দেবী সিনেমার একটা গান রিলিজ দিয়েছে দেখলাম। হুমায়ূন আহমেদের দেবী পড়েছিলাম অনেক আগে। দূর্দান্ত! এর পরের পর্ব নিশীথিনীও দারুণ। দেবী সিনেমাটি যদ্দুর জানি সেই দুটি কাহিনী অবলম্বনেই বানানো হচ্ছে। মিসির আলি চরিত্রে তরতাজা জোয়ান চঞ্চল চৌধুরী আর অষ্টাদশী রাণু চরিত্রে মাঝবয়সী জয়া আহসান কাজ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, ভালো কথা। কিন্তু একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার (প্রায় হরর) ক্যাটাগরির একটি সিনেমাতে কলকাতা থেকে মিহি গলার গায়ক অনুপম রায়কে রোমান্টিক গান গাইতে ধরে নিয়ে আসার কি খুব দরকার ছিলো? পৃথিবীর কোন দেশে একটা ইন্টেন্স থ্রিলার/হরর সিনেমাতে এরকম গান-বাজনা থাকে? থাকলেও থাকতে পারে থ্রাস মেটাল মা হার্ডরক, এইখানে কেন আমাকে নায়ক-নায়িকার পীরিতি সম্বলিত ঢলাঢলি চার মিনিট ধরে দেখতে হবে? পরিচালক আসলে কাদের জন্যে ছবি বানাচ্ছেন? কেন ছবি বানাচ্ছেন? কেন তাকে সেই পুরোনো ফরমুলা, সেই বিস্বাদ রেসিপি মেনে চলতে হবে? আমরা তাহলে দেবীকে কোন পার্সপেকটিভে দেখবো? বৈশ্বিক মানদণ্ডে, না কি দেশীয় সিনেমার মানদন্ডে? এতদিন ধরে আমাদের ছাতামাথা গেলানো হয়েছে বলে এখনও সেগুলোর প্রেক্ষিতে ভালো হয়েছে বলে হাততালি দিতে হবে? সিনেমা পুরোটা না দেখে শুধুমাত্র একটা গান রিলিজ দেয়ার পর এমন কঠোর মন্তব্য হয়তো বা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, কিন্তু এভাবে আমরা বারবার ঠকছি।
আমরা ঢাকা এ্যাটাকে মাহিয়া মাহির ন্যাকামি দেখেছি। বোম্ব ডিসপোজালের মত ইনটেন্স মুহূর্তে “সেফ থেকো” ডায়লগ গিলেছি। চোরাবালিতে কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যহীন অসহ্য রকম গতানুগতিক প্রেম-পীরিতি দেখেছি। আর কত? আপনারা কাদের জন্যে ছবি বানাচ্ছেন আসলে? যাদেরকে টার্গেট মার্কেট ধরেছেন, তারা কী দুয়েকটা নাচ-গান, প্রেমের দৃশ্য না দিলে সিনেমা বর্জন করবে? আপনাদের পয়সা উঠে আসবে না? এইসব রিকোয়ারমেন্ট কে দেয়? দর্শক না কি প্রযোজক? না কি পরিচালকের নিজের কাছেই মনে হয় এরকম একটা সিনেমায় এমন মিহি গলার গান, আর পার্কে গিয়ে ঢলাঢলি না দিলে সিনেমা চলবে না? এটা কি পরিচালকের চিন্তার সীমাবদ্ধতা, না কি দর্শকদের এখনও নাবালক ভাবেন? আর কতদিন এক মুঠো প্রেম, সুন্দর দৃশ্য সম্বলিত গান, কিছু এ্যাকশন, কিছু সাসপেন্স এইসব ফর্মুলায় সিনেমা চালাবেন? একটা নিখাঁদ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, হরর কবে দেখতে পাবো? আপনারা তো ভালো ভালো সিনেমা কম দেখেন নাই, থিওরি কম জানেন না, তাহলে সিনেমা বানাইতে গেলে এই অবস্থা হয় কেন? কী, প্রযোজকের ডিমান্ড? এইসব রাখতেই হবে? এখন দুনিয়া উন্মুক্ত। এইসব প্রযোজকদের ফর্মুলা মানতে গেলে আপনেরা নিজেরাও কিছু করতে পারবেন না, দর্শকরা ঠকবে, আর বাংলা সিনেমাও নাবালক রয়ে যাবে। ইরানে এত সীমাবদ্ধতার মাঝে তারা দূর্দান্ত সব ছবি বানায়ে অস্কার বাগিয়ে নিচ্ছে, আর আমাদের জহির রায়হান, তারেক মাসুদের পর কোনো আন্তর্জাতিক মানের পরিচালক পাওয়া যায় না। ইরানের ছবিতে কি খুব বেশি বাজেট থাকে? ইরানের ছবিতে কি নাচ-গান থাকে? এই দেবী নিয়ে আপনারা কী আশা করেন? কয়টা হলে ছাড়বেন? কয় সপ্তাহ চলবে? এই যে ফরমুলা মেনে ঢাকা এ্যাটাক বানালেন, এত হলে মুক্তি দিলেন, টাকা কি উঠে এসেছে? খবর জানি রে ভাই, আসে নাই। তা লস যেহেতু খাবেনই, ভালো জিনিস বানায়েই লস খান! সুপাচ্য সবজিখিচুড়ি পরিপাকতন্ত্রের জন্যে ভালো, তবে তা কিন্তু বর্জ্য হিসেবেই নিঃসৃত হয়। আপনাদের বর্জ্যে পরিণত হবার এত ইচ্ছা কেন?
প্রথম প্রকাশ- আমার সাইট
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