রকে,চোখের উপর উঁড়ে এসে পড়া চুলগুলোকেই সরাতে ইচ্ছে করছে না আজ।
"আমি জানি,তিনি আমার আসল বাবা নন।কিন্তু এ নিয়ে আমি কষ্ট পাইনা।
আমি কষ্ট পাই,যখন তিনি ভালোবাসার,কেয়ারের নাটক করেন।
কেন,আমি হাঁটতে পারি না বলে?
আমি দূর্বল,অক্ষম বলে?"
হুইল-চেয়ারটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে সে,যেন কোনো অবলম্বন।
এইপ্রথম কোনো সান্তনা দিতে পারলেন না আখলাক সাহেব।
কারণ একজন পরিস্থিতির শিকার কাওকেই সান্তনা দেওয়া যায় না,মিথ্যে তো নয়ই।
-চা খাবেন আঙ্কেল?
-তুমি খাবে?
-হ্যা খুব খেতে ইচ্ছে করছে।
-ফ্লাক্সে আছো বোধহয়,দাড়াও নিয়ে আসি।
নামতে বেশী সময় নিলেন না আখলাক সাহেব,
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজটা শেষটা করতে চান তিনি।
অসংখ্য প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা তার নেই,
বিশেষত যেসব প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।
পাহাড়ের উপরে আলো যেন রংধনু
ছড়িয়ে বসেছে।
শুভ্রের হুইল চেয়ারটা কেমন যেন অদ্ভুতভাবে কাঁপছে,যেন তার চিরকালের সঙ্গীকে শেষবিদায় জানাবার ছলে।
কাপদুটো টেবিলে নামিয়ে রাখলেন আখলাক সাহেব।শূন্য হুইল চেয়ারটা যেন তার মনের কোনো এক শূন্যতাবোধকে ব্যঙ্গ করে চলেছে।
"মৃত্যু মোটেই খারাপ কিছু নয়,
আমিও আসছি শুভ্র,আমি তোমাকে একা যেতে দেবো না"বলে তিনিও পা বাড়ালেন মেঘেদের দিকে-
যেখানে নৈঃশব্দ্য থাকলেও বিশ্বাসের অভাব নেই.....
২৮/০৬/১৬