somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব

২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনলাইনে একটি সাধারণ মগের বিজ্ঞাপন দেখানো হলো। মগটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটাতে চামচের কোন প্রয়োজন নেই। কফি, চিনি যা যা প্রয়োজন মগে দিয়ে দিল মগে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘূর্ণয়ণ হয়ে চা কিংবা কফি মিক্স হয়ে যাবে; বাঁচিয়ে দেবে আপনার চামচ কিংবা কফি মিক্সার কেনার পয়সা ও সময় । যদি বলি এটিই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব

৪র্থ শিল্প বিপ্লব-
১৭৮৪ সালের বাষ্পীয় ইঞ্জিন মানুষের হাতে তুলে দিয়েছিল গতিকে। তার প্রায় ১০০ বছর পর ১৮৭০ সালের বৈদ্যুতিক বাতি মানুষকে দিয়েছিল আলোকিত বিশ্ব। এরও ঠিক বছরের মাথায় ১৯৬৯ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল ইন্টারনেট, জগতকে এনেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। বলা হয়েছে এই ইন্টারনেটই ৪র্থ বিপ্লবকে বেগবান করবে; করেছেও তাই। এর ঠিক ৫০ বছর পরই শোনা যাচ্ছে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের গান।


এই বিপ্লব মূলত প্রযুক্তির বিপ্লব যা পৃথিবীর মানুষদের জীবনকে নিয়ে যেতে যায় এক ধাপেই ১০০ বছর সামনে। এই পরিবর্তন সব মানুষের জীবন মান উন্নত করবে, আয় বাড়াবে সব শ্রেণির মানুষেরই। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা কাজে লাগিয়ে পরিবর্তিত-পরিবর্ধিত হবে শিল্প-অর্থনীতির সকল ক্ষেত্র। উন্নত প্রযুক্তির দু’একটি উদাহরণ দেয়া যাক-
ইন্টারনেট অফ থিংস আপনার বাসার সকল আসবাব ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত-এই সিস্টেমকেই বলা যায় ইন্টারনেট অফ থিংস। যেমন – আপনার বিদ্যুতের বিল দেয়া নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, বিলটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলে যাবে আপনার স্মার্টফোনে, বাসায় কি বাজার নেই তা জানিয়ে দেবে ফ্রিজ! আপনার শরীর কি পুষ্টি উপাদান বাকী তাও জানিয়ে দেবে আপনার স্মার্টফোনের স্ক্রিন! তখন আপনি চিন্তিত হবেন কি নিয়ে বলুন তো?
রোবটিকস দূর নিরাপত্তা, কারখানার বিপদজনক কাজ, স্থাপনার শ্রমিক, কিংবা স্রেফ নিরাপত্তা প্রহরী বা গৃহস্থালি কাজ সব কাজই করতে শুরু করবে রোবট। ‘পায়ের উপর পা তুলে খেতে’ এখন কেবল একটি রোবটেরই অপেক্ষা!
অটোমেশন কারখানার সবগুলো মেশিন এমন একটি সিস্টেমের সাথে যুক্ত থাকবে যেটি স্বয়ংক্রিয় চালনা থেকে শুরু করে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও অত্ত্বাবধান করবে-একেই বলা হচ্ছে অটোমেশন। এতে বাঁচবে শ্রম খরচ, কমবে মানবিক ত্রুটি। একাধিক কাজ যখন একটি যন্ত্র করতে পারবে তখন খরচ নিয়েও আর ভাবতে হবে না!
সুস্থতায় বংশগত রোগ কমাতে আসবে নিরোগ জীন, কঠিন অসুখের প্রতিষেধক। আর সূক্ষাতিসূক্ষ্ণ অস্ত্রোপচার করতে ছুরিকাঁচি ছাড়া কম্পিউটারের দক্ষ হাতের বহুল ব্যবহার শুরু হবে এই বিপ্লবে। মানুষ হয়তো অমর হবে না কিন্তু পৌঁছে যাবে অমরত্বের কাছাকাছি!
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং পৃথিবীর বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে ভিন্ন গ্রহে বসতি গড়তে মানুষকে আর মাথা ঘামাতে হবে না; মানুষকে নিরাপদ রাখতে আসছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটিং।
একবিংশ শতাব্দীতে সকল কিছুই বিক্রিযোগ্য। কে না জানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি কোম্পানি উবারের নিজের কোনো ট্যাক্সি নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিডিয়া ফেসবুকের নিজস্ব কোন কন্টেন্ট নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শপগুলোর একটি আলীবাবার কোনো গুদাম নেই এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রভাইডার এয়ারবিএনবির নিজেদের কোনো রিয়েল এস্টেট নেই। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদে ইউটিউবার ৫ বছর রায়ান প্রতিমাসে কেবল তার খেলনাগুলো দিয়ে খেলতে কেমন লাগে তা জানিয়েই মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে। ইউটিউবও কিন্তু নিজস্ব কন্টেন্টের জন্য খ্যাতি পায় নি!
৪র্থ শিল্প বিপ্লব পৃথিবীকে আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বগ্রামে পরিণত করবে। যোগাযোগব্যবস্থা হবে অভাবনীয় উন্নত, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হবে পাড়ার দোকানে কেনা-বেচার মতই সহজ। প্রতিটি মানুষের জীবন হবে একই সাথে সিম্পল এন গর্জ্যাস!
সময় এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের
পূর্ববর্তী শিল্পবিপ্লবসমূ


