somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের বোঝা

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজাদ বসে ছিল রাস্তার উপরে। এত রাতে এই রাস্তায় তেমন লোকজন থাকে না। তাই রাস্তায় বসেই থাকা যায়। আরিফ আজাদের পাশে গিয়ে বসলো।
.
কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে আরিফ বলল
-দোস্ত ধরা।
-নাই তো। এক পুরি ছিল তাও শেষ। আর ট্যাবলেট তো অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে।
-নাই!! চল কিনে আনি।
-দোস্ত এত রাতে কি ট্যাবলেট পাবি?
-আরেহ রফিকের দোকানে সবসময় ইয়াবার ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
-কিন্তু টাকা...
-তোকে টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। টাকা আমার কাছে আছে।
-তুই তো বললি টাকা নাই। পেলি কোথায়?
-বাবার আলমারি থেকে নিয়ে এসেছি।
-যদি আংকেল জানতে পারে?
-আরেহ কিচ্ছু হবে না। কিছু বললেই বা কি।
-আচ্ছা চল। আমারও খুব নেশা ধরেছে।
-আয়।
.
আরিফ আর আজাদ রাস্তা দিয়ে কিছুদুর হাটার পরেই রফিকের দোকান পেয়ে গেল। এত রাতে রফিকের চায়ের দোকানে তেমন লোক থাকে না। তবুও রফিকের দোকান খোলা থাকে।
.
রফিকের দোকান রাতে চা বিক্রি করার জন্য খোলা থাকে না। রাতে ট্যাবলেট বিক্রি করার জন্য খোলা থাকে। আর দিনে তেমন খোলে না। ট্যাবলেট বিক্রি করলে রফিকের যা আয় হয় তাতে চা বিক্রি করা লাগে না।
.
রফিকের দোকানের কাছে এসে আরিফ আজাদকে বলল
-তুই যা নিয়ে আয়।
-তুই ও আয়।
-আমাকে দেখলে নাও দিতে পারে। এই নে টাকা।
-আচ্ছা। তুই দুরে গিয়ে দারিয়ে থাক।
-আচ্ছা। তুই নিয়ে আয়।
.
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে আজাদ ট্যাবলেট নিয়ে আসলো। আর দুইজন হাটতে থাকলো সামনের দিকে।
.
আগের সেই জায়গায় এসে বসে আজাদ ট্যাবলেট বের করলো। আরিফ আর আজাদ দুইজন একসাথে ট্যাবলেট সেবন করতে থাকলো।
.
আরিফ এখন পুরো নেশার উপরে আছে। তাই রাস্তার উপরে টানটানভাবে শুয়ে পরেছে। নেশা হয়ে আরিফের জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পরে যাচ্ছে। আর সেই কথাগুলোই ভাবছে।
.
আরিফ বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আরিফ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখছে বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে। যেটা আরিফ নিরবে দেখে যায়। আর মনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে।
.
বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া বাধলেও আরিফের সব আবদারই পুরন হত। আর টাকা পয়সা লাগলেও ঠিক পেয়ে যায়।
.
মাঝেমাঝে বাবা মায়ের ঝগড়া যখন অসহ্য লাগে তখন আরিফ বাইরে চলে যায়। বাবা মায়ের ঝগড়া বেশি হয় রাতে। কারন দিনে তারা যার যার মত কাজে ব্যাস্ত থাকে।
.
একদিন রাতে রাস্তায় বসে আছে। আগে আবশ্য রাতে আসতো না। বড় হওয়ার পরে এখন রাতে বাড়ির বাইরে এসে বসে থাকে।
.
আরিফ কিছু সময় বসে থাকার পরে খেয়াল করলো দুরে এলাকার কিছু পোলাপান সিগারেট খাচ্ছে। আর হাসাহাসি করছে। কেউ কেউ গড়িয়ে পরছে মাটিতে। আরিফ কৌতুহলবশত ওইদিকে যেতে থাকলো।
.
সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো আরিফের বন্ধু আজাদও আছে। আরিফ আজাদকে জিজ্ঞেস করলো
-কিরে এত আনন্দ কেন?
-গাজা খাচ্ছি তাই।
-গাজা আনন্দ হয় নাকি!
-হয় তো। একবার খেয়েই দেখ।
-আরে নাহ।
-দেখ একবার।
.
আরিফ গাজা মেশানো সিগারেট টান দিতেই কাশতে ঠাকলো। ফেলে দিচ্ছিল এমন সময় আজাদ বলল
-প্রথম তাই এমন লাগছে। আবার টান দে।
-না।
-দে। ভাল লাগবে।
.
আরিফ আবার টান দিতেই মাথা ঘুরতে থাকলো। আরিফ মাথা ঘোরা অবস্থায় রাস্তায় বসে পরলো। মাথা ঘুরলেও আরিফের মনে হচ্ছে সে এখন রাজা। তার বাবা মায়ের ঝগড়ার কথাগুলো কষ্ট না দিয়ে আনন্দ দিচ্ছে।
.
সেইদিন থেকেই আরিফের নেশার জগতে প্রবেশ শুরু। আসতে আসতে গাজাকে কাছে টেনে নিল। আর নিজের ভাল লাগা খারাপ লাগা সব দুরে ঠেলে দিল।
.
হঠাৎ একদিন আরিফের জীবনে ইয়াবা নামের নতুন নেশা ঢুকে গেল। আর এই নেশা আরিফকে বিশিয়ে তুলতে থাকলো। আর এর সাথে আরিফ আরো জড়িয়ে যেতে থাকলো।
.
একদিন আরিফের প্রেমিকা আরিফকে ছেড়ে চলে গেল। কারন আরিফকে সে বলেছিল নেশা ছাড়তে আর নাহয় তাকে ছাড়তে। কিন্তু আরিফ অনেক চেষ্টা করেও নেশা ছাড়তে না পারায় তার প্রেমিকাই ছেড়ে গেল।
.
এই নেশার জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকেও আরিফ অনেক ধরনের অপমান পেয়েছে। আরিফের বাবা-মা অনেকভাবে চেষ্টা করেও তাকে নেশা ছাড়াতে পারে নি।
.
আরিফ পুরাতন কথাগুলো ভাবছে আর হাসছে। কারন দুঃখ নামের অনুভুতি আরিফের মন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। তাই এখন সে হেসে যায়।
.
নেশা আরিফের জীবনকে আরো বিশিয়ে তুলতে শুরু করেছে। ইয়াবা ছাড়তে পারছে না। ইয়াবা না খেলেই শরিরের মধ্যে চুলকাতে শুরু করে।
.
আরিফ ভাবছিলো এমন সময়ে আজাদ বলল
-দোস্ত আরেকটা জিনিস আছে। টানবি?
-কি?
-এই দেখ এক পুরি নিয়ে এসেছি।
-এক পুরিই বানা। দুইজন মিলে টানতে টানতে যাই চল।
-আচ্ছা। বানিয়ে নেই।
.
এক পুরি গাজা সিগারেটের মধ্যে ঢুকিয়ে বানানোর পরে দুইজন মিলে টানতে টানতে যেতে থাকলো।
.
আরিফ টলতে টলতে রাস্তা দিয়ে হাটছে। আজ নিজের জীবনকে নিজেত কাছেই বোঝা মনে হচ্ছে। সব বোঝা বহন করা গেলেও জীবন বোঝা হয়ে গেলে তখন বহন করা যায় না।
.
আরিফের এখন একটা গান খুব মনে পরে।
"নষ্ট জীবন দিয়ে কি আর আমি করবো,
জীবন যদি বদল করা যেত
ভাল জীবন হত, আমার ভাল জীবন হত"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×