এই দেশে আজ পর্যন্ত একমাত্র একবারই শান্তিপূর্ণভাবে মেয়াদকাল পূর্ণ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হইসিলো, সেটা করসিলো বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। হাসিমুখে সরল বিশ্বাসে তক্তাবিধায়ক (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়া নাইমা গেসিলো গা। এবং অবিলম্বে তার চরম মূল্য দিতে হইসে একটা চুক্তি ভিত্তিক ইলেকশনে গো হারা হাইরা, যেখানে জামাতের লোকজন পর্যন্ত ইলেকশনের অন্ততঃ এক সপ্তাহ আগে ঘোষণা দিয়ে দিয়ে বলসিলো কোন কেন্দ্রে কয় ভোটে হারবে!!! ফেমা (ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং এলায়েন্স) এবং ধারেকাছের নাম বিশিষ্ট একাধিক মার্কিন পর্যবেক্ষক সংস্থা ওরফে বিয়েনপি প্রটেকশন দল মাঠে ছিলো সক্রিয়। রীতিমতো গেঞ্জি ছাপাইয়া তারা গ্রামে গঞ্জে ভলান্টিয়ার হায়ার কইরা তাগো মনমতন `স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন` একটা নির্বাচন মোবারক কইরা ফালাইসিলো। আওয়ামীলীগ এই ভালোমানুষির চূড়ান্ত মূল্য দিলো ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে, আর্জেস গ্রেনেড খাইয়া ছিন্নভিন্ন হইয়া। এবং এটা ছিলো তাদের জন্য জন্মের শিক্ষা। তারা চিনে ফেলসে এবং বুঝে ফেলসে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আর রাজনৈতিক নাই, `জানের` দুষমণ হইয়া গেসে। এবং এখনও যখন তারা রেগুলার থ্রেট খাইতেসে, তারা নিজেদেরকে কোনভাবেই বিপদ্মুক্ত ভাবতে পারবে না, ফলে তারা আর ভালোমানুষি করার রিস্কও নিতে যাবে না। এইটা এক্কারে সাফা কথা! আত্মরক্ষার অধিকার সবারই আছে।
এখন আসি কারেন্ট (বর্তমান, বিদ্যুৎ না) সিচুয়েশনে। সরকার দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনে যতটা সফল, ঠিক ততটাই ব্যর্থ দ্রব্যমূল্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে। কোন ডাউট নাই, এ বিষয়ে কোন কথাও আর নাই। এবং এই দুইটা ইস্যুই একটা দেশে সরকার ফেলে দেয়ার জন্য খুব বড় দুইটা ফ্যাক্টর। তার উপর যদি হয় ইলেকশনের বছরে!! পুরাই লালবাত্তি। রিকভারি করার টাইমও পাওয়া যাবে না হয়তো! এবং পাবলিক এগুলার সমাধান চায়, কোন যুক্তি ফুক্তি শুনতে চায় না। ইউক্রেন, ডলার ক্রাইসিস, কয়লা শেষ, বিল দিতে পারতেসেনা এইসব হাঁচা হোক আর মিছা হোক, পাবলিক ডাজন্ট বদার। তারা কারেন্ট (বিদ্যুৎ) চায়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ চায়। সো, সরকার হিসেবে এইসবের দায় ক্ষমতাসীন দল ও বর্তমান প্রশাসনের উপরেই বর্তায় এবং তারাই দায়ী অফিসিয়ালি। দুঃখের বিষয় হইলো, এইসবের জন্য যে মেইন প্রেশার ফ্যাক্টর, শক্তিশালী বিরোধী দল, সেই বস্তুর অস্তিত্ব আসলে `ঘোড়ার ডিম` বাগধারার মত হইয়া গেছে, এবং সেটা তাদের নিজেদের দোষেই – বলা বাহুল্য। এইটা আবার সরকার দলের জন্য এডভান্টেজ।
আমি এই পুরা ব্যাপারটাকে যেইভাবে দেখি, তা হলো-
