somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খিধার জ্বালা।।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা বাবারে কইও চাইল আনতে, ঘরে চাইল না।
তোর বাবারে কি খুইজা পাওয়া যায়? সারাদিন কই যায় না যায় আমারে কি কইয়া যায়? পকেটে টাহা থাকলে তারে কি আর ঘরে পাওয়া যায়।
খিধার জ্বালা সইতে যে পারিনা। মা তোমার খিধা লাগেনা?
না আমার খিধা লাগেনা। আমি পেটে পাথর বেধে নিয়েছি।
মা পেটে পাথর কিভাবে বাধে আমিও বাধব। আমি যে খিধার জ্বালা সইতে পারিনা।
পাচ বছরের মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে মার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। মা কিছু বলতে বলতে পারেনা। তার কোন উপায় নেই, সে নিরুপায়। পাচ বছরের মেয়ে ফিরোজা এসে মায়ের আচলে টেনে বলল, মা তোমারে না হারুন কাকা কিছু টাকা দিতে চাইল তুমি নিলে না কেন?
মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ফিরোজা নাছোড়বান্দা সে আবার তার মাকে বলল, মা বলোনা তুমি কাকার কাছ থেকে টাকা নিলেনা কেন? টাকা নিলে তো আমরা কিছু কিনে খেতে পারাতাম।
মারে পুরুষ মাইনষরে বিশ্বাস নাই। বিপদে সাহায্য করতে আইব ঠিকই কিন্তু বিনা লাভে সাহায্য করনের মানুষ এই দুনিয়ায় নাই সাহায্য কইরাই তোমার কাছে ছাইয়া বইব অনেক কিছু। আর পুরুষ মানুষ স্বার্থ ছাড়া কোন নারীরে সাহায্য করেনা। মারে দুনিয়াডা বড়োই কঠিন।
মা আমাদের তো কিছু নাই। কি ছাইব হারুন কাকা?
মারে তুই বুঝবিনা। জগতে কত ধান্ধার মানুষ আছে। উপর থাইকা সবরেই ভালো মনে হয় কিন্তু কে আসলে ভালো সেটা বুঝা বড় দায়।
মা দুইদিন দইরা কিছু খাইনা কিছু খেতে দাওনা মা।
ফিরোজার এমন আকুল আবেদন ফিরোজার মাকে স্পর্শ কাতর করে। মেয়ের জন্য তাকে কিছু করতে হবে। এখনো সে জোয়ান। কাজ করে খাওয়ার শক্তি তার আছে। অন্তত মেয়ের জন্য হলেও সে কাজ করবে।
ফিরোজার মা বের হোন রাস্তায় কাজের আশায়। সারদিন ঘোরাঘুরি করে কোন কাজ পেল না সে। খিধা নিয়ে হাটা যেন দায়। মাথা ঝিম ঝিম করছে তার। চোখে খুব ভালো দেখছিল না সে। হঠাত করে একটি ভাঙ্গা ইটের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় মাটিতে। এর পর তার কিছু আর মনে নেই। সে ঘুমের ঘোরে দেখছে, ফিরোজা বিরিয়ানি খাচ্ছে। খেতে খেতে বলছে, মা মাংশের ঝোলটা খুব ভালো হয়েছে। তুমি কি রেধেছ?
ফিরোজার যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখল সে একটি গোডাউনে পড়ে আছে। তার পাশে কয়েকটি লোক। লোকগুলোকে দেখে ভদ্র মনে হচ্ছেনা। চুলগুলো উশখো খুসখো, কথাবার্তা কেমন জড়ানো গলায়। এদের মধ্যে সে একজনে চিনতে পারল তার নাম হারুন।
সে হাত দিয়ে দেখল তার শাড়ি ভেজা ব্লাউজের অনেক অংশ ছেড়া। কোমর মাটি থেকেই তুলতে পারছেনা সে।
হারুন নামের লোকটি তার দিকে এগিয়ে আসল। আগে যেরকম ভদ্র মনে হতো আজ সেরকম মনে হচ্ছেনা। হারুন নামের লোকটি এসে তাকে একখানা পাচশ টাকার নোট দিয়ে বলল, চলে যা।
সে অনেক কষ্টে সেখান থেকে বেরিয়ে আসল। মেয়ের জন্য এবং তার নিজের জন্য দু প্যাকেট বিরিয়ানি কিনল।
ফিরোজা বিরিয়ানি খাচ্ছে। খেতে খেতে বলল মা মাংশের ঝোলটা খুব ভালো হয়েছে। তুমি টাকা কই পেলে? ফিরোজা আর কিছ বলার আগের তার গলা জড়িয়ে এলো। সে জড়ানো গলায় বলল, মা তুমি আমাকে কি খাইয়েছ? আমি চোখে অন্ধকার দেখছি কেন? মা আমার গলায় খুব ব্যাথা করছে। মা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা.।.।.।.।।।
ফিরোজার মায়েরও একই অবস্থা। সে মেয়েকে শান্তনা দিইয়ে বলল, মা তুই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। ঘুমালে সব ব্যাথা সেরে যাবে। আর তোকে আর আমাকে খিধার জ্বালা সইতে হবেনা। মা তুই চোখ বন্ধ কর।বন্ধ কর, বন্ধ কর।
মা মেয়ের আর কোন কথা শুনা গেলনা। তারা আর কোনদিন কথা বলতে পারবে না। নিষ্টুর এই পৃথিবী থেকে তার চির বিদায় নিয়েছে।

লেখকঃ চৌধুরী মোহাম্মদ ইমরান
এম সি কলেজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×