somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাল বল, নর্দমা এবং সরিসৃপ জীবন

০৮ ই মে, ২০১১ সকাল ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


*
বিকেল হলে আমার বিকল শরীরটা কোনমতে বিছানা থেকে টেনে হিঁচড়ে উঠিয়ে জানালার কাছে নিয়ে যাই। উঠতি বয়সের ছেলেরা ক্রিকেট খেলে। আমি সরিসৃপের মত বুকে ভর করে জুলজুল করে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাল টেপ প্যাঁচানো ক্রিকেট বলের উইলোখন্ডের দিকে উদ্ধত গতিময় ছোবল দেখি, নিজের সরিসৃপ জীবনের সাথে মিল খুঁজে পেয়ে আনন্দিত হই, কিন্তু পরক্ষণেই হতাশা গ্রাস করে অমিলটা খুঁজে পেয়ে-আমি ছোবল হানতে পারিনা, আমি স্থবিরতায় আক্রান্ত- নাহ কোন মিলই নেই। বাড়ন্ত দেহের কিশোর বা ঠাসা মেন্যুর অত্যাচারে ফুলে ফেঁপে ওঠা গোলগাল বালক, সবাইকেই আমার চেয়ে শক্তিশালী, কখনও কখনও ভীতিকর মনে হয়। আলো কমে আসতে থাকলে খেলার উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বলের টেপ ছিড়ে যেতে থাকে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। আমি কখন যে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে জানালার গ্রীল ধরে ধীরে ধীরে পেঁচিয়ে উঠতে থাকি বুঝতেই পারিনা। হঠাৎ হল্লায় আমার নিমগ্নতা কাটে। বালকদের মধ্যে কেউ জোরে বল মেরে কোথায় যে পাঠিয়েছে, এখন সেটা ছক্কা হবে নাকি আউট এ নিয়ে খুব বচসা চলছে তাদের ভেতর। ওরা খেয়াল করেনি লাল বলটা, নতুন টেপ প্যাচানো চকচকে লাল বলটা আমার জানলা গলে আমার নোঙরা বিছানাটায় মজা করে কিছুক্ষণ গড়াগড়ি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ খেলার ক্লান্তিতে হাই তুলে ঘুমিয়ে পড়েছে। অনেকদিন পর খেলার একটা সাথী পেয়ে আমি আনন্দিত হই, ছেলেগুলোর চোখে পড়ার আগেই সন্তর্পণে তাকে লুকিয়ে রাখতে যাই, কিন্তু শেষ রক্ষা মনে হয় হলোনা। নীচ থেকে কেউ একজন আঙ্গুল তুলে দেখায় আমাকে, ওদের ক্যাপ্টেন সম্ভবত, গলার রগ ফুলিয়ে রাগ দেখায়,
"ঐ মিয়া বলটা কি আপনি নিছেন?"
সরিসৃপেরা কথা বলতে পারেনা। তাই আমি তাদের দিকে পাল্টা জবাব হিসেবে রক্তাভ চোখে তাকিয়ে ফোঁসফোঁস করি।
আঁধার নেমে আসে। ছেলেরা সম্ভবত আঁধার আর সরিসৃপ ভয় পায়। তারা আর উচ্চবাচ্য না করে বিড়বিড় করে কি যেন বলে চলে যায়। অনেকদিন পরে আমি জয়ের আনন্দে হাসি।

*
-বলটা ঐ হালার কাছেই আছে আমি শিউর।
-আরে বাদ দে, ঐসব ল্যাঙরাচোদার বেইল আছে নাকি। চল যাইগা।
-হ, চল। তয় আরেকবার বল চুরি করলে অর জানলা ইটা মাইরা ভাইঙ্গা দিমু...
কিশোরের দল ইটা হাতে নিয়ে হাঁটতে থাকে। তিনতলার পঙ্গু প্রাণীটিকে ক্ষমা করে দেয়ার ফলে তাদের মধ্যে এক ধরণের মহানুভবতার অনুভূতি খেলা করে, তবে সেইসাথে ইটা'টি ব্যবহার করার মওকা খুঁজতে থাকে। পেয়েও যায় সহসাই।
-ভাইয়া! ভাইয়া! সাআআআপ! সাপে আমাকে খেয়ে ফেললো বাঁচাও!
পাড়ার প্রগলভতম কিশোরীটির এহেন আকুতিতে সাড়া দিতে তারা সবসময়ই উন্মুখ।
-আরে ভয় পাইয়োনা। এইডা ঢোড়া সাপ। ফণা তুলবার পারেনা। আমার ইটার এক বাড়িতেই শ্যাষ হয়া যাইবোগা।