বিদ্যুৎ পাইলে আপনারা কি করবেন? সবার আগে গিয়া চালাইবেন এসি!!! ঠিক? পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ায়া দিবেন। আরো গরম লাগবে। আপনাদের আরো কারেন্ট লাগবে (*গারটা দিয়ে আর পোষাবে না), সরকার আরো পয়দা দিবে, আরো বিল বাড়বে, আরো ফকির হবেন, কিন্তু বড়লোকি কমবে না। এসি খাওয়াই লাগবে। দিস সাইকেল উইল বি গোয়িং অন। তারপরেও কথা আছে। উন্নয়নরে ভ্যাঙ্গাইতে ভ্যাঙ্গাইতে ঠিকই সবার আয় রোজগার বাড়তেসে, হাতে দুইটা পয়সা আসিতেছে। এখন তো একটা বাড়ি করা লাগবে, নিজের বাড়ি। প্লাস, সেখানে শুধু থাকবো তা কি হয়? বাড়ী থেকে দুডা পয়সা আসবে না? পোলাপান খাবে কি? পোলাপানরে বইসা বইসা খাওয়ার ব্যবস্থা কইরা দিতে বানাবেন মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং, পোলা বড় হয়ে ভাড়া খাবে আর শুয়ে থাকবে। ফলে আশে পাশের সব গাছগাছড়া কাইটা আকাশ বাতাস ব্লক করে দিয়ে বানাবেন একটা ১২/২০ তলা বিল্ডিং। আরো গরম>আরো এসি> আরো কারেন্ট> ব্লাব্লাব্লা। চাষের জমি নাই, ফলে আরো খাদ্য আমদানী, আরো পকেটের পয়সা খরচ, আরো ডট ডট ডট… মাছ মাংসের স্বাধীনতা এক্কেরে টুট্টুট্টুট…
আমার প্রস্তাবনা হইলো, চলমান বিদ্যুৎ সঙ্কট যদি সমাধান হয়েও যায়, যদি মমতাজ আপা সত্যি আবার কারেন্টের টুকরি নিয়া বাইর হয় ফেরী করতে, তবুও গরমের দিনে একঘন্টা আর শীতের দিনে দুই ঘন্টা ম্যান্ডেটরি পাওয়ার শাটডাউন করা হোক একদম শিডিউল করে। পোলাপান জানালাভরা আকাশ দেখুক, দেখুক রাতের তারা। মেগা সিটিতে মাল্টিস্টোরিড বাড়ি এবসলিউটলি নিষিদ্ধ করে দেয়া হোক। একটা গাছও যেন কেউ কাটতে না পারে। কোন ছাগল নগরপিতাও না, নগর কাক্কাও না। বাসাবাড়ী অফিসের ডিজাইন করা হোক ক্রস ভেন্টিলেটরি মেথডে, যেন জানালা খুলে দিলেই বাতাস আসে। এসি চালানো হবে এই ভেবে যেন ইটের বাক্স না বানানো হয়, বিশেষত সরকারী দপ্তরে। আর বাংগালীর খাওয়ার পরিমান এবং বহর দুইটাই কমায়া দিতে হবে। মাছ মাংস এক বেলার বেশী না এবং সপ্তাহে তিন দিনের বেশী না। শাক, সবজি লতাপাতা এইসব বেশী করে খাওয়ার চল করা হোক। দোকানে বাজারে নিয়ম করা হোক, একসাথে বেশী কিনলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুইটারেই গাছে উলটা কইরা বাইন্ধা রাখা…… আমাদের দেশের মানুষের একটা খুব বাজে ব্যাপার আছে, বিশেষ করে দোকানদারদের। কম জিনিস কিনতে গেলে খুব বিশ্রিভাবে অপমান করে। ফলে মানুষ চাইলেও অল্প করে কিনতে পারে না এবং বেশীরভাগ সময়েই- খাবার গুলা নষ্ট হয়।
সো, শান্তিতে থাকতে চাইলে আগে নিজে বদলান, নিজের চারপাশ। পাবলিক ভালো হইলে সরকারও সিধা থাকে। পাবলিক হইবেন যেমন তেমন, সরকার চাইবেন ভালো! হইবো না। এই সরকার যাবে, আরেক সরকার আসবে, কিন্তু যে প্রকৃতি হারায়ে যাবে তা আর কখনই ফিরে আসবে না। আমাদেরও আফসোস কমবে না। কোন দেশের রাজনৈতিকদের চরিত্র নির্ধারিত হয় সেই দেশের মানুষের চরিত্র দিয়ে। মানুষের প্রকৃতি অনুযায়ী রাজনৈতিকরা পরিবির্তিত হন।