somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিডনি পাচার

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজশাহী মেডিকেলের এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে কিডনি চুরির অভিযোগ উঠেছে। আমি যেহেতু কিডনি সার্জারী বিভাগে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করছি, এই কমপ্লেইনের জন্য বলতেই বাধ্য হচ্ছি - "কিডনি কি বাজারের লাউ নাকি, যা চুরি করে ভাজি করে খেয়ে ফেলবে" ।। কিডনিতে যদি অনেক বেশি পানি জমে, যাকে মেডিকেলের ভাষায় Hydronephrosis বলে , সেই পানি বের করার জন্য কিডনিতে একটা পাইপ বা Stent দিয়ে দেয়া হয়।। এতে করে reversible কিডনি কন্ডিশনে Improve করে। কিন্তু Gross Damage এর কিডনি একটা "Bag of water" হয়ে যায়। । এবং পানি বের হয়ে গেলে কিডনি চুপসে যায়। যাকে "vanishing kidney" বলা হয় ।। তাই বলে কেউ যদি ভাবে কিডনি হারাই গেছে, তাকে ছাগল অথবা তার বাচ্চা বলা ছাড়া পথ থাকে না।। একটা টেস্ট করলেই বুঝা যায় - নষ্ট কিডনির অস্তিত্ব আছে কি না।। সেটা হলো - CT urogram.. সেটা না করে কাউকে চুরি করার অভিযোগ করলে, সেই রোগী ও সাম্বাধিকের বিরুদ্ধে 57 ধারায় মামলা করা যেতে পারে। ।

ভাইটাল অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন (অঙ্গ প্রতিস্থাপন) এর মধ্যে সারা দুনিয়া তে সবচেয়ে বেশী হয় কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন।

সবার আগে জেনে নিন এই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট - “উইকিপিডিয়ার চেয়েও গুজবপিডিয়া বেশি শক্তিশালী”।

১। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করে ১ কিডনি, ২ কিডনি নয়। এই ভুলটা ৯৯% মানুষের মধ্যে বিরাজ করে। ১ কিডনি দিয়াই সাড়া জীবন ভাল থাকা যায়।

২। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ই একমাত্র অঙ্গ যা ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাইটে নয়, অন্য জায়গায় (সাধারনত পেলভিস এ ) রাখা হয়। পেলভিসে বসেই ১ কিডনি ২ কিডনির সমান কাজ করে। জোড়া লাগানো হয় Internal Iliac vessel এর সাথে । আর Ureter কে ব্লাডার এর মধ্যে Neocystostomy করতে হয়।

৩। যাকে কিডনি দেয়া হয়, তার পুরানা নষ্ট কিডনি গুলো ফেলে দেয়া হয় না। সেই গুলো থেকে যায় আগের জায়গায়ই নষ্ট অবস্থায়। নষ্ট কিডনিরও অনেক দাম। তবে যদি ইনফেকশন বা রিফ্লাক্স রিস্ক থাকে , তাহলে removeকরা যেতে পারে । ফেলে দিলে Goldbatt Hypertension এর রিস্ক তৈরি হয়।

৪। কিডনি দান করার ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম। সব ম্যাচিং হলেই দেয়া যাবে। কোনো একটা ঝামেলা হলে দেয়া যাবে না। বিশেষ করে- ব্লাড গ্রুপ, HLA, ব্লাড ভেসেল পজিশন।

৫। ধর্মীয় দিক থেকেও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন হালাল বলা হয়েছে।

৬। আমাদের দেশে কিডনির বেচা কেনা বন্ধ করার লক্ষ্যে হাই কোর্টের কড়াকড়ির সাপেক্ষে বাবা মা তার ছেলে মেয়ে কে অথবা ছেলে মেয়ে তার বাবা মা কে কিডনি দান করতে পারবে।

৭। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনে Success rate প্রায় শতকরা ৯৪ ভাগ।

৮। অনেকে ভাবে –“যেখানে সেখানে এই ট্রান্সপ্লান্টেশন করা সম্ভব”। এটা পুরাই ভুল। এটা করার জন্য একি সাথে ৩ সেট ডাক্তার লাগে। ডোনার গ্রুপ (Donor group) সার্জন, রেসিপিয়েন্ট গ্রুপ সার্জন এবং পারফিউশন মেইন্টেইন গ্রুপ। সাথে স্টেরাইল পোস্ট অপারেটিভ ও আইসি ইউ সাপোর্ট। সবার ধারনা রাস্তা ঘাটেই বুঝি কিডনি কেটে রেখে দেওয়া যায়।। পুরাই ভুল ধারনা।। কিডনি কাটা ও জোড়া লাগানোর কোনো প্রকার ঊনিশ বিশ মানেই Failure ...

৮। যাকে কিডনি দেয়া হয় তার হয় ৩ কিডনি। সাথে ৩টা ইউরেটার। কিন্তু যে দান করলো - তার থাকবে ১ কিডনি, ১ ইউরেটার। শর্ত থেকে যায়- অবশিষ্ট কিডনি যদি ১০০% সুস্থ থাকে, তাহলেই দান করতে পারবে। দাতা যে কোনো কিডনিতে সামান্যতম প্রব্লেম থাকলেও কিডনি দেইয়া যাবে না । এখানে রোগীর মরা কিডনি চুরির অভিযোগ উঠেছে।। মরা কিডনি বেচবে কিভাবে, সেটা তো কাজই করে না।। অবশ্য মেডিকেল জ্ঞান না থাকলে - "আবাল গরুর স্তন থেকেও সাম্বাধিক দুধ দোহাতে পারেন"।। :p

৯। বলা হয়ে থাকে আমাদের দেশে যত গুলো কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয় , তার চেয়ে প্রায় ১২০ গুন রোগী বেশী মারা যায় কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সপ্তাহে মাত্র ১ জনের ট্রান্সপ্লান্টেশন হয়। কিন্তু এক সপ্তাহে সিরিয়ালের সংখ্যা প্রায় শতাধিক ।

১০। ১৯৯৬ সালে সারা পৃথিবীতে ৫০ জনের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয় ৫০ জনের । মজার বিষয় হলো – তার মধ্য ১৮ জনেরই হয় বাংলাদেশে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পর্যন্ত প্রায় ছয়শত কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন হয়েছে গত ১০ বছরে।

১১। খরচ নিয়াও নানান গুঞ্জন আছে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অপারেশনের খরচ ১ লাখ টাকা মাত্র। আর হাসপাতালে থাকা, পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে সব নিয়ে দুই লাখ টাকার কমেই কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন করা সম্ভব।

(যে সব ডাক্তার ভাই রাজশাহী মেডিকেলের ওই ডাক্তারের সাথে পরিচিত, আপনারা তথ্য প্রযুক্তি আইনে উল্টা মামলা করে দিন, সত্য প্রমাণ হবেই। । তাহলেই যারা ডাক্তারের মান সম্মান নিয়ে টান দিয়েছে, তাদের থোতা মুখ ভোঁতা হয়ে যাবে) ।

#সব চিকিৎসকের কাছে এই নিউজটা পৌঁছে দিবেন ।।

লেখা ডা :সাঈদ সুজন
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×