somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পবিত্র হোসাইন
মাঝে মাঝে নিজেকে আঠেরো শতাব্দীর অঘোষিত সাফল্যহীন কবি মনে হয়। যার কিছু লেখা নামহীন বাজারি পত্রিকায় ছাপা হয়ে ছিল কিন্তু কেউ তা পড়ে দেখিনি।

হঠাৎ সন্ধ্যা (২য় পর্ব )

০৫ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দেখতে দেখতে ১০ বছর হয়ে গেল মীরা আপার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এর মাঝে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। আমি কিশোরী থেকে যুবতী হয়েছি। বড় চাচার গোলাপ গাছটি ঝরে গেছে। পাড়ার জাকির মাস্তান আমাকে প্রেমপত্র দিয়েছে। মোড়ের দোকানদার বাচ্চু মারা গিয়েছে। পাত্রপক্ষ আমাকে কয়েকবার দেখতে এসেছে। হতে গিয়েও আমার বিয়েটা হয়নি। আরো কতো কিছু তা বলে শেষ করা যাবে না। তার মাঝে একটি ঘটনা আমার জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে। সে ঘটনাও সময়মত বলা হবে।

মীরা আপা চলে যাবার পর থেকে রাশেদ ভাইকেও পাওয়া যাচ্ছিল না। সবাই ধরে নিয়েছে মীরা আপা রাশেদ ভাইয়ের সাথে পালিয়েছে। এ নিয়ে বাবা কম পাগলামি করেননি। বোকা মানুষ সব কিছু নিয়ে হট্টগোল করে। বুদ্ধিমানেরা তাদের চিন্তা শক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান করে। বাবা পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ করেছেন। এমনকি পীর-ফকির, কবিরাজ, সাধু- সন্যাসি কেউ বাদ যায়নি। তবু আপাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একবার এক ফকিরকে আনা হলো। তিনি অনেক যোগ-বিয়োগ করে বললেন কোন এক জালিম মীরা আপাকে আটকে রেখেছে তাকে পেতে হলে শুক্রবার বাদ জুম্মা দুইটি কালো ছাগল জবাই করে মিসকিন খাওয়াতে হবে, বাবা তাই করলেন কিন্তু আপা ফিরে এলো না বরং পাড়ার রটে গেল মীরা আপাকে কে যেন পতিতালয়ে আটকে রেখেছে। বাবা এতেই খান্ত হলেন না মায়ের পুরোনো গয়না বিক্রি করে লাইসেন্স করা বন্দুক কিনে এনে বললেন- রাশেদ হারামজাদাকে আমি গুলি করে মারব! কত বড় সাহস আমার মেয়েকে নিয়ে পালায়!

দিন দিন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে লাগলো। আমার যেন কষ্টের অন্ত রইলো না। পাত্রপক্ষ যতবার দেখতে এসেছে আপার কথা শুনে আর এগোয়নি। আমাকে একা একা বাইরে যেতে হত। কলেজে উঠার পর জাকির নামের এক মাস্তান আমাকে প্রেমপত্র দিয়ে বসলো। কলেজের যাবার সময় সে আমার পিছু নিত। এই ঘটনা বাবা একদিন রাস্তায় দেখে ফেলল তাতে জাকির মাস্তানের কোন ক্ষতি হয়নি বরং আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেল। বাবা বাড়ীতে এসে হুংকার দিয়ে বললেন কাল থেকে আর কলেজে যেতে হবে না। তোরপড়াশুনা বন্ধ। একটা গেছে গোল্লায়, আরেকটা যাচ্ছে চুল্লায়! একথা শুনে সবচেয়ে খুশী হলেন যে তার নাম “মোতালেব”। আমার জীবনের কলঙ্ক অধ্যয়ের নায়ক এই মোতালেব আংকেল।

ছেলেবেলা থেকেই এই মোতালেব আংকেলকে আমি প্রচুর ভয় পেতাম। তার অশালীন কর্মকান্ডে অতিষ্ট ছিলাম। তার ব্যাপারে কখনো কাউকে কিছু বলতে পারিনি। এমনকি বাবাকেও না। কারন বাবার নেশা ছিল হোমিওপ্যাথিক বিদ্যা অর্জন করার। তিনি ছিলেন মোতালেব আংকেলের একমাত্র ছাত্র। বাবা তাকে পীর মানতেন। বাবা সব সময় বলতেন- মোতালেব ভাই একজন টেলেন্ট মানুষ। হোমিওপ্যাথিক বিদ্যায় তাকে টক্কর দেয় এমন কোন বাপের বেটা এখনো জন্মায়নি। তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পীর আর আমি তার মুরিদ। হা হা হা !!! তাই বাবাকে তার সম্পর্কে কিছু বলা অর্থহীন। হয়তো মীরা আপাও কিছু বলতে পারেনি এজন্য রাশেদ ভাইয়ের হাত ধরে পালিয়েছে।

আপনাদের বলেছিলাম আমার জীবনের সবচেয়ে কালো অধ্যায়ের গল্প বলবো। সময়টা ছিল আপা চলে যাবার একমাসের মাথায়। সে সময় বাবা চরম মাত্রার পাগলামি শুরু করলেন। যখন তখন আমাকে এবং মাকে ধরে মারতেন। ভয়ে তাদের ঘরের সামনে যেতাম না।রাতে একা একা আপার রুমে ঘুমাতাম। আপার ঘরটা ছিল একেবারে শেষে দিকে। সে রাতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল রাতে খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে দেখি বিদুৎ নেই। অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। ভয়ে ভয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়তেই হঠ্যৎ কেউ একজন আমার মুখ চেপে ধরলো। অনেক চেষ্টা করেও তাকে ছাড়াতে পারিনি। সেই ভয়াল রাতে কথা বর্ননা করার ভাষা আমার নেই। আমার সর্বস্ব শেষ হয়েছিল সেই রাতে। তীব্র ব্যাথার স্রোত বয়েছিল সমস্ত শরীর জুড়ে। কিছুক্ষনের জন্য মনে হয়েছিল আমি মারা যাচ্ছি। সেই রাতে আমাকে বাঁচানোর মত কেউ ছিল না। হৃদয় ভেঙে চুরমার করা বজ্রকম্পনকে থামনোর সাধ্য ছিল না করো। বিদুৎ চলে আসতেই আলোর ঝলকানিতে দেখতে পেলাম মোতালেব আংকেল মুখ । তিনি শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে আছেন। আমার স্বত্তাকে ধ্বংস কারার নেশার মেতেছেন। তার ক্ষুর্ধার্ত হিংস্র ভয়াল থাবা থেকে সেদিন নিজেকে মুক্ত করতে পারিনি।

(চলবে)

(হঠাৎ সন্ধ্যা) ১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:৩৮
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×