somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর্টিকেল থার্টিন, ইন্টারনেটের শেষের শুরু?

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই যে আপনি সারাদিন ইউটিউবে বসে থাকেন, বিভিন্ন টিউটোরিয়াল, গান, সিনেমার ক্লিপ, ম্যাশআপ, প্যারোডি, ইত্যাদি দেখেন, এই যে ইন্টারনেট থেকে ছবি নিয়ে মিম বানিয়ে ফেসবুক, টুইটার, রেডিটে ছেড়ে দেন, কত মজা তাই না? ফ্রি ওয়ার্ল্ড! এরকম কি সারাজীবন চলবে? চলতেই থাকবে? পৃথিবী এখন খুব দ্রুত বদলায়। আগে একটা কোম্পানি বা প্রোডাক্ট একবার নাম করে গেলে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ তাদের রাজত্ব চলতেই থাকতো, চলতেই থাকতো...কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেখেন, কোম্পানিগুলো ফল করছে। এওএল কোথায়? দেউলিয়া। ইয়াহু একসময় ছিলো ইন্টারনেটের মাস্তান, তারা খুব অল্প দামে বিক্রি হয়ে গেলো কিছুদিন আগে। নোকিয়া মাঝখানে হারিয়ে গেলো, ব্ল্যাকবেরি নামেমাত্র আছে, সিমেন্স নাই। তাই এখন যে ইউটিউব, ফেসবুক মুঘল সম্রাট সেজে বসে আছে, “এই দিন চিরদিন রবে, কেউ তা ভেবো না!”।
২০১৯ সালে ইন্টারনেট জগতে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে, যদি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রস্তাবিত কপিরাইট বিষয়ক নির্দেশনা কার্যকর হয়। কার্যকর হবার খুব ভালো সম্ভাবনা আছে, কারণ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট ইতিমধ্যেই এটার পক্ষে ভোট দিয়েছে। কী আছে এই প্রস্তাবনায় ? ইন্টারনেটে শেকল পড়ানোর এই নির্দেশিকার সবচেয়ে ভয়ংকর অংশ হচ্ছে আর্টিকেল ইলেভেন, টুয়েলভ এবং থার্টিন।
আর্টিকেল ইলেভেনে আপনার তেমন সমস্যা নাই, সমস্যা আছে গুগল নিউজ বা এই জাতীয় নিউজ এ্যাগ্রেগেটর সার্ভিসগুলোর। তারা কোন নিউজের স্নিপেট ব্যবহার করলে মূল যে পাবলিশার, তাকে টাকা দিতে হবে। এখন এটা কীভাবে হবে কেউ জানে না। সার্চের সময় কোন নিউজ স্নিপেট হিসেবে আসে যদি তা অনেকবার শেয়ার হয়। এখন কতবার শেয়ার হলে একটা নিউজ পাবলিশার টাকা পাবে? যারা বানিয়েছে তারাও জানে না। আর্টিকেল ইলেভেন প্রবর্তন করতে যাচ্ছে “লিংক ট্যাক্স” এর।
আর আর্টিকেল থার্টিন শুরু করবে “মিম ব্যান” এর। আর আর্টিকেল থার্টিনে বলা আছে “Online content sharing service providers and right holders shall cooperate in good faith in order to ensure that unauthorised protected works or other subject matter are not available on their services.” খুব সহজভাবে বললে, কপিরাইট ফেয়ারইউজ বলে কিছু থাকবে না। খুবই শক্তভাবে স্বত্ব রক্ষা করা হবে। ভাবছেন, এ আর এমন কী! ইউটিউবে তো কপিরাইট বিষয়ক খুব চমৎকার এ্যালগরিদম আছেই! কেউ যদি কপিরাইটেড কন্টেন্ট ইউজ করে, ইউটিউব তার আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে ধরে ফেলতে পারে, অথবা কেউ ক্লেইম করলে ভিডিও রিমুভ করে দিতে পারে। কিন্তু তারপরেও অসংখ্য কন্টেন্ট থাকছেই যেখানে কপিরাইটের কোন বালাই নেই। সামনে আর সেগুলো কিছু থাকবে না। আরো ঝামেলা আছে! আগে এইসব কন্টেন্টের জন্যে দায়বদ্ধ থাকতো সেই চ্যানেল। কিন্তু এখন থেকে সব কন্টেন্টের জন্যে দায়বদ্ধ থাকবে ইউটিউব নিজে। কিন্তু কথা হচ্ছে এই এত বিপুল পরিমাণ কন্টেন্ট ইউটিউব চেক করবে কীভাবে? কপিরাইট অভিযোগে অভিযুক্ত কন্টেন্ট আপলোড হলেই বিপুল পরিমাণ জরিমানা। ইউটিউব কী করবে? ইউটিউবকে তখন যা করতে হবে, তা হলো- বড় বড় কোম্পানি, আর্টিস্ট ইত্যাদিকেই শুধুমাত্র আপলোড করার ক্ষমতা দিবে। আপনি-আমি কিংবা পিউডিপাই, সবাই হবে নীরব দর্শক। পুরোনো যত কন্টেন্ট আছে, চ্যানেল আছে, সবার সব কন্টেন্ট মুছে দেয়া হবে। কম কন্টেন্ট মানে কম ট্রাফিক, কম ট্রাফিক মানে কম এ্যাড, কম এ্যাড মানে কম রেভিনিউ, এই চক্রের শেষে কী? ইউটিউবের মৃত্যু? জানি না!
শুধুমাত্র ইউটিউবের কথা বলছি, কারণ ইউটিউব হলো কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের স্বর্গরাজ্য। তাই ইউটিউবের ক্ষতিই সবচেয়ে বেশি হবে। কিন্তু ফেসবুক, টুইটার কেউ কি এই কালো আইন থেকে বাঁচতে পারবে? পারবে না। বিশেষ করে যারা মিম ক্রিয়েটর, তাদের দিন শেষ। কারণ মিম বানাতে লাগে ইন্টারনেটের ফ্রি রিসোর্স। সেই রিসোর্স আপনি ব্যবহার করার অনুমতি পাবেন না। কীভাবে বানাবেন মিম?
আর্টিকেল টুয়েলভের আবদার আরো চমৎকার! খেলাধুলার ক্ষেত্রে অফিসিয়াল অর্গানাইজার ছাড়া আর কেউ ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ করতে পারবে না।
পুরো নির্দেশিকা যারা পড়তে চান, তারা এখানে ক্লিক করুন- Click This Link (এই মুহূর্তে লিংক ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না কাউকে)।
এসবই হচ্ছে সম্ভাব্যতা। এসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, বাস্তবায়ন হতেও পারে, নাও হতে পারে। কিন্তু দিন যে সবসময় একরকম থাকবে না, এই আশঙ্কা করাই যায়!

ব্যাপারটা এমন লাগছে, ফাঁসির আসামীকে যেমন দন্ড দেয়ার আগে বলা হয় পছন্দের খাবার খেয়ে নিতে, তেমন আমাদের এখন ইন্টারনেটের স্বর্গযুগ থেকে বিদায়ের আগে ভালো-মন্দ কন্টেন্ট পড়ে বা দেখে নিতে হবে!

প্রথম প্রকাশ এখানে

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×