নর্দমায় নির্বিষ সাপ পড়ে থাকে ইটার বাড়িতে কোমড় ভেঙে, প্রগলভ বালিকার বিষধর হাসি আর কিশোরদলের রোমাঞ্চের রোজনামচার চিহ্ন বহন করে।

*
সরিসৃপদের জন্যে জীবনটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নিজের চোখেই তো দেখলাম কিভাবে মারলো সাপটাকে। আমি লাল বলটা নেড়েচেড়ে দেখি। কিছুক্ষন আগে এটাকে খেলার বস্তু মনে হচ্ছিলো, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। সন্ধ্যা নেমে আসছে। এখন ওরা আমাকে দুধ খেতে দেবে। একথা অনস্বীকার্য, যারা আমাকে পোষ্য নিয়েছে তাদের আচরণ খুবই ভালো। তারা আমাকে একটা আস্ত ঘর দিয়েছে, বিছানা দিয়েছে। মানুষতো কত কিছুই পোষে, কত সুন্দর সুন্দর প্রাণী- খরগোশ, গিনিপিগ, লাভবার্ড, গোল্ডফিশ। আমার মত কুৎসিত এবং অচল এক সরিসৃপকে পোষ্য হিসেবে নেবার জন্যে আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সমস্যা একটাই, তাদের সাথে কথোপকথনে সুবিধে করে উঠতে পারিনা। তাদের কথা আমি বেশ বুঝতে পারলেও তারা আমার কথা বোঝেনা। কখনও আবার উল্টোটা হয়। এই যেমন এখন সুন্দরমত দেখতে মায়াভরা চোখের যে মহিলাটি আমার জন্যে দুধ নিয়ে এসেছে, সে বলছে "খেয়ে নাও বাবা। শরীরে বল হবে।" আমাকে 'বাবা' বলে সম্বোধন করার কারণটা অস্পষ্ট। পোষা সরিসৃপকে কেউ বাৎসল্যসুলভ স্নেহ দেখাচ্ছে ব্যাপারটা অস্বাভাবিক। শুনেছি সরিসৃপদের চামড়ার অনেক দাম। আমাকে খাইয়ে দাইয়ে নধর বানিয়ে ধরে জুতা প্রস্তুতকারীদের কাছে বেচে দেয় কিনা কে জানে! মায়াবতী মহিলাটির ছলোছলো চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সে সম্ভাবনা নাকচ করে দেই, কিছুটা অপরাধবোধও জাগে। মাথা নামিয়ে চুকচুক করে দুধটা সাবাড় করে ফেলি।

*
-অবস্থার কি কোন উন্নতি হৈছে?
-হয়নি, তবে হবে নিশ্চয়ই। ডাক্তারতো বলল যে হয়তোবা...
-আরে ধুরো ডাক্তার তো কৈবই। পয়সা ছাড়া কিছু বুঝে নাকি অরা? ঝামেলা আর ভাল্লাগেনা! আমি গেলামগা কেলাবে। রাইতে খায়া আসুম।

