কাল রাত থেকে নিউজফিডে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি খবর। হোটেল নীরবে না কি কুকুরের মাংস দিয়ে বিরিয়ানি, কালাভুনা ইত্যাদি তৈরি করা হতো। কাটা কুকুরের ছবি সহ নিউজটি এমনভাবে ভাইরাল হয়, যার ফলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, এবং নীরব হোটেলে গিয়ে ভাংচুর চালায়। তো এমন জনরোষের কবলে পড়লে হোটেল নীরবের কর্মচারীরা যা করার তাই করেছে। তারা পালিয়েছে। হোটেল বন্ধ। এখন কথা হলো, এই যে কুকুরের মাংস দিয়ে খাবার তৈরির গুজব উঠেছে, এর ভিত্তি কী? আমি কোনো নির্ভরযোগ্য সংবাদপত্রে এই খবর পাই নি। খবরের কাগজ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, টিভি, রেডিও সবই নীরব হোটেলের ব্যাপারে নীরব। এর কারণ কী? একজন বললো যে নীরব হোটেল না কি খুব প্রভাবশালী, তারা টাকা পয়সা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে ফেলেছে। তাই না কি? হাতি ঘোড়া গেল তল, নীরব হোটেলের এত বল, কীভাবে? তারা খাবার বিক্রি করতে করতে এতটাই ধনী হয়ে গেছে, এতটাই প্রভাব প্রতিপত্তি সৃষ্টি হয়েছে, যে কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না আর?
আজ সকালে ঘটনার সূত্র খুঁজে পেলাম। বিখ্যাত গুজব মিডিয়া “আমাদের সময়” ভারতীয় বাংলা পত্রিকা ‘এই সময়’ এর বরাত দিয়ে একটি নিউজ পাবলিশ করে ৮ই এপ্রিলে ২০১৭তে। জ্বী, আজ থেকে পাক্কা দেড় বছর আগের কথা। আর এই সময় পত্রিকায় নিউজটি ছাপা হয়েছিলো তার আগের দিন। অর্থাৎ ৭ই এপ্রিল ২০১৭। তা কলকাতার দাদাবাবুরা কোন অসাধারণ প্রযুক্তির বদৌলতে কলিকাতায় বসে ঢাকার রেস্তোরা সম্পর্কে অনুসন্ধানী রিপোর্ট পেশ করে? সেই অসাধারণ প্রযুক্তির নাম হলো ‘ফেসবুক’। জ্বী, ফেসবুকে ২৮শে মার্চ কেউ একজন কাটা কুকুরের ছবি দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করে যে ঢাকার Roadside রেস্তোরায় কুকুরের মাংস দিয়ে বিরিয়ানী তৈরি করা হচ্ছে। এটাই হচ্ছে তাদের সূত্র।
সেখানে তারা আরো লিখেছে, “ঢাকা শহরের প্রায় প্রত্যেক মোড়ে বিরিয়ানির দোকান রয়েছে। সেখানে গরু-খাসির বিরিয়ানির দাম ৯০ থেকে ১২০ টাকা প্লেট।তুলনায় অনেক কম দামে কিছু দোকানে মিলছে বলে জমে উঠেছে বিরিয়ানির ব্যবসা।কিন্তু, গরু-খাসির বিরিয়ানি এত কম দামে কী ভাবে বিক্রি হয়? অভিযোগ, গরু-খাসির বিরিয়ানি বলে যা বিক্রি হচ্ছে, তা রান্না হয় কুকুরের মাংস দিয়ে”।
তারা বলেছে রাস্তার পাশের দোকানের অতি স্বল্প টাকায় বিক্রি বিরিয়ানির কথা। ৯০ টাকার চেয়েও অনেক কম দামে সেখানে বিরিয়ানি বিক্রি হয়। অনেক কম দাম মানে নিশ্চয়ই ৭০-৮০ না? ৪০-৫০? আপনারা কখনও সে বিরিয়ানি খেয়েছেন? সম্ভাবনা খুবই কম।
কুকুর দিয়ে বিরিয়ানি তৈরি হতে পারে। অনেক আগে আরিচা ঘাটের রেস্টুরেন্টে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু কোনো প্রমাণ ছাড়া যেভাবে নীরব হোটেলকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে সেটাকে আমার সত্যি বলে মনে হয় না। আমি নীরব হোটেলে জীবনে মাত্র দুইবার খেয়েছি। নীরব হোটেলের খাবার আমার ভালো লেগেছে, কিন্তু তাদের প্রতি আমার কোনো অবসেশন নেই।
আমার আপত্তি বছর দেড়েক আগে প্রকাশিত ভিত্তিহীন সংবাদের কঙ্কালকে পুনর্জীবিত করে আতঙ্ক এবং অস্বস্তি ছড়ানোতে। প্লিজ কোনোকিছু শেয়ার করার আগে একটু যাচাই করুন!
আমাদের সময় এর খবরের লিংক- https://goo.gl/vjsx6c
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৩