somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই ১২ই'মে তুমি চলে গিয়েছিলে জীবন থেকে আমার...

১২ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মালা, এই ১২ই মে আমার তুমি জীবন থেকে চলে গিয়েছিলে। কাজটা ভালা করো নাই। রেব্যান দিয়ে চোখ ঢেকে লাভ কী? মৌলালির মোড়ের সেই মালাকে অস্বীকার করতে পারবে? আজ তোমার বিয়ের দিন। জন্মদিন থেকে তোড়া তোড়া ফুল আসছে। আমার ফুল দেয়ার টাকা ছিলো না। আমি তোমাকে দিতাম চিনাবাদাম। তুমি এখন হোম থিয়েটার লাগিয়েছো বাসায়। অথচ আগে আমরা একসাথে এন্ট্রালি সিনেমার ছেড়া সিটে ছারপোকার কামড় খেতে খেতে ছবি দেখতাম।
তুমি মধুবালা হও,সোফিয়া লোরেন হও, আমি পরীমনির ছবি দেখে সময় কাটাই। আলিয়ঁস ফ্রাসেতে যাওয়ার সুযোগ হয় নাই কখনও। তুমি কি মার্গারিটা খাও? আমার কেরুই চলে। মৌলালির মোড় আর মিরপুর এক নাম্বার একাকার হয়ে যায় যখন তুমি রোজ রাত্তিরে ঘুমের ঘোরে চলে আসো অঞ্জনের কণ্ঠ ধরে।
আলিয়স ফ্রসেতে যাও ভালো কথা, তোমার বাসায় ইমরান খানকে কফি খাওয়ার দাওয়াত দিও না দয়া করে! ঐ ব্যাটা একটা আস্ত হিপোক্রেট। ওর সবই শো অফ। সানন্দা কি এখনও পড়ো? আমি আগে তোমাকে চিত্রালী কিনে দিতাম। তুমি কত খুশি হতে!
দেখো মালা, কলকাতা, ঢাকা একাকার হয়ে যাচ্ছে। অঞ্জন আর আমি গলাগলি করে তোমার জন্যে কাঁদছি। অঞ্জনকে আজকাল খুব হতাশ মনে হয়। বয়স হয়েছে তার ৬৭। খালি কথায় কথায় মৃত্যুর কথা বলে। সেদিন এক লাইভে দেখলাম এক ঘন্টায় তিনবার সিগারেট ধরালো। এই বয়সে কি এসব মানায় বলো?
ভাবতে খুব ভালো লাগে, অঞ্জনটা তোমার জন্যেই ছন্নছাড়া রয়ে গেলো এমন। ও অবশ্য এখন আর রুবি রায়ের গান শোনাবে না তোমাকে। তার এখনকার গানগুলি শুনে দেখবে, বিশ্বশান্তি, সমকামীদের অধিকার, রেসিজম, এইসব বড় বড় ব্যাপার নিয়ে। এখন আর স্কুলের টিফিনের ফাঁকে চ্যাপ্টা গোলাপ নিয়ে তোমার জন্যে অপেক্ষা করার দিনগুলির কথা বলে না। অঞ্জন কি শেষমেষ বুড়োই হয়ে গেলো?
মালা, ডাক্তার বলছে আমার ক্যালসিয়ামটা কম। আর জীবনের অংক মেলাতে তো আমি সবসময়ই কমজোরী ছিলাম। তাই এই চল্লিশে এসে চালশে না ধরলেও ক্ষয়াটে স্মৃতির পলেস্তারা ক্রমশ ধূসরিত করে আমার মন। চলে যাচ্ছে জীবন। নচিকেতার ভাষায় বলতে হয়, “এই বেশ ভালো আছি”। কিন্তু মাঝে মাঝে এই ভালো থাকাটা ভীষণ মেদবহুল আর স্থবির মনে হয়। নড়তে চড়তে কষ্ট হয়। তখন আমি নতজানু হয়ে থাকি ঈশ্বর অথবা প্রেমিকাদের দিকে।
তখন তোমার কথা মনে পড়ে। বুকের ভেতর আশালতা ল্যাগব্যাগ করে ওঠে । আমাকে কখনও কোন মেয়ে ছেড়ে যায় নি। আর তাই হয়তো বা আমি প্রকৃত প্রেমিক, শিল্পী বা মাতাল কোনটাই হয়ে উঠতে পারি নি। তুমি অঞ্জনকে ছেড়ে গিয়ে খুব ভালো করেছো। অঞ্জনকে আমি ভালোবাসি। ওর বিরহ ব্যথাটা প্রায় নিজের মত করেই অনুরণিত হয়।
তারপরেও, ভালোবাসায় কোন ফেয়ার প্লে নেই। অঞ্জন বরং নিমা রহমানের সাথে গানে গানে ভালোবাসা করুক, কিংবা কালো সাহেবের মেয়ের জন্যে হাপিত্যেশ করে মরুক। তুমি ঢাকায় এসে একবার আমার সাথে দেখা করে যাও। আমরা মোহাম্মদপুরে চাপ খাবো, সুজুকি কফিশপে কফি খাবো, সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখবো। কিন্তু কেউ কারো হাত ধরবো না। কেউ কাউকে স্পর্শ করবো না। অতঃপর আমাকে এই স্পর্শহীনতার আক্ষেপটুকু সম্বল হিসেবে সঁপে দিয়ে তুমি চলে যাও কলকাতায় তোমার আলিশান প্রাসাদে। জংলা পাড়ের ঢাকেশ্বরী শাড়ি আর পিসি চন্দ্রের ঝুমকো কানের দুল পরে রঙিন করো দিনটাকে।
আজ ১২ই মে। তোমার চলে যাবার দিন। ঈদের ছুটি কাটিয়ে এলাম গ্রামে। কিনেছিলাম নতুন জামা, খেয়েছিলাম মাংস এবং মিষ্টি। এসব কিছু ভালো লাগছে না। কখনও না যাওয়া কলকাতার গড়ের মাঠে গিয়ে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে।
মালা, তোমাকে ধন্যবাদ দুঃখকে এমন সার্বজনীন রূপ দেয়ার জন্যে। তোমার বিয়ের দিন ভালো কাটুক। ভালো থেকো। আর আমাকে নিয়মিত এমন তরতাজা দুঃখ দিও। শৈশবের সেই অদ্ভুত বেসুরো সুর আর শুনতে পাই না। বয়স বাড়ছে। রাত নামছে। এখন আর এই দুঃখটুকু ছাড়া সম্বল কী আছে বলো?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৫২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×