*
মাঝেমধ্যে এরকম উচ্চস্বরে কথাবার্তা শুনি। মাঝবয়েসী লোকটা সম্ভবত আমাকে ভয় পায়। তবে মায়াবতী রমণীটি আমাকে আগলে রেখেছে বেশ ভালোভাবেই। একদিন, যেদিন ফণা তোলার শক্তি হবে, দিয়ে দেব এক ছোবল। তখন মজা টের পাবে।
সন্ধ্যা নামলে ড্রয়িংরুমে মচ্ছব বসে যায়। বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে তরুণী গৃহবধু এবং তাদের ছোটবোনেরা এসে তাদের সুচতুর বাকপটুতা অথবা অযথাই অনর্গল বকে যাওয়া, টিভিতে দুঃখের সিরিয়াল দেখে আহা উহু করার পাশাপাশি বিভিন্নরকম খেলা খেলে। কখনও কাগজ কেটে চোর-ডাকাত-পুলিশ, কখনও ক্যারাম। আজকে খেলছে সাপলুডু। আমি শুনতে পাই তাদের উচ্ছ্বাস এবং উত্তেজনার দ্বৈতসঙ্গীত। কেন যেন মেয়েদের গলা আমার কাছে খুব মেলোডিয়াস লাগে। ভোরবেলা যে পাখিগুলো টুইট টুইট করে তাদের চেয়েও। তবে আজ আরাম করে মেলোডি শোনা হয়ে উঠছেনা। তাদের উত্তেজনা আমার মাঝেও সংক্রামিত হচ্ছে।
"দুই, দুই, দুই! ইয়েএএএএ! মইয়ে উঠেছি!"
"আল্লা চাইর জানি না উঠে, তাইলে তো সাপ খাইবো!"
"চাইর উঠিছে! তোমারে সাপ খায়েছে!"
সাপলুডু। বড়ই উত্তেজনাপূর্ণ খেলা। আমি আগ্রহ বোধ করি কোন সাপ কাকে খেলো দেখার জন্যে। যেহেতু আমিও একজন সরিসৃপ, খাবার প্রক্রিয়াটা শেখা দরকার। কতদিন আর চুকচুক করে দুধ খাব! আমি অতিকষ্টে গড়িয়ে গড়িয়ে যাই, পিচ্ছিল মেঝেতে খুব কষ্ট হয় বুকে করে হাঁটতে, কিন্তু আগ্রহের তীব্রতার ফলে এ অসুবিধাটুকু আমি অবজ্ঞা করি।

*
-তুমি আবার এখানে এলে কেন?
-আন্টি, এ কিডা আপনার ছোল নাকি? কিরাচে কৈরে আসিছে ক্যান ঠ্যাঙ কি কইরে ভাঙলো? কথাও তো কতি পারেনা খালি ঘরঘর শব্দ করতিছে। কি কৈরে হোলো ইরাম?
-শুভ্রা, তুই বেশি কথা বলিস। চুপ কর না!
আমি তাদেরকে জানালাম যে সরিসৃপ জীবনের জন্যে অভিজ্ঞতার রসদ সঞ্চয় করতে তাদের কাছে এসেছি। বিশেষ করে সাপলুডু খেলার খাওয়াখাওয়ির ব্যাপারটা আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাও জানালাম সবিস্তারে। তারা কতটুক বুঝলো আর কি বলল কে জানে। কিন্তু আমার শীতল চোখ দিয়ে ওদের চোখের ভাষাগুলো পড়ে নিতে পারি ঠিক।
কারো চোখে ভয়। (গুড গুড!)
কারো চোখে অবজ্ঞা। (কমন কেস)
কারো চোখে ঘৃণা (এটাও কমন কেস)
শুধু ভালোবাসা নিয়ে চেয়ে থাকে সেই মায়াবতী রমণীটি। তার চোখে আমি অসহায়ত্ব দেখতে পাই। আর একটা আকুল অনুরোধ, যেন আমি চলে যাই।
অস্বস্তি। অপমান।
"আচ্ছা আমি যাচ্ছি! সাপলুডু খেলুন আপনারা বসে বসে।"
ব্যাপারটা অস্বাভাবিক কিছু না। মনুষ্যজগতে সরিসৃপ খুব সমাদৃত কোন প্রাণী না। এতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মাঝেমধ্যে প্রতিহিংসা জাগে...থাক, এখন না। সুস্থ হয়ে নেই আগে। চলতে ফিরতে শিখি, ফণা তুলতে শিখি, নাহলে ঐ ঢোঢ়া সাপটার মত ড্রেনে পচে মরতে হবে।

