somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু পাওয়ার সুযোগ

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিমি অচেতন অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে। জ্বর মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে শেষে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেছে।

আসিফ রিমির মাথায় পানি ঢালছে। মাথায় পানি ঢালার সময় আসিফের চোখ থেকে পানি ঝড়ে যাচ্ছে। আসিফ রিমির মাথায় পানি ঢালছে অনেকসময় ধরে। কিন্তু রিমির জ্বরে বিছানায় শুয়েই আছে।

পানি ঢালতে ঢালতে মনেহল রিমির জ্ঞ্যান ফিরেছে মনেহয়। রিমি চোখ টিপটিপ করে শুয়ে আছে। আসিফ মনেহয় আশার আলো দেখলো। কিন্তু রিমি কোন কথা বলতে পারছে।

আসিফ রিমির জ্বর কমেছে দেখে রিমিকে ঘুমাতে বলল। রিমি জ্বরের কারনে কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালো। আসিফ রিমিকে শুইয়ে রেখে বারান্দার দিকে গেল।

আসিফ বারান্দায় চেয়ারে বসে রিমির কথা ভাবছে। দুইদিন রিমি জ্বরের কারনে দুর্বল হয়ে ঘরে শুয়ে আছে। বিছানা ছেড়ে তেমন উঠতে পারে নি।

এই দুইদিনে আসিফ রিমিকে খুব মিস করছে। মিস করছে রিমির সেই ঝগড়া করা। রিমিকে আজও আসিফ জোড় করে কিছু বলতে পারে নি। রিমি বিয়ে করা বউ হলেও আসিফ তার উপর অধিকার খাটাতে পারে না।

রিমি মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে হলেও আসিফ তার প্রেমে পরেই বিয়ে করেছিল। কিন্তু সেই প্রেমটা শুধু আসিফের পক্ষ থেকে ছিল। রিমির প্রতি আসিফের ভালবাসা ছিল একতরফা। কিন্তু সেই একতরফা ভালবেসেই আসিফ রিমিকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়।

আসিফ উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলে দেখতে শুনতেও ভাল। তাই রিমির বাবা অমত করে নি। এক বাক্যেই রিমির সাথে আসিফের বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু রিমির পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায় নি।

আসিফের ভালবাসা কতটা একতরফা সেটা আসিফ বাসর রাতেই বুঝতে পেরেছিল। আসিফ বাসর ঘরে ঢুকে যখন রিমিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিমি বলেছিল
-আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
-হ্যা। বলো।
-আমি আপনাকে আমার ইচ্ছায় বিয়ে করি নি। আমার পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি। আমি আপনাকে কখনও মেনে নিতে পারবো না।
-কেন? আমি দেখতে খারাপ?
-না। আপনার আগেই আমি আমার মনে অন্য কাউকে জায়গা দিয়ে ফেলেছি। তাই আমার কাছে কখনও স্বামির অধিকার ফলাতে আসবেন না।
-কিন্তু তুমি তো আমার স্ত্রি। তোমাকে আমার পাশেই থাকতে হবে।
-আমি আপনার সাথে থাকলেও মন কিন্তু আপনাকে চাইবে না। তাই আমার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করবেন।

বিয়ের রাতে নববধূর কাছ থেকে এই ধরনের কথা শোনা একজন স্বামির জন্য কতটা কষ্টের সেটা আসিফ সেদিন বুঝতে পেরেছিল। তবুও রিমিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবে নি।

বিয়ের পর থেকেই রিমি আর আসিফ দুজনের ঝগড়া লেগেই থাকতো। দুজনের বললে ভুল হবে রিমিই বরাবর আসিফের সাথে ঝগড়া করে যেত। আসিফ নিরব দর্শক হয়ে দেখে যেত আর সহ্য করে যেত।

এরপরে একদিন আসিফ রিমির সেই প্রেমিকের ঠিকানা বের করে ফেলে। এবং তার সম্পর্কে সব তথ্য জেনে নেয়। এও জানে যে রিমির সেই প্রেমিক সুবিধার নয়। তার অনেকগুলো মেয়ের সাথেই সম্পর্ক আছে।