প্রথম শিল্প বিপ্লব
মূল প্রভাবক: বাষ্পীয় ইঞ্জিন
ফলাফল: উৎপাদন শিল্পের সম্প্রসারণ
দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব
মূল প্রভাবক: বিদ্যুতের উদ্ভাবন ও ব্যবহার
ফলাফল: উৎপাদন শিল্পের আমূল পরিবর্তন
তৃতীয় শিল্প বিপ্লব
মূল প্রভাবক: কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি
ফলাফল: বিভিন্ন শিল্পে অভাবনীয় পরিবর্তন
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আলোচিত প্রযুক্তি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং
উন্নত মানের রোবোটিক্স ও অটোমেশন
ইন্টারনেট অফ থিংস
ব্লকচেইন প্রযুক্তি
থ্রি-ডি প্রিন্টিং
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং
উন্নত মানের জিন প্রযুক্তি
নতুন ধরনের শক্তি
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব
– ২০২৫ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন সংযোগ তৈরির সম্ভাবনা
– অটোমেশনের কারণে চাকরির ঝুঁকি বাড়বে (যুক্তরাষ্ট্র: ৩৮% – ৪৭%, জার্মানি: ৩৫%, ব্রিটেন: ৩০%, জাপান: ২১%)


চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ
তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ
প্রযুক্তিগত সমস্যায় উৎপাদনে ব্যাঘাত
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা
ইন্টারনেট ও অন্যান্য প্রযুক্তির মধ্যে অব্যাহত সংযোগ নিশ্চিত
অটোমেশনের কারণে বহু মানুষের কাজের সুযোগ হ্রাস
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা
অটোমেশনের প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাস
উৎপাদন শিল্পে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে বড় পরিবর্তন
বিশেষায়িত পেশার চাহিদা বৃদ্ধি
সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন
বাংলাদেশে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব-
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও আমাদের প্রস্তুতি
ভৌগলিক কিংবা অর্থনৈতিক কারণে অন্যান্য বিপ্লবগুলোর মতই বাংলাদেশে উন্নয়নের ছোঁয়া দেরীতে পৌছায়। সে হিসেবে ৪র্থ বিপ্লবের ধাক্কা বাংলাদেশে পুরোপুরি পৌঁছুতে কিছুটা সময় লাগবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব মূলত স্মার্ট কারখানার ধারণাকে সংজ্ঞায়িত করে। সেই হিসেবে দিন ফুরাবে কায়িক শ্রম ভিত্তিক বাংলাদেশের।
ছোট্ট দুটি একটি উদাহরণ দিই, বিংশ শতকের গোড়ায় যখন সবাক চলচ্চিত্র শুরু হয় অসংখ্য অভিনেতা-অভিনেত্রী হঠাৎ কাজ হারায়, সবাক ছবিতে খাপ খাইয়ে নিতে অপরাগ হওয়ায়। অসংখ্য শিল্পী-কলাকুশলী হেরে যায় সমকালীন প্রযুক্তি এডপ্ট করতে না পারায়।
আশি’র দশকে প্রচুর মানুষ টাইপিং শিখতো সহজে চাকরি পাবার আশায়। নব্বই এর দশকে এই মানুষগুলো কাজ হারায় কম্পিউটার এসে যাওয়ায়। যে কম্পিউটার চালাতে পারে, কম্পিউটারে লিখতে পারে তাকে রেখে শুধু টাইপিং জানা লোকটি কেন কাজ পাবে? সম্প্রতি বাংলাদেশ গার্মেন্ট শিল্পে লেজারের কাটিং মেশিন ব্যবহার শুরু হয়েছে যা কয়েকটি ব্যাচে অজস্র কাপড় কেটে ফেলতে পারে স্বল্প সময়েই। ক্রমাণ্বয়ে কারখানার সকল কাজেই মানুষের বিকল্প হবে প্রযুক্তি। তাহলে পোশাক শিল্পে নিয়োজিত বিশাল এ জনসম্পদ কিংবা স্বল্প শিক্ষিত, কেবল কায়িক শ্রমে উপার্জনে নির্ভর মানুষগুলো কি করবে? আমেরিকার মত প্রযুক্তিনির্ভর দেশেই ৪৭ শতাংশ মানুষ কাজ হারাবে। তাহলে চাকুরিভিত্তিক বাংলাদেশ কি করবে? সময় এখন তাই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এডপ্ট করার, প্রযুক্তি জ্ঞান আর ব্যবহার প্রবণতা বাড়ানো। কেবল প্রযুক্তিতে দক্ষতাই শিল্প বিপ্লবের যুগের মানুষদের উত্তীর্ণ করবে।
মোবাইল ফোন দিয়েছে প্রতি মূহুর্তে খবর জানবার বিলাসিতা আর নিয়ে নিয়েছে মুখোমুখি বসে কথা বলবার উচ্ছ্বসিত আবেগ! অন্য সব প্রযুক্তির মতই ৪র্থ বিপ্লবও অনেক খানেই প্রাকৃতিক জীবনের শেষ চিহ্ন মুছে দিয়ে মানুষকে দেবে একই সাথে ব্যস্ততা আর সহজ জীবনের নিশ্চয়তা। মঞ্চ প্রস্তুত, অপেক্ষা কেবল আপনার!


তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ফোর্বস, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, পিডব্লিউসি, ডিলয়েট, ম্যাকিনজি অ্যান্ড কোম্পানি, পি-ল্যাবস বাংলাদেশ

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৩০
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×