ঘরে গিয়ে লাল বলটা নিয়ে খেলতে বসি। আজকের বিকাল এবং সন্ধ্যার ঘটনাবলীতে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার একটা অস্ত্র দরকার। বিকল শরীরও অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারলে ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। লাল বলটা নিয়ে ধীরে লোফালুফি করতে করতে ভাবি এটাকে কিভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। একটা উপায় আছে, যদি এটাকে গিলে ফেলে-কষ্ট হবে গিলতে জানি, তবে একবার কোনক্রমে গিলতে পারলে আমার শরীরের ভেতরের বিষ দিয়ে এটাকে একটা বিষের বল বানিয়ে ফেলবো। প্রয়োজনে ছুড়ে দেবো প্রতিপক্ষের দিকে পরিমাণ মত। সাপের মণি বলে একটা ব্যাপার আছে জানি। ওটা কি বিষাক্ত কিছু, আর হলেও এই প্রক্রিয়ায় বিষাক্ত করা যাবে কিনা এ নিয়ে সন্দিহান, তবে চেষ্টা করতে দোষ কী!
আজ আমি একটা আইডেনটিটি ক্রাইসিস থেকে মুক্তি পেলাম। এতদিন জানতাম যে আমি সরিসৃপ, কিন্তু প্রজাতি অজানা ছিলো।
আমি জানতাম কুমির হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
টিকটিকি হতে চাইনি কখনও।
আমি একটা সাপ। বিষধর না, তবে হতে কতক্ষণ। আমি ছোবল দিতে শিখবো, ফণা তুলবো, এসব ভেবে উত্তেজিত হয়ে লাল বলটা মুখের মধ্যে পুরে দেই। গিলতে একটু কষ্ট হবে, তবে এটা প্রয়োজনীয়।

*
-আবার কি হৈলো ছ্যামরার? গোঁ গোঁ শব্দ করে কেন? আই শুনতাছো?
পড়িমরি করে ছুটে যায় মহিলাটি, 'প্রবল' পুরুষের শাসানিতে নাকি স্নেহজনিত উৎকন্ঠায় কে জানে!

*
-কি হয়েছে! এ্যাই কি হয়েছে? ওটা মুখে দিয়েছো কেন? বের কর, বের কর সোনা!
কাঁদোকাঁদো কন্ঠে তার আহবান এবং গিলতে গিয়ে ভীষণ বিপত্তিতে পড়ে যাওয়া, দুই মিলিয়ে আমিও খুব চাচ্ছিলাম বলটা বের করতে, কিন্তু এমনভাবে আঁটকে গেছে যে, তার আর আমার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ও বের হচ্ছেনা কিছুতেই। শেষপর্যন্ত সেই রাগী পুরুষটার শরণাপন্ন হতে হল।
-গোঁ গোঁ গোঁ!
-এ্যাই একটু এদিকে আসোনা প্লিজ, বলটা কিছুতেই বের করতে পারছিনা ওর মুখ থেকে!
বিরক্তমুখে এসে সে এক ঝটকায় বলটি বের করে ফেলে, তারপর জানালা দিয়ে ছুড়ে দেয়। আমি দেখতে পাই সেই নর্দমাটায়, যেখানে আজ বিকেলে একটা সাপ সমাধিস্থ হয়েছে, বলটা ঠিক ঐখানেই গিয়ে পড়ল। হয়তোবা সেই সাপটার মুখেই। মরা সাপের মুখে বল দিয়ে আর কী হবে, এরকম একটি হতাশাবাদী চিন্তা করতে গিয়ে আমি পিঠে বেমক্কা এক আঘাত অনুভব করি। আমার হিলহিলে পিঠ কুঁচকে যায় ব্যথায়।
-আরেকবার এরকম ফাইজলামি করলে রাস্তায় ফালায় দিয়া আসবো।
তীব্র ব্যথার মধ্যেও লোকটির অবিবেচনাপ্রসূত কথা শুনে আমার হাসিই পায়। বলতে ইচ্ছা করে যে, রাস্তায় ফেলে দিয়ে হবেটা কী! আমি কি কুকুর না বেড়াল! পুকুরে বা কোন একটা গর্তে ফেলে দিলেও সর্পজীবনের জন্যে উপযুক্ত বাসস্থান হত। তবে এই মুহুর্তে তাকে কোন কথা বলার সাহস হয়না আমার। অবশ্য হবে একদিন...