আসিফ বিয়ের রাতে রিমির মুখে রিমির প্রেমের কথা শুনে ভেবেছিল রিমিকে তার হাতে তুলে দেবে। নিজে রিমিকে নিয়ে সুখি হতে না পারলেও অন্যের সাথে রিমিকে সুখি হতে দেখবে।

কিন্তু আসিফের মন সায় দেয় নি। আসিফের মনে হয়েছে রিমি সেই ছেলেটির সাথে সুখি হতে পারবে না। কারন তার চরিত্র খারাপ। তাই আসিফ অব্য বুদ্ধি বের করে।

আসিফ কৌশলে রিমির সেই প্রেমিককে দুরে সরিয়ে দেয়। দুরে সরিয়ে দিয়ে ভেবেছিল হয়তো রিমি আসিফকে মেনে নিবে। কিন্তু তাতে আরো বিপরীত হয়।

রিমির জীবন থেকে আসিফের সেই প্রেমিক চলে যাওয়ার পরে রিমি আরো খিটখিটে হয়ে যায়। আসিফের সাথে একটুতেই ঝগড়া বাধিয়ে দেয়।

একসময় আসিফ রিমির ঝগড়া করা তার মেজাজ দেখানো মেনে নিয়েছে। আসিফ এটাতেই কোন এক আনন্দ খুঁজে নিয়েছে। তবুও রিমি তার পাশে এতেই অনেক।

কিন্তু দুইদিন অসুস্থ হওয়ার কারনে রিমি আসিফের সাথে ঝগড়া করে না। রিমি আসিফের সাথে ঝগড়া না করায় সেটাকেই আসিফ মিস করতে শুরু করেছে।

ভাবতে ভাবতে আসিফের মনে পরলো রিমিকে ঔষধ খাওয়াতে হবে। তাই আসিফ চেয়ার থেকে উঠে ঘরে চলে গেল। যেতে যেতে মনেহল আসিফের চোখের কোণে পানি জমে আছে। আসিফের কাছে এটা কিছু না।

আসিফ ঘরে গিয়ে রিমির জ্বর মেপে দেখলো এখন কমে গিয়েছে। ডাক্তার বাসায় এসে ঔষধ দিয়ে গিয়েছিল। সেই ঔষধ খাইয়ে রিমির জ্বর এখন কম।

আসিফ রিমিকে ঔষধ খাইয়ে পাশেই বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো। রিমি অসুস্থ হওয়ায় আসিফ তাকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছে। ভাল থাকলে আসিফ রিমির এত কাছাকাছি আসার সুযোগ পেত না হয়তো।

তবুও রিমির অসুস্থতা দেখে আসিফের মন কেঁদে উঠছে। তার কাছাকাছি থেকে সেবা করলে রিমি খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে যাবে।

দুইদিন পরে...
রিমি এখন পুরাপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছে। তাই আজ আসিফ অফিসে যাবে। কয়েকদিন অফিসে যাওয়া হয় নি।

আসিফ টাই বাধার চেষ্টা করেও পারছে না। আজ কেন এমন হচ্ছে আসিফ সেটা বুঝতে পারছে না। মেজাজটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

-আমি টাই বেধে দেব? আমি কিন্তু খুব ভাল টাই বাধতে পারি।
পিছন থেকে এইরকম কথা শুনে আসিফ চমকে পিছনে তাকাল। পিছনে তাকিয়ে দেখে রিমি দাঁড়িয়ে আছে।

আসিফ অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
-তুমি টাই বেধে দেবে?
-কেন? স্ত্রি কি স্বামির টাই বেধে দিতে পারে না?
-পারে। কিন্তু...
-কোন কিন্তু না। একটা মানুষ জীবনে ভুল করে ফেলতে পারে। হঠাৎ যদি সামনে সেই ভুল সুধরানোর সুযোগ আসে, তবে সেই সুযোগ লুফে নেওয়া জীবনের সার্থকতা। আমি সেই সুযোগ পেয়ে হারাতে চাই না।
-তাহলে এখন থেকেই শুরু?
-হ্যা।

আদিফ রিমিকে টাই বাধতে দিল না। কারন আজ আসিফ অফিসে যাবে না। আজ আসিফ রিমির সাথে প্রেম করবে। অফিস তো অনেক হয়েছে কিন্তু সুযোগটাতো আজকেই পাওয়া গেল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৬
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×