somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি শিতের সকাল

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালবেলা ফোনের শব্দে আবিরের ঘুমটা ভেঙে গেল। শিতের সকালে ঘুম ভেঙে যাওয়া খুবই বিরক্তিকর। তাই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে মুখে বিরক্তির ছাপ কিছুটা থেকেই গেল।

বিরক্তি সহকারে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে মারিয়া বলল
-ঘুম থেকে উঠতে এত সময় লাগে?
-আরে শিতের সময়ে কি এত সকালে ঘুম ভাঙে!!
-ঘুম ভাঙে না তবুও তো আজ ঘুম ভেঙেছে। যাক ভাল হয়েছে। তুমি আধঘণ্টার মধ্যে আমার সাথে দেখা করবে।
-কি বলো!! এত অল্প সময়ের মধ্যে!!
-আমি কতকিছু শুনতে চাই না। না আসলে কি হবে সেটা বুঝতেই পারছ।
-আচ্ছা আমি আসছি।

আবির খিটখিটে মেজাজ নিয়েই বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো। উঠে গায়ে জ্যাকেট দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো।

ওয়াশরুমে পানি গরম থাকায় কোন ভোগান্তি পোহাতে হল না। তাই ওয়াশরুম থেকে দাত ব্রাশ করে, ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এল।

বেড়িয়ে জামাকাপড় পরে নিচতলার দিকে গেল। গরিবদের ঘুম ভাঙে ক্ষুধার জ্বালায়। আর ধনিদের ঘুম ভাঙে বউ অথবা প্রেমিকার জ্বালায়। আবিরের মনেহয় আজ তাই হয়েছে।

নিচতলায় এসে দেখে ড্রাইভার নেই। ড্রাইভার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে কালকে। অথচ আজও ফিরে নি। তাই এখন আবির নিজেই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাবে।

আবির মাঝেমাঝেই গাড়ি চালায়। তাই আবিরের কাছে সবসময় গাড়ির একটা চাবি থাকেই। নিজে নিজে চালালে খুব একটা অসুবিধা হবে না।

আবির নিজেই গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে থাকল। যদিও ঠান্ডার জন্য একটু অসুবিধা হচ্ছে। গাড়ির বন্ধ থাকায় বেশি অসুবিধা হচ্ছে না।

আবির গাড়িতে বসা অবস্থায় আবারও মারিয়ার ফোন। আবির ফোন ধরে বলল
-আমি আসছি।
-কতদুর?
-কাছাকাছিই।
-তারাতারি আসো। দেরি হলে আমি কোন অজুহাত শুনতে চাই না।
-আচ্ছা।

আবির গাড়িতে বসে গাড়ির গতি একটু বাড়িয়ে দিল। বড় রাস্তা না দিয়ে ছোট রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। কারন এই রাস্তায় যানজট কম থাকে।

কিছুদুর আবিরের গাড়ি বন্ধ হয়ে গেল। আবির আবারও চালু করার চেষ্টা করেও চালু করতে পারছে না। তাই গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো।

গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আবিরের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল। গাড়ির ঢাকনা খুলে দেখল ব্যাটারি ডাউন হয়ে গেছে। তবুও গাড়িতে উঠে চালু করার চেষ্টা করলো।

গাড়ি যখন চালুই করতে পারছিলো না তখন গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো। তখন গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়েই মারিয়াকে ফোন দিতে গিয়ে হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে আবির থমকে গেল।

আবির দেখল দুরে কিছু শিশু এক জায়গায় বসে আছে। তাদের শরিরে শিত দুর করার মত যথেষ্ট কাপড় নেই। তবুও তারা চুপচাপ বসে আছে। আবিরের মুখে যে বিরক্তির ছাপ তাদের মুখে তার রেশমাত্র নেই।

আবির হাটতে হাটতে সেই শিশুগুলোর কাছে চলে গেল। কাছে গিয়ে দেখল কিছু মানুষ ঠান্ডায় কাপছে। আর ঠান্ডার কারনে কষ্ট পাচ্ছে।

আবির জিজ্ঞেস একটা শিশুকে জিজ্ঞেস করল
-আচ্ছা। তুমি এই শিতের মধ্যে শিতের কাপড় গায়ে দাও নি কেন?
-শিতের কাপড় পামু কই সাহেব!!
-কেন? কিনে দেয় নি?
-না সাহেব। আমাদের কাপড় কেনার মত টাকা নেই।

আবির আর কিছু বলতে পারল না। তাই কিছুটা দুরে চলে আসলো। দুরে দাঁড়িয়ে কিছু চিন্তা তার মধ্যে কাজ করছে। কাচের গাড়িতে বসে শিতকে বিরক্তির লাগে। আবার সকালবেলা কম্বলের নিচ থেকে উঠতেও বিরক্ত লাগে। কিন্তু তাদের বিরক্ত নেই!!

ঘরে রুম হিটার আর কাচের গাড়িতে ঠান্ডার মাঝে সামান্য ঠান্ডাকেও অনেক মনে হয়েছে। কাচের বাইরে যে এক জগত আছে। যে জগতে কষ্ট আছে। সেটা আজ আবিরের চোখে পরেব গেল।

আবিরের চোখে কেন যেন আজ পানি জমে গেল। মা বলত "যদি চোখে পানি আসে তবে মনের মাঝে কোন চাপা কষ্ট জেগে ওঠে। " আজ মনেহয় আবিরের তাই হয়েছে।

মারিয়া ওদিকে ফোন করে যাচ্ছে তারাতারি যাওয়ার জন্য। কিন্তু আবিরের সেদিকে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে না। আবিরের মনেহচ্ছে আজ মারিয়ার কাছে না গিয়ে টাকা দিয়ে ওই শিশু বাচ্চাদের শিতের কাপড় কিনে দিলেই আবিরের বেশি ভাল লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×