*
-তুমি ওকে ওরকম করে মারলা কেন?
ফোঁপাতে ফোঁপাতে জিজ্ঞাসা করে সে।
-উমম বেইবি, আর মারবোনা।
লোকটি তখন তার ব্লাউজের বোতাম খুলতে ব্যস্ত।

*
পাশের ঘর থেকে উদ্ভট শব শব্দ আসছে। শুনে আমার শরীরে কেমন যেন লাগে। কি যেন করতে ইচ্ছা করে। মাঝে মাঝে মনুষ্যঅনুভূতি আর কামনার সাথে আমার সরিসৃপ সত্তা খুব কনফ্লিক্ট করে। নাহ, এ জীবন আর সহ্য হয়না। এই বেডরুম, এই ফ্লাওয়ার ভাস, বিকল বিকেলে বালকদের বল খেলতে দেখা, তরুণীপরিবেষ্টিত লাস্যময়ী সন্ধ্যা, এ জীবন সরিসৃপের নয়। আমি খুব সাবধানে ঘর থেকে বের হই। বিশাল এ্যাকোরিয়ামটা ফাঁকা পড়ে আছে। ওখানে আমার বেশ জায়গা হয়ে যাবে। আশা করি ওখানে আমাকে কেউ বিরক্ত করবেনা।

*
ঝনঝন শব্দে কী যেন ভেঙে পড়ল। কামনামদির কন্ঠে মহিলাটি বলল, "দেখোনাআআ, কী হল আবার। এত রাতে এসব ঝামেলা আর ভালো লাগেনাআআ"
লোকটির দেখতে যাবার কোন আগ্রহ প্রকাশ পায়না। মহিলাটিও আর কিছু বলেনা। তারা শক্ত করে পেচিয়ে ধরে একে অপরকে, সাপের মত। কিছু হিসহিসে মুহুর্তের পরে, বিযুক্ত হবার বেশ কিছুক্ষণ পরে লোকটি মুখ খোলে,
"তোমার এই লুলা, বুবা ভাইগ্নাটারে দেখার আর কেউ নাই? আমাদের উপর চাইপা বসছে কেন?"
"এরকম কর কেন বেইবি, যাওনা দেখোনা কী হল, কী ভাঙলো।"

*
এ্যাকোরিয়ামটায় ঢুকতে গিয়ে ভেঙে ফেলেছি। ভয়ে সিঁটিয়ে আছি কুন্ডলী পাকিয়ে। আরেকটা আঘাতের অপেক্ষায় ভীত আমি। ওখানে একটা ক্রাচ পড়ে আছে, কিভাবে আসলো কে জানে। ওটা দিয়ে বাড়ি দিলে তো গেছি! তবে লোকটার আচরণে আজ অস্বাভাবিক কোমলতা।
"তুমারে নিয়া আর পারিনা। এত দামী এ্যাকোরিয়ামটা ক্রাচ দিয়া বাড়ি মাইরা ভাইঙ্গা ফালাইলা কী মনে কৈরা?"
"আমি ভেবে দেখলাম যে, অতবড় বেডরুমের দরকার নেই আমার কোন। এ্যাকোরিয়ামটায় দিব্যি এঁটে যেতাম..."
"হইছে, আর গোঁ গোঁ করা লাগবোনা। ঘুমাইতে যাও" এইবার লোকটি তার স্বভাবসুলভ রুক্ষতায় আমার কুন্ডলি পাকানো শরীর টেনে খুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে।

*
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আমার ঠিক ঐ নর্দমাটার দিকেই চোখ যায়। স্ট্রিটল্যাম্পের আলোটা ঠিক ঠিক ঐ সাপটার, ঐ মৃত সাপটার মুখের ওপরেই পড়েছে। তার হা করা মুখে আঁটকে আছে লোকটার ছুড়ে দেয়া বলটি। মৃতসাপের মুখে বল থাকা না থাকা সমান কথা, আমার আবারও মনে হয়। সে ওটা হজম করে বিষবলয় তৈরী করতে পারবেনা। আমি আমার স্বগোত্রীয়ের দুর্দশায় বিষাদ অনুভব করি। অবশ্য সরিসৃপদের নিয়মবইয়ে বিষাদ অনুভূতি বলে কিছু নেই। কবে যে একটা আদর্শ সরিসৃপ হতে পারবো!

আক্ষেপ জাগে।




৮৩টি মন্তব্য ৮৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×