‘আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানোর স্থানকে নামাযের স্থান বানাও এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু সেজদাকারদের জন্য পবিত্র রাখ।’ (বাকারা-১২৫)
"আলহামদুলিল্লাহ"
আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে পবিত্র রমজান মাসে আমি সহ আমার পরিবারের সদ্যগণ উমরাহ পালনের উদ্দেশে মক্কা-মদিনা নগরীতে অবস্থান করেছি। তাছাড়া আল্লাহর তাআলার কৃপায় সেখানে ঈদ-উল ফিতর নামাজ আদায়ের সৌভাগ্য হয়েছে। মূলত সে কারণে আমি দীর্ঘ এক মাস সামুতে অনুপস্থিত।
পবিত্র মক্কা-মদিনা নগরীর কিছু ছবি তুলতে পেরেছি। তা নিয়ে আজ লিখছি ছবির গল্প।
সকল ছবি মোবাইল ফোনে তোলা এবং তাতে কোন ফিল্টার যোগ করা হয়নি।
পবিত্র মক্কা-
১। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুল লা শারিকালাক’
২। বাইতুল্লাহ ।
৩। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে তাঁর স্ত্রী হজরত হাজেরা ও শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে অল্প কিছু খাদ্যদ্রব্যসহ পবিত্র ঘর কাবা শরিফের সন্নিকটে সাফা ও মারওয়ার পাদদেশে উন্মুক্ত মরুভূমিতে রেখে যান। মা ও শিশু ইসমাইলের সঙ্গে থাকা সামান্য খাবার ও পানি শেষ হয়ে যায়। এ সময় হজরত হাজেরা পানির চাহিদা মেটাতে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে সাফা পাহাড়ের পাদদেশে রেখে সাফা পাহাড়ের চুড়ায় ওঠেন। সেখানে পানি সন্ধান না পেয়ে সেখান থেকে মারওয়া পাহাড়ে যান। উভয় পাহাড়ের নিচু উপত্যকা দৌড়ে অতিক্রম করেন। কেননা ওই স্থান থেকে শিশু ইসমাইলকে দেখতে পেতেন না। হজরত হাজেরা এভাবে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার আসা-যাওয়া (দৌড়াদৌড়ি) করেন। যা আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দ হয়ে যায়। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তামাম মুসলিম মিল্লাতের জন্য হজরত হাজেরার এ কাজকে স্মৃতি স্মারকস্বরূপ হজ ও ওমরায় রোকন হিসেবে সাব্যস্ত করেন।
সাফা-মারওয়া-
৪। জরত হাজেরা রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয় পাহাড়ে ৭ বার দৌড়াদৌড়ির পর সন্তানের কাছে ফিরে এসে দেখতে পান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর পায়ের নিচ থেকে মাটি ফেটে পানির ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। হজরত হাজেরা পানির প্রবাহ রোধে পাথর দিয়ে বাঁধ দেন। আর মুখে বলতে থাকেন ‘জমজম’ থামো থামো। আর তখন থেকেই এ পানির উৎস কুপটি ‘জম জম কুপ’ হিসেবে পরিচিত।
‘জম জম কুপ’-
৫। আবাবিল পাখি।
৬। মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার হোটেল।
৭। জাবালে সাওর বা গারে সাওর। এই সাওর পর্বতের একটি গুহায় হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মদিনা মোনাওয়ারায় হিজরতের সময় আত্মগোপন করেছিলেন।
৮। আরাফাত ময়দান ।
৯। মুজদালিফা।
১০। মসজিদে নামিরাহ, যেখানে হজের খুতবা দেয়া হয়।
১১। জাবালে রহমত, হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া এখানে এসে মিলিত হয়েছিলেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
১২। মিনা (তাবুর শহর বলেও পরিচিত)। পাশের গাছগুলো জিয়াউর রহমানের অবদান।
১৩। এটি সেই জায়গা, মিনা পাহাড়ের পাদদেশে পুত্রের অনুরোধে ইবরাহিম (আ.) ইসমাইলের হাত-পা ও নিজের চোখ বেঁধে নেন এবং কন্ঠদেশে আল্লাহর নামে তরবারী চালান। দয়াময় আল্লাহ সেই সময় ইসমাইলকে সরিয়ে নেন এবং তাঁর জায়গায় এক জন্তু-দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। নিশ্চয়ই এ ছিল ইব্রাহিম (আ.) এর জন্যে এক স্পষ্ট পরীক্ষা। আল্লাহ ইব্রাহিম (আ.) কে পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হওয়ার সুসংবাদ দেন।
১৪। প্রথমে জামারা সগির বা ছোট শয়তান, তারপর জামারায় ওস্তা বা মেজ শয়তান এরপর জামারায় আকাবা বা বড় শয়তান। হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ সন্তান ইসমাঈলকে (আ.) কোরবানি করার জন্য মিনায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। জামারায় পৌঁছালে শয়তান তাঁকে ধোঁকা দেয়। তখন শয়তানকে লক্ষ্য করে তিনি পাথর নিক্ষেপ করেন।
১৫। এই পাহাড়ের নাম জাবালে নূর। এই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি গুহাকে বলা হয়- ‘গারে হেরা’ বা ‘হেরা গুহা’। নবুওয়ত লাভের পূর্বে নবী করিম (সা.) এই গুহায় ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। এখানেই সর্বপ্রথম অহি নাজিল হয়েছিলো।
পবিত্র মদিনা-
১৬। মসজিদে নববী।
১৭। নবী করিম (সা.)-এর রওজা মোবারক।
১৮। জান্নাতুল বাকি কবরস্থান।
১৯। উট।
২০। মসজিদ আল কিবলাতাইন, এখানে নামাজ পড়ার সময় মুহাম্মদ (সা) এর কাছে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশের ওহি আসে।
২১। মসজিদ-ই-আল জুম্মা, এই মসজিদ যেখানে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পর তার প্রথম জুমার নামাজের সঞ্চালিত।
২২। মসজিদ-ই- ফাতিমা।
২৩। উহুদ পাহাড়, উহুদ প্রান্তরে কোরায়েশরা নির্মমভাবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দাঁত মোবারক শহিদ করেছিল, তাকে আহত করেছিল। এই রণক্ষেত্রে নবী করিম (সা.)-এর চাচা মহাবীর হজরত হামজা (রা.) এবং হজরত আকিল ইবনে উমাইয়া (রা.)সহ সত্তরজন সাহাবা শহিদ হয়েছিলেন।
২৪। মদিনার রহস্যময় পাহাড়। মানুষের কাছে এটা জিনের পাহাড় নামে খ্যাত। আরবরা অবশ্য এই পাহাড়কে জিনের পাহাড় বলেন না। তাদের কাছে এই পাহাড়ের নাম ওয়াদি আল আবইয়াজ বা ওয়াদি আল বায়জা।
"হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।"
- [সূরা আল-ইমরান - ০৮]
"হে আল্লাহ! তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। তোমার উপর ভরসা করলাম। তোমার প্রতি ঈমান আনলাম। তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম। তোমাকে কেন্দ্র করে বিবাদে লিপ্ত হলাম। তোমার নিকট বিচার ফয়সালা সোপর্দ করলাম। অতঃপর আমাকে ক্ষমা কর, যা আগে করেছি এবং যা পরে করব, যা প্রকাশ্যে করেছি এবং যা গোপনে করেছি। তুমিই আমার মা‘বুদ। তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোন মা‘বুদ নেই" - [বোখারি : ৫৮৪৩]
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৮