কিছু মানুষের হাসি দেখলে আমরা আনন্দে অভিভূত না হয়ে পারি না , আবার কিছু মানুষের হাসি দেখলে মনে হয় কেউ একজন আমাদের শরীরে এসিড ঢেলে দিল ।
কিছু মানুষকে মানুষ মনে রাখে হাসির কারনে , কিছু মানুষের হাসি অন্য মানুষের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় । একজনের হাসিতে ভেসে ওঠে অন্য একজনের মুখ ।
মানুষের চেহারার সম্পূর্ণ সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় যদি তার চেহারায় হাসি না থাকে ।
মানুষ যখন যখন বোকা হয়ে যায় তখনি তার পাশের মানুষটি তার বোকামি দেখে হাসে । কিছু মানুষকে আমরা বোকা বানাই নিজেরা হাসার জন্য । তবে , অনেক সম্পর্ক নষ্ট হয় অন্যকে বোকা বানানোর জন্য । তাই , ক্ষণিকের আনন্দের জন্য প্রিয় মানুষকে বোকা বানিয়ে হাসার কোন মানে হয় না ।
এলবার্ট হাবার্ড এর মতে , ‘প্রত্যেক মানুষই দৈনিক অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য নেহাত বোকা হয়ে যায়’। অর্থাৎ , আপনার কিছু বোকামি অন্যের হাসির কারন হয় ।
হাসি নিয়ে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়ত আপনি খেয়াল করেন নি যে – আপনি একসঙ্গে হাসতে গিয়ে ভ্রুকুঞ্চিত করতে পারবেন না ।
আমার মতে , আমরা প্রথম কোন বিষয় নিয়ে যেভাবে হাসি পরবর্তীতে একই বিষয় নিয়ে সেভাবে হাসি না । হয়ত , পরবর্তীতে আমরা ভাবতে থাকি , এই বিষয়ে কেন আমি এত হাসলাম ।
অর্থাৎ , হাসি সম্পূর্ণ প্রকৃতির দান । কিছু মানুষ চাইলেও হাসতে পারেন না । তারা রোবট টাইপের মানুষ । তাদের থেকে দূরে থাকা ভালো । কেননা , একজন রোবট টাইপের লোক যতক্ষণ আপনার পাশে থাকবে আপনাকে রোবট বানিয়ে রাখবে আর একজন হাস্য রসিক লোক আপনাকে হাসতে বাধ্য করবে আর হাসতে শিখাবে ।
প্রকৃতিগত ভাবে একজন মেয়ে একজন ছেলের থেকে বেশি হাসে । আমার ধারনা , একজন কল্পনা বিলাসী মানুষ সাধারন মানুষ থেকে বেশি প্রান খুলে হাসতে পারে ।
আপনি যদি আপনার কথা দিয়ে অন্য কোন মানুষকে হাসাতে পারেন তাহলে বুঝবেন অন্যের হৃদয়ে আপনি একটু হলেও জায়গা করতে পেরেছেন ।
গিভাইল এর মতে , ‘ মানুষ একমাত্র সৃষ্টি যাকে বিধাতা হাসার ক্ষমতা দিয়েছেন ’।
আপনার হাসি হওয়া চাই সবার চোখের সুন্দর অংশ । আপনি যদি বিনা কারনেই ফে ফে করে হাসেন তাহলে সবাই আপনাকে বোকা ছাড়া আর কিছুই ভাবার সুযোগ পাবে না ।
জন ওজেল এ বিষয়ে একটা দারুন কথা বলেছেন , ‘ যে বুঝে সুঝে সবার শেষে হাসে , তার হাসির একটা যথার্থ অর্থ আছে ’।
তাই বলে বেশি বুঝতে গিয়ে আপনি যেন আবার হাসি না হারিয়ে ফেলেন এই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন ।
উচ্চ স্বরে হাসি খোলা মনের পরিচায়ক । তবে , সব জায়গায় উচ্চ স্বরে হাসাটা বোকামী । হাসি সব সময় ম্রিদু হওয়াই সুন্দর । কেউ যদি প্রশ্ন করে পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর হাসি কার ? আপনি হয়ত আমার সাথে একমত হবেন , যে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসি হল – মায়ের মুখের হাসি ।
মানুষকে যেমন বিধাতা হাসার ক্ষমতা দিয়েছেন , তেমনি মানুষের হাসি বুঝার ক্ষমতাও দিয়েছেন । অর্থাৎ কোনটা মন থেকে আসা হাসি আর কোনটা বিদ্রুপের হাসি তা একজন জ্ঞানী মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারেন ।
মানুষ কোন শারীরিক আঘাতে যতটা না কষ্ট পায় তার চাইতে বেশি মানুষিক কষ্ট পায় মানুষের বিদ্রুপের হাসিতে ।
সবচেয়ে জটিল বিষয় হল নারীর হাসি । নারীর হাসির প্রসঙ্গ আসলে প্রথমে যে নাম মনে আসে তা হল মনালিসার রহস্যময়ী হাসির কথা ।আমাদের কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নারীর হাসি নিয়ে বলেছেন , ‘ পুরুষ জাতিকে পক্ষপাতি বিধাতা বিনা কৌতুকে হাসিবার ক্ষমতা দেন নাই কিন্তু মেয়েরা যে হাসে কি জন্য দেবা না জানন্তি কুতো মনুষ্যাঃ’। কবি গুরু আরো বলেছেন , ‘ নারী হাস্যে পৃথিবীতে যত প্রকার অনর্থপাত করে , তাহার মধ্যে বুদ্ধিমানের বুদ্ধিভ্রংশ একটি ’।
হাসি নিয়ে অনেক কথা হল , এবার হাসি নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দিয়ে লেখা শেষ করছি –
হাসি আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । হাসলে শরীরের ইমিউন ( Immune ) কার্য ক্ষমতা বেড়ে যায় । রক্তে এড্রেনালিনের পরিমান হ্রাস পায় । ফলে , সর্দি ,কাশি , জ্বর বা ছোট খাট রোগ আক্রান্ত করার সুযোগ পায় না । অনেক রোগ নিজে নিজেই সেড়ে যায় । হাসি ব্লাড প্রেশার লো করে । বিরক্তিতে ভ্রু কুচকাতে আমাদের ৪৩ টি পেশীকে পরিশ্রম করতে হয় আর মুচকি হাসতে লাগে মাত্র ১৭ টি ।
বই পড়ে ও হাস্যরস উপভোগ করা যায় । কিছু বই হাস্যরসে ভরপুর তার মাঝে – শিবরামের রচনাবলি , জোরামের থ্রি ম্যান ইন এ বোট ( ত্রিরত্নের নৌবিহার ) এছাড়াও ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় , পরশুরাম , ভিলহেলস বুশ ( জার্মান ) , সুকুমার রায়ের লেখাও পড়তে পারেন ।
মানুষের আসল হাসি মনে । আপনার মনকে প্রফুল্ল করার প্রধান হাতিয়ার হাসি । তাই , মন খুলে হাসুন , তবে অভিনয় করবেন না । তাহলে , আপনি হাসির আনন্দ থেকে দূরে সরে যাবেন ।
- Pavel Rhyes .

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


